২১।
ব্রহ্ম ঠাকুর মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন স্যর ক্যাভির কথা। ক্যাভি চকিতে তাঁর দিকে একবার তাকিয়ে নিয়েই আবার বলা শুরু করলেন। শুরু করবার আগে ভেবে নিলেন কী বলবেন। তারপর বললেন—
মি. ব্রামহো—
— নট ‘মিস্টার ব্রামহো’। অনেকক্ষণ থেকেই সম্বোধনে এই ভুলটা হচ্ছে। ওটা ‘ডক্টর’ হবে। আপনি বরং ‘ড: টেগোর’ বলেই ডাকুন। আমি একজন সার্টিফায়েড মনোরোগবিশেষজ্ঞ। তাই সম্বোধনটা ঠিক করে নিন স্যর ক্যাভি।
— ওহ আই সি! একই অঙ্গে আপনার যে দেখি বহু বহু রূপ! ব্র্যাভো ব্র্যাভো! তা যা বলছিলাম ড: টেগোর, আমার থিয়োরিতে ফেরা যাক। থিয়োরিটিক্যালি, এরকম একটা জাদু গির্জাঘর আবিষ্কার হওয়াটা আমাদের কাজের জন্য একটা বড় আশীর্বাদ। প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে এই ঘরটার দেওয়ালগুলো রিফ্লেক্টিভ মিডিয়ামের মতো কাজ করছে, যেমন করে থাকে ধরুন, রুপো বাঁধানো কাচ। এই ঘরের মধ্যে হওয়া যে কোনও শব্দ তার বিস্তার হারায় প্রচণ্ড ধীরগতিতে, আবার কয়েকটা অ্যাঙ্গলে অদ্ভুতভাবে সেই একই শব্দ বর্ধিত হতে থাকে। দুটো জিনিসই চক্রাকারে ঘটতে থাকে।
শব্দ কী? এক ধরনের শক্তি, তো? শক্তি হলে শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে তাকে কাজে লাগানো যায়। যেমন ধরুন জলপ্রপাত থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হয়। আমরাও এখানে শক্তির রূপান্তর ঘটতে দেখব। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি সেই শক্তিকে ব্যবহার করব কীভাবে?
গির্জার ভেতরের শব্দশক্তির প্রচণ্ডতা এমনই, তার থেকে অপরিসীম তাপশক্তি তৈরি হয়। ক্রমশ পরিবেশ মাইক্রোওয়েভের মতো হয়ে ওঠে। আপনি হয়তো শুনেছেন এই ঘরে কানে হাতচাপা কিছু মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছিল। কিন্তু শুধু তীব্র আওয়াজ ওদের মৃত্যুর কারণ ছিল না। লোকগুলো জীবন্ত অবস্থায় সেদ্ধ হয়ে গেছিল, এমনই প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টি করেছিল ওই ঘরের নিঃসীম শব্দ। সেই আদিম শব্দ ধীরেধীরে হয়তো কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে, কিন্তু এখন আমায় যদি এই ঘরের জাদুটা ব্যবহার করতে হয়, আমাকে তো এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে শব্দ তৈরিও করতে পারি, আবার শব্দবাহিত ওই তাপকে অতিক্রম করে আমি কাজের কাজও করতে পারি! অর্থাৎ প্র্যাকটিক্যাল প্রবলেমটা এইখানেই। শব্দ থেকে তাপ তৈরি করে আমি কী করব? আমায় তো তৈরি করতে হবে ওয়র্মহোলের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জি!
ড: টেগোর, আমি যথাসম্ভব সংক্ষেপে বলছি। অনেকটা কাজ এর মধ্যেই পেরিয়ে এসেছি। এই পর্যায়ে আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখছি। আপনি ওই হলঘরটায় গেলেই দেখবেন, কয়েকটা ড্রোন ওড়ানোর কিছু ব্যবস্থা রেখেছি ওখানে। ওই ড্রোন সাধারণ ড্রোন নয়, এক ধরনের নিঃশব্দ প্রপেলারযুক্ত ড্রোন। অতি উচ্চ তাপমাত্রাতেও ওগুলো অবিরাম কাজ করে যাবে। এই ড্রোনের মাধ্যমে আমরা ভাসিয়ে রাখব উচ্চ শক্তির মাইক্রোফোন নির্দিষ্ট কৌণিক দূরত্বে। তারপর খুব নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘরটার সারফেসে তৈরি করা হবে কিছু শব্দ, যার বাড়বার পরিমাণ আগে থেকেই হিসেব করা থাকবে। এইবারে যে শব্দশক্তি তৈরি হবে, তা আমি প্রয়োগ করব নেপচুনিয়ামের ওপর। এভাবে পাব ফার্মিয়ন কণা। ইলেকট্রন বা প্রোটনের থেকেও সূক্ষ্ম এই ফার্মিয়ন কণা না পেলে ওয়র্মহোলের সম্ভাবনা শুধুই গাণিতিক হয়ে থেকে যেত, বাস্তব আর হত না। কিন্তু আমার এই এক্সপেরিমেন্ট সফল হলে কী হবে বলুন তো? কী আবার! ওয়র্মহোলের সম্ভাবনা বাস্তব হয়ে উঠবে!
এবার বলুন, কী মনে হচ্ছে আপনার?
ব্রহ্মের মুখে দেখা যাচ্ছে ফাজলামিমার্কা বক্রহাসি। সেদিকে একবার হতাশ-চোখে তাকিয়ে নিয়ে স্যর ক্যাভির উদ্দেশ্যে হাততালি দিয়ে উঠলেন বিলি গিলচার। তারপর জ্বলন্ত চুরুটটা ঠোঁটের পাশে ঝুলিয়ে বাঁহাতে তুলে নিলেন বিলিয়ার্ডসের লাঠি। একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বললেন— টেগোর, তুমি হয়তো ভেবেছ, এতো লুকোছাপা কেন? আমি বলি কী জানো— থ্রি চিয়ারস ফর প্রোজেক্ট বিটিটু, হিপ হিপ হুররে! হয়তো তুমি আগে জানোনি, কিন্তু না জেনে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে বলো? কাজ তো থেমে থাকেনি! তাছাড়া একটু লুকোছাপা না করলে এই সম্পদ আমাদের হাতে আমরা মোটেই রাখতে পারতাম না। স্যর ক্যাভি আর আমি দু’জন মিলেই ঠিক করেছিলাম, উনি নিরুদ্দেশ হলেই আমাদের সুবিধে হবে। এ এমন দ্বীপ, দুর্ঘটনা ঘটে মৃত্যু হওয়া এখানে অসম্ভব কিছু নয়। মিডিয়ার বাড়াবাড়িও এখানে নেই। আমরা দারুণ কিছু একটা করে উঠতে পারলে মানব সভ্যতাই তো তার ফলাফল ভোগ করবে! —যাক, সব কিছু ক্লিয়ার তাহলে? অলস ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল। নাও চেক দিস আউট, বিলি ইজ় প্লেয়িং বিলিয়ার্ডস! জেন্টলমেন, উড ইউ কেয়ার টু জয়েন মি?
ব্রহ্ম ঠাকুর বিলির শেষ কথাটা শুনে যেন আর হাসি চেপে রাখতে পারলেন না। হাঃ হাঃ করে অট্টহাসি হেসে উঠলেন। হাসিটা বিলির কথার উত্তরে বেশ বেমানানই ঠেকল। দুই সাহেব ভুরু তুলে তাকালেন ব্রহ্মের দিকে।
একচোট হেসে নিয়ে ব্রহ্ম বললেন— ভালই হল বিলি তুমি খেলাধুলোর প্রসঙ্গ তুললে। খেলা আসলে অনেক আগেই শুরু হয়েছে, তবে তার শেষ হতে এখনও বিস্তর বাকি। স্যর ক্যাভির থিওরির ল্যুপহোলটা ঠিক কোথায়, একটু পরেই তা বলছি। তার আগে তোমার কাছে রাখব দুটো প্রশ্ন।
প্রথম থেকেই দেখছি— একটু হালকা খোঁড়াচ্ছ তুমি। লুকোতে চেষ্টাও করছ সেটা। তবে সাধারণ হাঁটাচলায় চোট লুকনো যায়। বিপত্তি ঘটে দৌড়তে গেলে। আমার এখানে হঠাৎ নাটকীয় প্রবেশ ঘটলো যখন, তুমি দৌড়ে আসতে গেলে। পারলে না। চোটটা তোমায় দৌড়তে দিল না। সেটা বুঝতে পেরে আমি চলে গেলাম তোমাদের খেলার টেবলটার পাশে। এখানকার জমিতেও সমুদ্রের বালি উঠে এসেছে। নীচে তাকিয়েই দেখতে পেলাম যেটা দেখতে চাইছিলাম। একজোড়া জুতোর ছাপে বাঁ পায়ের জুতোর পাটির ওজন পড়ছে বেশি। ডান পায়েরটার কম। বিলি— ওই জুতোর ছাপ জোড়া যে তোমার, তা তোমার জুতো দেখেই স্পষ্ট চেনা যাচ্ছে। তা আজ সকালে বা দুপুরে এই লেংচে চলা তো তোমার ছিল না! কী এমন চোট পেলে বিকেলে, যা লুকিয়ে চলতে চাইছ তুমি— একটু বলবে?
বিলি গিলচারের মুখটা হাঁ হয়ে গেল। তিনি নীরবে তাকিয়ে রইলেন। কিছু বললেন না।
ব্রহ্ম বললেন— ও! বলবে না? তা বোলো না নাহয়। কিন্তু এবার আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবটা কিন্তু চাই। আমাদের বিশিষ্ট বন্ধু হের এরিক দত্ত নিরুদ্দেশ। এখন ঠিক কোথায় আছেন তিনি? এবং কী পরিস্থিতিতে তাঁর এই হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া?
— এ আবার কী টেগোর? এটা কী রকম ঠাট্টা? এ কোন্ কনস্পিরেসি থিওরির কথা বলছ তুমি? এরিক আর আমি অ্যানথ্রোপলজিক্যাল মিউজ়িয়ামের মিটিংটার পর এক জায়গায় গেছিলাম বটে, কিন্তু তারপর তো আমরা আলাদা হয়ে যাই। এরিক একটা প্রাপ্তবয়স্ক লোক— ছোট্ট খোকন তো নয়! ন্যাচারালি আমার আঙুল ধরে রাস্তা ও পেরোয়নি! তা হঠাৎ তোমারই বা এই প্রশ্ন কেন? —এরিক ফেরেনি আমাদের বেস-এ?
২২।
ব্রহ্ম ঠাকুর এরিকের অন্তর্হিত হওয়ার কথাটা বললেন আন্দাজে একটা ঢিল মেরে বিলি গিলচারের প্রতিক্রিয়া দেখে নেওয়ার উদ্দেশ্যে। প্রোফেসর লতিকা সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে মিটিংটা থেকে হঠাৎ বেরিয়ে গেছিলেন ব্রহ্ম, তারপরেও এরিক যোগাযোগ করতে চেষ্টা করেননি, এটা তাঁর অদ্ভুত ঠেকেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছেন কিশিমোতো, এটা জেনেও তাঁর খটকাটা যাচ্ছে না। এরিক সাধারণ লোক নন। তিনি যোগাযোগ করতে চাইলে ঠিকই যোগাযোগ করে নিতেন। করেননি, তার মানে হল, পারেননি।
ব্রহ্ম ঠাকুরের জানবার কথা নয়, ঠিক কী ঘটেছিল— এরিক দত্ত এবং বিলি গিলচার প্রোফেসর লতিকার সঙ্গে আলোচনার শেষে বেরিয়ে আসবার পর। কাছেপিঠে ব্রহ্ম ঠাকুরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না লক্ষ করে বিলি গিলচার বলেছিলেন— চলো এরিক, তোমায় এক জায়গায় নিয়ে যাই। আমার এক পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জায়গা। পাশাপাশি তোমাকে আমার কিছু প্রস্তাবও দেওয়ার আছে…
বিলি এরিক সংবাদ ১
এরিক দত্তকে নিয়ে বিলি গিলচার গাড়িতে উঠবার পর এমনভাবে গাড়িটা চলতে আরম্ভ করে, যেন তার গন্তব্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। অন্য সময়ে হলে ব্যাপারটা এরিককে ভাবাত, হয়তো সতর্কও করত, কিন্তু এই মুহূর্তে লতিকাদেবীর কথাগুলো তাঁর মাথায় এমনভাবে ঘুরপাক খাচ্ছিল, তিনি তা নিয়ে চিন্তায় মশগুল রইলেন। গাড়িটা কোন্ রাস্তা দিয়ে কোথায় গিয়ে উপস্থিত হল, এরিক তা যেন দেখেও দেখলেন না। ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছিল বাতাসে তাঁর আঙুলের নকশাকাটা। মনে হচ্ছিল তিনি অদৃশ্য ব্ল্যাকবোর্ডে একটা দুরূহ অঙ্ক কষছেন। এমন সময় তাঁর চটকা ভাঙল বিলি গিলচারের কথায়। বিলি বললেন— এসে গেছি। চলো এরিক। লেটস গো!
এরিক দেখলেন তাঁরা একটা হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সপ্রশ্ন চোখে বিলির দিকে তাকাতেই বিলি বললেন— না, না। এটা আমাদের গন্তব্য নয়। তুমি আর আমি, আমরা তো অক্ষত, কোনও চোট আঘাত তো পাইনি! তবে হাসপাতালে যেতে হবে কেন? আসলে আমাদের গন্তব্যটা হল মাটির তলায়। আর সেই সুড়ঙ্গে ঢুকবার পথটা আছে এই হাসপাতালের মাঝখানেই! তাই এখানে আসা।
বিলি গিলচার হাসপাতালের ভেতর ঢুকে পড়লেন। একটা বারান্দা দিয়ে এগিয়ে বারান্দার শেষে অন্য একটা দরজা দিয়ে বাইরে বেরোলেন। এটা মূল বাড়িটার উলটোদিকে একটা খোলা উঠোন। অনতিদূরে হাসপাতালের আরেকটা বিল্ডিং শুরু হয়েছে। দুই বাড়ির মাঝখানে রয়েছে একটা পরিত্যক্ত কুয়ো। কুয়োর ঠিক পাশেই একটি অতিবৃদ্ধ অশ্বত্থ গাছ। এক অতিকায় এবং প্রাচীন ‘মহাদ্রুম’।
বিলি বললেন— কয়েক বছর আগে এই নতুন হাসপাতাল যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন এই অশ্বত্থ গাছটি কেটে ফেলবার কথা ওঠে। প্রগতি আর সভ্যতাকে তো প্রকৃতির বিরোধিতা করতেই হবে! কিন্তু অশ্বত্থ গাছটি বেঁচে যায় অন্য কারণে। এটি আসলে অন্য আরেকটি কিংবদন্তি গাছের জুড়ি। দুটো গাছেরই বয়স এক। তবে অন্য গাছটা এখন আর নেই, এক দুর্ঘটনায় সে গত হয়েছে, তার ঝুরি থেকে নতুন গাছ তৈরি করা হয়েছে, সেটিকে চরিত্র বানিয়ে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়ে সেলুলার জেলে— কিন্তু এটি, অর্থাৎ সেই বিখ্যাত গাছের জুড়িটি তো বেঁচে আছে! স্থানীয় ঐতিহাসিক সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি লাগায় তাই রীতিমতো আন্দোলন করে এই গাছকাটা রুখে দেওয়া হয়।
এখন তুমি বলবে, এই গাছ কাটা হল কি হল না, সে খবর আমি রাখলাম কেন? খবরটা আমি রাখলাম তার আসল কারণ হল, গাছের ছায়ায় লুকনো এই পরিত্যক্ত কুয়োটার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। গাছটা কাটলে কুয়োটাও ভাঙতে হত, তাই এর খবর আমি রেখেছিলাম। এমনকী আমি আসলে এই গাছ কাটবার বিরোধী আন্দোলনের খবরটা আন্তর্জাতিক খবরের কাগজে ছাপানোর ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম, যাতে সারা বিশ্বের টনক নড়ে, ঐতিহাসিক মহাবৃক্ষ সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনটা শক্তিশালী হয়। এবার এই কুয়োর সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক, তুমি একটু এদিকে এলেই বুঝতে পারবে।
বিলি গাছটার যে দিকে দাঁড়িয়েছিলেন সে দিকটায় গিয়ে দাঁড়ালেন এরিক। বিলির তর্জনীকে অনুসরণ করে এরিক দেখতে পেলেন অশ্বত্থ গাছটা অতি যত্নে আড়াল করে রেখেছে একটা সিঁড়িকে। ধাপেধাপে সেই সিঁড়ি নেমে গেছে কুয়োর অন্ধকারের মধ্যে। গাছটা থেকে নেমেছে লম্বালম্বা ঝুরি। কয়েকটা ঝুরি সিঁড়িটার উলটোদিক ঘেঁষে নেমে গেছে প্রায় কুয়োর তলা অবধি। বিলি বললেন— লুকনো থাকলেও অনেকেই হয়তো সিঁড়িটা দেখতে পেয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে নেমেওছে নিশ্চয়ই কেউকেউ। কিন্তু তারা নীচে নেমে একটা দেওয়াল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়নি। আর তাদের কাছে এই জিনিসটিও ছিল না।
বিলি গিলচার পকেট থেকে বের করলেন একটি চাবি। দেখেই বোঝা যায় এই চাবি অতি প্রাচীন, তামার তৈরি, শক্তপোক্ত। এরপর পুরনো ইঁটের সিঁড়ি বেয়ে তাঁরা দু’জনেই সাবধানে নেমে এলেন নীচে। নীচ থেকে কুয়োর মুখটা প্রায় দেখাই যায় না, কিছু আগাছা এবং লতাপাতা উপরটা আড়াল করে রাখে, জায়গাটা বেশ গভীরও বটে। ওঁরা যেখানে এসে দাঁড়ালেন, সেখানে চারিদিকে চুন সুরকিতে গাঁথা ইঁটের দেওয়াল। দেওয়ালের অনেক জায়গাতেই ফুটোফাটা। বিলি গিলচার এরিক দত্তকে একটা বিশেষ চৌখুপ্পির দিকে দেখালেন। বললেন— এরিক, লক্ষ করো এবারের ম্যাজিক। —এই বলে গিলচার চাবিসহ হাতটা ঢুকিয়ে দিলেন চৌকো গর্তটার মধ্যে। বোঝা গেল ওই গর্তের মধ্যেই রয়েছে একটা লুকনো তালা-চাবি-ব্যবস্থা।
খুট করে একটা শব্দ হল। তারপর…
(ক্রমশ)
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র