ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শব্দ ব্রহ্ম দ্রুম : পর্ব ১৫


    রূপম ইসলাম (April 15, 2023)
     

    পর্ব ১৪

    ফেরত পথে পা বাড়িয়েছেন কিশিমোতো। ব্রহ্মের রিভলভারটা রয়ে গেছে তাঁর কাছেই। হঠাৎ কিশিমোতোর মনে হল— রিভলভারটা হাল্কা মনে হচ্ছে না? ওতে আদৌ গুলিটুলি ভরা ছিল তো? যেতেযেতেই একবার ব্যারেলটা খুলে দেখতেই হল তাঁকে। দেখলেন— যা মনে হচ্ছিল, ঠিক তাই! গুলিহীন একটি আগ্নেয়াস্ত্র!

    কিশিমোতোর মুখে নিজের প্রতি একটা ধিক্কারের ভাব ফুটে উঠল। ব্রহ্মের প্ল্যান অনুযায়ী অভিনয় করতে গিয়ে বেচারি বাজে ঝামেলায় ফেঁসেছেন। এখন ব্রহ্ম এবং এরিকের ভাল থাকার সঙ্গে তাঁর বাবার ভাল থাকা এক সুতোয় জড়িয়ে গেছে। আর কীই বা করবেন কিশিমোতো জুনিয়র, ব্রহ্ম তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেগুলোই মনেমনে ঝালিয়ে নিলেন চলে যেতেযেতে।

    বিলি গিলচার তরুণ জাপানির অপসৃয়মান মূর্তির দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে কী সব যেন ভাবছিলেন। এবার হাতছানি দিয়ে ডাকলেন একটু দূরে দাঁড়ানো এক বন্দুকধারী অনুচরকে। ফিসফিস করে হুকুম দিলেন কিছু একটা। লোকটি মাথা নেড়ে অন্য হাতে ধরা একটা স্যাটেলাইট ফোনে কথা বলতে বলতে দূরে সরে গেল।

    এসব ঘটনা ঘটবার সুযোগেই  ব্রহ্ম ঠাকুর এখন চলে এসেছেন বিলিয়ার্ডস টেবিলটার খুব কাছাকাছি। এসে খানিকক্ষণ তিনি তাকিয়ে রইলেন নীচের দিকে। খুঁটিয়ে দেখলেন টেবিলের পাশের মাটি। তবে সে বিষয়ে কিছুই বললেন না। মুখ তুলে হাসিমুখে বললেন— স্যর ক্যাভির সঙ্গে বহু আগে আমার আলাপ হয়েছিল এফবিআই-এর একটা কেসের ব্যাপারে— আপনি কি মনে করতে পারছেন স্যর ক্যাভি?

    স্যর ক্যাভি একটু চিন্তিত মুখে তাকিয়ে রইলেন প্রথমে। তারপর হঠাৎ চিনতে পারার হাসিতে মুখ ভরিয়ে ফেলে বললেন— ওহ মাই গড! তাই চেনাচেনা লাগছিল। কিন্তু তখন আপনি এ রকম অদ্ভুতদর্শন জোব্বা তো নয়, ভদ্রসভ্য কোটপ্যান্ট পরেছিলেন। আপনার একটা ফ্রেঞ্চকাট দাড়িও ছিল যতদূর মনে পড়ে—

    এবার তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে বিলি গিলচারকে বললেন— সে বহুদিন আগেকার কথা। নিউইয়র্কে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অভিযাত্রী মরগ্যানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার খোঁজ পেতে এক ক্লেয়রভয়েন্টকে নিয়োগ করেছিল এফবিআই। বলা বাহুল্য, ওই সব মাম্বোজাম্বোতে আমার বিশ্বাস ছিল না। সেই ক্লেয়রভয়েন্টের মাধ্যমেই এই জ্যোতিষ ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, ইনিও এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে, বোধহয় তাঁকে অ্যাসিস্ট করছিলেন…

    বিলি চোখ কপালে তুলে খুব অবাক হয়েছেন এমন একটা ভঙ্গি করলেন। আগ্রহী গলায় জিজ্ঞেস করলেন— তারপর কী হল? পাওয়া গেল মরগ্যানকে?

    — নাহ। বহু খুঁজেও আর পাওয়া গেল না।

    — জানতাম। এসব তুকতাকের দৌড় কতদূর সে তো জানা কথাই। তবে যাই হোক, টেগোর যেটা বলে থাকে, ওই সব জ্যোতিষ-টোতিষ নাকি ওর শত্রুদের হাত থেকে লুকিয়ে থাকবার একটা ছলনাবিশেষ ছিল। তোমায় জানিয়ে রাখি— হি ইজ় আ ভেরি ইম্পর্টেন্ট পার্ট অফ আওয়ার ‘প্রোজেক্ট বিটিটু’!

    ক্যাভি ভুরু কপালে তুলে বললেন— আই সি! ভেরি স্ট্রেঞ্জ অনসম্বল অফ পিপল আই মাস্ট সে। যাই হোক মি. ব্রামহো, ওয়র্মহোল নিয়ে তোমার যা যা প্রশ্ন ছিল, আর আমার ভূমিকাটা এখানে ঠিক কী— তার একটা ব্যাখ্যা তোমায় দিতে চেষ্টা করি। ওয়র্মহোলের একটা সম্ভাবনা এই অঞ্চলে অনেককিছুর মাধ্যমে তো টের পাওয়াই যাচ্ছে। এবার, হাইপোথেটিক্যালি, ধরো, সেটা আমরা খুঁজে পেলাম, তারপর কী হবে? তারপর সেটাকে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে আমাদের প্রচুর এনার্জি লাগবে। আশার কথা, সেই রকমই বিশাল শক্তির উৎস হওয়ার একটা উপায় হিসেবে দেখা দিয়েছে এই লুকনো গির্জার একটা নির্দিষ্ট হলঘর।

    ব্রহ্ম বললেন— স্যর ক্যাভি, আপনার ব্যাখ্যা শুনবার জন্য আমি উদগ্রীব। তবে তার আগে আমি বিলিকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। বিলি, আসবার পথে আমি একটা ভাঙা দেওয়ালের ধ্বংসাবশেষ পেরিয়ে এলাম। হোঁচট খেয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম, দেওয়ালের একটা কোণ ধরে সামলাই। তার ফলে একটা ইঁট আলগা হয়ে আমার হাতে চলে আসে। ইঁটটাকে কাছ থেকে যাচাই করতে পারলাম এর ফলে। ইঁটটা দেখেই বুঝলাম, ওই দেওয়ালটা আসলে ভাঙা ছিল না, ওটা তুমিই ভাঙিয়েছ বিলি! জাপানিরা ওই ঘরটার মধ্যে কঙ্কালগুলো আবিষ্কার করবার পর এই জায়গাটা নিয়ে অল্পবিস্তর গবেষণার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তারপর যখন তাদের চলে যেতে হয়, তখন তারা জায়গাটাকে গোপন রাখবার ব্যবস্থা করেই গিয়েছিল। গোপন রাখতেই বানিয়েছিল ওই দেওয়াল। হয়তো ভেবেছিল পরে ফিরবে, যেমন অনেক পরে সিনিয়র কিশিমোতোও ফিরবেন ভেবেছিলেন তাঁর কাকার আঁকা ম্যাপ দেখে, কিন্তু পারিবারিক দুর্ঘটনার কারণে তাঁর সেসময় আর এখানে আসা হয়নি। ইঁটগুলো দেখেই বুঝলাম, ওগুলোর বয়স বাকি গির্জার দেওয়ালের বয়সের সঙ্গে মিলছে না। ইন ফ্যাক্ট গির্জার স্থাপত্যে ইঁট চুন সুরকি আছে। সিমেন্ট নেই। ওই দেওয়ালটা কিন্তু সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা। আমার বিশ্বাস, ওই হলঘরটার উলটোদিকেও ওরকমই আরেকটা দেওয়াল আছে। আর ওই দেওয়ালটা আছে বলেই রস দ্বীপের অন্যদিকে অবিরত আসা পর্যটকের ভিড় কখনও গির্জাটার এই দিকটাতে ঢুকতে পারেনি। গির্জার এই দিকটা তাই এতদিন পরেও রয়ে গেছে লুকনো। …বিলি, এবার তুমিই বলো, আমার অনুমান সঠিক কিনা!

    — ব্রিলিয়ান্ট টেগোর, ব্রিলিয়ান্ট। তুমি এটা বুঝবে না তো কে বুঝবে? অবশ্য এটার জন্য একটু ক্রেডিট আমায় দিও। ভাগ্যিস দেওয়ালটা আমি ভাঙিয়েছিলাম, নইলে তোমাদের এখন ভাঙতে হত! আমি ম্যাপের মাধ্যমে পথ খুঁজে যখন দেওয়ালটার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম, দেয়ালটা সবকিছু ঘেঁটে দিয়েছিল, কারণ দেওয়ালের উল্লেখ ম্যাপে ছিল না। শেষমেষ দেয়ালটা ভাঙি, এই ইঁট আর সিমেন্ট এখানে বেমানান লেগেছিল বলেই। ঠিকই বলেছ, গির্জার স্থাপত্যের সঙ্গে দেওয়ালটার কোনও মিলই নেই। যাই হোক, তোমার মগজের একটা পরিচয় স্যর ক্যাভি পেয়ে গেলেন। ওঁর কাছেও স্পষ্ট হয়ে গেল, তুমি কে, আর কীরকম ধারালো তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা।

    নিউইয়র্কে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অভিযাত্রী মরগ্যানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার খোঁজ পেতে এক ক্লেয়রভয়েন্টকে নিয়োগ করেছিল এফবিআই। বলা বাহুল্য, ওই সব মাম্বোজাম্বোতে আমার বিশ্বাস ছিল না। সেই ক্লেয়রভয়েন্টের মাধ্যমেই এই জ্যোতিষ ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, ইনিও এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে, বোধহয় তাঁকে অ্যাসিস্ট করছিলেন…

    স্যর ক্যাভি মাথা নেড়ে ব্রহ্ম ঠাকুরকে তারিফ জানালেন। তারপর বললেন— আমি মূল আলোচনায় ফিরি। দেখুন, দূরের অজানা পৃথিবীর সন্ধান করা ওয়র্মহোলের একটা বড় উপযোগিতা। আমরা জেনেছি, হয়তো মহাকাশী একটা যোগাযোগ এখানে আছে বা ছিল। কিন্তু সেই রাস্তা তো ওয়ান-ওয়ে ট্র্যাফিক। মহাকাশের আগন্তুকরাই সেটা ব্যবহার করতে পারবে। মানুষ তো পারবে না। তাহলে মানুষ কী করতে পারে? সবচেয়ে কাছের যে নক্ষত্র আছে, সে হল ‘আলফা সেন্টরি এ’। সেখানে যেতেও আমাদের এখনকার মহাকাশযানের লেগে যাবে কমপক্ষে দুশো বছর। এই দূরত্বটা কমানো যায় কী করে? কমাতে হলে স্পেসটাইমকে ভাঁজ করতে হবে। আর এভাবেই এসেছে ওয়র্মহোলের কনসেপ্ট। এবার এটার বাস্তবায়নের জন্য লাগবে প্রচুর এনার্জি। এই এনার্জিরই জোগান দেবে নিউক্লিয়ার ফিউশন। আর মি. টেগোর, ঠিক এখানেই শুরু হচ্ছে আমার ভূমিকা।

    ২০।

    ড. কিশিমোতো জুনিয়র যখন রস দ্বীপ থেকে পোর্ট ব্লেয়ারের সমুদ্রের ধারের পুরনো বাড়িটায় অর্থাৎ তাঁদের বেসক্যাম্পে ফিরে এলেন, তখন অনেক রাত। সারাক্ষণ তিনি ভেবে চলেছেন, পিছমোড়া দু’হাতে চারটে আঙুলের সংকেত দেখিয়ে কী বলতে চাইছিলেন ব্রহ্ম। ওটা কি ‘তিন’? তাহলে চিহ্নটায় চতুর্থ আঙুলের ভূমিকা কী? তবে কি ওটা ইংরেজি ‘ই’? ‘ই ফর এসকেপ’ নাকি? কিন্তু ব্রহ্ম তাঁকে পালাতে বলবেন কেন হঠাৎ? এসবের জবাব খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যাই হোক, ক্যাম্পে ফিরে এসে এরিক দত্তের খোঁজ করতেই বোঝা গেল সংকেতটার আসল মানে। কিশিমোতো বুঝলেন, ওটা আসলে ‘ই ফর এরিক’। এরিক সত্যিই ক্যাম্পে ফেরেননি, বেমালুম তিনি উধাও হয়ে গেছেন।  কিশিমোতোর মনে হল, ব্রহ্ম ঠাকুর ওই গির্জার দালানে পা রাখবার প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই কোনওভাবে প্রমাণ পেয়ে গেছিলেন যে এরিকের বিপদ হয়েছে। সেটাই ওইভাবে কিশিমোতোকে দ্রুত জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিশিমোতোর মনে পড়ল— ব্রহ্ম বলেছিলেন, এরিককে না পাওয়া গেলে তাঁকে জনৈক ওঙ্গে চৌধুরির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁর সঙ্গেই থাকতে হবে। ব্রহ্ম ঠাকুর পরবর্তী নির্দেশ ওঙ্গের কাছেই পাঠাবেন। কিশিমোতো বুঝলেন— তাঁর কাজ শেষ হয়নি। বিশ্রামের কোনও প্রশ্নই নেই। এখন তাঁর মিশন, ওঙ্গে চৌধুরির সন্ধান।

    ব্রহ্ম বলেছিলেন, ওঙ্গে চৌধুরি স্থানীয়দের মধ্যে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব। কিশিমোতো অবশ্য যেসব স্থানীয়কে বিলি গিলচার ভাড়া করেছেন তাঁদের কাজের জন্য, তাদের কারুর কাছেই ওঙ্গে চৌধুরির কথা পাড়লেন না। এদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে বিলি নিশ্চয়ই খবর পেয়ে যাবেন। কাকে জিজ্ঞেস করা যায় ভাবতে ভাবতে কিশিমোতো রাতের নির্জন সমুদ্রসৈকত ধরে হাঁটতে থাকলেন। দেখা যাক, স্থানীয় কাউকে পাওয়া যায় কি না।

    ডানদিকে, রাতের অন্ধকার সমুদ্রের মধ্যেই মাথা তুলে রেখেছে একটা ডুবো পাহাড়। ডুবো পাহাড়টার চুড়োয় একটা জাপানি বাংকার দেখা যাচ্ছে। বাংকার-কাঠামোটার মাথায় একটা টিমটিমে আলো জ্বললেও ওদিকটা শুনশান। ওখানে কাউকে পাওয়া যাবে না। কিশিমোতো উলটো দিকে, মানে বাঁ দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। হাওয়ায় একটা শিরশিরে ভাব। হাঁটতে ভাল লাগছে। দূর থেকে ভেসে আসছে রেডিয়োয় বাজা হিন্দি গান। এদিকে খানিকদূর এগোলে দেখা যায়, সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে শুরু হয়ে গেছে রাস্তা। এই রাস্তা দিয়েই গাড়ি করে আজ দুপুরে ব্রহ্ম এবং এরিক দত্ত নৃতত্ত্ব যাদুঘরের দিকে গেছিলেন। রাস্তাটার একদিকে পাহাড়ি ঢাল, অন্যদিকে সমুদ্র। সমুদ্র গোলাকার বৃত্ত রচনা করে শহরের মধ্যে ঢুকে এসেছে বলে বিরাট আকৃতির লেকের মতো দেখায়। দুপুরের প্রথম অর্ধে ঝকঝকে নীল জলে ভাসমান প্রচুর জাহাজ এবং ছোট জলযানের দৃশ্য, পেছনে দেখা যাচ্ছে আরও পাহাড়— এ সব দেখে গাড়িতে বসা ব্রহ্ম ঠাকুর বলেছিলেন, তাঁর সুইৎজ়ারল্যান্ডের লুগানো শহরের নয়নাভিরাম দৃশ্যের কথাই যেন মনে পড়ে যাচ্ছে। অবশ্য কিশিমোতোর এসব জানার কথা নয়। কিশিমোতো তো ওই গাড়িতে ছিলেন না। তিনি যানওনি প্রোফেসর লতিকা সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে মিটিং করতে।

    কিশিমোতো বাঁদিকে হাঁটতে হাঁটতে এসে উপস্থিত হলেন এমন একটা মোড়ে, যেখানে সমুদ্র-সৈকত রাস্তার একেবারে পাশে এসে পড়েছে। রাস্তায় উঠতে হলে একটা নর্দমার উপরে লাগানো ছোট্ট নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পেরোতে হয়। কিশিমোতো সাবধানে পেরোলেন। এখানে বাতাসে ভেসে আসা হিন্দি গানটা বেশ জোরে শোনা যাচ্ছে, আর দেখা যাচ্ছে সেটার উৎস। রাস্তার ওপারে একটা অস্থায়ী ভ্রাম্যমান খাবারের দোকানে রাখা একটা রেডিয়োই গানটা বাজাচ্ছে । কিশিমোতো দোকানটার দিকে এগিয়ে গেলেন। দোকানে একটি লোক বিভিন্ন ধরনের কাবাব তৈরি করছিল, এত রাতেও খাবার তৈরির ট্রলিটার সামনে পাতা বেঞ্চে জনা পাঁচেক খদ্দের বসে আছে। ভাবভঙ্গি দেখে স্থানীয় বলেই মালুম হয়। ওদের কাছে ওঙ্গে চৌধুরীর সন্ধান পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই।

    দোকানি কিশিমোতোর প্রশ্নের উত্তরে জানাল— ওঙ্গে চৌধুরি? নিশ্চয়ই চিনি। তিনি তো একলা থাকেন, মাঝেমাঝেই আমার দোকান থেকে কাবাব নিয়ে যান। ওই তো, অ্যাবারডিন বাজারের মধ্যেই একটা বাড়িতে… আসুন দাদা, আসুন— চিকেন টিক্কা কাবাব আছে, আর তন্দুরি চিকেন— একদম টাটকা বানিয়েছি— চলে আসুন…

    দোকানির শেষ কথাগুলো অবশ্য কিশিমোতোকে উদ্দেশ্য করে বলা নয়। একটু দূরে, নর্দমাটার ঠিক পাশে একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে, একটু যেন অন্ধকারেই মিশে আছে সে। লোকটির দৃষ্টি দোকানের দিকেই স্থির, তাই জন্যই কাবাব নির্মাতা তাকে আরও আকৃষ্ট করতে চেয়েছে। কাবাব-ওয়ালা ডাকাডাকি করতেই লোকটা একটা হাত তুলে না-বাচক ইঙ্গিত করল। তারপর পেছন ঘুরে খানিকদূরে গিয়ে আরেকবার এদিকেই চোখ রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। কিশিমোতো স্পষ্ট বুঝলেন, নির্ঘাত তাঁর পিছু নেওয়ার নির্দেশ পেয়েই এসেছে এই লোকটা। তবে কি কিশিমোতোর এখন ওঙ্গে চৌধুরির আস্তানায় যাওয়া ঠিক হবে?

    একটু ভেবে কিশিমোতো ঠিক করলেন, এখন বরং কাবাব খেয়ে লোকটার সন্দেহ দূর করা যাক। কাল একদম ভোর-ভোর ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। এই ধরনের পাহারাদার-লোকগুলোর চোখ এড়িয়েই তাঁকে পৌঁছতে হবে ওঙ্গে চৌধুরির কাছে।

    (ক্রমশ)

    ছবি এঁকেছন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook