ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • কিসমাত কানেকশন : পর্ব ৪

    কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্ত (March 7, 2025)
     

    তান্ত্রিকের দাওয়াই

    কলকাতায় কত কিছুই না হয়!

    পাড়ার ক্লাবে তাসের জুয়া হয়। নানান মেলায় চাকা ঘোরানো জুয়া হয়। লোহার তৈরি গোলাকার রিং ছুড়ে সাজিয়ে রাখা দ্রব্যকে, রিংবন্দি করার জুয়া হয়। বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেটে কোন দেশ জিতবে বা, বৃষ্টি কবে হবে— তা নিয়েও ফাটকা জুয়া হয়। আবার অধুনা নিষিদ্ধ মটকা সাট্টার ধরনের ‘কলকাতা ফটাফট জুয়া লটারি’-ও হয়। এর মধ্যে ‘কলকাতা ফটাফট’ এখন হিট। লাখ লাখ লোক প্রতিদিন ‘কলকাতা ফটাফট’ খেলে। যেমন নাম, তেমন খেলা। একদম হাতে-কলমে শিখে এসেছি।

    ধীরেন বসু নজরুলগীতির নামকরা শিল্পী ছিলেন। ‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’, এই গানটা তাঁর গলায় হিট করেছিল। কম বয়সে খুবই শুনতাম। তো, সেই গানের এই পদ লটারি-জুয়ার মূল মন্ত্র। আজ যে ফকির কাল সে রাজা। যদি লটারি-জুয়ায় ভাগ্য সঙ্গ দেয়। ফলে, হাজার-লাখো জনতা প্রতিদিন ভাগ্য পরীক্ষায় শামিল হয়। পাশে থাকে ‘কলকাতা ফটাফট’। যদিও মটকা ভারতে আইনত নিষিদ্ধ এখন। তবে, তারই মধ্যে অনেক জায়গায় চলছে ‘সাট্টা মটকা’-র মতোই ‘কলকাতা ফটাফট’।

    আরও পড়ুন : লা দোলচে ভিতা থেকে একলা চলো, রেসের মাঠের ঘোড়াদের নামেও রয়েছে চমক! তরঙ্গ মুথোপাধ্যায়ের কলমে ‘কিসমাত কানেকশন’-এর তৃতীয় পর্ব…

    এই খেলা অনলাইন ও অফলাইন— দু’ভাবেই হয়।

    কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে-মোড়ে, গলিতে, ফুটপাথে খেয়াল করলে ‘কলকাতা ফটাফট’-এর খোঁজ পাওয়া যায়। অনেক অনলাইন সাইটে এই খেলার খবর, উপায়, টিপস্, রেজাল্ট খুব সহজেই মেলে। দুর্গাপূজা, কালীপুজো, দীপাবলি, ছটপূজা, ভ্যালেন্টাইন’স ডে, এবং মাসের শেষে খালি এই পকেটে কিছু বাড়তি টাকা যদি কিছু পাওয়া যেত— ক্লাসিক এই আক্ষেপের টাইমে ‘কলকাতা ফটাফট’ একেবারে মুশকিল আসান। যে-সমস্ত সাইটে এই লটারি-জুয়ার খবর থাকে, সেই সব জায়গায় একবার গেলেই এহেন বিজ্ঞাপনও চোখে পড়বে, যেখানে বলা হয়— জ্যোতিষ গণনায়, আজ অষ্টমী তিথিতে তৈরি হয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজযোগ, যার প্রভাবে অর্থপ্রাপ্তির যোগ রয়েছে। তাই আজ ‘কলকাতা ফটাফট’ হয়ে যাক।

    খেলবেন কীভাবে এই জুয়া-লটারি? আপনাকে খুঁজে খুঁজে, আপনার এলাকার ‘বুকি’-র কাছে যেতে হবে বা অনলাইন অ্যাপ, বা হোয়াটস্যাপ-এ খেলতে হবে। প্রতিবার খেলার পর একটা ৫০০ টাকার স্লিপ পাবেন ‘কনফার্মেশন’ হিসেবে, যদি ‘বুকি’-র কাছে খেলেন। অনলাইন-এ খেললে স্লিপ পাবেন অনলাইনেই।

    কীভাবে খেলা হয় এই ‘কলকাতা ফটাফট’?

    বিশদ বিবরণ পেশ করি এবার। সোমবার থেকে শনিবার আট বাজি, রবিবার চার বাজি খেলা হয়। বাজি ধরার পরিমাণ ১০ টাকা থেকে এক লাখ টাকা। পুরস্কারের পরিমাণ, সঠিক সংখ্যা অনুমান করার জন্য, সিঙ্গেল ন’গুণ, পাত্তি ১০০ গুণ। অর্থাৎ, ১০০ টাকায় ৯০০ টাকা। ১০ টাকায় ১০০০ টাকা। এছাড়াও, ‘ছিপি’ বা ‘সিপি’ পাঁচ টাকায় ৫০০ টাকা। মানে ১০ গুণ। খেলা শুরু হয় সকাল ১০টায়। চলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। ‘সিঙ্গেলে’র পর আসছে ‘পাত্তি’। ‘পাত্তি’ কী? ধরুন আপনি এক থেকে ১০ পর্যন্ত যে সংখ্যার উপর ‘বাজি’ ধরছেন, সেই সংখ্যাটি যদি তিনটি সংখ্যার যোগফল দিয়ে তৈরি হয়, তাকেই ‘পাত্তি’ বলে। যেমন, ২৩০ ‘পাত্তি’-র যোগফল ৫, এর রেজাল্টও ৫ হবে, ৫৮৯-এর যোগফল ২২, এর রেজাল্ট ২ হবে, ৩৭৯-এর যোগফল ১৯, এর রেজাল্ট নয় হবে। যুগ্ম সংখ্যার শেষের অঙ্ক ধরা হয়।

    এবার দেখা যাক ‘ছিপি’ কী? ‘ছিপি’ হল ‘পাত্তি’-র আরও একটা প্রকার। ‘পাত্তি’ ৩ সংখ্যার হয়। কিন্তু ‘ছিপি’ তিনের অধিক সংখ্যার হয়। এককথায়, ‘ছিপি’ হল চার, পাঁচ, ছয় বা সাত সংখ্যার ‘পাত্তি’। ‘ছিপি’ ভাঙলে অনেকগুলো ‘পাত্তি’ হবে বিভিন্ন সংখ্যার।

    যেমন, পাঁচের একটা ‘পাত্তি’ হল ২৩০, এখন এই ২৩০-এর সঙ্গে দুই বা তিনটি নতুন সংখ্যা যদি যোগ করা হয়, তা কেমন হবে? ধরুন, ২৩০-এর সঙ্গে আমি এক, পাঁচ ও আট যোগ করলাম, তাহলে সংখ্যাটি দাঁড়াল ১২৩৫৮০। এই ছয় সংখ্যার ‘পাত্তি’টি হল একটা ‘ছিপি’। অর্থাৎ, ‘ছিপি’ ভাঙলে আমরা বেশ অনেকগুলো ‘পাত্তি’ পাব। যেমন, ছয়ের ‘পাত্তি’ হল ১২৩। এভাবেই, ২৩৫ হল ১০, ৩৫৮ হল ১৬ বা ছয়, ৫৮০ হল ১৪ বা চার ইত্যাদি। এখন এই ১২৩৫৮০-এর যে-কোনও তিনটি করে সংখ্যার (ছোট থেকে বড়) যোগফল রেজাল্টের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে হবে। রেজাল্ট কীভাবে মেলানো হবে? যদি দেখেন, রেজাল্ট হল নয়। কিন্তু আপনি খেলেছেন এক, যেহেতু আপনার ‘ছিপি’-র মধ্যে থেকে ‘পাত্তি’-কে ভাঙলে নয় পাওয়া যাচ্ছে, ফলে, আপনি পেমেন্ট পাবেন।

    খেলবেন কীভাবে এই জুয়া-লটারি? আপনাকে খুঁজে খুঁজে, আপনার এলাকার ‘বুকি’-র কাছে যেতে হবে বা অনলাইন অ্যাপ, বা হোয়াটস্যাপ-এ খেলতে হবে। প্রতিবার খেলার পর একটা ৫০০ টাকার স্লিপ পাবেন ‘কনফার্মেশন’ হিসেবে, যদি ‘বুকি’-র কাছে খেলেন। অনলাইন-এ খেললে স্লিপ পাবেন অনলাইনেই। খেলার রেজাল্টের ৩০ মিনিট আগে থেকে ‘বুকি’ ‘বাজি’ নেওয়া বন্ধ করে দেয়, শুধু ফোন ‘বেট’ চলে আরও ১৫ মিনিট মতো। ‘গদিঘর’ থেকে ‘রানার’ এসে ‘বুকি’-র হিসেবের খাতা নিয়ে যায়। এরপর ওই খাতা, অনলাইন হিসাব এবং ফোন বেটিং, সব মিলিয়ে দেখা হয়। কী দেখা হয়? দেখা হয়, কোন ঘরে, কোন সংখ্যায় ‘পাত্তি’তে, ‘ছিপি’তে সবচেয়ে কম টাকার খেলা হয়েছে। যখনই এই মিলিয়ে দেখা শেষ হয়, ‘গদিঘর’ থেকে ‘পাত্তি’ দিয়ে সেই ঘর বা সংখ্যা বুকিদের জানিয়ে দেয়। মনে করুন, আপনি ওই ঘর বা সংখ্যাটা খেলেছিলেন, আপনি তখন ‘পেমেন্ট’ পাবেন। অর্থাৎ, আপনার পকেটে মাল ঢুকল। না-হলে আবার খেলতে হবে।

    এবার একটা ‘মাদুলি’র কথা বলি। এই মাদুলি ডানহাতের কনুইয়ের ওপরে পরলেই কেল্লাফতে। ‘কলকাতা ফটাফট’ আপনি ফটাফট পেয়ে যাবেন। কীভাবে মাদুলি বানাবেন, জেনে নিন।

    একটা এমন বটগাছ খুঁজে বার করুন, যেটা ‘পরগাছা’, অর্থাৎ অন্য কোনও গাছের গায়ে হয়েছে। সেই গাছের এক ইঞ্চি পরিমাণ শিকড় কেটে আনুন। এবার একটা কাক ধরে আনুন। কালো কাক। তাকে ভাল করে চান করিয়ে দুধ খাওয়ান। তারপর তার বাঁ-পায়ের একটা নখ কেটে নিয়ে, ওকে উড়িয়ে দিন। ওই নখ আর শিকড় বেটে, একটা তিন ধাতুর তৈরি মাদুলিতে ভরে ১০০বার ‘বিসমিল্লাহ শরিফ’ পাঠ করুন। হয়ে গেলে, গরম মোম ফেলে মাদুলির মুখ বন্ধ করে দিন।

    ব্যস! এই মাদুলি পরে, বাবু হয়ে ফটাফট খেলে ফেলুন ‘কলকাতা ফটাফট’! জয় আপনার হবেই। এক ‘মুসলিম তান্ত্রিক’-এর দাওয়াই এই মাদুলির নাম— ‘কুবের মাদুলি’। ‘বলিউড’, ‘ভারতীয় ক্রিকেট’, ‘জ্যোতিষ-তান্ত্রিক’ লাইন— এই তিন জায়গায় সব সময় সম্প্রীতির হাওয়া বইছে! জয় গুরু।

    বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: জুয়া ও মাদুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook