ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • একটু মানিয়ে নাও, প্লিজ!


    সারস্বত সেন (November 3, 2023)
     

    সমালোচনা— ফিল্ম, ‘দ্য রয়্যাল হোটেল’ (২০২৩)
    মুখ্য চরিত্র— জুলিয়া গারনার, জেসিকা হেনউইক, হুগো উইভিং প্রমুখ
    সিনেম্যাটোগ্রাফি— মাইকেল ল্যাথাম

    পরিচালনা— কিটি গ্রিন

    ক্রেজি ফাকিং বিচ্‌…’ গজগজ করতে করতে পানশালা থেকে বেরিয়ে যায় লোকটা। যার উদ্দেশে বলা, সেই মেয়েটা যে তার হিরোপন্তির কোনও মূল্যই দিল না এই ভেবেই লোকটা স্তম্ভিত, মর্মাহতও বটে। কী পৌরুষ থুড়ি সাহসিকতা দেখিয়েছে একটু আগে? মেয়েটা, যার নাম লিভ আর তার বন্ধু হ্যানা, কিছুক্ষণ আগে সে তারই মতো কিছু প্রবল পুরুষদের হাত থেকে এই মেয়েদের ‘সম্ভ্রম’ বাঁচিয়েছে। তবে কেন? কেন না লিভ শুধুই তার। কথাটা সে বলেও লিভের উদ্দেশে, ‘ইউ আর মাইন’— তাই উত্ত্যক্তকারীদের (এবং খুব সম্ভবত ভাবী ধর্ষকদের) হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্য কোনও মানবিক টানাপড়েন নয়, শুধুই নিজের জৈবিক তাড়না এবং মেয়েটাকে নিজের সম্পত্তি বানানোর রোমান্টিক স্বপ্ন। লিভের প্রতি তার দুর্বলতা আছে, হতে পারে তাসগুলো সব ঠিকঠাক সাজালে, এই অবলা নারীকে বিছানা অবধি নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে না। এমনকী সব ঠিক চললে তার মতো আলফা মেল-এর ঘরণী হতেই বা লিভ আপত্তি করবে কেন? অতএব তার মাচোম্যান ভূমিকাকে মেয়েটা গুরুত্ব না দেওয়ায়, তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।            

    জঙ্গলের রাজত্বে এপেক্স প্রিডেটর, যেমন সিংহ বা বাঘ যখন কোনও শিকার করে তাতে অন্য কোনও প্রাণী সাধারণত দাঁত ছোঁয়ায় না। এই ধরাধামে বহু বহু সংখ্যক পুরুষের থেকে ধুরন্ধর শিকারি আর নেই— এই সন্দেহাতীত সত্যই ‘দ্য রয়্যাল হোটেল’ (২০২৩) ছবির সেন্ট্রাল মোটিফ। ছবির মুখ্য কুশীলব দুই তরুণী— হ্যানা (জুলিয়া গারনার) আর লিভ (জেসিকা হেনউইক) অভিন্নহৃদয় বন্ধু, বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে আপাতত ক্যাঙারুর দেশে। সেখানে গিয়ে প্রচুর খরচাপাতি করে ফেলে তাদের ভাঁড়ার শূন্য, মদ্যপান করার পরে পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখে কার্ড-এ একটা টাকাও পড়ে নেই। রোজগারের খোঁজে ড্রিঙ্ক-সার্ভ করার একটা শর্ট-টার্ম সলিউশন খুঁজে পায় তারা— মাসখানেক বারটেন্ডার-এর কাজ করলে কিছু টাকাও জমবে, আর বিদেশ বিভুঁইয়ে একটা অ্যাডভেঞ্চারও হবে। তবে কাজটা শহরের মধ্যে নয়, যেতে হবে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে; যেদিকে তাকাও, একটাও বাড়ি চোখে পড়বে না, শুধু ওই হোটেলটা ছাড়া। নামেই রয়্যাল, আদতে একটা পুরনো দোতলা বাড়ি, যার নীচে পানশালা, আর উপরে কর্মীদের থাকার জায়গা। কর্মী বলতে পানশালার মালিক, তার লিভ-ইন পার্টনার এক মহিলা, আর দুই ব্রিটিশ তরুণী, যারা লিভ আর হ্যানা আসার পরের দিনই নিজেদের দেশে ফেরত চলে যায়। আর আছেন এক মধ্যবয়স্কা, যার নিত্যি যাতায়াত রয়্যাল হোটেলের বারে। এলাকাটিতে খনি-শ্রমিকদের বাস— এই রুক্ষ, শুষ্ক দেশে এত ছেলেদের মাঝে, এই ‘রেজিং হরমোন’-এর জঙ্গলে মেয়ে বলতে শুধু তারাই!        

    ড্রিঙ্ক সার্ভ করার সময়ে একটু ঝুঁকে পড়ে বক্ষবিভাজিকা দেখাও না কেন? একটু হাসো না কেন? এটুকু করলেই তো ছেলেগুলো আর তোমায় খেপায় না; ছেলেদের মনের মতো হয়ে না উঠতে পারলে এখানে টিকে থাকবে কী করে বাপু!

    এই পরিবেশে হ্যানার আশঙ্কাই সত্যি হয়— উঠতে-বসতে পানশালার অতিথিদের থেকে ভেসে আসে সেক্সিস্ট কমেন্টস, আদিরসাত্মক জোক, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা… মনে মনে ক্ষিপ্ত হলেও মুখ বুজে সব সহ্য করে সে। লিভ অবশ্য অনেক প্রাণবন্ত, হাসিখুশি; সে এসব অত গায়ে মাখে না। সে হ্যানাকে এসবের সঙ্গে একটু মানিয়ে নিয়ে চলার অনুরোধও করে— চাকরি বড় বালাই। তাই লিভকে সহ্য করতে পারলেও, কাস্টমাররা তাকে একদমই দেখতে পারে না। মালিকের ধারণা তার গম্ভীর, বেজার মুখভাবের জন্যই পানশালার খদ্দের কমে যাচ্ছে। সেই মধ্যবয়স্কা হ্যানাকে উপদেশও দেন— ড্রিঙ্ক সার্ভ করার সময়ে একটু ঝুঁকে পড়ে বক্ষবিভাজিকা দেখাও না কেন? একটু হাসো না কেন? এটুকু করলেই তো ছেলেগুলো আর তোমায় খেপায় না; ছেলেদের মনের মতো হয়ে না উঠতে পারলে এখানে টিকে থাকবে কী করে বাপু! নারীর একই অঙ্গে অনেক রূপ থাকতে পারে, তবে তা সবই মেল-অ্যাটেস্টেড। তাঁর সম্মানও তাই পুরুষের ভাঙাগড়ার খেলা। লিভ মানিয়ে নিয়ে চলায় বিশ্বাসী হলেও, এই লোলুপ নেকড়েদের হাত থেকে প্রতি রাতে নিজেকে আর বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টা হ্যানাকেই করতে হয়।         

    মুখ্যভূমিকায় জুলিয়া গারনার ও জেসিকা হেনউইক-এর অভিনয় যথাযথ। সাসপেন্স-থ্রিলারের মোড়কে পরিচালক কিটি গ্রিন ও অস্কার রেডিং-এর লেখা চিত্রনাট্য যে চমকের পর চমক দেয় এমন না; কিন্তু ধীরে ধীরে তৈরি করে দমবন্ধ করা একটা পরিবেশ, যেখানে প্রতিমুহূর্তেই ঘটতে পারে অভাবনীয় বিপদ। এই অহরহ আশঙ্কার আবহে, দুটো মেয়ের স্বাধীনভাবে বাঁচার লড়াইয়ের গল্পের ফাঁকফোকর দিয়ে ফুটে উঠতে থাকে পুরুষতন্ত্রের ক্রূর, কদর্য দিকগুলো। ভাবনা ও উপস্থাপনায় খুব নতুন কিছু না থাকলেও, ছবিটা ফের আলোচনায় নিয়ে আসে কিছু অস্বস্তিকর সত্য— ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েও কি বলা যায় যে আমরা সভ্য হয়েছি? পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েরা কি শুধুই মায়ের জাত, মানুষের নয়?

    পুরো ছবিটাই আসলে আমাদের সুশীল সমাজের রূপক, যেখানে মেয়েদের পাশে থাকা, তাঁদের সমানাধিকার নিয়ে গলা ফাটানো ছেলেটারও (সুযোগ বুঝলে) উৎসুক আঙুলগুলো রাতের অন্ধকারে মেয়েটার প্যান্টের বোতাম হাতড়ায়— ‘না’ শোনা সত্ত্বেও। পুরুষের কাঁধেই মেয়েদের রক্ষার ভার যদি সেই নারী পুরুষের অনুরাগে সাড়া দেয় তবেই, নচেৎ ‘বিচ্‌’ শোনাই ভবিতব্য। মূলধারার সংস্কৃতিতে, জন-মনস্তত্ত্বে এই ধারণা চারিয়ে দেওয়ার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে এই সিনেমা বলে এ-সমাজে রক্ষকই যে ভক্ষক— এমন রক্ষকের আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি? কখনও কখনও কানামামা-র থেকে নেইমামা ভাল।           

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook