সেই পঞ্চাশ বছরেরও আগে, যখন ‘অঙ্কুর’ বানাচ্ছেন শ্যাম বেনেগাল, তখন থেকেই আমার সঙ্গে ওঁর পরিচয় এবং আলাপ। ‘নিশান্ত’, ‘মন্থন’, ‘ভূমিকা’— এই ছবিগুলোর অংশ ছিলাম আমি। তারপর আমি আমার পেশাগত কারণে চলে আসি পুনে-তে। আর শ্যাম বেনেগাল, যাকে বলে, ছিলেন ‘বম্বেইট’, বম্বেরই লোক। সে-সময়ে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা বা এনএসডি থেকে প্রতি বছর নতুন অভিনেতারা আসছে মুম্বইতে। শ্যাম বেনেগাল চাইতেন পর্দায় তাঁদের ব্রেক দিতে। নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরী, শাবানা আজমি, নীনা গুপ্তা, কুলভূষণ খারবান্দা— সকলেই সে-সময়ে ওঁর ছবিতে অভিনয় করতে এসেছেন। আমরা তখন সদ্য অভিনয় করতে আসছি, আমাদের কোনও ‘নখড়া’ ছিল না। আমরা একসঙ্গে হোটেলে থাকতাম, আমি হয়তো অমরিশ পুরীর সঙ্গে থাকছি, নাসির ঘর শেয়ার করছে অন্য কারও সঙ্গে। সে এক অন্য অভিজ্ঞতা! কিন্তু আমি মুম্বই ছে়ড়ে আসার দরুন ধীরে-ধীরে ওঁর অভিনেতাদের গোষ্ঠী থেকে সরে এসেছিলাম। ওঁর অভিনেতারা সকলেই মুম্বইয়ের তখন। আবার ওঁর সঙ্গে কাজ করেছিলাম আটের দশকে, ‘সুমসান’-এ।
একশো শতাংশ খাঁটি চলচ্চিত্রকার ছিলেন শ্যাম বেনেগাল। ‘অঙ্কুর’ হওয়ার আগে বহু কর্পোরেট ছবি, তথ্যচিত্রর কাজ করতে হয়েছে শ্যাম-কে। অনেকটা পরিশ্রম করতে হয়েছে। ‘অঙ্কুর’ একটা নতুন মিনার হয়ে উঠল, তার পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি শ্যাম বেনেগাল-কে। নতুন, সমান্তরাল ভারতীয় ছবির পথপ্রদর্শক হয়ে উঠলেন তিনি। ওই সাতের দশকটাকে কর্পোরেট ছুঁতে পারেনি। টেলিভিশন আসার আগের সেই জমানাটাই ছিল অন্যরকম।
ভারতীয় নবতরঙ্গ তো সরাসরি কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, ধীরে-ধীরে তা আন্দোলন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু টেলিভিশন আসার পরেই অবস্থাটা বদলাতে শুরু করেছিল। প্যারালাল বা সমান্তরাল ছবি টিকে ছিল কেন? হল পাচ্ছিল বলেই তো! কিন্তু এই সমান্তরাল পরিচালকরা সকলেই আস্তে আস্তে টেলিভিশনের দিকে ঝুঁকলেন সেই আশি থেকে। শ্যাম তখন টিভি-র জন্য ‘যাত্রা’ বানালেন, ‘ভারত এক খোঁজ’ বানালেন, তারপর তো সরকারের হয়ে ‘মেকিং অফ মহাত্মা’ বা ‘বোস: দ্য ফরগটেন হিরো’ গোছের ছবি বানিয়েইছেন।
পেশাদারি সম্পর্কটা হয়তো সারাজীবন চলেনি, কিন্তু সম্পর্কটা ছিলই। আমাকে পদ্মশ্রী-র পর সংবর্ধনাও দিয়েছেন। ওঁর রসবোধে কোনওদিন টোল পড়েনি। শ্যাম বেনেগাল, শ্যাম বেনেগাল হয়ে ওঠার পরেও কিন্তু প্রযোজক পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। তাই নিয়ে কোনওদিন অভিযোগ করেননি।
মনে পড়বে সেসব দিনগুলোর কথা, শ্যামের কথা।