ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • মহিলা ক্রিকেটের নবযুগ


    আত্রেয় মুখোপাধ্যায় (March 17, 2023)
     

    ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩। মহিলা ক্রিকেট তো বটেই, ব্যাটবলের ক্ষেত্রেও এক ঐতিহাসিক দিন। মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে শুরু হয় মহিলাদের আইপিএল বা উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ (ডাবলিউ.পি.এল)। এই ধরনের টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডে থাকলেও, প্রথমবারের জন্য ঘটনাস্থল ভারত বলে বেড়ে যায় ডাবলিউ.পি.এল-এর গুরুত্ব। অনেকেই মত প্রকাশ করেন এর হাত ধরে বাড়বে জনপ্রিয়তা, হবে বিপণন, পালটে যাবে মহিলা ক্রিকেটের ছবি এবং বেড়ে যাবে গ্রহণযোগ্যতা।

    ধারণা অমূলক নয়। পাঁচ দলের মালিকানা বিক্রি করে বিসিসিআই বা ভারতীয় বোর্ডের আয় ৪৬৬৯.৯৯ কোটি, যা দেখে চোখ কপালে উঠেছে কমবেশি সমস্ত ক্রিকেট-খেলিয়ে দেশে। দল কিনতে আসরে আদানি সংস্থা, তিন আইপিএল দল (মুম্বই, দিল্লি, গুজরাত) এবং ক্যাপ্রি গ্লোবাল নামে কোম্পানি। তাদের হাঁকা দর শিরোনাম গোটা ক্রিকেটবিশ্বে। পাঁচ বছরের জন্য সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি ৯৫১ কোটি টাকায়। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডে মহিলা টি-টোয়েন্টি লিগের চল বেশ কিছু বছর ধরে থাকলেও, এই অঙ্কের টাকা কল্পনাও করা যায় না।

    তাহলে বলা যায়, মহিলা ক্রিকেটে হল নতুন যুগের সূত্রপাত? আবির্ভাব সেই প্রতিযোগিতার, যার হাত ধরে ঘরে-ঘরে পৌঁছে যাবে হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মান্ধানা, শেফালি ভার্মা, রিচা ঘোষদের নাম? ভারতে জনপ্রিয় হবেন মেগ ল্যানিং, অ্যালিসা হিলি, সোফি ডিভাইন, হিদার নাইটদের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন খেলোয়াড়েরা? এঁদের দেখতে উপচে পড়বে গ্যালারি বা টেলিভিশনের সামনে জমবে ভিড়? হয়ে উঠবে ডাবলিউ.পি.এল আলোচনা, তর্ক, আড্ডা এবং খুনসুটির বিষয়, যেমন হয়েছে আইপিএল? মহিলা ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এক ধাক্কায় হঠাৎ বেড়ে যাবে কি না, বলা মুশকিল। তবে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে যে-যাত্রা শুরু, তাকে তো দমিয়ে রাখা যাবে না। খানিকটা হলেও, ডাবলিউ.পি.এল মানুষের মনে জায়গা করে নেবে।

    এমন ভাবার প্রথম কারণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করায় বিসিসিআইয়ের আগ্রহ। কেন মহিলাদের আইপিএল নেই, এই প্রশ্নের সম্মুখীন বহুবার হতে হয়েছে বিশ্বের সবথেকে ধনী ক্রিকেট বোর্ডকে। কথা উঠেছে, টাকা উপার্জনই বিসিসিআইয়ের লক্ষ্য, খেলার প্রসার নয়। এবং যেহেতু জনপ্রিয়তায় বিস্তর পিছিয়ে মহিলাদের ক্রিকেট, ভারতীয় ক্রিকেট যাঁরা চালান, তাঁদের কাছে এর গুরুত্ব নেই বললেই চলে। বছর কয়েক আলোচনার পর, কর্তারা ডাবলিউ.পি.এল শুরু করায় তৎপরতা দেখিয়েছেন। সাড়া দিয়েছে নামীদামি বাণিজ্য সংস্থা। পেশাদারিত্ব, বাজারি আদবকায়দা, প্রতিযোগিতার প্রচার এবং মার্কেটিংয়ের নিরিখে, অন্যান্য মহিলা ক্রিকেট লিগেদের হয়তো খানিকটা পিছনে ফেলে দিয়েছে সদ্যজাত ডাবলিউ.পি.এল।

    দ্বিতীয় কারণ, দল কেনায় প্রবল আগ্রহ, বিশেষ করে তাঁদের, যাঁরা আইপিএল-এর সঙ্গে জড়িয়ে বহুদিন। যখন দিন বদলে দেওয়া প্রতিযোগিতা শুরু হয় ২০০৮-এ, জোর দিয়ে বলে যায়নি সাফল্যের কথা। অনেকে মনে করেছিলেন, যত বিনিয়োগ হল তার সিকিভাগও উঠবে না। বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবেন যাঁরা টাকা ঢাললেন। দু-এক বছরের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যায়, আইপিএল এক অপ্রিতিরোধ্য শক্তি। জনপ্রিয়তায় অন্যান্য ধরনের ক্রিকেটের থেকে বহু এগিয়ে এবং সমস্ত দেশের ক্রিকেটারদের কাছে সবথেকে লোভনীয় বিষয়। আসল ছবিটা দেখুন। পৃথিবীর বহু দেশ যেখানে আজকাল টি-টোয়েন্টি লিগ চলছে, অনেক দলের মালিক আইপিএল দলগুলোর মালিকেরা, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তাঁরা যখন ডাবলিউ.পি.এল দল কেনায় উৎসাহ দেখাচ্ছেন, মনে করার কারণ রয়েছে, তাঁরা লাভের আশা করছেন। মহিলা ক্রিকেটের জন্য, এইটা বড় ব্যাপার।

    তৃতীয় কারণ, প্রতিযোগিতার পটভূমি। সংগত কারণেই মনে করা হয় ক্রিকেটের অবিসংবাদিত বৃহত্তম বাজার ভারতবর্ষ, বহু বছর ধরে। এদেশে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন তারকারা, বিজ্ঞাপনের বরাত পেলে তো কথাই নেই। মহিলা ক্রিকেটের বাজার সেই অনুপাতে ভারতে তেমন ছিল না। ডাবলিউ.পি.এল-এর সঙ্গে এই অসামঞ্জস্য খানিকটা কমবে, আশা করা যায়। রাতারাতি মহিলা ক্রিকেটাররা সাংঘাতিক জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন এমন না হলেও, সংবাদমাধ্যম এবং মানুষের মনে জায়গা করে নেবেন ভাবা যেতে পারে। এখনই উপচে পড়বে না মাঠ এঁদের দেখতে, কিন্তু ধীরেসুস্থে কদর বাড়বে। ক্রিকেটপাগল দেশে যদি খেলার মান ভাল হয়, সমানে-সমানে টক্কর দেখা যায়, তাহলে খেলা দেখতে মানুষ আগ্রহী হবেন মনে করার কারণ যথেষ্ট।

    পৃথিবীর বহু দেশ যেখানে আজকাল টি-টোয়েন্টি লিগ চলছে, অনেক দলের মালিক আইপিএল দলগুলোর মালিকেরা, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তাঁরা যখন ডাবলিউ.পি.এল দল কেনায় উৎসাহ দেখাচ্ছেন, মনে করার কারণ রয়েছে, তাঁরা লাভের আশা করছেন। মহিলা ক্রিকেটের জন্য, এইটা বড় ব্যাপার।

    আরও কিছু ব্যাপারে চোখ রাখা জরুরি। যাঁরা খেলা দেখেছেন প্রথম কয়েকদিন, নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন বিদেশি এবং ভারতীয়দের মধ্যে মানের তফাত। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা অনেকটা এগিয়ে। ব্যাটিং, বোলিং-এ তো বটেই, বিশেষ করে ফিল্ডিং-এ। মানসিকতার ফারাকও নজরে পড়ার মতো। আশার কথা, কমবয়সি ভারতীয়রা যত বেশি এঁদের সঙ্গে বা বিরুদ্ধে খেলবেন, তত বাড়বে তাঁদের উন্নতির সম্ভাবনা। দেখে এবং ঠেকে, বিভিন্ন ভাবে তাঁরা পাবেন প্রতিষ্ঠিত তারকাদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ। উপরি পাওনা পারিশ্রমিক তো আছেই। আইপিএল খেলে শিখেছেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের মেলে ধরেছেন, এমন উদাহরণ কম নেই। প্রথম বছর ঋদ্ধিমান সাহা, মনপ্রীত গোনি থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে জসপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ডিয়া, উমরান মালিক— নাম নেহাত কম নয়। এঁদের মতো, ভারতীয় তরুণীরাও ডাবলিউ.পি.এল থেকে উপকৃত হবেন।

    ইতিমধ্যেই দাগ কেটেছেন বাংলার সাইকা ইশাক, পাঞ্জাবের কণিকা আহুজা, কর্ণাটকের শ্রিয়াঙ্কা পাটিল, মহারাষ্ট্রের কিরণ নভগিরে। তালিকায় আছেন আরও কয়েকজন। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্যের সঙ্গে খেললেও, এঁদের কথা ডাবলিউ.পি.এল-এর আগে প্রায় কেউ শোনেননি। অথচ প্রতিযোগিতা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এঁরা পরিচিত নাম। অচিরেই তাঁদের জন্য খুলে যেতে পারে জাতীয় দলের দরজা। ডাবলিউ.পি.এল না থাকলে, এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকত বললে কম বলা হয়। বলা বাহুল্য, যত খেলা হবে, তত সামনে আসবেন এঁদের মতো খেলোয়াড়েরা। অনুপ্রাণিত হবেন আরও অনেকে। ক্রিকেট পেশা হতে পারে, ভেবে মাঠে নামবেন মহিলারা। সবাইকে ক্রিকেটার হতে হবে, এমন নয়। আম্পায়ার, স্কোরার, ভিডিও অ্যনালিস্ট এবং অন্যান্য ভূমিকায় এঁদের দেখা যেতে পারে। মোদ্দাকথা, অনেক দিগন্ত খুলে যেতে পারে ডাবলিউ.পি.এল-এর জনপ্রিয়তার সঙ্গে।

    এখন প্রশ্ন, সবকিছুই কি ভাল? উন্নতির জায়গা নেই? আলবাত আছে। প্রথম কথা, রান সংখ্যা বাড়ানোর জন্য, কর্তৃপক্ষ বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে, চার-ছয় দেখা যাচ্ছে বটে, তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থাৎ বিশ্বকাপ এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতায় যে-পরিস্থিতিতে খেলতে হবে, তার সঙ্গে সড়গড় হওয়ার সুযোগ উঠতি ভারতীয় খেলোয়াড়দের কাছে কমে যেতে পারে। দর্শকসংখ্যা বাড়ানোর জন্য, কর্তাদের এমন কিছু করার দরকার নেই যার দরুন ব্যাহত হতে পারে কমবয়সিদের উন্নতি। যদি তাঁরা উপযুক্ত হন, স্বাভাবিক মাপের মাঠে খেলেই উঠে আসবেন। বাউন্ডারি ছোট করার প্রয়োজন হবে না। এই বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি চিন্তাভাবনা হবে, তত মঙ্গল।

    দ্বিতীয় প্রশ্ন, পাঁচ দল নিয়েই চলবে ডাবলিউ.পি.এল? এক শহরের দুটো মাঠে? আইপিএল-এর মতো ‘হোম অ্যান্ড অ্যায়োয়ে’ ভিত্তিতে হবে না? সামনের বছর না হলেও, আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বিসিসিআই এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে। প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর। খুব সম্ভবত, প্রথম বছর বলে তাঁরা পাঁচ দলের বাইরে ভাবেবনি। যেহেতু বড় অঙ্কে দল কেনায় আগ্রহ দেখা গিয়েছে প্রচুর, প্রতিযোগিতা আগামী দিনে আরও বড় হবে বলে মনে হয়। এর মানে বাড়তি টাকা, প্রচার, কৌতূহল, ইচ্ছে, সুযোগসুবিধে এবং আরও অনেক কিছু। নানারকম বিতর্কও থাকতে পারে। আইপিএল-এ কম হয়েছে? তবে ঢাকে কাঠি যখন পড়েছে সমারোহের সঙ্গে, ডাবলিউপিএল বেঁচে থাকবে। বাড়বে কলেবর। ভারতীয় মহিলা দলের উন্নতি হলে, অনেক নতুন মুখ উঠে এলে, বিশ্বকাপ জিতলে হবে সবথেকে বড় প্রাপ্তি। পুরুষ দলের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook