ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ফিরে পাওয়া মেয়েরা

    মঞ্জীরা সাহা (March 8, 2025)
     

    বাগডোগরার বিহার মোড় থেকে পানিঘাটা মেন রোড দিয়ে চলেছে বাইকটা। খাঁ খাঁ রাস্তা। ডানে বাঁয়ে শুধু চা বাগান। ট্যুরিস্টের গাড়ি দু’একটা মাঝে যাঝে চোখে পড়ছে। চা বাগানকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে ট্যুরিস্টরা ফোটো তুলছে চা পাতার উপর হাত রেখে প্লাকারদের ভঙ্গিতে। আর একটু দূরে-দূরে ঘন চা গাছের ভেতর বুক অবধি ঢেকে সত্যিকারের প্লাকার মেয়েরা ঠায় দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে এক মনে পাতা তুলে চলেছে। মাথার ওপর রোদ-মেঘ-বৃষ্টির খেলা। পিঠের শিরদাঁড়ার সঙ্গে ছাতার ডান্ডিটা বেঁধে নিয়েছে দড়ি দিয়ে। বুকের সামনে লালচে ছোপ-ছোপ একটা কাপড় বাঁধা। ওটাকে ওরা বলে ‘ত্রিপল’। তার নীচ দিয়ে উঁকি মারছে ছেলেদের শার্ট। চুড়িদারের ওপর সার্টটা পরে নিয়েছে, যাতে চায়ের কষ থেকে চুড়িদারখানা বাঁচানো যায়। চা পাতার কষে হাতের পাতাগুলো লাল হয়ে আছে। চামড়ার ফাটা-ফাটা দাগগুলো আরও কালচে গাঢ় লাল। দু-একটা চা বাগানের নামের হোর্ডিং চোখে পড়ল। তিরহানা টি এস্টেট নামখানা মনে থেকে গেছে।

    বাইকটা কিছুদূর যেতে-যেতে ঘুরে গেল ডানদিকে। এদিকে রাস্তাটা ভাঙাচোরা। ডানে-বাঁয়ে চা বাগানের ভাঙাচোরা কোয়ার্টার। কানে আসছে শুয়োরের ডাক। ড্রেনের পচা গন্ধ নাকে এসে লাগছে। দু’একটা গলি পার করে যে-বাড়িটার সামনে এসে থামলাম, সেখানেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। মেয়েটি তখন বাড়িতে নেই। চা বাগানের পাতা তোলার কাজে গেছে। এটা মারাবুরু টি গার্ডেনের পেছনটা। চা বাগানের ওই এক কামরার কোয়ার্টারের পেছনে কিছুটা হেঁটে গিয়ে ছোট্ট একটা জলের স্রোত। জুতো খুলে হাঁটু অবধি জল পেরিয়ে চলেছি। জল পেরিয়ে জুতোটা পায়ে গলিয়ে হাঁটা শুরু করায় ভেজা পায়ের সাথে ছোট-বড় বালি যে লেগে আছে, পায়ের চাপে বুঝতে পারছি বেশ।

    আরও পড়ুন: খাকি উর্দি থাকলেও বিপদ, না থাকলেও, কেমন আছে মেয়ে পুলিশেরা? লিখছেন কাকলি ঘোষ কুণ্ডু…

    মারাবুরু চা বাগানে তখনও টিফিনের ঘণ্টা বাজেনি। মেয়েটির মতো আরও অনেক মেয়ে চা পাতা তুলে যাচ্ছে এক মনে। একটা অদ্ভুত শান্ত নির্জনতার মধ্যে যে-ব্যস্ততা আছে, সেটা আমার মতো কলকাতার দিক থেকে আসা একজন মানুষের পক্ষে ঠাহর করা মুশকিল। দিনে যত কেজি চা পাতা তুলবে, বাইদরের কাছে মাপ হবে দিনের শেষে। চা বাগানের মাঝে বড় একখানা দাড়িপাল্লা ঝোলানো। আস্তে-আস্তে পিঠের রুমাল উঠবে ফুলে। তোলা পাতার কেজি হিসেবে টাকা পাবে।

    ঠোঁটগুলো মোটা-মোটা। গায়ের রং মিশ-কালো। হৃষ্টপুষ্ট চেহারা। কথা বলতে গিয়ে অদ্ভুত একটা সংকোচ যেন বার বার আড়ষ্ট করে দিচ্ছে মেয়েটির মুখ-চোখ-ঠোঁট-গালদুটো। যতটা ফিসফিস করে কথাগুলো বলা সম্ভব, বলছিল; ঠিক ততটাই আস্তে-আস্তে আমার কানের কাছে মুখ এনে। ভয়টা যে আসলে কীসের, বুঝেছিলাম পরে।

    সৎ বাবার সংসার ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সংসারে পড়ে থাকা মা এবং আগের পক্ষ ও পরের পক্ষের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ-মেয়েই তখন সবচেয়ে কনিষ্ঠ। বারো বছর মানে মাইনর। নিজেদের চা বাগানে কাজ পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বয়স লুকিয়ে কাজ একখানা জুটল। কন্ট্রাক্টে পাতা তোলার কাজ। চা পাতা আনা-নেওয়ার জাল দিয়ে আটকানো গাড়িতে করে এক বাগান থেকে অন্য বাগানে নিয়ে যাওয়া হত কিছু পুরুষ-মহিলাকে। সারাদিন কাজের শেষে ফিরিয়ে দিয়ে যেত আবার। বেতন-বোনাস বলে কিছু নেই। শুধু সিজনে কাজ। দিনের শেষে পাতার হিসেবে পয়সা। এভাবে দিনের মজুরির হিসেবটা আরও কম। এই দলের সঙ্গে রওনা দিত মেয়েটিও। এরপর প্রেম, বিয়ে, সন্তান প্রসব, স্বামীর ছেড়ে যাওয়া, এক বাগান থেকে অন্য বাগানে কর্মস্থলের বদলের পর মেয়েটির জীবনযাত্রায় সবচেয়ে বড়সড় বদল এনে দিল পরবর্তী প্রেম।

    শিলিগুড়ির কোনও রেস্টুরেন্টের গন্তব্যটা বদলে গেল শিলিগুড়ি পৌঁছাতে-পৌঁছাতেই। কোল্ড ড্রিংক্সের সঙ্গে নেশার কিছু খাইয়ে দিয়ে যতটুকু হুঁশ-বেহুঁশের মাঝে ফেলে দেওয়া যায়, সেরকম একটা অবস্থায় এনে চড়িয়ে দিল ট্রেনে। সোজা পুনা স্টেশন। বাজারদরে আস্ত একটি মেয়েকে পুনার বুধওয়ারপেটে বিক্রি করলে যে-দাম পাওয়া যায়, সেরকমই কোনও একটা অংকে বিক্রি হয়েছিল মেয়েটি। নাম-ঠিকানা পুরোপুরি ভুলিয়ে শুধু শরীরটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য ওই বিশালাকার নিষিদ্ধ পল্লিতে যা-যা করা হয়, এর বেলাতেও ঘটনাগুলো ছিল একইরকম। আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে অল্প আলোয় আটকে রাখা হয়েছিল মেয়েটিকে। আত্মহত্যা করার মতো ছুরি-কাঁচি-ব্লেড-জানালা কিছুই নেই সেখানে। শুধু খাবারটুকু পৌঁছে দিয়ে আর পাঁচজনের সামনে জামাকাপড় খুলিয়ে স্নান করিয়ে চলল নতুন জীবনের প্রস্তুতি।

    মেয়েটি আপত্তি যতটুকু-না করেছিল, তার চেয়ে মার খেয়েছিল অনেক বেশি। তারপর বছর কেটেছে। কাস্টমার অ্যাটেন্ড করে গেছে অগণিত। মেয়েটি নিজের নাম ভোলেনি। ভোলেনি ঠিকানাও। দার্জিলিং জেলার পানিঘাটার সাহসী মেয়ে রঙ্গু সোউরিয়া পুনে ক্রাইম ব্রাঞ্চের সাহায্য নিয়ে ফিরিয়ে এনেছে ওকে আবার ওর পুরনো চা বাগানের ঘরটাতে। ওই দু’বছর মেয়েটি কোথায় রইল, কী করল, সে নিয়ে প্রতিবেশীদের কৌতূহল আজও মেটেনি। তাই নিস্তব্ধ মারাবুরু চা বাগানের ভেতর আমার কানের কাছে ওর ফিসফিসের শব্দটা ছিল অতটাই আস্তে। 


    রেড হচ্ছে। একটা বিল্ডিং ছেয়ে ফেলেছে পুলিশ। হনহন করে ঢুকে পড়ছে ভেতরে। দলকে দল মেয়েদের বার করে আনছে একখানা বিল্ডিং থেকে বাইরে। সব মেয়ের বয়স আঠারোর নীচে। বিল্ডিংটা মুম্বই শহরের কামাতিপুরায়। একটা ফোন গিয়েছিল জাস্ট একদিন আগে। ফোনটা গিয়েছিল মুম্বই থেকে হাওড়া। মাত্র এই কথাটুকু বলতে পেরেছিল মেয়েটা— ‘একটা শীতলা মন্দিরের সামনের বাড়িটাতে আটকে রেখেছে ওরা আমাকে…।’

    মেয়ের মা হাওড়া থেকে গড়িয়াহাটের কাজের বৌদির বাড়িতে বসে-বসে ভেবে গিয়েছিল, কোন শীতলা মন্দির! কোন বাড়ি! আটকেই-বা রেখেছে কে! প্রেম করে পালিয়েছে তার মেয়ে, এটুকুই কেবল জানা ছিল। কিন্ত অচেনা ফোন নম্বর থেকে আসা চেনা কণ্ঠস্বরের কাঁদো স্বরখানা শুনে ছুট লাগিয়ে ছিল গড়িয়াহাটের কাজের বাড়ি ছেড়ে অন্য একটা অফিসে। কাজের সূত্রে একটা অ্যাড্রেস জানা ছিল। সেটা ছিল হিন্দুস্থান পার্কের সংলাপ-এর ঠিকানা। জানা ছিল, হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে দিতে পারে ওই অফিস।

    মেয়েটা লাফ মেরেছিল উঁচু কোনও ফাঁক দিয়ে। লাফ মেরেও পালাতে পারেনি। লাফ মেরে সোজা গাছের ডালে আটকে গিয়েছিল শরীরখানা। বছর চোদ্দোর হাড়গিলে চেহারার মেয়েটার জামাকাপড় খুলে ফেলে লিকলিকে একখানা বেত দিয়ে মেরেছিল অনেক ক’টা ঘা। যেমন মেয়েটার রোগা শরীর, তেমনি বেতখানাও মাপের দিক থেকে সরু।

    সংলাপের তপতী ভৌমিকের কাছে খবর পৌঁছানোমাত্র শুরু অ্যাকশন। পুলিশ আর সংলাপ মিলে শুরু হয়ে গেল ফোন ট্রেস। তারপর সোজা মুম্বই রওনা। কামাতিপুরা মুম্বইয়ের সব থেকে বড় রেড লাইট এরিয়া। বেশি সম্ভাবনা ওখানে থাকার। তবে ওটা পশ্চিমবঙ্গ নয় যেহেতু, ওখানে অলিতেগলিতে শীতলা মন্দির নেই। তাহলে কোথায়, কোন শীতলা মন্দিরের সামনে, কোন বাড়ি? কোন ঘরে রয়েছে মেয়েটা! শুরু হল খোঁজ। একখানা ঘর থেকে পর পর বেরিয়ে এল পনেরো-ষোলো-চোদ্দোর মেয়েরা। কিন্তু যাকে খুঁজতে আসা, সে কে? তপতী ভৌমিকের কাছে কোনও ছবি ছিল না। সঙ্গে ওর মা নেই। তখন মোবাইলের যুগ আসেনি। বার বার প্রশ্ন জাগছে, কোন মেয়েটা হবে! ঘর সিল হচ্ছে। সব মেয়ে বাইরে চলে এসেছে। একটা নাম ধরে ডাকছে মেয়েদের। কান্নার শব্দ হচ্ছে নানা রকম। কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না।

    হঠাৎ একটা ডাক। ‘ম্যাডাম প্লিজ উপর যাইয়ে। ফার্স্ট ফ্লোরমে।’ ‘কী আছে ওখানে?’ ‘এক লেড়কি হ্যায় উধার।’ কণ্ঠস্বরটা পুলিশের। সঙ্গে-সঙ্গে বড়-বড় স্টেপ। একতলা ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা দোতলায়। ফাঁকা দোতলা। চোখগুলো ভাল করে খুঁজছে। কোথায় সেই ঘর! ডাঁই করা কয়লার পিছনে একটা বন্ধ দরজার ফ্রেমের একটুখানি দেখা যাচ্ছে। পুলিশের লোকজন কয়লা সরিয়ে ফেলল সঙ্গে-সঙ্গে। হ্যাঁ, একটা তালামারা দরজা। রহস্যটা যে ঠিক এই ঘরের ভিতরেই, সেটা আন্দাজ করা যায়নি একটু আগেও। শুধু সামান্য এক ঝলক দেখা গিয়েছিল নীচ থেকে। ঘুলঘুলি দিয়ে হাতের আঙুলের মতো সামান্য বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছিল। শব্দ করেনি কোনও। শুধু ওই এক আঙুল। ওই আঙুলটাই বাঁচিয়ে দিল মেয়েটাকে। তপতী ম্যাডাম এবার সাড়া পেলেন, যাকে খুঁজতে আসা তার নাম ধরে ডাকার পরই।


    পশ্চিম মেদিনীপুর। রেড হচ্ছে এক ধাবা। সকাল থেকে যাকে দেখতে লাগে বেশ একটা ধাবার মতন। যেতে-আসতে ট্রাক-ট্যুরিস্টের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। চা-রুটি-তরকা বিক্রি হয়। রাতে বদলাতে থাকে রং। বদলে-বদলে ধাবার সব ঘুপচি-ঘুপচি অন্ধকার ঘরগুলোই হয়ে ওঠে যেন নিষিদ্ধপল্লির রুম। যে-রুমে শুধু একখানা বিছানা। মেয়েটা লাফ মেরেছিল উঁচু কোনও ফাঁক দিয়ে। লাফ মেরেও পালাতে পারেনি। লাফ মেরে সোজা গাছের ডালে আটকে গিয়েছিল শরীরখানা। বছর চোদ্দোর হাড়গিলে চেহারার মেয়েটার জামাকাপড় খুলে ফেলে লিকলিকে একখানা বেত দিয়ে মেরেছিল অনেক ক’টা ঘা। যেমন মেয়েটার রোগা শরীর, তেমনি বেতখানাও মাপের দিক থেকে সরু। অসংখ্য বেতের আঘাতের উপর দিয়ে সূচ-সুতো দিয়ে সেলাই করার সময়ে চামড়ার যন্ত্রণাটা যে কতটা হতে পারে, তপতী ভৌমিক কথা বলতে-বলতে বোঝাতে চাইছিলেন বার বার। সেলাই করা শরীর নিয়ে কাস্টোমার অ্যাটেন্ড করতে হয়েছিল সারারাত মেয়েটিকে। ওই ধাবাটা রেড হয়েছিল ঠিক তার পরের দিন। বারাসাতের কোনও এক ঝুপড়ি বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল মেয়েটিকে। তপতী ভৌমিক পেরেছিলেন মেয়েটিকে আবার তার পুরনো রুটিনে ফিরিয়ে আনতে।


    সুন্দরবনের লাহিড়িপুরের মেয়েটা বাপের বাড়ির দাওয়ায় বসে রাগ দেখিয়ে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠেছিল, ‘কী লিখবেন আমাকে নিয়ে! এসব জানাজানি হলে আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে।’

    ঘটনাটা ঘটেছিল ওর যখন তেরো বছর বয়স, তখন। পাড়ার জামাইয়ের সঙ্গে লাহিড়িপুরের পাড়ার মেয়েরা দল বেঁধে রওনা দিয়েছিল নতুন দিল্লি। নোনা কাদামাটি ছেড়ে ম্যানগ্রোভের বন ছেড়ে রুক্ষ-শুষ্ক আবহাওয়ার রাজধানী শহরে লোকের বাড়ি বাসন মাজার কাজ করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ওদের। তারপর দিল্লির বদ্ধ একটা ঘরের ভেতর একলা এই মেয়েটি। বলেছিল, ওটাই অফিসঘর। বান্ধবীদের যেন নিয়ে গিয়েছিল কোথায়-কোথায়! ঘরটা যে আদৌ অফিসঘর না, সেটা টের পেয়েছিল মেয়েটা রাত হতে-না-হতেই! মেয়েটা আবার চিৎকার করে বলেছিল, ‘কিচ্ছু হয়নি আমার সাথে। কাউক্কে কিচ্ছু করতে দেইনি। ওরা লোক ঢুকিয়ে ছিল কিন্তু আমার সাথে কিচ্ছু পারেনি।’

    বাঁচতে পেরেছিল মেয়েটা সাতদিনের মাথায় কোনওরকমে একবার বেরোতে পেরে। এস টি ডি বুথ থেকে ফোন করতে পেরেছিল পাড়ার কানাইমামাকে। তারপর আবার ছুটে সেই ঘরে। কানাইলাল ভট্টাচার্য রাঙাবেলিয়ার টেগোর সোসাইটির মেম্বার। ফিরিয়ে এনেছিলেন মেয়েটাকে। বলেছিলেন, ‘মেয়েটাকে যখন ফিরিয়ে আনি, ওর থাইগুলোর আর কিছু ছিল না। দিল্লি থেকে ট্রেনে তোলার সময়ে পা তুলে হাঁটতে পারছিল না মেয়েটা।’  

    মেয়েটি এখন দুই ছেলে মেয়ের মা। এখন সে অন্য রাজ্যে লেবারের কাজে যায়। সারা বছরভর ছেলেমেয়ে ছেড়ে লেবারের কাজ করে যে-টাকাটুকু পায়, তাই এসে তুলে দেয় বাবার হাতে। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে ওঠে লেবার মায়ের রোজগারে। বছরের দশ-এগারো মাস কাটে অন্য-অন্য রাজ্যের লেবার ক্যাম্পে। বাকিটা ফিরে এসে ছেলেমেয়ের সঙ্গে নিজের বাবার বাড়িতে। স্বামীটিও অন্য রাজ্যের লেবার। শ্বশুরবাড়ি আদৌ আছে কি না জানা হয়নি। যে শ্বশুরবাড়ি আছে বা নেই, হয়তো সেই শ্বশুরবাড়ি থেকেই তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় পায় মেয়েটি আজও…      

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook