কয়েকটি কবিতা
চরিত্র
তিনটে পাতা পড়ার পর ভাঁজ করে যে রাখছ
রেলকামরায় কুড়িয়ে পাওয়া হঠাৎই উপন্যাস,
নামার সময় ফেলে যাচ্ছ চরিত্রদের বাক্স…
চাইছ, তবু জড়াচ্ছ না। এটাই বা কেমন ন্যায়?
স্টেশন থেকে ছুটছে ধোঁয়া খবর নিয়ে দূর যে,
তার তো রাহাখরচ আছে। তুমি আসার সংবাদ
সে দেয় ছুঁড়ে বাসিন্দাদের রেলিং ছোঁয়া সূর্যে…
ঘড়ির ঘুম টুকরো হলো, এটুকুই কী কম বা?
তোমার থাকা দু’চারদিনের। ট্যুরিস্ট লজ-ই বন্ধু।
রেলকামরায় কুড়িয়ে পাওয়া হঠাৎই উপন্যাস –
পড়তে গিয়ে সন্ধে হলো। জ্বলে উঠল মোম। দূর
চরিত্রেরা এক এক ক’রে তোমার ঘরের কোণ নেয়…
গোপন যদি এমনই হয়, কী দরকার, প্রকাশ্যে?
চাইছে, তবু জড়াচ্ছে না। কেবল ভালবাসছে।
নিরুদ্দেশ
যে-কারখানা বন্ধ হলো, তার ধোঁয়া নিরুদ্দেশ।
পাঁচিল জুড়ে শ্যাওলা আর দাবি-দাওয়ার পোস্টার…
তুমি যখন শান্তিকামী, মন রেখেছ বুদ্ধে,
তখন সময় দুঃসাহসী। সবাই জানে, দোষ তার।
নিশান নাকি উত্তরীয়, এখন সবই ঝাপসা।
দূরের কোনও ঘণ্টাধ্বনি, ভালই লাগে শুনতে।
ঝমঝমানো ঝর্না, যাকে উর্দু ডাকে ‘আবশার’ –
তাই দেখে খুব থমকে গেছ। গন্তব্য রুমটেক।
খবর সবই পাবে, হয় কেমন ক’রে তাই বা।
মিছিল থেকে অনেক দূরে, পর্যটনে হাঁটছ…
তোমার হাতে উঠছে ধোঁয়া, জিরিয়ে নিলো ড্রাইভার
ব্যাগের মধ্যে ঘুমোচ্ছেন আর-না-পড়া বার্নার্ড শ’।
যে-কারখানা বন্ধ হলো, তার ধোঁয়া নিরুদ্দেশ।
তুমি যখন শান্তিকামী, মন রেখেছ বুদ্ধে।
বিকেল
একটি বিকেল নামল, যেন তুখোড় অনুগদ্য।
বাক্য ছোট, জরিপ বেশি। কলেজফেরা কন্যা
লিখছে আর কাটছে তাকে। প্রসঙ্গ ভূমধ্য।
আসিফ তাকে দেখে তোমায় বলছে, ‘ছোট বোন, না?’
এসব খালি তোমায় করে বিব্রত। পার্ক স্ট্রিটকে
দাঁড় করিয়ে দূরে, তুমি হাঁটছ নিচু পড়শি…
মেঘ থেকে সে সম্পাদিত আলোর মতো ছিটকে
আটকে দিলো তোমায়। সেই অষ্টাদশবর্ষী।
কী তার চোখে কমা’র জল, কী বিস্ময়চিহ্ন!
অনেকগুলো ভুল করেছে তার দ্বিতীয় প্রুফটি…
আসিফ গেল শহর। তুমি চাইলে, আবার দিন হোক।
রচনাটির শিরোনাম : ‘প্রাণের অবলুপ্তি’।
একটি বিকেল নামছে, যেন তুখোড় অনুগদ্য।
বাক্য ছোট, জরিপ বেশি। প্রসঙ্গ ভূমধ্য।