ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • এক পশলা হাইকু


    চিন্ময় গুহ (October 7, 2023)
     

    তিন ছত্রের মুক্তোর মতো জাপানি কবিতা, যা সারা বিশ্বে তার স্বতন্ত্র চরিত্রের জন্য বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। হাইকু আঙ্গিকটি সতেরো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে, (যখন ফ্রান্সে নাটক লিখছেন মলিয়ের, ইংলণ্ডে মিলটন লিখছেন ‘প্যারাডাইস লস্ট’, মুঘল সাম্রাজ্যে ঔরঙ্গজেবের সময়) কবি মাৎসুও বাশোর (১৬৪৪-১৬৯৪) হাতে এক সূক্ষ্ম কবিতাকারুশিল্প হিসেবে আবিষ্কৃত হয়। এ যেন অক্ষরের মিনিমালিস্ট আর্ট, যার তুলনা মেলে না।  

    কতগুলি অপরূপ ছবি, যা রঙিন ও বাঙ্ময়।

    প্রকৃতি, ঋতু, বুদ্ধ, বিড়াল, কীটপতঙ্গ, মনের নানা স্তর এই খোদাইচিত্রে অনন্তের সমীপে নিয়ে আসে। এগুলি যেন এক-একটি দীপমালা, যা ফুটিয়ে তোলে দার্শনিকের বিস্ময়! অসীম সম্ভাবনাময় এই তিনটি করে পংক্তি যেন অমোঘ তুলিটানে আমাদের সীমাবদ্ধ জীবনকে প্রসারিত করে!

    বাশোর পর যোসা বুসন (১৭১৬-১৭৮৪), কোবাইয়াশি ইসা (১৭৬৩-১৮২৮), মাসোয়াকা শিকি (১৮৬৭-১৯০২) ছাড়াও উয়েজিমা অনিৎসুরা (১৬৬৮-১৭৩৮) বিশিষ্ট নাম।

    জাপানি ফর্মটি সুনির্দিষ্ট, সেখানে তিনটি লাইনে যথাক্রমে পাঁচ, সাত ও পাঁচটি ছান্দস একক, বাংলা অনুবাদে যা রক্ষা করা কঠিন। তবু আমরা এক অনির্বচনীয়ের স্বাদ পাই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কলমে এর প্রথম সাক্ষাৎ পায় বাঙালি। সেটি ছিল তাঁর অনুবাদে বাশোর বিখ্যাত হাইকু :

    পুরোনো পুকুর
    ব্যাঙের লাফ
    জলের শব্দ।


    ভাঙা বাড়ির পাশে
    একটি নাশপাতি গাছে ফুল হয়েছে;
    এখানে একটি যুদ্ধ হয়েছিল।

                                                    শিকি


    পদ্মপাতার ওপর
    এই পৃথিবীর শিশিরটি
    বেঁকে আছে।

                                                    ইসা


    কখনও ভুলতে পারবে না,
    শুভ্র শিশিরের
    নির্জন সুস্বাদ।

                                                    বাশো


    মেঘের নীচে—
    একটি পিঁপড়ে উঠে আসছে,
    দোয়াতদানির ওপর।

                                                    শিকি


    আমার ছড়ানো দু’পায়ের
    ওপর,
    মেঘমালা।

                                                    ইসা


    ওই পিঁপড়েদের সারি কি
    মেঘের স্রোত 
    থেকে নেমে এলো?

                                                    ইসা


    আমার বার্ধক্যের বছরগুলো,
    গ্রীষ্মের বৃষ্টির মতো
    ঝরে পড়ছে বৃষ্টির নল দিয়ে।

                                                    বুসন


    সারসের পা দুটি
    গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে
    ছোট হয়ে গেছে।

                                                    বাশো


    মাকড়সা,
    তুমি কাঁদছ? 
    না, হেমন্তের হাওয়া?

                                                    বাশো

    ১০
    মাঠের সামনে,
    উড়ন্ত পাতাগুলি
    বিড়ালটিকে প্ররোচিত করে।

                                                    ইসা

    ১১
    হেমন্তের সন্ধ্যা;
    একটুও শব্দ না করে
    একটি কাক উড়ে গেল।

                                                    কিশু

    ১২
    হেমন্তে—
    এমনকী মেঘ ও পাখিরাও
    শ্রান্ত হয়ে আছে।

                                                    বাশো

    ১৩
    প্রজাপতিটি ঘুমিয়ে আছে পাথরে,
    তুমি স্বপ্ন দেখবে
    আমার বিষণ্ণ জীবন।

                                                    শিকি

    ১৪
    সারস-শিশুটি
    প্রজাপতিটিকে ঝেড়ে ফেলে
    আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

                                                    ইসা

    ১৫
    একটি ঝরা ফুল
    শাখায় ফিরে এলো!
    না! একটি প্রজাপতি।

                                                    মরিতাকে

    ১৬
    বুদ্ধ
    দিনের মশাদের লুকিয়ে রেখেছেন
    পিছনে।

                                                   ইসা

    ১৭
    মাছিটি
    লাফাতে পারে না,
    কী করুণ!

                                                    ইসা

    ১৮
    বিদ্যুৎ চমকায়—
    একটি সারসের ডাক
    অন্ধকারের বুকে ছুড়ি মারে।

                                                    বাশো

    ১৯
    একটি শিশিরবিন্দু—
    বসুন্ধরার ধুলো ধোয়ার জন্য
    এর চেয়ে অপরূপ কী হতে পারে?
                                                    বাশো

    ২০
    ঘোড়ার পিঠে ঢুলতে ঢুলতে
    দাবানলের ধোঁয়া
    চাঁদের উদ্দেশে ভেসে যায়।

                                                    বাশো

    ২১
    ভোরের ফুলের মধ্যে 
    আকুল হয়ে খুঁজছি,
    ঈশ্বরের মুখ।

                                                    বাশো

    ২২
    কুড়েঘরের চারধারে—
    কলাপাতা,
    চাঁদের পানে তাকিয়ে।

                                                    বাশো

    ২৩
    এইভাবে আমার নাম লিখো :
    সে ভালবাসত কবিতা
    আর খেজুর।

                                                    শিকি

    ২৪
    নাসপাতি কাটার সময়,
    ছুরি বেয়ে
    মিষ্টরস নেমে আসে।

                                                    শিকি

    ২৫
    কাকতাড়ুয়াটি,
    এমনকী রানির সামনেও,
    তার ভাঁজ করা টুপিটি খোলে না।

                                                    সানসুই

    ২৬
    মধ্যরাতের কুয়াশায়
    আমি ঘুমিয়ে পড়ি, কাকতাড়ুয়াটির
    জামার হাতাটি ধার করে।

                                                    বাশো

    ২৭
    পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ—
    কাকতাড়ুয়াটি ঠায় দাঁড়িয়ে,
    যেন কিছুই হয়নি।

                                                    ইসা

    ২৮
    শীতরাত;
    কোনও কারণ ছাড়া্ই‌
    আমি কান পেতে প্রতিবেশিটির কথা শুনি।

                                                    কিকাকু

    ২৯
    ভাঙা বাড়ি;
    রাতের বৃষ্টির মধ্যে,
    কুকুরের গুমরানি।

                                                   বাশো

    ৩০
    কুয়াশার বৃষ্টি;
    আজ কী আনন্দের দিন!
    যদিও ফুজি পাহাড় দেখা যাচ্ছে না।

                                                    বাশো

    ৩১
    থালার ওপর ইঁদুরের
    খুটখুট—
    কী ভীষণ শীত!

                                                    বুসন

    ৩২
    মাকড়সাটিকে মেরে ফেলার পর,
    একটি নির্জন
    শীতের রাত।

                                                    শিকি

    ৩৩
    ক্যামেলিয়াটি
    ঝরে পড়তে পড়তে
    পাতায় আটকে গেছে।

                                                    শোহা

    ৩৪
    বন্য খেজুর গাছ;
    তার মা
    তেতো অংশটি খেয়ে নিয়েছে। 

                                                    ইসা

    ৩৫
    ঝুলন্ত সাঁকো;
    লতানো আঙুর গাছটি
    জীবনকে জড়িয়ে ধরে আছে।

                                                    বাশো

    ৩৬
    কাঠবাদাম ঝরে পড়ছে;
    ঘাসের ভেতর
    ঝিঁঝিঁর আওয়াজ গেছে থেমে। 

                                                    বাশো

    ৩৭
    একটি কালো কুকুর
    বদলে গেছে একটি লণ্ঠনে!
    তুষার ঢাকা রাস্তা।

                                                    অনামা

    ৩৮
    শীতের গাছের মধ্যে
    যখন কুঠারটি ঢুকল—
    গন্ধে চমকে উঠেছি।

                                                    বুসন

    ৩৯
    কুকুরটি ডেকে উঠল,
    অর্থাৎ কেউ হেঁটে গেল,
    এই তুষার ঝরা রাতে। 

                                                    মেইমেই

    ৪০
    সাদা সারসটি
    এমন ভাবে পা ফেলছে
    যেন ধানক্ষেতটি নোংরা!

                                                    অজানা

    ৪১
    পীচ ফুল;
    দরজা খোলা,—
    যদিও ঘরে কেউ নেই…

                                                    চিও-নি

    ৪২
    সমস্ত খেজুর বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর
    পাহাড়ি গ্রামটিতে
    এমনকী কাকও আসে না।

                                                   শুদা

    ৪৩
    শীতের সূর্য—
    ঘোড়ার পিঠে     
    বরফ হয়ে যাওয়া একটি সিলুয়েট।

                                                    বাশো

    ৪৪
    আজ সন্ধ্যায়… সুখ, আহ্‌,
    যখন পা ধুচ্ছিলাম…
    শুধু ওই দু’তিনটি শব্দ।

                                                    কাইতো

    ৪৫
    চোরটি বাড়িতে ঢুকে,
    মিষ্টি সংলাপ শুনে
    জিব বের করে।

                                                    অনামা

    ৪৬                                          
    জোয়ারভাঁটার বেলাভূমিতে
    যা কুড়োতে যাই,
    নড়ে ওঠে।

                                                    চিও-নি

    ৪৭
    জলীয় উদ্ভিদে চড়ে,
    ব্যাঙটি
    ভেসে যায়।

                                                    কেইসা

    ৪৮
    ঝাপসা চাঁদ
    মেয়েটিকে নদীর ওপারে
    নিয়ে যায়।

                                                    বুসন

    ৪৯
    নদীর ওপর
    জাল ছোড়ার শব্দ—
    আর চাঁদের অস্পষ্ট রেখা।

                                                    তাইশি

    ৫০
    জ্যোৎস্নায়
    পাম-কুঁড়ির গন্ধ,
    যা স্বর্গের দিকে ভেসে যায়?

                                                    বুসন

    ৫১
    যারা চাঁদ দেখছে,
    মাঝে মাঝে
    মেঘেরা তাদের বিশ্রাম দেয়।

                                                    বাশো

    ৫২
    যত দূরেই যাই,
    হেমন্তের দীপ্ত চাঁদ,
    আরও দূরে, এক অজানা আকাশে।

                                                   চিও-নি

    ৫৩
    জ্যোৎস্নায়
    বিছানো হয়েছে,—
    টাটকা খড়ের মাদুর।

                                                    ইয়াসুই

    ৫৪
    ঘুমিয়েও
    হাতের পাখাটি দোলায়—
    জ্বলন্ত উত্তাপকে।

                                                    ফুকোকু

    ৫৫
    পুরুষটির মিষ্টি মিথ্যেকে
    দাসীটি সত্যি বলে
    ধরে নিয়েছে।

                                                    অনামা

    ৫৬
    হরিণের বাঁশি
    আচমকা থেমে গেছে,
    বন্দুকের শব্দে!

                                                    শিকি

    ৫৭
    প্রজাপতির শব…
    পিঁপড়েরা এগিয়ে আসছে,
    যেন কুচকাওয়াজ।
     
                                                    তোনবো

    ৫৮
    মাকড়সার জালের মধ্যে
    একটি প্রজাপতির খোলস—
    কী করুণ!

                                                    শিকি

    ৫৯
    শীতের নদীটি—
    সেখানে চার পাঁচটি হাঁসের মতোও
    জল নেই।

                                                    শিকি

    ৬০
    হিমের রাতে
    হঠাৎ জেগে উঠে দেখি—
    জলের পাত্রটি ফেটে গেছে।

                                                    বাশো

    ৬১
    ঈর্ষা হয়!
    পড়তে পড়তেও উজ্জ্বল,
    মেপল পাতাটি দেখে!

                                                    শিকো

    ৬২
    ভিতর উন্মোচিত করে,
    বাহির উন্মুক্ত করে,
    ঝরে পড়ছে একটি মেপল পাতা।

                                                    রিওকান (সম্ভবত)

    ৬৩
    পুতুলটির মুখে…
    আমার পুতুলেরই মতো, 
    অভিজ্ঞতালব্ধ প্রজ্ঞা।

                                                    সেইফু

    ৬৪
    হতচ্ছাড়া বুড়ো হুলো বিড়াল!
    সে-ই জিতে নিয়েছে
    মেনি বিড়ালটির যোনি।

                                                    ইসা

    ৬৫
    সুন্দরী নারীর—
    এমনকী যোনিও
    কলুষতাহীন!

                                                    ইয়াশু 

    ৬৬
    এমনকী বৌদ্ধ ভিক্ষুও
    নারী-ফুলটিকে
    লুব্ধ চোখে দেখে।
      
                                                    শিগেইওরি

    ৬৭
    কী আমার কপাল!
    স্বর্গে এসেও
    শুধু হাই উঠছে। 

                                                    নানবকু

    ৬৮
    এই হেমন্তে
    আমি এত বুড়ো হয়ে গেলাম?
    মেঘের পাখি।

                                                    বাশো

    ৬৯
    আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে,
    ওরা ভাগ করে নিয়েছে একই রেখারঙ,
    চাঁদ আর বরফ।

                                                    মাৎসুমোতো কোয়ু

    ৭০
    আস্থা রেখো;
    পাপড়িগুলো কি ইতস্তত ঝরে পড়ে না
    ওভাবেই?

                                                    ইসা

    ৭১
    শিশুরা, আমায় বলতে পারো,
    ওই লাল, লালরঙা চাঁদটা
    কার?

                                                    ইসা

    ৭২
    চাঁদ ডুবে গেছে দিগন্তেরেখায়,
    এখন শুধু হাতে রইল
    টেবিলের চারটি কোনা!

                                                    বাশো

    ৭৩
    আজকের চাঁদ;
    পৃথিবীতে একজনও কি আছে
    যে কলম তুলে নেবে না?

                                                    ওনিৎসুরা

    ৭৪
    সুন্দরী মেয়েটির বিরক্তিকে
    এলোমেলো করে দিচ্ছে
    বসন্তের হাওয়া।

                                                    গিওদাই

    ৭৫
    একরত্তি গায়ক পাখিটি
    এদিক ওদিক দেখছ,
    ‘কিছু কি ফেলে গেলে?’

                                                    ইসা

    অনুবাদ : চিন্ময় গুহ

      

       

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook