You better start swimming
Or you’ll sink like a stone
For the times they are a-changin’.
সময় বয়ে চলেছে। ২০২৩-এ আমাদের সাধারণ ধারণা। কার্লো রভেলি (ইতালির পদার্থবিজ্ঞানী) অবশ্য তা বিশ্বাস করেন না। তিনি সময়কে পাত্তা দিতে চান না। তাঁর মতে, সময় একটি ইলিউশন মাত্র। তাঁর বই ‘অর্ডার অফ টাইম’-এ এই নিয়ে প্রচুর আলোচনা আছে। আমরা কি তাঁর কথা বিশ্বাস করব? আমার মতে আমি এই ব্যাপারটা অত ভালো বুঝি না। তাই,
… don’t criticize
What you don’t understand.
তবে, চোখ-কান খোলা রাখা প্রয়োজন। দ্রুতবেগে সব কিছু পালটে যাচ্ছে। যে-কোনওদিন মূল ইক্যুয়েশনটাই বদলে যেতে পারে। নিউটন থেকে আইনস্টাইন, নতুন-নতুন থিওরি আছড়ে পড়ছে মনুষ্যসভ্যতার সৈকতে। এটুকু বুঝছি যে, বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে প্রতি মুহূর্তে আপগ্রেড করে চলতে হবে।
আগে কেমন ছিল মানুষের জীবন? বড় প্রশ্ন। ছোট করে বলা যেতে পারে যে, যেমনই ছিল, জীবনে গতি এত ছিল না। ক্রমশ জনসংখ্যা বেড়েছে, ঝাঁকে-ঝাঁকে নতুন আইডিয়া এসেছে, টেকনোলজি উন্নত হতে থেকেছে, এইসব মিলে আমাদের জীবনের গতিকে দিয়েছে বাড়িয়ে। কম্পিটিশন গিয়েছে বেড়ে। তুমি একটু গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে গেলেই পাশ দিয়ে সাঁ করে দশজন সুপার সাইকেল করে বেরিয়ে যাবে।
খুব সহজ একটা শব্দ, ধার। এই ধারেই দুনিয়া চলছে। যুগ-যুগ ধরে চলে আসছে মানুষের এই অভ্যাস। আমাদের মধ্যে হাজার-হাজার উচ্চাকাঙ্ক্ষা সারাক্ষণ কিলবিল করছে, কিন্তু যা চাইছি সবই সামর্থ্যের বাইরে। বাড়ি চাই, গাড়ি চাই, টিভি চাই, ফ্রিজ চাই কিন্তু এই মুহূর্তে কেনার ক্ষমতা নেই। এক সময়ে কাবুলিওয়ালা ছিল, তারপর প্রয়োজন হল ব্যাঙ্কের। ব্যাঙ্কের ব্যবসাটাই তাই। লোককে ধার দাও আর সুদসমেত ফেরত নেওয়া। ব্যাঙ্কের পাশাপাশি বাজারে আসতে শুরু করল NBFC অর্থাৎ Non-banking financial company. ব্যাঙ্কিং-এর লাইসেন্স নেই কিন্তু ব্যাঙ্কের মতোই কাজ করে। লোন দেয় আর সুদসমেত ফেরত নেয় শুধু ডকুমেন্টেশন এবং সময়, দুটি একটু কম লাগে। আমাদের দেশে এখন বহু কোম্পানি আছে যারা এই কাজটা করে কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাজাজ ফাইন্যান্স সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে। প্রথম হচ্ছে মার্কেট ধরা। ওরা প্রথমে একটা গ্যাপ ধরতে পারে। ব্যাঙ্ক রয়েছে বড়-বড় লোন দেওয়ার জন্য কিন্তু ফ্রিজ, টিভি, এসি, ফোন এইসব কম টাকার জিনিসের জন্য লোন দেওয়ার কেউ নেই, কারণ খুচরো আইটেম নিয়ে কেউ ভাবিত ছিল না। বাজাজ ফাইন্যান্স এইসবের মধ্যে প্রবেশ করার আগে কিন্তু করেছিল বিশাল রিসার্চ। Data science কাজে লাগিয়ে খুঁজে বের করেছিল আমাদের দেশের নাগরিকদের যারা high income কিন্তু low risk. তারপর তারা আনে zero cost EMI. এইভাবে বেশ কিছু ইনোভেশনের মাধ্যমে ধার দেওয়ার ব্যবসাকে নিয়ে যায় এক অন্য মাত্রায়। মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে তারা এখন মার্কেট লিডার। অন্য কেউ কাছাকাছিও আসতে পারছে না আপাতত। কাজটা খুব বেসিক আর কনসেপ্টটাও পুরনো, ধার দেওয়া আর সুদসমেত ফেরত পাওয়া। এখানে মূল শব্দটা ইনোভেশন। ধার দেওয়াতে এমন ইনোভেশন এনেছে যে আজ তারা এগিয়ে। ভবিষ্যতে এগিয়ে থাকতে গেলেও কিন্তু নতুন-নতুন কিছু করতে থাকতেই হবে। এই তো শুনলাম ওরা এখন অনলাইন মল খুলে ফেলেছে। সামনে কী হবে কেউ জানি না কিন্তু ওদের ব্যবসার স্ট্র্যাটেজি আমাদের অনেক কিছু শেখায়।
ভারতের এক লম্বা রেসের ঘোড়া খুঁজতে গেলে বলতে হয় এশিয়ান পেন্টস-এর গল্প। ১৯৪২-এর কোম্পানি রং বেচে মার্কেট লিডার। শুধু রং বেচলে কিন্তু তারা আজকের এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না। তার সঙ্গে জড়িয়ে আবার সেই একটাই শব্দ, ইনোভেশন। টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে, দুরন্ত রিসার্চ এবং ব্যবসায়ী বুদ্ধি এইসব মিলিয়ে তারা এমন একটা পরিখা কাটতে পেরেছে যে, অন্য কোনও প্লেয়ার ঢুকতেই পারছে না। তাদের সাফল্যের গল্প অন্য একদিন আলোচনা করা যেতে পারে।
সেই সঙ্গে বিশ্বের আর এক টপ প্লেয়ারের গল্প মাথায় আসছে, ইন্টেল। বাড়িতে-বাড়িতে PC এক সময়ে শুধুমাত্র ইন্টেল। দীর্ঘদিন ইন্টেল একা রাজত্ব করেছে। তারপর চিপ বানানোর খেলাতে আসে বিশাল প্রতিযোগিতা— AMD, NVIDIA PC-র চাহিদাও ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। এখন কিন্তু ইন্টেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা অতটা উত্তেজিত নই। বাকিরা একটু এগিয়ে রয়েছে। কালকে হতেই পারে যে, ইন্টেল আবার ঘুরে দাঁড়াল। তবে তার পেছনেও কিন্তু থাকবে সেই ইনোভেশন।
Your old road is rapidly agin’
এনার্জির কথাতে যদি আসি তাহলে পেট্রল, ডিজেল, কয়লা সবকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আসছে গ্রিন এনার্জি যার কার্বন ফুটপ্রিন্ট কম। পরিবেশ এবং পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষ খুঁজে চলেছে অল্টারনেটিভ এনার্জি সোর্স। তাই পেট্রলপাম্পের মালিককে কিন্তু ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। সেই তো মানুষ আসবে কাঁড়ি-কাঁড়ি দাম দিয়ে পেট্রল ভরবে। এই মডেল দু’দিনেই পালটে যেতে পারে। পেট্রলপাম্পকে ক’দিনের মধ্যে বদলে EV charging station হয়ে যেতে হতে পারে কিম্বা অন্য কিছু। তাকে জেগে থাকতে হবে। গ্রিন হাইড্রোজেন নিয়ে আদানি, রিলায়েন্স, IOCL, MTAR সব ঢুকে পড়ছে বাজারে। কবে যে কী হয়ে যাবে কেউ জানি না। দেউচা পাচামিতে কয়লাখনি পাওয়া গেছে বলে আনন্দে ফেটে পরার আগে ভাবতে হবে কয়লার আর ক’দিন? পাঁচ বছর বাদে হতে পারে কয়লাই ব্যান হয়ে গেল।
For the loser now
Will be later to win
এখন তো নতুন টেকনোলজি বলতে এ.আই.। আজকাল বুদ্ধিমান ছেলেমেয়েরা কী নিয়ে পড়ছে, না মেশিন লার্নিং! বাজার গরম করে রেখেছে চ্যাট-জিপিটি। একটি আধুনিক চ্যাট বট। বট অর্থাৎ রোবট। আমাদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাবলীল ইংরাজিতে কথা বলে যেতে পারে এই চ্যাট বট। প্রশ্ন করলেই ইন্টারনেট থেকে তথ্য খুঁজে এমনভাবে গুছিয়ে উত্তর দেবে আমাদের মনে হবে যেন আর এক মানুষের সঙ্গেই আমরা চ্যাট করছি। বাঙালির সিধু জ্যাঠা। চ্যাট জিপিটি-কে এনেছে OpenAI নামক একটি কোম্পানি। Microsoft-এর ফান্ডিং রয়েছে এই কোম্পানিতে। তর্ক শুরু হয়েছে, Google-এর দিন এবার শেষ। কিন্তু Google কি গাছতলায় বসে ঝিম মারছে? একদম না, তারা নিয়ে আসছে Bard, ChatGPT-র প্রতিযোগী।
সেদিন আমারও জানতে ইচ্ছে করে, ChatGPT বাংলা বোঝে?
ChatGPT : হ্যাঁ, বাংলা বুঝতে পারি। কেমন আছ? আপনার কোনও জিজ্ঞাসা থাকে?
বুঝলাম, আপনি, তুমি-তে সমস্যা। আছে, থাকে-তেও।
আমি : চার লাইনের একটা লিরিক লিখে দাও। বসন্তকালের সকাল নিয়ে।
ChatGPT : বসন্তকালের সকাল, পাখি গান গাই। স্বাদের বনের মধু ফুটে যাই। মনে হচ্ছে তার সুখের অস্তিত্ব।
এই লিরিক শুনে অনেকেই আঁতকে উঠতে পারে। কিন্তু আমি চিন্তায় রয়েছি। ২০২৩-এ এরকম লিখছে। ২০৩০-এ কিন্তু ঝামেলা আছে। এ-জিনিস আরও উন্নত হতে থাকবে। ঝরঝর করে কবিতা লিখবে। আমাদের বাংলাতে এমনিতেই কেউ খুব একটা পারিশ্রমিক দিতে পছন্দ করে না, এবার আমাদের প্রতিযোগী বিনামূল্যে এই কাজ করে দিতে পারবে! সিন্থেসাইজার যেদিন কি-বোর্ডের রিডে বেহালার সুর শুনিয়েছিল, তারপর বহু বছর কেটে গেছে। এখন কম্পিউটার তাল, লয় বলে দিলে ড্রাম বাজাতে পারে। সুর এদিক-ওদিক হলে সফটওয়্যারের সাহায্যে টিউন করে নেওয়া যায়। ভবিষ্যতে কথা, সুরও বানিয়ে নেওয়া যাবে বলেই মনে হচ্ছে। আমাকে জেগে থাকতে হবে। পারব কি না জানি না কিন্তু নিজেকে উন্নত রাখার একটা চেষ্টা তো করতে হবে।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র