ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সাক্ষাৎকার : শৌভিক দে সরকার


    ডাকবাংলা.কম (January 7, 2023)
     

    ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় ওয়াই বি সত্যনারায়ণের লেখা বই My Father Baliah. তেলেঙ্গানার এক দলিত পরিবারের তিন প্রজন্মের লড়াই, এই বইয়ের বিষয়বস্তু। এলাকুতি পরিবারের আখ্যান হলেও, এই বই তুলে ধরে দেড়শো বছরের এক সামাজিক শোষণের ইতিহাস। ব্রাহ্মণ্যবাদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে কীভাবে একদিন শিক্ষাকে হাতিয়ার করে এলাকুতি পরিবার তাদের ভিন্ন অস্তিত্বকে তৈরি করে সমাজের বুকে, এই আখ্যানের মধ্যে দিয়ে সেই যাত্রাপথটাই পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন সত্যনারায়ণ। শৌভিক দে সরকারের বাংলা অনুবাদে ‘আমার বাবা বালাইয়া’ এ-বছর সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছে। অনুবাদকের সঙ্গে ডাকবাংলা.কম-এর পক্ষ থেকে কথা বললেন পৃথ্বী বসু

    ওয়াই বি সত্যনারায়ণেরর লেখা My father Balia বইটা কেন অনুবাদের জন্য বেছে নিয়েছিলে, শুরুতে যদি একটু বলো।

    ২০১৬ সালে শিলচরে অনুবাদ ফেস্টিভ্যালে আমার বন্ধু ভেঙ্কট রামস্বামী প্রথম আমাকে এই বইটার কথা বলেন। এই বইটা প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে। বাংলা ছাড়াও এ-বই ভারতের বেশ কয়েকটা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তেলেঙ্গানার একটা প্রত্যন্ত অঞ্চল, সেখানকার এক দলিত পরিবারের তিন প্রজন্মের জার্নি বইটার মধ্যে ধরা আছে। প্রায় দেড়শো বছরের একটা ইতিহাস। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামের একটা সামগ্রিক ছবি এই বইটার মধ্যে আমি পেয়েছিলাম পড়তে গিয়ে। রামস্বামী ছাড়াও সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে এই বইটার কথা বলেন পরে। তিনি এই বইটি নিয়ে খুবই উৎসাহী ছিলেন। মূলত তাঁর উৎসাহেই আমি এই বইটা অনুবাদ করতে শুরু করি। তিনি চেয়েছিলেন, এই বইটা বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে পৌঁছে যাক। ২০১৭ সালে শুরু করে প্রায় বছরখানেক ধরে এই বইটা অনুবাদ করি সে-সময়ে। ২০২০ সালে বইটির বাংলা অনুবাদ বের হয়, ‘আমার বাবা বালাইয়া’ এই নামে। বইটি প্রকাশ করে হাওয়াকল পাবলিশার্স।

    ওয়াই বি সত্যনারায়ণ এই বই সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, এরকম ‘পারিবারিক ইতিহাসের কথা’ যদি কেউ না লিখে যান, তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের অতীত বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। পূর্বসূরিদের সঙ্গে যেন কোনও যোগসূত্র তাদের গড়ে উঠবে না কখনওই। তোমার কী মনে হয়, এই ধরনের লেখালিখি  আরও হওয়া উচিত?

    অবশ্যই। আমার মনে হয়, মূল সাহিত্যের বাইরে, অর্থাৎ গল্প-উপন্যাস-কবিতা-নাটকের বাইরে গিয়ে যদি কোনও ব্যক্তি তাঁদের নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলো লিখে যেতে পারেন, তাহলে বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের একটা যোগাযোগ ঘটবে। প্রত্যেকের জীবনযাত্রা, নিজেদের সামাজিক ইতিহাস আমরা অন্যদের কাছে তুলে ধরতে পারব। এই বিনিময়টা আমার কাছে খুব জরুরি বলে মনে হয়। এই প্রসঙ্গে আমি আরও একজনের নাম করতে চাই। সুজাতা গিদলা। তিনিও দলিত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। পরবর্তীতে আমেরিকার বাসিন্দা হন। তাঁরও এইরকম অসাধারণ একটা বই আছে— Ants Among Elephants : An Untouchable Family and the Making of Modern India. বাংলাতেও সম্প্রতি এই ধরনের লেখার একটা পরিসর তৈরি হয়েছে!

    আজকাল এই প্রশ্ন অনেককেই করতে শোনা যায় যে, সাহিত্যের আগে ‘দলিত’ শব্দটা বসিয়ে দেওয়ার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি না! তুমি আগেও নামদেও ধাসালের কবিতা অনুবাদ করেছ, এই বইটাও করলে। ‘দলিত সাহিত্য’ নিয়ে তোমার ভাবনাটা একটু জানতে চাই।

    দ্যাখো, সাহিত্যের এভাবে বিভাজন হয় কি না, এই বিষয়টা নিয়ে তর্কবিতর্ক খুবই স্বাস্থ্যকর একটা আলোচনা বলে মনে করি। বৃহৎ পরিসরে বরং সেটা সুবিধেই হয়। কিন্তু আমার যেটা মনে হয়, ভারতবর্ষের ইতিহাসে দীর্ঘদিন ধরে শোষিত-নিপীড়িত একটা শ্রেণি যদি মনে করে, তাদের নিজেদের কথা তারা নিজেদের মতো করেই বলবে, তাহলে তো সেই ধরনের লেখালিখিকে আলাদা করতে কোনও অসুবিধে থাকার কথা নয়!

    পশ্চিমবঙ্গের বাইরের দলিত সাহিত্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দলিত সাহিত্যের পার্থক্যটা ঠিক কী বলে মনে হয় তোমার?

    আসলে বাইরে, অর্থাৎ মহারাষ্ট্র-তামিলনাড়ু এইসব জায়গায় দীর্ঘদিন ধরেই একটা আন্দোলনের চেহারায় এই ধরনের লেখালিখি হয়ে এসেছে, ফলে আজকে দাঁড়িয়ে তার একটা সম্পূর্ণ চেহারা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংগঠিত ভাবে ওখানকার সাহিত্য উঠে এসেছে আমাদের কাছে। পশ্চিমবঙ্গে সেইভাবে চর্চার পরিসরটা এতদিন  তৈরি ছিল না আমাদের সামনে। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গের ‘দলিত সাহিত্য’ নিয়ে আমরা তত বেশি ওয়াকিবহাল ছিলাম না। তবে আশার কথা এই যে, সম্প্রতি কিন্তু এখানেও কিন্তু এই ধরনের সাহিত্যের একটা পরিসর তৈরি হয়েছে। দলিত সাহিত্য নিয়ে আলাদা করে ভাবনাচিন্তা করছেন মানুষজন। হয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এখানেও এই ধারার সাহিত্যের একটা সম্পূর্ণ রূপ আমরা দেখতে পাব।

    এই বইটার মধ্যে যে সমাজ-সংস্কৃতির কথা তুলে ধরা হয়েছে, তা তোমার দুনিয়া থেকে অনেক দূরের একটা জগৎ; অনুবাদ করার সময়ে একজন সাহিত্য-রসিক হিসেবে কীভাবে আত্মীয়তা অনুভব করেছ?

    শুরুতেই বলি, আমি যে-অঞ্চলে থাকি, অর্থাৎ ডুয়ার্স, সেখানে কিন্তু বহু ভাষার মানুষজন পাশাপাশি রয়েছেন দীর্ঘদিন। তাদের একের সংস্কৃতি অন্যের মধ্যে জলের মতো গড়িয়ে-গড়িয়ে চলে গেছে। ফলে একটা মিশ্র সংস্কৃতির মধ্যে আমি বেড়ে উঠেছি।

    আরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল, আমার ছোটবেলা কেটেছে রেলওয়ে টাউনশিপে। ফলে কেরালা আর কাশ্মীরের মধ্যে আমি কোনও ফারাক খুঁজে পেতাম না ছোটবেলায়; যেহেতু সব জায়গার মানুষজনই রেলের চাকরির সূত্রে ওই অঞ্চলে থাকত। এই বইটা যখন পড়ি আমি, একটা অদ্ভুত যোগসূত্র খুঁজে পাই। এই বইয়ের মধ্যে যে-পরিবারের কথা বলা আছে, তারা নিজেদের অস্তিত্ব তৈরিই করেছিল রেলওয়ের হাত ধরে। অর্থাৎ অন্ধকার জীবন থেকে তাদের যে-উত্তরণ, শিক্ষার প্রতি তাদের যে-আগ্রহ— তার সূত্রপাত কিন্তু রেলব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে। এলুকাতি পরিবার যদি না রেলের চাকরি নিয়ে তাদের অন্ধকার জগতের বাইরে বেরোত, তাহলে হয়তো এই বই কখনওই লেখা হত না! তুমি শুনলে হয়তো অবাক হবে, আমি যখন এই অনুবাদ করার জন্য বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করছি, তখন জানতে পারি, আমাদের এই আলিপুরদুয়ার জংশনেও এক সময়ে বহু তেলেগু পরিবার এই রেলের চাকরির সূত্রে তাদের বসতি গড়ে তুলেছিল। এমনকী এখানে তেলেগু মিডিয়াম স্কুলও ছিল একটা সময় পর্যন্ত। ফলে আলাদা সংস্কৃতি হলেও, এই কিছু-কিছু পরিচিত ছবি যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম, তখন আত্মীয়তাটা যেন ভেতর থেকেই তৈরি হয়ে গেছিল কোথাও। খুব আনন্দ পেয়েছি এই বইটা অনুবাদ করতে গিয়ে।

    যে-দেশে রোহিত ভেমুলাকে আজও বলতে হয় ‘আমার জন্ম একটা দুর্ঘটনা মাত্র’, সেখানে দাঁড়িয়ে ওয়াই বি সত্যনারায়ণের এই বইয়ের বাংলা অনুবাদ পুরস্কৃত হচ্ছে, এবং তুমি সেই বইয়ের অনুবাদক। তোমার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।   

    দ্যাখো, এটা তো খুবই আনন্দের একটা বিষয়! কেননা একটা মানুষের শুধু নয়, একটা পরিবারেরও শুধু নয়, দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণ্যবাদের শিকার হওয়া একটা শ্রেণির বয়ানকে পুরস্কৃত করা খুবই উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা। দলিতরা নিজেদের সাহস, মনোবল, শিক্ষাকে হাতিয়ার করে আজ একটা জায়গায় পৌঁছেছে, এটা যেমন আনন্দের— তেমনই দীর্ঘ সময় ধরে কী অত্যাচারই না সহ্য করতে হয়েছে তাদের! এই ইতিহাস ভয়ংকর। আমার কাছে এই বইটা একটা প্রত্যাঘাত হিসেবে ধরা দিয়েছে। অর্থাৎ আজকের যে-সমাজকাঠামো, তার বুকে দাঁড়িয়ে এই বই যেন এতদিনের একটা অশ্রুত চিৎকার নিয়ে হাজির হয়। আমার অনুবাদের মধ্যে দিয়ে এই বই জাতীয় স্তরে একটা স্বীকৃতি পেল, আমার এটা একটা বিরাট আনন্দের জায়গা!

    এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে লেখকের প্রতিক্রিয়া কী?

    উনি অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। এই কাজটার মধ্যে দিয়ে ওঁর সঙ্গে আমার একটা আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে অনেকদিন। তেলেঙ্গানাতে ওঁর বাড়িতেও আমি গেছি। সাহিত্য অকাদেমি থেকে যখন আমাকে ফোন করা হয়, তার পরই আমি ওঁকে ফোন করে জানাই এই খবরটা। বাচ্চাদের মতো করছিলেন ফোনে, আনন্দে। এতদিনের এই সংগ্রামকে কোথাও একটা স্বীকৃতি দেওয়া হল, এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হয় না বোধহয়!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook