ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ‘শব্দহীন কোন ভূত’


    সায়ন্তন দত্ত (January 7, 2025)
     

    গতরাত্রে আমি যেন এক ছায়ার জগতে ছিলাম…’ এই বলে লেখা শুরু করেছিলেন ম্যাক্সিম গোর্কি। হ্যাঁ— সোভিয়েত রাশিয়ার বিখ্যাততম ঔপন্যাসিক, ‘মা’ উপন্যাসের লেখক এবং সারা দুনিয়ার মেহনতি মানুষের শ্রমকে সাহিত্যের কেন্দ্রে নিয়ে আসার নেপথ্যে যে ম্যাক্সিম গোর্কি— সেই গোর্কিই ৪ জুলাই, ১৮৯৬ সালে রাশিয়ার এক সংবাদপত্রে এইভাবে এক লেখা শুরু করেছিলেন। তখনও অক্টোবর বিপ্লব হয়নি, রাশিয়াতে জারের শাসন, পথে-ঘাটে মোটরগাড়ি নেই, ঘরে ঘরে ইলেকট্রিসিটি নেই, দূরপাল্লার ট্রেন, উড়ে চলা জাহাজ— কিছুই নেই। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য ভরসা মূলত ঘোড়ায় টানা গাড়ি। তবে সেসবের মধ্যেই, সারা পৃথিবীতেই অল্পস্বল্প কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে— নতুন কী এক যন্তর এসেছে, যাতে করে নাকি মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখিকে নড়াচড়া করে বেড়াতে দেখা যায়! বেশিরভাগ মানুষই একে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন— কিন্তু যারা সত্যি সত্যি তা দেখতে পেয়েছিলেন, তাঁরা অনেকেই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন যন্ত্রের কারিকুরি দেখে। কেউ কেউ তা লিখে প্রকাশ করছিলেন। ম্যাক্সিম গোর্কি তাঁদেরই একজন।

    আরও পড়ুন : মূল অস্কারের সঙ্গে সাতটি খুদে অস্কার জিতেছিল ওয়াল্ট ডিজনির সেই অ্যানিমেশন ছবি…

    ম্যাক্সিম গোর্কি

    ‘যদি আপনারা জানতেন, সে জগৎ কেমন অদ্ভুত! শব্দহীন, রঙহীন, অথচ সবকিছু আছে— মাটি, আকাশ, গাছ, মানুষ, জল, বাতাস— কিন্তু সবই কেমন একঘেয়ে, শুধু ধূসর। ধূসর সূর্যের ধূসর আলো, ধূসর আকাশে ছড়িয়ে আছে। মানুষের ধূসর মুখে ধূসর চোখ, আর গাছের পাতায় কেমন ছাইরং। এ যেন জীবন নয়, তার ছায়া। এ যেন চলন নয়, শব্দহীন কোন ভূত!’

    ফেনাকিস্টোস্কোপ, জুওট্রোপ, প্র্যাক্সিনোস্কোপ ইত্যাদি নামে অনেক চেষ্টা চলছিল— কীভাবে স্থিরচিত্রে গতির মায়া যোগ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই চেষ্টা যিনি চালাচ্ছিলেন, তিনি টমাস আলভা এডিসন, যাকে আমরা মোটামুটি ইলেকট্রিক বাল্বের আবিষ্কর্তা বলে চিনি। এই এডিসনই চেষ্টা করছিলেন, কীভাবে আলোর সাহায্যেই স্থির চিত্রকে চলমান চিত্রতে রূপান্তরিত করা যায়।

    এই বর্ণনা পড়ে আজকের পাঠকের অদ্ভুত লাগতে বাধ্য। কারণ, ম্যাক্সিম গোর্কি এই লেখা লিখছেন প্রথমবার লুমিয়ের ব্রাদার্সের সিনেম্যাটোগ্রাফ প্রদর্শনী দেখে। বলা বাহুল্য, নির্বাক সাদা-কালো সেই চলমান ছবি, একটি ট্রেনের স্টেশনে এসে থামা, কিংবা ছুটির সময় ফ্যাক্টরি থেকে শ্রমিকরা বেরিয়ে যাচ্ছেন— এরকম একগুচ্ছ ছোট ছোট চলমান দৃশ্য একসঙ্গে দেখানো হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে প্যারিসে প্রথম সিনেম্যাটোগ্রাফ যন্ত্রের এই আশ্চর্য খেলা দেখিয়ে ফ্রান্সের এই দুই ভাই, অগস্ত আর লুই লুমিয়ের-এর কোম্পানি খুব দ্রুত প্রায় সারা পৃথিবীর প্রধান প্রধান শহরেই তাঁদের যন্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে যায়। ম্যাক্সিম গোর্কি যে-দিন এই লেখা প্রকাশ করছেন, তার ঠিক চার দিন পর, ৭ জুলাই বম্বের ওয়াটসন হোটেলে ভারতে প্রথমবারের জন্য সিনেম্যাটোগ্রাফ প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছিল।

    আলোড়ন ফেলেছিল লুমিয়ের ব্রাদার্সের সিনেম্যাটোগ্রাফ প্রদর্শনী

    তবে, এই সব-কিছুর সূত্রপাত শুধুমাত্র লুমিয়ের ভাতৃদ্বয়ের হাত ধরেই নয়। সারা পৃথিবীতে অনেকেই নানা উপায়ে স্থিরচিত্রকে চলমান করে তুলতে চেয়েছিলেন। ফেনাকিস্টোস্কোপ, জুওট্রোপ, প্র্যাক্সিনোস্কোপ ইত্যাদি নামে অনেক চেষ্টা চলছিল— কীভাবে স্থিরচিত্রে গতির মায়া যোগ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই চেষ্টা যিনি চালাচ্ছিলেন, তিনি টমাস আলভা এডিসন, যাকে আমরা মোটামুটি ইলেকট্রিক বাল্বের আবিষ্কর্তা বলে চিনি। এই এডিসনই চেষ্টা করছিলেন, কীভাবে আলোর সাহায্যেই স্থির চিত্রকে চলমান চিত্রতে রূপান্তরিত করা যায়। তিনি বলতেন, ‘ফোনোগ্রাফ যে জিনিসটা করে শব্দ নিয়ে, সেটা দৃশ্য নিয়ে করা যায় কিনা, সেটাই পরীক্ষা করে দেখা উদ্দেশ্য!’

    কিন্তু এডিসনও সমস্ত কিছু একা একা করেননি। লুমিয়ের ভাইদের মতোই ওঁর একটা ল্যাবরটেরি ছিল— যেখানে চাকরি করতে এসেছিলেন উইলিয়াম ডিক্সন। ডিক্সনের জন্ম ফ্রান্সে, ১৮৬০ সালের অগাস্ট মাসে। ১৮৭৯ সালে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি এডিসনকে চিঠি লিখে কাজের সন্ধান চান। কারণ, ফোটোগ্রাফি এবং ক্যামেরা ডিক্সনকে ভীষণই উত্তেজিত করত। ১৮৭৯ সালেই মা আর দুই বোনকে নিয়ে ডিক্সন আমেরিকায় আসেন, আর তার চার বছর পর, ১৮৮৩ সালে, এডিসনের ল্যাবরেটরি থেকে ওঁর কাজের ডাক পড়ে।

    টমাস আলভা এডিসন এমন যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করছিলেন, যা কিনা গতিময় চিত্র ধরে রাখতে পারবে

    মূলত, উইলিয়াম ডিক্সনের কাজের সূত্র ধরেই টমাস আলভা এডিসন এমন যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করছিলেন, যা কিনা গতিময় চিত্র ধরে রাখতে পারেবে। ১৮৮৮ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট অফিসে এডিসন প্রথম পেটেন্টের জন্য চেষ্টা করেন, কিন্তু সে-চেষ্টা সফল হয়নি। এরপরে বেশ কিছু দিন কেটে যায়, ডিক্সনের নেতৃত্বে এডিসনের ল্যাবরেটরিতে আজকের ভাষায় যা সেলুলয়েড ফিল্ম, সেরকম ফিল্মের ওপর ইমেজ রেকর্ড করার চেষ্টা চলতে থাকে। অবশেষে, ১৮৯৩ সালের শেষের দিকে ওঁরা একটা যন্ত্র নির্মাণ করতে সক্ষম হন, যেখানে এই চলমান চিত্রমালা রেকর্ড এবং প্রদর্শন— দুটোই একসঙ্গে করা যাবে।

    ভিটাস্কোপ-এর বিজ্ঞাপন

    তারপর, ১৮৯৪ সালের আজকের দিনে, ৭ জানুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট অফিস সিলমোহর দেয়, কাইনেটোস্কোপ নামের এই যন্ত্র এডিসনের নামে স্বীকৃত হয়।

    এই কাইনেটোস্কোপ-কেই লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের সিনেম্যাটোগ্রাফ যন্ত্রের সবচেয়ে কাছাকাছি পূর্বসূরি হিসেবে ধরা হয়। বেশ বড় আকৃতির একটা বাক্সের মধ্যে ফিল্মের রোল পুরে সেটাকে একটানা চালিয়ে করে ছবিকে চলমান করে তোলার কায়দা আবিষ্কার করেছিলেন ডিক্সন-এডিসন। সিনেম্যাটোগ্রাফ যন্ত্রের সঙ্গে তাঁদের কাজের প্রধান পার্থক্য হল— কাইনেটোস্কোপ একসঙ্গে অনেক মানুষ দেখতে পেতেন না। বাক্সের ফুটোয় চোখ লাগিয়ে একবারে একজন করে দর্শক তা দেখার সুযোগ পেতেন। অর্থাৎ, ছবি নড়তে শুরু করল— কিন্তু তখনও মিউজিক হল, কিংবা নাটকের মতো অনেক দর্শকের একসঙ্গে বসে তা দেখার সুযোগ হয়নি। তার জন্য অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। এক বছরের মাথাতেই সেই ঘটনা ঘটে যায়, এবং যা নিয়ে ম্যাক্সিম গোর্কি তাঁর ওই অসামান্য প্রতিক্রিয়া লেখেন।

    তবে এই গোটা যাত্রাপথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আজকের দিনের এই পেটেন্ট পাওয়ার ঘটনা, কারণ কাইনেটোস্কোপ যন্ত্র না থাকলে সিনেম্যাটোগ্রাফ এত দ্রুত তৈরিই হতে পারত না! 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook