তরঙ্গনাথ-তিন
শ্রীচরণেষু পরমপূজনীয়া মা, তাং ১৪ মার্চ ১৯০৩
খুশির খবর জানাইতেই এই চিঠি; আগামী সপ্তাহ হইতে আমার আরও একটি ট্রেনিং শুরু হইতে চলিয়াছে। মোটর ও জিপ চালাইতে হইবে; কারণ ঘোড়ায় চড়িয়া যে পথ পাড়ি হওয়া সম্ভব, তাহা হইতে অধিক দূর এবং দূরান্তের পথে যাইতে হইবে, অল্প সময়ের ব্যবধানে; ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাইলেই কোম্পানি একখানি জিপ পাঠাইবে আমার নামে। মি. অগাস্ট তাঁহার পাশে বসাইয়া জিপে করিয়া পূর্ণিয়াতে লইয়া গিয়াছিলেন; তাহাতেই বুঝিলাম যে ঘোড়া হইতে গাড়ি কতখানি সুরক্ষিত! সমস্ত পথটাই সাহেব নীরব রহিলেন; আমিও তাই তাঁর চালানোতেই পূর্ণ মনঃসংযোগ করিতে পারিয়াছিলাম; বুঝিলাম যে, তাঁহার ন্যায় ওইরূপ দক্ষতাই আমাকেও অর্জন করিতে হইবে; তোমাদিগের আশীর্বাদে উতরাইয়া যাইব বলিয়াই বোধ হয়।
এই স্থানের জল-বায়ু খুবই আরামদায়ক, মানুষজনও ভালই; কথ্য ভাষার নাম হইল সুরজপুরী। গ্রামের মেলায় যাইয়াছিলাম; ‘বেলোয়ারি’ চুড়ি এবং পিতলের গহনার সহিত আরও এক প্রকার গহনা দেখিলাম, স্থানীয় ভাষায় ইহারা বলে ‘রুপদস্তা’। সিসার সহিত সামান্য রূপা মিশাইয়া তৈয়ারি, দেখিতে রূপার ন্যায় হইলেও নকশাগুলি ভিন্ন; আমার আর্দালি ছোটেলাল আর তাহার বউ হিরিয়া বাছিয়া দিয়াছে। সকলের জন্যই কিছু কিছু যাহা কিনিয়াছি, সেগুলি হাতে পাইয়া তোমরা হয়তো হাসিবে। তোমাদের পূর্বেই, হিরিয়া ও তাহার দেহাতী সঙ্গিনীরাও বেশ খানিক হাসিয়া লইয়াছে। মেলা দেখিতে যাইয়া জানিলাম যে, আমাকে তাহারা চিনিতেছে ‘দারোগা-ব্রাহ্মণবাবু’ বলিয়া; বুঝিলাম যে এখন হইতে মেলায় ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেও সতর্ক থাকিতে হইবে। রাসখোলায় আমাদিগের সেই রাসের মেলায় ঘুরিতে ঘুরিতে টল্লা-গুলি, গুলতি বা লাটাই কিনিবার আমোদ হইতে যাহা একেবারেই স্বতন্ত্র।
শুনিয়াছি যে এই অঞ্চলটিতে আমাদের মা গঙ্গা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বড় নদী আছে— মহানন্দা, কোশী, গণ্ডক, রিঘা এইরূপ সব নামে, ইহা ছাড়াও আছে বারান্দি, ঘাগরা। আমি শুধু কোশী নদীটাই দেখিয়াছি; নীলাকাশ মাথায় লইয়া কী যে অপরূপ তাহার স্বচ্ছতা! তবে নৌকা ভাসা ছবি নাই; দপ্তর হইতে ম্যাপ চাহিয়া বাকি নদীগুলির অবস্থান চিনিব, এমনই মনস্থ করিয়াছি। প্রকৃতির শোভা মায়াময়!
আরও একজোড়া বুট এবং উর্দি পাইয়াছি। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইলে পূর্ণিয়া-কাটিহার যাতায়াত বাড়িবে এমনই আন্দাজ হইতেছে। সদর শহরে সাহেবদের সংখ্যাও অধিক, মেমসাহেবদেরও।
খুব সত্বর যে ছুটি পাইব এমন আশা কম। উতলা বোধ করিও না।
রাণী ও বদুকে স্নেহাশিস পাঠাইলাম। তুমি ও বাবা আমার ভক্তিপূর্ণ প্রণাম লইও।
ইতি
আপনার সেবক
তনু
পুনশ্চ: দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী ইংরেজি তারিখ লেখাই অভ্যাস করিতে হইয়াছে।
২.
পূর্ণিয়া থেকে ফেরার পথে মি. অগাস্ট যে একটি মাত্র বাক্য খরচ করেছিলেন তা হল, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তো? আমার উত্তরের অপেক্ষায় না থেকেই বলেছিলেন, ঘোড়াকে বাগে আনার ধরন এবং তার পিঠে আমার সওয়ারি হওয়ার স্টাইল দেখেই নাকি তিনি আমার পারদর্শিতা বুঝেছেন। এও নাকি বুঝেছেন যে, ঘোড়ায় চড়ার অনুশীলনটা আমি মনোযোগের সঙ্গেই করেছি। আধা-শহরে বড় হয়ে কে আর ঘোড়ায় চড়া শেখে? মাইল তিনেক হেঁটেই তো রেলস্টেশন; আর ট্রেন ধরলেই শেয়ালদা, মানে কলকাতা। ফলে মাউন্টেড পুলিশের ট্রেনিং রিপোর্টের ভরসাতেই হয়তো ড্রাইভিং-ট্রেনিংটার কথাও ভাবছেন। পূর্ণিয়া-কাটিহার এসব অঞ্চলে রেল ব্যবস্থা বেশ ভাল হলেও সড়কপথ তেমন আধুনিক নয়; গাড়ির রাস্তাও যে খুব মসৃণ তা-ও নয়। সেজন্যই হয়তো আমার মতো ‘tough young man’ কে মনে ধরেছে। আমার আগে যে তিনজন নেটিভ অফিসার এসেছিল তারা কেউই ড্রাইভিং-ট্রেনিংয়ের সুযোগটা পায়নি; আরও প্রত্যন্ত গ্রামে বদলি করা হয়েছে তাদের। তবে পরদিন দপ্তরে এসে ওঁর ঘরে ডেকে পাঠিয়ে দু-একটা মামুলি কথা সেরে হাসতে হাসতে যে প্রসঙ্গ এনেছিলেন সেটা বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ।
মেলা কেমন লাগল? নাচ দেখলে?
না স্যর, বিকেল বিকেল ফিরে এসেছি।
রুপদস্তার জিনিসগুলিতে এখানকার ট্রাইবাল কালচারটা বোঝা যায়।
হ্যাঁ স্যর; নকশাগুলো আলাদা।
গাড়ি নিয়ে শহরে যাতায়াত করলে, ক্লাব-কালচারটা পাবে; নেটিভরা তো খুবই পছন্দ করে। আর তুমি তো প্রাইজ-বয়, মাই ডিয়ার!
মাথা নিচু করে শুনলাম। উত্তর দিচ্ছি না দেখে মি. অগাস্টও আর কথা বাড়ালেন না। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দাদামশাই নিয়মিত ক্লাবে যেতেন; দিদিমাকে নিয়ে সাহেবসুবোদের পার্টিতেও; বিলিতি মদ এবং খানসামার রান্না করা মুরগি ও শুয়োরের কোপ্তা, কাবাব-রোস্ট এসবেও বিশেষ রুচি তৈরি করেছেন দাদামশাই। অন্যদিকে পুলিশে চাকরি করা মেজো-মেসোমশাইয়েরও রুচির অভিমুখ সেই দিকেই। দারোগার পদ বলে সুযোগ খুবই কম। তবে সেজো মেসোমশাই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েও ক্লাব এবং পার্টি— এ দুটি থেকেই অনেক দূরে রাখেন নিজেকে। এ জন্যই বলেকয়ে সুপারিশ করে, শহর ছেড়ে গ্রামে-গ্রামে বদলি নিয়ে ঘোড়া, এমনকী হাতিতে চড়েও পরিদর্শনে যান। সিংভূম, মানভূম, গিরিডি, মধুপুর, তারাটাঁড়, কার্মাটাঁড়, অহল্যাপুর এসব জায়গাই তাঁর কর্মস্থল। যেসব জায়গা মনে ধরে, সেখানকার জমি কিনে রাখেন। দু-দুটো পাকা বাড়িও করেছেন, মধুপুর আর গিরিডিতে; এ ব্যাপারে মাসিমাও সহমত। ফলে এই চাকরিজীবনকেও দু-দিক দিয়েই দেখা যায়। আমি তা দেখেওছি। কিন্তু সাহেবের ইঙ্গিতটা আরও একটু ভেবে দেখার; যেন সুড়সুড়ি দিয়ে বুঝে নিতে চান যে, ‘মেয়েমানুষ’ সম্পর্কে উৎসাহ কেমন! বুঝতে চাইছেন যে মেয়ে দেখতে মেলায় গিয়েছিলাম কি না! নিরন্ন ঘরের যুবতী মেয়েদের যে পুলিশ কোয়ার্টারে বা সাহেবদের বাংলোয় যাতায়াত থাকবে, এ আর নতুন কী! গাড়ি করে শহরে যাতায়াত করিয়ে সে ব্যাপারেও কি আমার রুচি তৈরি করতে চাইছেন মি. অগাস্ট? ক্লাব-পার্টিতে গিয়ে মহিলা-সঙ্গই তো দস্তুর। অবাক হয়ে ভাবলাম যে দেহগত কামনা-বাসনার সামগ্রী তবে ছেলেরাও! ‘প্রাইজ-বয়’, এই কথাটাই যেন খট করে কানে লাগল। সাহেবের সামনে নিজেকে মনে হল একেবারে বেআব্রু। মি. অগাস্টের মুখে ‘রুপদস্তা’ শুনে কিছুটা স্তম্ভিতও। ওই ছোটেলাল আমার আর্দালি না নজরদার? না কি আর কেউ!
৩.
সহজ থাকতে, দপ্তর বন্ধ হয়ে গেলে আজ আবার ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ঘোড়ার নাম বুনো— কোন এক বাঙালি নেটিভ সাহেবকে পিঠ থেকে বারে বারে ফেলে দিয়েছিল; তিনি তাই রেগে গিয়ে একে বুনো বলে গাল দিতেন। অন্য আরও দুটি ঘোড়ার তুলনায় বুনোর বয়স কম; কিন্তু চেহারায় সে মস্ত এবং ছুট লাগালে আর রক্ষে নেই, তখন তার একমাত্র লক্ষ্যই হল যুদ্ধং দেহি মে! আমার কাছে বশ মানতে বাধ্য হয়ে, এখন আর পিঠে নিয়েই দৌড় লাগায় না। ওর পিঠে চড়ার সময়ে সহিসের মুখেচোখে প্রথম দিন যে চাপা কৌতুক দেখেছিলাম, সেটা সম্পূর্ণ বদলে গেছিল ঘণ্টা খানেক পর বুনোকে বাগ মানিয়ে, তার পিঠে চেপে অক্ষত অবস্থায় আমাকে ফিরে আসতে দেখে। বুনোর সহিসের সেই হতবাক অবস্থা দেখে, আমিও তো অবাক হইনি। এখন তো বুনো অপেক্ষা করে থাকে কখন আমি তার সওয়ারি হব; আর সে শুরু করে দেবে অচেনা পথে তার সেই চেনা দৌড়। নদীর দিকটায় না গিয়ে আজ এসেছি জনহীন এক প্রান্তরে। অনেক দূর দিয়ে একটা রেলগাড়ি চলেছে; নীল আকাশে ইঞ্জিনের ধোঁয়া উড়িয়ে। মনে হচ্ছে কালো রং দিয়ে কে যেন আঁকিবুকি কাটতে কাটতে ইঞ্জিনের সঙ্গে ছুটছে। বাচ্চা ছেলেরা যেমন দৌড়োয় ঘুড়ি নিয়ে লাটাইয়ের সুতো ছাড়তে ছাড়তে, খুব ইচ্ছে করে ট্রেনের সঙ্গে ঘোড়া ছুটিয়ে পাল্লা দিতে!
ভয়ঙ্কর ঝাঁকানি দিয়ে বুনো থেমে যেতেই বুঝলাম বিপদ-সঙ্কেত; নিজেকে ঝট করে সামলে নিয়ে দেখি মস্ত একটা সাপ ফণা তুলে পথ আগলেছে; তারস্বরে চেঁচাতে শুরু করেছে বুনো। এক গুলিতেই শেষ করে দিতে পারতাম; কিন্তু গুলির ওই বুক কাঁপানো গুড়ুম আওয়াজে অন্য বিপদ হতে পারে ভেবে নিরস্ত হলাম। বুনোর পায়ে ছোবল মারার আগেই কোমরে ঝোলানো ধারালো ছোরাটা বার করে ওর ফণা তাক করে ছুঁড়তেই, এক আঘাতেই লুটিয়ে পড়ল সাপটা। এক পলক দেখে নিয়ে বুনোর পিঠ থেকে নেমে, গিঁথে যাওয়া ছোরাটা সাপের মাথা থেকে ছাড়িয়ে, ঘাসে মুছে, কোমর থেকে আংটা দিয়ে ঝোলানো সেই চামড়ার খাপে রেখে দিলাম। শুকনো মাটিতে ডান হাতটা ঘষে নিয়ে, নেতিয়ে পোড়া সাপটার গলার কাছে ধরে ছুঁড়ে দিলাম ঝোপ-জঙ্গলের ভেতর। এখানকার গ্রাম্য মানুষরা যেমন অনেক জন্তু-জানোয়ার মেরে তাদের মাংস খায়, তেমনই অনেক কিছু মারেও না। সাপকে এরা কী জ্ঞানে দেখে তা অবশ্য জানা নেই; তবে অস্ত্রের আঘাতে সাপের মৃত্যু দেখে, নানারকম সন্দেহের বশে তারা যে নিরাপত্তার অভাবে ভুগবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ফলে, চিহ্ন লোপাট করে তবেই বুনোর পিঠে চড়ে বসলাম; নির্দেশ পেয়েই নড়ে উঠল বুন। তার সেই বিপদ-সঙ্কেত জাগানো চিৎকার থামিয়ে এখন একটু দুলকি চালে চলেছে; সূর্যাস্তের কমলা রং দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে সন্ধের ছায়া পড়া ধূসর আকাশে; তারা ফুটে যাবার আগেই কোয়ার্টারে ফিরব মনস্থ করে বুনোকে নির্দেশ দিলাম; গতি বাড়িয়ে বুনোও শুরু করল তার সেই প্রমত্ত দৌড়।
৪.
সকালবেলা চা দিতে এসেই ছোটেলালের কথায় আবার চমকালাম।
কালকে কি ঘোড়া থেকে নামতে হয়েছিল বাবু?
তা একটু হয়েছিল বটে!
তাই ভাবছিলাম যে আপনার ব্রিচেসে এত চোরকাঁটা লাগল কী করে! অথচ ঘাস বা মাটি
কিছুই লেগে নেই!
হঠাৎ একটা সাপ রাস্তা আগলে ছিল; সেই মরা সাপের গতি করতে নামতে হয়েছিল।
ব্রাহ্মণের হাতে নিধন হয়ে সাপটার তো গতি হয়ে গেল বাবু! ভয় লাগেনি বাবু? মুখ নিচু করে হাসতে হাসতে স্তম্ভিত হয়ে ভাবতে লাগলাম ছোটেলালের কথাটা। এতদিন জানতাম যে শাপভ্রষ্ট দেবতারা সাপ, ব্যাং বা বাঁদর হয়ে মর্ত্যে জন্মায়; এই প্রথম শুনলাম যে ব্রাহ্মণের হাতে নিধন হয়ে সাপেরও স্বর্গ-প্রাপ্তির সম্ভাবনা একেবারে নিশ্চিত! তবে ভেতরে ভেতরে আবার একবার কেঁপে উঠলাম আমার ওপর ছোটেলালের নজরদারি দেখে; ব্রিচেসে বেঁধা চোরকাঁটাগুলো যেন আমার সমস্ত শরীরে বিঁধে রইল। মনে হতে লাগল, চিলের মতো ওর শিকারি চোখে আমি একটা অসহায় ছাগলছানা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৫.
দপ্তরে গিয়ে টেবিলের সামনে বসতেই, এক গ্লাস জল ঢাকা দিয়ে রাখতে রাখতে, ডাকে আসা একখানা খাম দেখিয়ে দিয়ে আর্দালি বলল, বড়সাহেব আপনার হাতে দিতে বলেছেন।
খামের মুখটা পেজ-কাটার দিয়ে নিপুণভাবে কাটা; চিঠিটা যে উনি পড়েছেন সে নিয়ে কোনও লুকোছাপা নেই। খাম থেকে চিঠিটা বার করতেই মনটা যেন শিশুর মতো খুশি হয়ে উঠল। খামের ওপর ইংরেজিতে আমার নাম-ঠিকানা লিখেও তার ওপর একচিলতে জায়গায় তাঁর সেই মুক্তো ঝরানো হস্তাক্ষরে মা আবার আলাদা করে বাংলায় লিখেছেন, ‘বাবা, নিরাপদেষু’।
কল্যাণীয় তনু, ১২ চৈত্র ১৩০৯
তোমার স্বহস্তলিখিত পত্রখানি পাইয়া যৎপরোনাস্তি শান্তি বোধ করিতেছি। নিজ-উন্নতির পথ স্বয়ং তুমি যে বুঝিতে পারিবে, তাহাতে আমাদের বিন্দুমাত্র সংশয় নাই। তোমার ছোটমাসির বড়-জা শিবনিবাস-নিবাসী ভগিনী হিরণ্ময়ীর সূত্রে তোমার জন্য একটি উত্তম সম্বন্ধ আসিয়াছে। অর্থবান না হইলেও তাহারা আমাদের পাল্টিঘর এবং কন্যাটিও সুলক্ষণা; তোমার বাবা বটঠাকুরের সঙ্গে গিয়া কন্যাটিকে দেখিয়া আসিয়াছেন। তুমি ছুটির দরখাস্ত করিয়া রাখো; ছুটি মঞ্জুর হইলেই কুলপুরোহিত আসিয়া বিবাহের দিন স্থির করিবেন।
বড় শহরের ক্লাবে গিয়া মেলামেশা হয়তো বা কিছুটা হইলেও করিতেই হইবে। কিন্তু দপ্তরের কাজ ও ড্রাইভিং শিক্ষার পরে, আমোদে না ভাসিয়া, ঘর সংলগ্ন বাগান করিতে পারো। ফুলগাছের শখ ও নেশা দুই-ই বড় সুন্দর; ইহাতে যেমন তৃপ্তির আমেজ, তেমনই সৃজনের আনন্দ। প্রতিটি নূতন পাতা এবং ফুল তোমার পরিচর্যার অপেক্ষায় যে বার্তা পাঠাইবে, মানুষও তাহা পারিবে না। তখন আর নিজেকে একাকী বোধ হইবে না।
আপনার স্বাস্থ্য ও খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে যত্ন লইতে ভুলিও না।
আশীর্বাদ লইও।
ইতি
মা
পুনশ্চ: ভগিনী হিরণ্ময়ী লিখিয়াছে যে সুশ্রী কন্যাটির নাম তরু, তরুলতা। বালিকার অক্ষর-শিক্ষাও সম্পূর্ণ হইয়াছে।
আমি যে দিনে দিনে বেশ পাকাপোক্ত ভাবেই তনু থেকে তরঙ্গনাথ হয়ে উঠছি, তাতে আর কোনও সন্দেহ নেই। মায়ের চিঠি পেয়ে পরিষ্কার বুঝলাম যে, মোটর বা জিপে করে সদরে গিয়ে ক্লাব কালচারটায় বেশ ভাল রকম হোঁচট খেয়েছেন তাঁরা; মেমসাহেবদের সঙ্গ, তাদের সঙ্গে পার্টি— নাচা-গানা-মদ্যপান ঠেকাতেই তড়িঘড়ি আমার বিয়ের বন্দোবস্ত হয়েছে। কন্যা নির্বাচন এবং ঠিকুজি ইত্যাদি মেলানোও সবই প্রায় এক রকম সারা।
তবে অবসর সময়ে ফুলগাছ লাগিয়ে বাগান করা, এই ব্যাপারটা আমার বেশ মনে ধরেছে।
ভাল লেগেছে এ কথা জেনেও যে, শিবনিবাসের সেই সাক্ষর বালিকাটির নাম তরু বা তরুলতা।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র