রাজা মিত্র আমার প্রথম ছবি, যাকে বলে ডেবিউ ছবি, তার পরিচালক। আমার ওঁর ছবিতে কাজ করার নেপথ্যে রবিজেঠু, মানে রবি ঘোষের বিরাট অবদান রয়েছে। রবি ঘোষের সুপারিশেই আমি শৈবাল মিত্রর হিন্দি সিরিজ ‘কালপুরুষ’-এ অভিনয় করার সুযোগ পাই। তার শুটিংয়ে একদিন এক ভদ্রলোক এসে বললেন, ‘আমার নাম রাজা মিত্র।’ তার আগে রাজাদা ‘একটি জীবন’ বানিয়েছেন। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল সেই ছবি। আমি সে-কথা জানতাম। রাজাদা আমাকে বললেন, ‘রবিদা আমাকে তোমার শুটিংটা দেখতে পাঠালেন।’ আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম।
তারপর রাজাদা জানান, ‘নয়নতারা’ বলে একটি ছবি করছেন তিনি। নামচরিত্রে রয়েছেন মমতাশঙ্কর। আমাকে ওঁর ছেলের চরিত্রে কাস্ট করতে চান। বলেছিলেন, ‘খুব অন্যরকম, ইন্টারেস্টিং চরিত্র। করে দেখো।’ সেইভাবেই, আমার শুটিং দেখে আমাকে কাস্ট করেছিলেন রাজাদা।
সেই আমার সঙ্গে ওঁর প্রথম আর শেষ কাজ। রাজাদা তো খুব বেশি ছবি করতেন না। পছন্দমতো বিষয় না পেলে, কেবল ছবি করার জন্য ছবি করতেন না রাজাদা। যখন মনে করতেন এই ছবি করা উচিত, তখনই করতেন। তাই ওঁর ছবির সংখ্যাও কম।
প্রথম ছবির স্মৃতি বলেই ‘নয়নতারা’-র স্মৃতি এখনও টাটকা। আমি তখন নতুন, তাও আমার সিনগুলো কী যত্ন নিয়ে শুট করেছিলেন! সবচেয়ে বেশি যেটা মনে পড়ে, তা হল এই ছবিতে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের কাস্টিং। সাবুদি তো বাঘিনি প্রায় অভিনেত্রী হিসেবে। কিন্তু ওঁর একটা ব্যাপার ছিল, উনি বেশি বয়সি চরিত্রে অভিনয় করতে চাইতেন না। রাজাদাই বোধহয় সেই পরিচালক, যিনি পেরেছিলেন, একটি বয়স্ক ও নো মেক-আপ লুকের চরিত্রে সাবুদিকে অভিনয় করাতে। অত বাঘা-বাঘা অভিনেতাকে সামলে ছবি করা চাট্টিখানি কথা ছিল না। মনে পড়ে, বালিগঞ্জ ট্রামডিপোর ওখানে একটা ক্যাসেটের দোকানের সেট আপ করা হয়েছিল, সেখানে আউটডোর শুটিং হত।
রাজাদার চলে যাওয়ার খবর মর্মাহত করেছে ভীষণ। ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।