ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং : পর্ব ৪৬


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (August 21, 2023)
     

    কোত্থেকে কী

    বেচারা যাদবপুর। এই ছিল ইন্টেলেকচুয়াল ইট-পাঁজা, সিভিলাইজেশনের সিপাহি, দুম করে হয়ে গেল অনাচারের আখড়া, বাঁদরামির বৃন্দাবন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরা যখন বিক্ষোভ দেখিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর অভিজিৎ চক্রবর্তীকে তাড়িয়েছিলেন, তখন ঢ্যাঁড়া দুন্দুভির ডেসিবেলে কান পাতা দায়: ইহাই নিও-ন্যায়যুদ্ধ, এবং অভিজিৎবাবু কুষ্টিকালো অবিমিশ্র ভিলেন, যিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকিয়েছেন। ‘হোক কলরব’ তুড়ুক-লাফে অ্যান্টি-বাস্তিল বিপ্লবের বেদিতে। এখন ব়্যাগিং-শিকার এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে (সঙ্গত ভাবেই) তোলপাড় চলেছে এবং যাদবপুরকে তুঙ্গ-উল্টোবাগে তুলোধোনা, যেন এখানে কক্ষনও পড়াশোনা হয়নি হয় না, শুধু নেশা ও সেক্সের ভরপুর ভিয়েন বসে। আর অভিজিৎবাবুকে আঁকা হচ্ছে ওয়া ওয়া নির্ভীক প্রশাসক, উচ্ছৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকামী ছাত্রদের বশে আনতে গিয়ে শেষমেশ শহিদ। তিনি থাকলে নাকি আজ এই অবস্থা হত না, উনি শক্ত হাতে সকল নষ্টামির অবসান ঘটাতেন। অভিজিৎবাবু টিভি চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে বললেন, তিনি থাকাকালীন তাঁরই পরামর্শে ক্যাম্পাসে সাদা পোশাকের পুলিশ ঘুরত। এও বললেন, তাঁর মতে ছাত্রদের, এমনকী শিক্ষকদেরও, রাজনীতি করাই উচিত নয়। এবং একজন (ছাত্রনেতা) ছাড়া বাকিরা দিব্যি এই বাক্যি শুনে হজম করলেন। মানে, যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীর এখন ইমেজটা হয়েছে: তাঁরা যথেচ্ছাচার করতে চান, আর তার বিপরীতে অকস্মাৎ হিরো-বনে-যাওয়া অভিজিৎবাবু স্পষ্টত চাইছেন: কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচার। যে-ক্যাম্পাসে সাদা পোশাকে পুলিশ ঘুরে বেড়ায়, তা সুস্থ ক্যাম্পাস নয়। যিনি বলছেন ছাত্রদের এবং শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, তিনি প্রগতিশীল ক্যাম্পাস চান না। স্রেফ গতিশীল ক্যাম্পাস চান। যেখানে পড়াশোনা হয় বটে, তবে শুধু পড়াশোনাই হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিটা শুধু পড়াশোনার জন্য নয়, বৃহত্তর সচেতনতার জন্য, জাগ্রত থাকার অভ্যাসের জন্য, এবং প্রতিবাদের ক্ষমতার জন্য। যে-কোনও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজেরই এই প্রবণতা থাকে, কিন্তু যাদবপুরে তা একটু বেশি প্রকট ও সমাদৃত। সেই ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক চেতনাকে, তার উদ্দীপনাকে, প্রশ্ন তোলার অভ্যাসকে দমিয়ে দেওয়া মানে তার প্রাণটাকেই ছেঁটে দেওয়া, ছাত্রসমাজের ভেতর থেকে দ্রোহ এবং চিন্তাশীলতার ভোমরাটাকে বার করে নেওয়া। তা সু-প্রশাসকের কাজ নয়। কিন্তু দিনের পর দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অমানবিক ব়্যাগিং-এর গল্প (যা হু-হু বেরিয়ে আসছে) লোককে এখন এমন চটিয়েছে, ‘মার ব্যাটাদের’, ‘সব রবরবা ঘুচিয়ে দে’, ‘এমন জাঁদরেল মেজর-জেনারেল বসা যে রুল হাতে কম্যান্ডো নামিয়ে দেবে’ চিৎকার রমরম। মনে রাখতে হবে, এ সেই দেশ, যেখানে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষ চিল্লায়, ‘উফ, একটা ডিক্টেটর চাই, চাবকে সিধে করে দেবে!’ তার মনে থাকে না, চাবুকটা তার নিতম্বকেও রেয়াত করবে না। এবং চাবুক মারার নেশায় ও ইনার্শিয়ায় লোকে এক সময় শুধু চাট্টি অপরাধকে নয়, সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকেই লোপাট করে দিতে চায়। অভিজিৎবাবুর বিরুদ্ধে যা হয়েছে, যেভাবে হয়েছে, তার মধ্যে কিছু ইতরতা নিশ্চয় ছিল, এবং তা কখনও বাহবাযোগ্য নয়, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁর মূল দর্শন— বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জায়গা, তাই খরখরে কানমলার মাধ্যমে এক ট্যাঁ-ফোঁ’হীন, নতমুখে নিয়মমতে চলা, প্রভুপ্রণামে অভ্যস্ত প্যারেড-সমষ্টি তৈরি করতে হবে— আদৌ গ্রহণীয়। মিলিটারি মানেই ভালমাস্টার নয়। ভাল রেজাল্ট করা ভাল, কিন্তু একটা স্পন্দমান আনন্দময় প্রশ্ন-উদযাপনকারী ক্যাম্পাস গড়ে তোলা আরও জরুরি। যেমন যাদবপুরের কিছু ছাত্রকে শিখতে হবে স্বাধীনতা আর নিষ্ঠুর নিগ্রহ এক নয়, তেমন এ-কথাও কিছুতেই ভুললে চলবে না, শৃঙ্খলা-প্রতিষ্ঠা আর স্বৈরতন্ত্র কায়েম এক নয়।

    কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, সীমাটা কোথায়? কতটা কড়া হলে তা ডিসিপ্লিন, কতদূর গেলে তা ছাত্রদের অধিকার দলন? এতে কোনও সন্দেহ নেই, ‘নোটিস লটকে দিলেই মানতে হবে’ সংস্থায় প্রকৃত শিক্ষা ঘটে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যে-কোনও আদেশ জারি করলেই যদি ছাত্রসমাজ ফোঁস করে উঠে বলে ‘মানব না’, রিফ্লেক্স অ্যাকশনে তার মুষ্টিবদ্ধ হাত ও ক্যালিগ্রাফি-ঋদ্ধ ফেস্টুন শূন্যে উঠে যায়, তাহলে কাজ চালানো যায় কি? ছাত্র হব, এদিকে আমার মনোমতো কিছু না ঘটলেই মাস্টারদের ঘেরাও করে খিস্তি দেব— এ-আদর্শ বিপ্লব কি? কম্পালসরি কুচুটেপনাকে সাড়ে-সমঝদারি হিসেবে চালানো যায় কি? নিয়মে অ্যালার্জি থাকলে প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ হওয়া যায় কি? ছাত্রপিণ্ডের অন্ধ আনুগত্য কাঙ্ক্ষিত নয়, কিন্তু অন্ধ গোঁয়ার অবাধ্যতাও তো যাচ্ছেতাই। এইবার? যখন একটা মতে বিশ্বাস করতে গিয়ে কেউ চূড়ান্ত অনাচার করে, তখন বিপরীত মতটা সবেগে ও নিঃশর্তে ঢুকে আসার সুযোগ পায়, কোনও যুক্তি কারণ ভিত্তি দর্শাতে হয় না। ছাত্রদের দিকে দাঁড়িপাল্লা হেলাতে গিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তাঁদের কর্তব্যে অবহেলা করেছেন, হস্টেলে কী নষ্টামি চলেছে খবরই রাখেননি, বা রাখলেও ইচ্ছে করে মুখ নামিয়ে ডাইরিতে আঁকিবুঁকি কেটেছেন। তাই এই পরিমার্জন-লগ্নে ‘আর তোল্লাই নয়, উহাদের টাইট দাও’ তোড়ের মুখে পড়তেই হবে। এবং সেই ঢেউ-ঝাপটায় শুধু ব়্যাগিং-সংক্রান্ত অনুশাসন চালু হবে তা তো নয়। টিভিতে তো যাদবপুর ক্যাম্পাস থেকে নিত্যি যে-লোক রাশি রাশি মদের বোতল কুড়িয়ে নিয়ে যায়, তার ইন্টারভিউও দেখিয়ে দিচ্ছে। ফলে সিসিটিভি ক্যামেরা। ছাত্রেরা ব়্যাগিং-এর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন, জুনিয়র ছাত্রদের পৃথক হস্টেলের বন্দোবস্তে তাঁদের খুব ঝামেলা নেই, কিন্তু ক্যাাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাবে ব্যাপক আপত্তি।

    ছাত্র হব, এদিকে আমার মনোমতো কিছু না ঘটলেই মাস্টারদের ঘেরাও করে খিস্তি দেব— এ-আদর্শ বিপ্লব কি? কম্পালসরি কুচুটেপনাকে সাড়ে-সমঝদারি হিসেবে চালানো যায় কি? নিয়মে অ্যালার্জি থাকলে প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ হওয়া যায় কি? ছাত্রপিণ্ডের অন্ধ আনুগত্য কাঙ্ক্ষিত নয়, কিন্তু অন্ধ গোঁয়ার অবাধ্যতাও তো যাচ্ছেতাই।

    সত্যিই, একবার নজর-সংস্কৃতি শুরু হলে, গোটা ক্যাম্পাসই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি-আওতায় চলে আসার সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু যে-যুগে ধনাঢ্য গেরস্থ-বাড়িতে অবধি বাথরুম ছাড়া সর্বত্র ক্যামেরা, সেখানে ছাত্রদের এই ঘাউড়ামো প্রায় অবাস্তব না? এই প্রযুক্তি-অধ্যুষিত সমাজে ভবঘুরের নাকঝাড়া অবধি ফাইলে উঠে যাচ্ছে। পারলে রাষ্ট্র প্রতি দাঁড়কাকের গায়ে ড্রোন ফিট করে দেয়। বলছে, অপরাধ ঘটলে তদন্ত সহজ হবে, অপরাধীকে শনাক্ত করা যাবে। মানুষের বক্তব্য, এভাবে তো তার কোনও মুহূর্ত আর গোপন থাকবে না, পরকীয়া অবধি ক্ষমতার নজরদারির আওতায় আসবে। ভাবলে একবার মগজ এদিকে ঢলে পড়ে, একবার ওদিকে। কারণ অপরাধীকে ধরাও দরকার, মানুষের স্বাধীনতাও দরকার। যদি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে প্রযুক্তিকে পাটকেল ছুড়ি, তাহলে খুনি ধর্ষকের সুবিধেও করে দিই। কিন্তু যদি ক্রিমিনালকে ধরপাকড়ের সহায়তা করি, তাহলে নিজের প্রতিটি মুহূর্ত কোথাও না কোথাও নথিবদ্ধ— সেই অসহায় পরিস্থিতির অনুমতি দিই। রাষ্ট্র যদি সর্বত্র ফেশিয়াল রেকগনিশন ক্যামেরা বসিয়ে দেয় (অনেক দেশে তা করা হচ্ছে), অর্থাৎ ক্যামেরাটা যদি মুখের ছবি তুলে ক্ষান্ত না থেকে মুখটা কার সে-তথ্যও কর্তৃপক্ষের কাছে সটান পাঠিয়ে দেয়, পুলিশের অনন্ত সুবিধে হয়। আবার, একজন সরকার-বিরোধী মানুষ বা আড়ালে থাকতে চাওয়া মানুষের অনন্ত ঝামেলাও ঘটে, কারণ তাবৎ গতায়াত নামঠিকুজি সহ বিপবিপবিপ।

    অনেকে ব্যঙ্গের সুরে বলছে, ক্যাম্পাসে ক্যামেরা বসালে অসুবিধেটা কী? নেশা করতে পারবে না, তা-ই তো? তা, ইউনিভার্সিটি তো ওসব করার জায়গা নয়। প্রশ্ন হল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাথমিকভাবে পড়াশোনার জায়গা, নিঃসন্দেহে, কিন্তু যৌবন কি আশ্চর্য ও নতুনের প্রতি ঝাঁপ দেওয়ারও সময় নয়? এই বয়সের ছেলেমেয়েরা নেশা করবে, তা কি স্বাভাবিক নয়? তারা পরস্পরকে আদর করবে, তা-ও কি বয়োধর্ম নয়? হ্যাঁ, এগুলো ক্যামেরায় ধরা পড়লে ঝামেলা হবে, বিশেষত এই রক্ষণশীল সমাজে। সেই ভয়ে যদি ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্রছাত্রী এই কাণ্ডগুলো থেকে সরে থাকেন, টিভিমুখী বাঙালি খুব প্রীত হবে, কিন্তু তাদের সন্তান এই ছাত্রছাত্রীরা সুখী হবেন কি? বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে তাঁরা যে মুক্তির অক্সিজেন পেতেন, তা পাবেন কি? সব আনন্দই যে করা যায়, তার অনুমোদন যে আছে, যতক্ষণ তা অন্যের ক্ষতি না করছে— এই আশ্বাসে স্নান করা উঠে গেলে, যাদবপুর ক্যাম্পাসের মেগা-ফুরফুরে ও উত্তেজনা-ধকধকে আবহ— যা তার ইউএসপি, তার স্বাতন্ত্র্য পরিণতমনস্কতা ও হৃদয়প্রসারের অভিজ্ঞান, তা উবে গেলে, যাদবপুরত্ব থাকবে কি? এখন সবাই যাদবপুরের বিরুদ্ধে, বাসস্টপে দাঁড়িয়ে যাদবপুরের ছাত্রকে সাধারণ লোকে অপমান করছে। কিন্তু ময়লা স্নানের জল ফেলতে গিয়ে গামলার মধ্যেকার শিশুকেও ফেলে দিলে তো মহা বখেড়া। ব়্যাগিং একটা কদর্য অপরাধ, ঠেকাতেই হবে, প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে, তবে তার সঙ্গে ছেলেমেয়েগুলোর প্রাত্যহিক মজা নিধন করার ধর্ষকামী পলিসি গুলে দিলে, ঠিক কাজ হবে না।

    তাইলে উপসংহার কী? জানি না। পূর্ণ কনফিউজড। হয়তো সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে দিতে হবে, কিন্তু সর্বত্র নয়। হয়তো সিসিটিভি থাকবে, কিন্তু তার ভয় ঝেড়ে ফেলতে হবে। এও মনে রাখতে হবে, ক্যামেরা শুধু যাদবপুরে বসানো হবে না, ধীরে ধীরে সমগ্র সুজলা সুফলা গুগল ম্যাপে পুঁতে দেওয়া হবে। তখন তো দাসবাবুর চুমু থেকে গাঙ্গুলিবাবুর দাদ— সবই স্পষ্ট। যখন প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত মুহূর্তই সবার সামনে উন্মুক্ত, লোকে স্রেফ ডিফেন্স মেকানিজম-এর বশে, ‘ব্যক্তিগত’-র সংজ্ঞাটাই পাল্টে ফেলবে। এখন যেমন কনুই দেখাতে লজ্জা করে না, ‘দেখলাম আপনি ভাত খাচ্ছিলেন’ শুনে বলি ‘তাতে কী?’, তেমনই সমস্ত গোপনীয় বা নিরালা-অবলম্বী ব্যাপারই হয়ে উঠবে নিতান্ত পাতি, সহস্রবার অবলোকনের ফলে রোমাঞ্চহারা (এবং তাই সঙ্কোচ-বিচ্ছিন্ন), অঃ কোন ডিজিটাল পর্দায় ধরা পড়ছে পড়ুকগে। হয়তো যাদবপুরেও ছেলেমেয়েদের নিজেদের দীক্ষা দিতে হবে এই শান্ত পরোয়াহীনতায়। ক্যামেরা আছে থাক, আমরা আমাদের মতো থাকি। গোঁড়া-গামবাট সমাজকে বাংলা-মতে বুড়ো আঙুল ও ইংরিজি-মতে মধ্যমা দেখিয়ে, একেবারে নিজেদের ঢঙে রৌদ্রযাপন করি। কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে, কোন কোন কাজকে ‘অপরাধ’ মনে করছেন, আমাদের সঙ্গে স্পষ্ট আলোচনা করুন। কেউ যদি কাউকে ঠেলে জলে ফেলে দেয়, বা আন্দোলন-কালে আধলা ছোড়ে, বা মিটু-নালিশ ঘটে, কিংবা ব়্যাগিং-এর অভিযোগ— অবশ্যই সে-সংক্রান্ত ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া যাবে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীর সম্মত আশ্লেষের ফুটেজ দেওয়া যাবে না, প্রেমের, আড্ডার, নেশার ফুটেজ দেওয়া যাবে না। তারপরেও প্রবল গোলমাল পাকবে (ভুললে চলবে না এই ক্যাম্পাস সহস্র বিবদমান গোষ্ঠীর অশান্তি বয়ন ও কামড়াকামড়ির মুক্তক্ষেত্রও বটে): কোনটা রোববার সম্মত ছিল আর সোমবার একপক্ষের অসম্মত মনে হচ্ছে, কোনটা ছাত্রদের মতে ‘চলতা হ্যায়’ কিন্তু কর্তাদের মতে ‘অক্ষমণীয়’, কোনটা এসএফআইয়ের কাছে পাপ আর তৃণমূলের খাপে-খাপ। সে, ফান্দে পড়িলে কিছু কান্দন তো ঘটবেই। হয়তো কোত্থেকে রসালো ফুটেজ লিক হবে এবং সমাজ আরও ‘রে-রে’ খেরে উঠবে। হয়তো কয়েকটা ব্যাচের ছাত্রছাত্রী কষ্টে থাকবেন, তারপর সমাজ মানুষের স্বাধীনতাকে অনেকটা সম্মান করতে শিখবে, যেমন আগের যুগের তুলনায় এখন সমকামীরা একটু সহনীয় পরিবেশ পাচ্ছেন। হয়তো গাছে গাছে পাখির মতো ক্যামেরা দেখে অভ্যস্ত ছাত্রেরা মদ খাওয়ার আগে ক্যামেরাকেই চিয়ার্স বলবেন আর চুমু খাওয়ার আগে ক্যামেরাকেই ফ্লাইং কিস দেবেন। তখন আবার রাহুল গান্ধী না বিপদে পড়েন!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook