ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ভাসান


    দেবজিৎ চক্রবর্তী (December 10, 2022)
     

    দুর্গা ঠাকুর গড়ার কাজ শুরু হয়েছে পাড়ায়-পাড়ায়। মা আসছে, পাড়ার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আমার ঘর থেকে দেখা যাচ্ছে দুর্গামূর্তিটা। কিছু-কিছু ঘটনা, কোনো-কোনো মানুষকে দেখলেই মনে হয় কিচ্ছু পাল্টায়নি, জীবনটা ঠিক খাতেই ব‌ইছে, আমি ভাবছি তাই সব বদলে গেছে আসলে কিছুই বদলায়নি। কুমোরপাড়ায় সন্ধে নেমে এসেছে, আলো জ্বলছে গুমটিগুলোতে, যাহোক করে রুটি-বাঁধাকপির তরকারি খেয়ে আবার কাজে নেমে পড়েছে কুমোরের দল, মা সাজছে। এই সমাজের একটা নিজস্ব স্থিতাবস্থা আছে, একটা সাম্যাবস্থা আছে, সে ঠিক নিজেকে সারিয়ে নেয়, ঠিক সময়ে ঠিক মানুষকে পাঠায় আটকে থাকা চাকাটাকে ফের চালু করার জন্য। চূড়ান্ত ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, ভাষার আগ্রাসন, মেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার, ক্রমাগত বেড়ে চলা এনট্রপি, গড়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধ, জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতার। মারাদোনার হারিয়ে যাওয়া, পর পর দুটো বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার চরম ভরাডুবি, দেশজুড়ে বেড়ে চলা আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী-কোন্দল, আগমন হয়েছিল লিওনেল মেসির, হাতে পাথর নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর্জেন্টিনীয় ছোকড়াটা তুলে নিয়েছিল ফুল, ফিরে এসেছিল বিশ্বাস… ভরসা… ভালোবাসা।

    পাড়ার মোড়ে মেয়েটা রোজ আসে, ছেলেটা দাঁড়ায়… রোজ দেখে, পাল্টা দেখলে চোখ সরিয়ে নেয়, তবু দেখে রোজ নিয়ম করে। মায়ের ইনসুলিন কিনতে প্রতিদিন ছেলেটা পাড়ার মোড়ের ওষুধের দোকানটায় আসে, দোকানদার জিগ্যেস করলে বলে, ‘দাদা, অম্বল হয়েছে, একটা হজমি দিন না।’ মেয়েটা যাওয়ার সময় ছেলেটাকে রোজ একবার দেখে, কেমন একটা লাগে কিন্তু অস্বস্তি হয় না, বরং অটোওয়ালাকে রোজ পাঁচশোর নোট ধরিয়ে দেয়। ছেলেটা ভীষনণই বোকা, মেয়েটার সম্বন্ধে কিছুই জানে না তবু রোজ যায়, গিয়ে দাঁড়ায়। বাড়িতে বাবা বিয়ের জন্য তাগাদা দেয়, খিস্তি করে, ও‌ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে, চেঁচামেচি করতে পারে না, খালি বলে, ‘করব, করব তো, ঠিক করব।’ ছেলেটা বেশি কিছু বলতে পারে না… ছোট থেকেই, কাউকেই না, না বাবাকে  না মেয়েটাকে। ও শুধু নিয়ম করে যায়… দাঁড়ায়… বিচ্ছিরি হজমিটা খায়… পাড়ার ছেলেদের ব্যঙ্গ শোনে আর মেয়েটাকে দেখে।

    ভালোবাসা আর দায়িত্ব মিশিয়ে গড়ে তুলি একটা আস্ত হিমালয়। জানি হিমালয়ে পৌঁছাতে পারব না তবু স্বপ্ন দেখি হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছানোর, তেনজিং নোরগের মতো ভালোবাসার পতাকা পতপত করে ওড়ানোর। পতপত করে ভালোবাসার সেই পতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার নাম লিওনেল মেসি, যাকে মানুষ ঈশ্বর বানায়, মানুষ‌ই মাইক্রোস্কোপের তলায় ফেলে পর্যালোচনা করে। মেসির তাতে কিছু আসে যায় না, যারা ভালোবাসে তারা শুধু ভালোবাসতে জানে, একটা সময় পর পাওয়ার ইচ্ছেটা গৌণ হয়ে যায়, ভালোবাসাটা একটা নিরন্তর অভ্যাসে পরিণত হয়।

    ২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল চলছে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের মধ্যে। টাইব্রেকারে ২-১-এ এগিয়ে আর্জেন্টিনা। স্নেইডারের দুরন্ত পেনাল্টি বাঁচিয়ে আর্জেন্টিনাকে সাইকোলজিক্যাল অ্যাডভান্টেজ দিয়েছে রোমেরো। এবারে আর্জেন্টিনার টার্ন। কুনের পেনাল্টি চিলেসেনকে পরাস্ত করে যখন তেকাঠিতে ঢুকছে ম্যাচের ভাগ্য লিখন হয়ে গিয়েছে। মারাকানায় ঐতিহাসিক ফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। ক্যামেরা তাক করল পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির আর্জেন্টিনার দশ নম্বর জার্সিধারী মানুষটাকে। তার চোখে জল! মেসি কাঁদছে, মেসি ও কাঁদে! চারটে ব্যালন ডি’অর, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়… দেশ ফাইনালে যাচ্ছে বলে কাঁদছে, কী বোকা!

    ২০১৬ কোপা আমেরিকার শতবর্ষ উপলক্ষে হ‌ওয়া টুর্নামেন্টের ফাইনাল চলছে, আবার চিলির সামনে আর্জেন্টিনা, সাম্পাওলি টগবগ করছে উত্তেজনায়, মেসিকে আবার আটকে রাখতে পেরেছে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। টাইব্রেকার, শট নিতে গেলেন আর্জেন্টিনার নাম্বার টেন… সামনে ক্লাব-সতীর্থ ব্রাভো। বারপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে বলটা যখন চাঁদে চলে যাচ্ছে, ম্যাচের ললাটলিখন হয়ে গিয়েছে; আবারও কাছে এসেও ছুঁতে পারল না কাপটাকে। ছেলেটা দাঁড়িয়ে দেখছে মেয়েটা হাত ধরছে অন্য কারোর, ছেলেটার চোখে জল, আশেপাশের সবাই হাসছে… টিটকিরি করছে… ছেলেটা কাঁদছে তবু দাঁড়িয়ে রয়েছে, বড়োই বেহায়া সে!

    আমাদের সবার জীবনে একটা করে জোঁক থাকে। আমরা কথা বলতে জানি না, এমনি সময় প্রচুর ভাটালাপ করলেও সেই জোঁকের সামনে গিয়ে আমরা চুপ হয়ে যাই। চুপ করি না কিন্তু, ভেতরে-ভেতরে সবটা সাজিয়ে নিই। কী করব, কোথায় যাব, কীভাবে রাখব সবটা মনে-মনে ঠিক করে নিই, কাউকে জানতে দিই না, কাউকে জানানো যায় না সেসব। ভালোবাসা আর দায়িত্ব মিশিয়ে গড়ে তুলি একটা আস্ত হিমালয়। জানি হিমালয়ে পৌঁছাতে পারব না তবু স্বপ্ন দেখি হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছানোর, তেনজিং নোরগের মতো ভালোবাসার পতাকা পতপত করে ওড়ানোর। পতপত করে ভালোবাসার সেই পতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার নাম লিওনেল মেসি, যাকে মানুষ ঈশ্বর বানায়, মানুষ‌ই মাইক্রোস্কোপের তলায় ফেলে পর্যালোচনা করে। মেসির তাতে কিছু আসে যায় না, যারা ভালোবাসে তারা শুধু ভালোবাসতে জানে, একটা সময় পর পাওয়ার ইচ্ছেটা গৌণ হয়ে যায়, ভালোবাসাটা একটা নিরন্তর অভ্যাসে পরিণত হয়। নবমীর রাত হয়ে আসছে, প্যান্ডেলে শেষ মুহূর্তের তালটা বাজিয়ে নিচ্ছে ঢাকি, মান-অভিমান ভুলে একসাথে পুজোর শেষটা দেখে নিচ্ছে প্রেমিক-প্রেমিকা, মায়ের চোখে জল, ছাতিম ফুলের গন্ধটা ভারী লাগছে খুব, বাতাসে একটা মনখারাপ হাওয়া ব‌ইছে। সময় পা চালাচ্ছে দ্রুত লয়ে, আর তো কটা ঘণ্টা, তারপরেই সব শেষ। একটা পনেরো বছরের অন্তহীন ম্যাজিক, রাতের পর রাত জাগা শেষ হয়ে আসছে, বিসর্জনের ঘণ্টা বাজছে রোজারিও থেকে লাস ভেগাস, বার্সেলোনা থেকে কলকাতা সর্বত্র। আর মাত্র ক-টা ঘণ্টা, তবু, তবু, তবু অপেক্ষা করতে কেন এত ভালো লাগে? কেন রোজ পাড়ার মোড়ে এসে টিটকিরি শুনে যায় ছেলেটা? ভালোবাসা না লিওনেল মেসি? না কি দুটোই! কে জানে!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook