বিতর্ক, অভিনবত্ব, আশা এবং ফুটবল নিয়ে হাজির বিশ্বকাপের বাইশ নম্বর সংস্করণ। এশিয়ায় দ্বিতীয়বার। আরবদেশে প্রথম। লিওনেল মেসি বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ফুটবলের সেরা ট্রফি ছুঁতে পারবেন কি না, টানা পাঁচবার ইউরোপের দেশের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়বে কি না, ব্রাজিলের বহু প্রতীক্ষিত ‘হেক্সা’-র স্বপ্ন সফল হবে কি না, দেখতে রাতের ঘুম মাথায় উঠবে বাঙালির। তবে বিশেষ চিন্তিত কেউ নয়। পুজো-কালিপুজো-টি-টোয়েনটির পর ফের উৎসব, প্রায় একমাস ধরে, এমন আর কবে হয়েছে!
সাধারণত, জুন থেকে জুলাইয়ে বসে বিশ্বকাপের আসর। কাতারের গরমে তার প্রশ্ন নেই। অতএব প্রাক্তন সভাপতি শেপ ব্ল্যাটারের আমলে ফিফা-র চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত কাতারেই বিশ্বকাপ করার, সময় পরিবর্তন করে। বিতর্ক কম হয়নি। হুলুস্থুলু হয়েছিল, বলা ভাল। ওঠে ঘুষের অভিযোগ। পদ ছাড়তে বাধ্য হন ব্ল্যাটার-সহ বেশকিছু উচ্চপদস্থ কর্তা। মজার কথা, ব্ল্যাটার নিজে কদিন আগে বলেছেন কাতারে এই মহাযজ্ঞ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তার আগে, তিনি এ-ও বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না কাতার, কোন দেশ পাবে বরাত, সেই নিয়ে যখন ফিফায় ভোটাভুটি হয়, তাঁর ভোট গিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে।
হয়েছে আরও কথা। স্টেডিয়াম তৈরি এবং অন্যান্য কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের অধিকাংশ ভারতীয় উপমহাদেশ অথবা ফিলিপিন্স এবং মলদ্বীপের মতো দেশের। অপ্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করানো ও যোগ্য পারিশ্রমিক না দেওয়ার জন্য কাতার সরকার ও আধিকারিকদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ ওঠে । কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি, শুধু ২০২১ সালেই মৃত্যু হয় জনা পঞ্চাশ শ্রমিকের। অসুস্থের সংখ্যাও কম নয়। কাতারের কর্তারা অবশ্য এই কথাগুলি উড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়াও, বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ সরব হয়েছে সমকামীদের বিরুদ্ধে কাতার সরকারের অসংবেদনশীলতার বিষয়ে। স্থানীয় কর্তারা অবস্থানে অনড়। তাঁদের মতে, শ্রমিকদের প্রতি অবিচার হয়নি এবং দ্বিতীয় ব্যাপারটি তাঁদের সমাজ অনুমোদন করে না।
তবে, মানতে বাধা নেই, বিশে নভেম্বর আল বাইত স্টেডিয়ামে কাতার বনাম ইকুয়াডোর প্রথম ম্যাচ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সব ছাপিয়ে সামনে চলে আসবে ফুটবল। শিরোনামে থাকা অভিনবত্বের মধ্যে, প্রথমবারের জন্য সব স্টেডিয়ামেই থাকবে এয়ার-কুলিং-এর ব্যবস্থা। কয়েক সপ্তাহ ধরে নজরে থাকবেন তারকারা, থাকবে তাঁদের দলের সাফল্য এবং ব্যর্থতা, নতুন তারকাদের জন্ম, স্বপ্নপূরণ ও আশাভঙ্গের গল্প। ব্ল্যাটার কী বলেছিলেন বা করেছিলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে ঠিক কী ব্যবহার করা হয়েছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, এই সব ব্যাপারে মনে হয় না খুব বেশি মানুষ আর মাথা ঘামাবেন। বলা বাহুল্য, কলকাতায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মেরুকরণ হবে। দেশে ও বিদেশে বার, পাব, রেস্তরাঁ মশগুল হয়ে উঠবে চতুর্বাষিক উৎসবের সমারোহে।
যেহেতু ফুটবল মরসুমের এক অপ্রচলিত সময়ে হতে চলেছে বিশ্বকাপ, মাঠে এর একটা প্রভাব দেখা যেতে পারে। সাধারণত, প্রায় আট মাস বিভিন্ন লিগে খেলে এই প্রতিযোগিতা খেলতে আসেন অধিকাংশ দেশের খেলোয়াড়রা। অনেকে ধকল সামলাতে পারেন না। চোট ও ক্লান্তির কারণে অনেককেই ছিটকে যেতে দেখা গিয়েছে। গত কয়েক সংস্করণে, এমন উদাহরণ কম নয়। এমন যে এইবারও হয়নি তা নয়। তবে সংখ্যাটা সম্ভবত আগের থেকে কম। অনুমান করা যেতে পারে, তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই তরতাজা হয়ে খেলতে নামবেন বিভিন্ন দেশের তারকারা। বিশেষ করে, যারা ইউরোপের লিগগুলোয় খেলেন।
চোট-আঘাতের কথা যখন উঠল, বলে রাখা ভালো, গতবারের চ্যাম্পিয়ন এবং এইবারেও খেতাবের অন্যতম দাবিদার ফ্রান্স কিন্তু বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। ডিফেনসিভ মিডফিল্ড অঞ্চলের দুই স্তম্ভ যারা আক্রমণেও কম যান না, পল পোগবা এবং এনগলো কান্তে, দলে নেই চোটের জন্য। দীর্ঘদিনের কোচ দিদিয়ের দেশ্ঁ-র কাছে যা অবশ্যই চিন্তার কথা। তবে, ফর্মের তুঙ্গে থাকা ফরওয়ার্ড কাইলিয়ান এম্বাপে ও করিম বেঞ্জিমার উপস্থিতি তাঁকে স্বস্তি দেবে। অন্যান্য বিভাগেও তাঁর দলের শক্তি নগণ্য নয়। কোচ এবং ক্যাপ্টেন হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন; দেশ্ঁ-র আমলে ফ্রান্সের অগ্রগতি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। দেখার বিষয়, দুই তুরুপের তাস হাতে না-থাকার ব্যাপারটি তিনি কী ভাবে সামলান। গ্রুপ পর্যায়ে তাঁদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর সঙ্গে, মনে রাখতে হবে, গত পাঁচটি বিশ্বকাপে চারবার প্রথম রাউন্ডের গণ্ডি পেরোতে পারেনি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল। ফ্রান্স নিজেরাই ২০০২ সালে ছিটকে গিয়েছিল গ্রুপ পর্যায়ে, চার বছর আগে ট্রফি ঘরে তোলার পর।
মেসি না রোনাল্ডো না নেইমার, আলোচনা ও তর্কাতর্কি চলবে। দেখার বিষয়, ইউরোপের আধিপত্য থামাতে লাতিন আমেরিকা সফল হয় কি না। প্রথম সতেরোটা বিশ্বকাপের ন’টা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে জেতার পর, গত চারবার বাজিমাত ইউরোপের। এখন হিসেব, ইউরোপ ১২, লাতিন আমেরিকা ৯। উরুগুয়েকে দাবিদার ধরা যাচ্ছে না বলে, নজর থাকবে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার দিকে। আপাতদৃষ্টিতে, দু’দলই ভাল অবস্থায়। বিশেষ করে আক্রমণের দিক থেকে। মেসি ছাড়াও, আর্জেন্টিনা দলে আছেন আঙ্খেল দি মারিয়া ও পাউলো ডাইবালা। মেসি সম্ভবত খেলতে চলেছেন শেষ বিশ্বকাপ। পৃথিবী দেখতে উদগ্রীব তিনি অধরা খেতাব জিততে পারেন কি না। পাশাপাশি, এ-ও মনে রাখা উচিত, শুধু ফরওয়ার্ড নির্ভরশীল হলে বিশ্বকাপ জেতা মুশকিল। অবশ্যই দরকার শক্তিশালী ডিফেন্স। আর্জেন্টিনার যে দল ২০১৪-য় ফাইনাল হেরেছিল তাদের সেই ডিফেন্স ছিল, যদিও শেষরক্ষা হয়নি। রক্ষণ মজবুত না হলে, মেসির স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মনে করা যেতে পারে, ২০১৮-য় আর্জেন্টিনার ভরাডুবির প্রধান কারণ ছিল দুর্বল নীচের দিক।
এই বিভাগে, ব্রাজিল তাদের মহাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে এগিয়ে। কঠিন সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়ে, কোচ চিচে বেশ ভালো কাজ করেছেন। তাঁর হাতে ফরওয়ার্ডের অভাব নেই। তিনি মন দিয়েছেন ডিফেন্স মজবুত করার দিকে। মারকুইনস, থিয়াগো সিলভা অনেকদিন সুনামের সঙ্গে খেলছেন। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো হয়তো চার বছর আগের জায়গায় নেই। তাও, তাঁকেও সমীহ না করার কারণ হয় না। ২০১৪-য় যে দুর্বল রক্ষণের জন্য ব্রাজিলকে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল, তার থেকে চিচের দল অনেকটাই এগিয়ে। দেখার ব্যাপার, প্রথম সারির ডিফেন্ডারেরা কোনও কারণে খেলতে না পারলে, বাকিরা কী করেন। ক্যাসেমিরোর অনুপস্থিতিতে, ২০১৮-য় ‘সেলেকাও’ হেরে গিয়েছিল বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার-ফাইনাল। তবে, অন্য সব দলের শ্রদ্ধা আদায় করবে চিচের আক্রমণ। নেইমার, রাফিনহা, রিচারলিসন, ভিনিসিয়স জুনিয়র, গ্যাব্রিয়েল মারটিনেলি— বিপক্ষের শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ। গ্রুপটা খুব সহজ হবে না। সুইটজারল্যান্ড, সার্বিয়া ফেলে দেওয়ার মতো প্রতিপক্ষ নয়।
সুইটজারল্যান্ড ও সার্বিয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ, ইউরোপের দেশগুলোর সংগঠিত ডিফেন্সিভ আচরণ। মহাদেশের প্রায় সমস্ত দল এই বিভাগে অন্যান্য মহাদেশের থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে। মনে থাকতে পারে, চারবছর আগে, মেসি-সমৃদ্ধ আর্জেন্টিনা আটকে গিয়েছিল অজ্ঞাতকুলশীল আইসল্যান্ডের কাছে। দুর্দান্ত আক্রমণের সঙ্গে দুর্ভেদ্য রক্ষণ ও নিপুণ গোলকিপার ছিল ফ্রান্সের জয়ের অন্যতম কারণ। সব দেশের কোচেরাই এই বিষয়ে নজর দেন, কিন্তু মাঠে নেমে নব্বই মিনিট ম্যাচের পর ম্যাচ ডিফেন্স ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড অঞ্চলে সংযম ধরে রাখায় ইউরোপের দলগুলো টেক্কা দেয় লাতিন আমেরিকা সহ অন্যান্য মহাদেশকে। মূলত এই কারণেই গত চার বিশ্বকাপ গিয়েছে ইতালি, স্পেন, জার্মানি ও ফ্রান্সে। ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা শুধু আক্রমণের নিরিখে কোনওবারই সাংঘাতিক পিছিয়ে ছিলো না। চোখে পড়ার মতো প্রতিভা থাকা সত্বেও, বছরের পর বছর আফ্রিকার দলগুলোর তেমন দাগ না কাটতে পারার কারণও তাই।
ফ্রান্স ছাড়া, নজরে থাকবে জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড। ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল ও নেদারল্যান্ডসের কথাও বলতে হবে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তাঁর বিরুদ্ধে অবিচার হয়েছে বলে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন রোনাল্ডো। পর্তুগাল কোচ ফারনান্ডো স্যান্টোস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁর প্রধান অস্ত্র বিশ্বকাপের ঠিক আগে যথেষ্ট ম্যাচ খেলেননি। তবে সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকার হাতে সর্বোচ্চ পুরস্কার ওঠার বিষয়ে সংশয় আরও রয়েছে। দিয়েগো মারাদোনা ছাড়া, সম্পূর্ণ একা হাতে বিশ্বকাপ জেতানোর নিদর্শন নেই। রোনাল্ডো পারবেন কি না, নির্ভর করবে দলের উপর। জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, স্যান্টোসের হাতে সেই মালমশলা আছে। ছ’বছর আগে পর্তুগাল ইউরোপসেরা হয়েছিল কারণ নিজেদের ছাপিয়ে গিয়েছিলেন অন্যান্য খেলোয়াড়েরা। রোনাল্ডো নিজেই চোটের কারণে ফাইনালের সিংহভাগ মাঠের বাইরে কাটান।
রাশিয়ায় চার বছর আগে প্রথম রাউন্ডে ছিটকে যাওয়ার পর, গত ইউরোয় হার শেষ-ষোলয়। জার্মানিকে তা-ও সমীহ করতে হবে, কারণ তারা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবথেকে ধারাবাহিক দল। একবছর হল কোচের দায়িত্ত্বে হ্যান্সি ফ্লিক। দলে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা-তারুণ্যের মিশ্রণ। ব্যক্তিগত দক্ষতার বদলে, দলগত সংহতিতে চিরকাল নির্ভরশীল জার্মানি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মনের জোর, মানসিক ভাবে বিপক্ষকে দমিয়ে দেওয়ার দৃঢ়তা, মোক্ষম সময়ে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা এবং সাম্প্রতিক ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে ওঠার জেদ— বিভিন্ন কারণে জার্মান দলকে সবাই সমঝে চলবে। একই গ্রুপে স্পেন। সঙ্গে জাপান ও কোস্তারিকা। তারুণ্যে ভরা স্পেন ইউরোয় গতিময়, আক্রমণমুখী, আকর্ষণীয় ফুটবল খেলেছিল। অভাব ছিল স্ট্রাইকারের। অল্পবয়সিদের নিয়ে গড়া লুই এনরিকের দল কী ব্র্যান্ডের খেলা খেলে এবং গ্রুপ পর্যায়ের পরের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা কী ভাবে করে, দেখতে মুখিয়ে থাকার কথা ফুটবলপ্রেমীদের।
গতবারের ফাইনালে পরাজিত ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে একই গ্রুপে গতবার তৃতীয় স্থানে থাকা বেলজিয়াম। চার বছরে চোখে পড়ার মতো শক্তিবৃদ্ধি কোনও দলের হয়েছে, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। গত বছর ইউরোয় দুই দলেরই বিদায় সেমিফাইনালের আগে। তবে বড় ম্যাচে ভালো খেলার অভিজ্ঞতা, ইউরোপের সেরা ক্লাবে খেলা তারকাদের উপস্থিতি এবং চাপ সামলানোর ক্ষমতার কথা বিচার করলে, লুকা মড্রিচের ক্রোয়েশিয়া অথবা কেভিন ডি ব্রয়েনের বেলজিয়ামকে হালকা ভাবে নেবেন না কেউই।
ছ’বছর আগে দায়িত্ব নিয়ে, ইংল্যান্ডকে বিশ্বফুটবলে অন্যতম শক্তি গড়ে তোলার কাজ সুনামের সঙ্গে সামলেছেন গ্যারেথ সাউথগেট। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ওঠা, ইউরোয় ফাইনাল— মুখের কথা নয়। নিজে ডিফেন্ডার ছিলেন। প্রয়োজনে রক্ষণ বিভাগে পাঁচজন দাঁড় করিয়ে দিতে পিছপা হন না। গোল, ডিফেন্স, মাঝমাঠ, আক্রমণ, কোনও জায়গাতেই তাঁর হাতে রসদ মন্দ নয়। ইংলিশ প্রিমিয়র লিগের মতো মঞ্চে খেলার ফলে, খেলোয়াড়দের চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতা যথেষ্ট। খেতাবের বড় দাবিদার বলা না গেলেও, ইংল্যান্ড ডার্ক হর্স নিঃসন্দেহে।
নেদারল্যান্ডসের ব্যাপারটা আলাদা। রাশিয়ায় খেলার ছাড়পত্র জোটেনি। ইউরোয় পারফরম্যান্স বলার মতো ছিল না। তবে গত বছর দায়িত্ব নিয়ে ঢেলে দল সাজিয়েছেন কোচ লুই ভ্যান হাল। ২০১৪-য় বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে তৃতীয় করেছিলেন। কী ভাবে খেলোয়াড়দের থেকে সেরাটা আদায় করতে হয়, জানেন ভালোভাবে। সেটা করতে পারলে, নেদারল্যান্ডস বড় দলকে বেগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
অন্য দলগুলোর ব্যাপারে খুব একটা বলার কিছু নেই। এশিয়ায় প্রথম বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এবার তেমন কিছু ঘটলে অঘটন হবে। দেখার বিষয়, আফ্রিকার দলগুলো কি করে। দৌড়ে ঘানা, মরক্কো, তিউনিশিয়া, ক্যামেরুন ও সেনেগাল। প্রথমবারের জন্য মহাদেশের কোনো দল সেমিফাইনালে উঠতে পারলে যথেষ্ট হবে। এর সঙ্গে, মনে রাখা উচিৎ, এই আসরে সবাই চেষ্টা করে কিছু একটা করার, কোনো না কোনো ভাবে একটা ছাপ ফেলার। ছোট দল বড়কে হারিয়ে দিয়েছে, উদাহরণ কম নেই। এবারও সেরকম কিছু হলে জমে যাবে খেলা।
আরেকটা কথা। এবং সেটা কম নয়। বিশ্বকাপ মানে শুধু ফুটবল নয়। নানা দেশের দর্শক, তাদের রঙ-বেরঙের পোশাক, টুপি, মুখের রঙ, অভিব্যক্তি, হাসি, কান্না মিশিয়ে এ এক বিচিত্র উৎসব। সম্ভবত অতুলনীয়। যারা এতে মজেছেন, অন্য কিছু তাঁদের সহজে ভোলাতে পারবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ চার বছরে একবার সমবেত হন। আসর মাতিয়ে রাখে তাঁদের গান-বাজনা, উল্লাস, ঠাট্টা, খুনসুটি। রথযাত্রা না হলেও, লোকারণ্য ও মহা ধুমধাম হয় বৈকি। মাঝেমধ্যে বেনিয়ম যে ঘটে না তা নয়। তবে সেটাও উৎসবের অঙ্গ। এঁদের জন্য কাতারে থাকছে এক বিশেষ ব্যবস্থা। বিদেশি দর্শকদের জন্য ‘হায়া কার্ড’। এর দৌলতে জুটবে নিখরচায় ভিসা, ম্যাচের দিন বিনামূল্যে বাস ও মেট্রো চড়ার সুযোগ। এই কার্ড ছাড়া, মাঠে ঢোকার অনুমতি নেই। প্রথায় দাঁড়ি টেনে, কাতার বিশ্বকাপে ম্যাসকট কোনও জন্তু-জানোয়ার নয়। আরব পুরুষরা মাথায় যে স্কার্ফ বা কাপড়ের আচ্ছাদন ব্যবহার করেন, তার আদলে তৈরি ‘লায়িব’ এবার বিশ্বকাপের মুখ। কথার অর্থ ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন খেলোয়াড়’। বিতর্ক কাটিয়ে, অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকে কাঠি পড়ার সময় উপস্থিত। দেখা যাক, কোথাকার বল কদ্দুর গড়ায়!