ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শরীরগন্ধা


    কৌশিক গুড়িয়া (August 26, 2023)
     

    গেলাসে পেঁয়াজকুচি, কাঁচা লঙ্কা পড়লে সে শব্দ শোনা যায় না। কিন্তু একহাতে ডিম নিয়ে কেউ হিন্ডালিয়ামের তাওয়ায় টুক করে ঠুকে ফাটালে তার আওয়াজ খুব পরিচিত মনে হয়! আমি চোখে না দেখলেও সানু যখন সেই ডিম গেলাসে নিয়ে একটা অপরিষ্কার স্টিলের চামচ দিয়ে খুব জোরে জোরে গোলাতে থাকে, তখন আমার জিভে জল আসে।

    আমি ঠিক বুঝতে পারি সানুর বউ এবার সাবান-গোলা গামলার জল থেকে একটা কলাই করা ডিশ তুলে আনবে। তারপর দেশি খেজুর পেকে যাওয়ার পর যেমন রং হয়, ঠিক তেমন রঙের কড়া করে ভাজা মামলেট তাওয়া উলটে ডিশে রাখবে। চায়ের গেলাস ধোয়া ট্রে-র এক কোণ থেকে বাঁকাচোরা একটা চামচ নেবে, গোপাল জর্দার ডিবের ফুটো থেকে একটু লবণ ও গোলমরিচ ছিটিয়ে দেবে, তারপর কুচো পেঁয়াজ-লঙ্কা ছড়িয়ে আমার কাছে আসবে…    

    তেমন মুহূর্তটির জন্যেই আমি সানুর দোকানে আসি। সানুর বউ খুব সাবধানে আমার দু’হাতের তালুর মধ্যে তার দু’হাতে ধরা ডিশ রেখে আশেপাশে কোথাও হারিয়ে যায়! তার হাতে লেগে থাকা জল আমার তালু ভিজিয়ে দেয়। প্রথম যেদিন এমন এক গোপন ভাললাগার ছোঁয়া এসে আমাকে ছুঁয়েছিল, কেমন যেন লজ্জা পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল কেউ দেখছে না তো? যেন এক অস্বস্তি নিয়ে সুবর্ণমতির পাড়ে জেগে ওঠা এই চা-দোকান থেকে পালিয়ে বেঁচেছিলাম। ঠিক যেমন ভাবে কাকোলা বেঁচেছিল বাবু মিস্তিরির সংসার থেকে…

    ধারালো চামচ মামলেটকে টুকরো করে কাটে। আর বাবুর গেরস্থালি কাটে কাকোলা বিবি। অন্ধের জিভ মামলেটকে অমৃত ভাবে। রাতের কুপি-জ্বলা আলোয় সানু ভাবে শরীরের অসীম প্রশান্তি, কাকোলাকে। এমন দোলাচলের কাটাকুটি খেলাই কি বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের মায়াসুতো বুনে রাখে?

    ডিম-ভাজার স্বাদে চোখ মুদে আসে আমার। এমন কাঁচা মরিচের ঝাঁঝ ফিরে পেতেই তো এখানে আসতে হয় আমাকে। আবার রাগও ধরে সানুর উপর।

    ‘হ্যাঁ রে, মামলেট কি মাগনা খাই নাকি? মামলেটে ডিমের খোলা কেন?’

    রাগে গরগর করতে করতে মাচার তলায় ডিশ ছুড়ে দিই। কাকোলা ছুটে আসে, পানির মতো ঠান্ডা সানুও ঘাবড়ে যায়। কাকোলা বলে, ‘কিছু মনে কোরোনি দাদা। অর ভুল হয়ে গিছে। একটা দুদ চা দিছি, পয়সা লাগবেনি।’

    জগৎ-সংসারে পয়সায় কী হয়? পয়সায় খানিক আনন্দ আসে, সুখ আসে না! সুখ পড়ে থাকে সুবর্ণমতির পাড়ে। যে নদীর বুকে এককালে মেড়োরা নৌকো ভাসাত তার তো আজ কিছুই নেই, আজ সে কেবল হেরে যাওয়া একটুখানি জলা। হোগলা বন তাকে বাগান করেছে, ভেটুলের জঙ্গল দখল করেছে তার শরীরের উপরের দিক।

    তবে চাঁদের মোমবাতি তাকে আলো দেয়। সে আলোয় ঘণ্টা কিংবা আজান শোনা যায় না! ভাঙা টিনের জানলা দিয়ে কেবল দেখা যায়, চিত হয়ে শুয়ে থাকা একটি নদীর পলি-তটে প্রশান্তি ও সুখ জড়াজড়ি করে উপুড় হয়ে আছে আরও একটি পুরুষ নদ…

    আচ্ছা, শুকিয়ে যাওয়া একটা নদী কি সত্যিই হেরে যায়? প্রকৃতিই তো গ্রহণ করেছে তাকে। অসীমের মধ্যেও কী হারজিত থাকে কোথাও! বাবু যাকে পরাজয় বলে ভাবে সানুর কাছে সে যে অপার প্রাপ্তি!
     
    ২.

    ‘তুমি কে গা? তোমাকে ছুঁইলে আমার জান কাঁপে কেনে? অর গায়ে বড্ড জ্বর তাই আজ দুকানে আসেলাই। য়ু লাই বলেই  তুমাকে সুধোতে সাহস পেছি। তুমি কে?’

    আমি তার নরম হাত দুটো খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরি। অন্ধ ভিখিরি পাঁচ টাকার কয়েন হাতে পেলে যেভাবে আকুতি দিয়ে কয়েনটির আদল বুঝতে চেষ্টা করে, ঠিক সেভাবে আমি কাকোলার হাত দুটোকে বুঝতে চাই, বলি, ‘আমি তেমন কেউ না। রিদয়পুরের মাঠ পেরিয়ে আমার ঘর। এককালে জ্ঞানসামন্ত কলেজে পড়তাম। পয়সা নেই বলে চাকরি হয়নি। এখন কেরালা আর মাদ্রাজে জন-মুনিষ ধয়ে দিই। মাথা পিছু কমিশন আছে। আমার সব আছে। ঘর, দালান, পুকুরের মাছ আর ফুটফুটে পাঁচ বছরের একটা বিটি।’  

    ‘আর তুমার বউ?’

    ‘বউ ঘর করে না। আমার সব আছে, তুমি থাকবে আমার সঙ্গে?’

    ওহ্‌! তুমি তো জানোই আরও একটা জিনিস নেই, ওই মরা নদীটার মতো চোখের জ্যোতি মরে গেছে আমার…

    এমন স্পর্শের কাছে হিংসা ও বিদ্বেষ হেরে যায়। এমন স্পর্শের কাছে যেন অজান্তেই ঘড়ির কাঁটা স্তব্ধ হয়ে থাকে। মনে হয় মানব জনমের আড়ালে অন্তত এই সামান্যটুকু সময় থাকে বলেই হয়তো ইহজন্ম চিরসত্যি হয়ে থেকে যায় আমাদের। পরজন্ম যদি থেকেও থাকে কোথাও তা যেন আবারও এভাবেই ফিরিয়ে দিও ঠাকুর!

    ততক্ষণে আমার দু’হাতের মধ্যে থেকে নিজের হাত ফিরিয়ে নিতে চাইছে সে। আমি বেশ বুঝতে পারছি সে-চাওয়া কপট। তেমন অছিলায় তার দুই তর্জনীর নখ বিহত করছে আমাকে। বেশ বুঝতে পারছি সেই ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্যে সততা নেই এতটুকুও।

    ঠিক যেমন পুরনো দেয়ালে ফনফনিয়ে বাড়তে থাকা কোনও লতাগাছ সূর্যের আলোয় একবার ঝুঁকে পড়লে অন্ধকারের দিকে ফিরে আসতে পারে না আর…  

    কাকোলাকে যেন ঠিক তেমনটাই মনে হচ্ছে আমার!

    ৩. 

    চুল একটু পাতলা। মাথায় জড়িয়ে রাখা গামছায় কাঠের গুঁড়ো আর ধুলো বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। দাড়ির নীচের দিকটা আজকালকার ছেলে-ছোকরাদের মতোই স্টাইলের আর গোঁফের দু’পাশটাও চেঁছে নামানো। ধুলোমলিন জিন্‌সের প্যান্ট গোড়ালির উপর পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। আজ জুম্মাবার, তাই তাড়া আছে বাবুর। তাই কোনও রকমে ছাউনির টিনগুলো মেরে দিয়েই সে তাড়াতাড়ি লাগিয়ে নিচ্ছে খুলে রাখা ডিশটা। কালো ও মোটা তার, ঠিকমতো গুঁজে লাগাতে পারলেই আবার টিভিতে ভেসে উঠবে ন্যাকা সংসারের ছায়াছবি। আমাদের সমাজের দুঃখ হরণকারী মলম! তাই তাড়া আছে তার, ওজু সারতে দেরি হয়ে যাচ্ছে যে…

    বাবু মিস্তিরি আসলে অনেকটা বানে ভেসে যাওয়া চিতাকাঠের মতো। দু’কোঠা পাকা দেয়ালের বাড়ি আছে বটে, তবে সবই যেন ছন্নছাড়া। বিছানার কোনায় বালিশ-মশারি দলা পাকানো, গতকালের পুড়ে যাওয়া কড়াটা মাটির উনুনের উপর আড় হয়ে পড়ে  আছে, সামনের পাত লাগানো দরজাও ঠিকমতো বন্ধ করা নয়।

    বউ ছেড়ে যাওয়ার পর আবার কি সে নিজেকে গুছিয়ে নিতে চায়?

    ‘শুনলাম আবার নাকি তুই কেরালা খাটতে যাবি?’

    ‘হ্যাঁ গো কাকা, গেরামে থেকে আর কী হবে! মা’কে তো আর লিয়ে যাওয়া হবেনি, তাই ঘরটা একটু সারিসুরি দিচ্চি।’ 

    ‘বলতিচি কী, মাথা ঠান্ডা করে ভাব, তুই আর একখান বিয়া কর। শান্ত, কচিমতো একডা মাইয়া খুঁজ। জীবনে যা হইচে ভুলে যা বাবু, অমনডা হয় মাঝেমধ্যে। গায়ে-গতরে খাটতিচিস একটু সুখের তরে তো নাকি? কষ্ট থুবি কেনে…’

    এবার, কিছুটা ক্ষয়ে যাওয়া এঁটেল মাটির দালানে চুপ করে বসে পড়ে বাবু। ঠিক সন্ধের মুখে লক্ষ্মীপেঁচা যেমন কলাগাছের আড়াল থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে— একটা দমবন্ধ আবছা আলোতেও ফর্সা দেখায় তার মুখ, ঠিক সেভাবেই তাকিয়ে থাকে সে! অনেকক্ষণ। তারপর বলে, ‘না গো কাকা, এবারের খরায় পাটগাছগুলোনকে দেকেচো? আদমরা হয়ে পড়েই আছে। এখন যতই পানি হোক গা, আর বাড় হয়? আমার অবস্তাও তেমন!’

    একরাম কাকা মাথা নীচু করে থাকে। কিছুই যেন বলার থাকে না তার। আনমনে থাকলে আমরা যেমন নখ দিয়ে কিছু একটা আঁচড়াই কিংবা টুকরো কাঠি বা খোলামকুচি নিয়ে দেওয়ালে মকশো করি, ঠিক তেমনটা ডান হাতে ধরা পেয়ারা ডালের লাঠি ঠুক ঠুক করতে থাকে মাটিতে। উঠোনের উঁচু হয়ে থাকা মাটির ঢেলা কি এত সহজে মসৃণ করা যায়! কী জানি…

    তবে মনে মনে বিড়বিড় করে বলে,— ‘মাওলা ছেলেটারে দোয়া করো।’

    এমন স্পর্শের কাছে হিংসা ও বিদ্বেষ হেরে যায়। এমন স্পর্শের কাছে যেন অজান্তেই ঘড়ির কাঁটা স্তব্ধ হয়ে থাকে। মনে হয় মানব জনমের আড়ালে অন্তত এই সামান্যটুকু সময় থাকে বলেই হয়তো ইহজন্ম চিরসত্যি হয়ে থেকে যায় আমাদের।

    ৪.                

    ‘হ্যালো’ বলতেই ওপারের গলা চেনা যায়। সাতসকালে বাবুর ফোন পেয়ে চমকে ওঠে অন্ধ ছেলেটি।

    তবে কি আমাকে দেখে ফেলেছে বাবু? কিন্তু তা তো হওয়ার কথা নয়। সুবর্ণমতির ঢালু রাস্তা ছাড়া আমি তো তেমন কোথাও যাইনি। তাছাড়া কাকোলার সঙ্গে তো ওই চা দোকানেই দেখা হয় আমার, আর কোথাও তো নয়। না না, ভুল ভাবছি আমি।

    ‘দাদা, বলতেচি তোমার বাড়ির দেয়াল গেথেছিনু না? ওই পয়সাটুক পেতাম ত… আজগে দিবা? আমি যে কেরালা চল যাচ্চি। দুফর টাইমে যাব?’

    এক নিঃশ্বাসে বলে চলে বাবু মিস্তিরি। প্রথমে থতমত খেলেও ধড়ে যেন প্রাণ পায় সে। একটু সামলে নিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ রে, দুপুরে ঘরে থাকব, আয়’।

    মাঝারি একটা কালো ব্যাগে সামান্য কিছু জামাকাপড় ভরে নেয় বাবু। বিভুইচণ্ডী স্টেশন থেকে তার ট্রেন রাত সাড়ে এগারোটায়। তার আগে একুশ মাইল রাস্তা সে ট্রেকারে যাবে। আশরের নামাজ পড়ে আসতেই মা কাপে করে চা দেয়। বলে, ‘ভাটির বিস্কুট আছে, খাবি একটা?’  

    বাবুর সেসবে মন নেই। কাকোলার চলে যাওয়া আজকাল সে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছিল, কিন্তু আজ দুপুরে টাকা নিয়ে ফেরার পর থেকেই কেমন যেন দুঃখ গ্রাস করেছে তাকে। অন্ধ ছেলেটির বাড়িতে তার ছোট্ট মেয়েটিকে দেখার পর থেকেই সে ভাবতে শুরু করেছে, ‘আমারও যদি এমন ছোট্ট একটা বিটি থাকত? আবার ভাবে, আমার দোষ আছে যে! তার লেগেই তো বাচ্চা হবেনি।’   

    নিজের অক্ষমতা ও হেরে যাওয়ার চিন্তা মাথা নীচু করে দেয় তার। কাকোলার চলে যাওয়াকে সে আবারও নিজের কৈফিয়ত দিয়ে যেন মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চা জুড়িয়ে পানি হয়ে যায়। বিস্কুটে কোথা থেকে মোটা, সবুজ মাছি এসে ভনভন করে!        

    অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রিদয়পুরের রাস্তায় পৌঁছায় বাবু। এবার একটা টোটো পেলেই একদম বাস রাস্তায়…  

    ঠিক সন্ধের আগে পাখিরা যখন বাড়ি ফেরে, পথের দু’পাশের বাবলা গাছগুলোকে যখন ধোঁয়াটে জিনের মতো দেখায়, রাস্তায় লোকজন থাকে না তখন। শান্ত ফুরফুরে বাতাস বইছে, মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে আবছা গ্রাম থেকে। বাবু একটা বিড়ি ধরায়। অকারণেই সেই ধোঁয়া দৃষ্টি আবছা করে দেয় তার! হাত দিয়ে ধোঁয়া সরিয়েও ফ্যাকাসে অন্ধকারকে কিছুতেই যেন সরাতে পারে না সে।   

    হঠাৎ দেখে দূরের বাঁকে একটা মেয়েমানুষ হেঁটে আসছে। মেয়েটির শরীরের আদল যেন খুব চেনা লাগে তার! বাস রাস্তার আগেই আবহমান সময় কি তাদের আরও একবার কাছাকাছি নিয়ে আসে? বাবু দেখতে পায় তার ছেড়ে যাওয়া অস্তিত্বকে। এমন মুহূর্ত তাকে পাগল করে দেয়। অপ্রকৃতিস্থভাবে চেঁচিয়ে ওঠে সে, ‘কা-কো-লা!’

    কাকোলা কেবল ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। মুখে কোনও উত্তর করে না। আধো-অন্ধকারে কাকোলার চোখের ভাষা বুঝতে পারে না বাবু মিস্তিরি! গহিন সেই অন্ধকার। তীব্র কালো রাতের মতো আকার তার। এইবার কী করবে বাবু! 

    যেন বিয়োগ যন্ত্রণা অশ্রু হয়ে নেমে আসে। সে একবার কালচে হয়ে যাওয়া কমলারঙা আসমানের দিকে তাকিয়ে দু’হাতের মধ্যে মাথার চুল ভরে নেয়…

    ৫.

    শবেবরাত মুসলমানের পরব। কিন্তু এ-পাড়ায় কয়েকটামাত্র হিন্দু বাড়িতেও আজ বাজি ফোটে। লাল, সবুজ, হলুদ ও সাদা রঙের চকচকে কাগজ কেটে মালা তৈরি করা হয়। মিষ্টি হালুয়া আর আতরের গন্ধ পাওয়া যায়। বাচ্চা মেয়েটি সেসবের কিছু না বুঝেই পরবে মেতে ওঠে। সে নতুন জামা পায়, আর বাড়িতে নতুন অতিথির আদর পায়!

    রাত ঘন হয়ে এলে আজ সে তার ঠাকুমার কাছে শুতে যায়। যেন এমন শবেবরাতের দিনেই তার বরাতে ভাগ বসায় কেউ।  

    অনেক রাতে চাঁদ ওঠে। দূরে কলাবাগানে বাদুড় ঝটপট করে। নিশাচর কিছু প্রাণী জেগে থাকে কেবল। আর জেগে থাকে অন্ধ একটি যুবক। জেগে থাকে এ-ঘাট সে-ঘাটে ভেসে বেড়ানো কলাগাছের মতো একটি মেয়ে, কাকোলা। রতি তাদের আরতি করে, শরীরের স্রোত তাদের নামা-ওঠা বাড়ায়।  

    অনেক রাতে আবারও সুবর্ণমতির চরে জোয়ার আসে। ঘাটে বাঁধা দুটি ডিঙি যেন প্রচণ্ড শব্দ তোলে। সে-রাতে ধর্মের পাল ছিঁড়ে যায়— আমাদের পড়ে পাওয়া সামাজিক অন্ধত্ব সৎ-অন্ধত্বের কাছে হারতে শেখে। সুতীব্র শরীরগন্ধী হয়ে ওঠে তারা। সেই আনন্দনাদ ঘুম ভাঙিয়ে দেয় পাখিদেরও। ঠাকুমার কোলে, স্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায় পাঁচ বছরের বিটির…

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

                                                                        

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook