ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নন্দনবোধে আনন্দময়ী: পর্ব ১


    অর্ক দাশ (Arka Das) (September 11, 2022)
     

    কলকাতা সাজছে ২০২২-এর দুর্গাপুজো উৎসবে। অলিতে-গলিতে পুজো মণ্ডপ দিনে-দিনে সম্পূর্ণ হওয়ার পথে; আর মাত্র তিন সপ্তাহ পরেই যে দেবীর মর্তে আগমন। শুধু তো ধর্মীয় উৎসব নয়, বছরের এই পাঁচ দিন শহরের আনাচে-কানাচে যে সমসাময়িক শিল্পের নিদর্শন দেখা যায়, তা তুলনাহীন। যে শিল্পীরা অক্লান্ত পরিশ্রমে শূন্য থেকে একটি মণ্ডপকে তার সম্পূর্ণ রূপ দিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে কিছু সময় কাটালো ডাকবাংলা, ঘুরে দেখা হল কিছু অসামান্য শিল্পকীর্তি, যা ক্ষণস্থায়ী, সপ্তাহান্তে আবার শূন্যে আবর্তিত। 

    ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক
    বিষয়— ‘লোকশিল্প প্রবাহ’
    শিল্পী—পার্থ দাশগুপ্ত  

    শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তের কাজের সঙ্গে বাংলার লোকশিল্প সম্ভারের সংযোগ অনস্বীকার্য; তিনি যে বাংলার শিল্পী, সেই পরিচিতি তাঁর নন্দনবোধে, তাঁর সিরামিক মৃৎশিল্প, ছাপচিত্র, কালি-তুলির ছবি এবং পেইন্টিং-এ সুস্পষ্ট। প্রায় দুই দশক ধরে কলকাতা শহরকে একের পর এক অসাধারণ মন্ডপ উপহার দেওয়া পার্থ দাশগুপ্ত দুর্গাপুজোকে সাইট স্পেসিফিক ইন্সটলেশন শিল্পে উত্তীর্ণ করার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ। 

    প্রায় দুই দশক ধরে কলকাতা শহরকে একের পর এক অসাধারণ মন্ডপ উপহার দেওয়া শিল্পী
    পার্থ দাশগুপ্ত দুর্গাপুজোকে সাইট স্পেসিফিক ইন্সটলেশন শিল্পে উত্তীর্ণ করার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ

    বাংলা লোকশিল্পের রত্নভাণ্ডার। ‘লোকশিল্প প্রবাহ’ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ২০২২-এ ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্কের পুজোয় পার্থ সৃষ্টি করছেন লোকশিল্পের এক সংগ্রহশালা। এক বছরের গবেষণায় এই বারের মন্ডপ সেজে উঠছে শিল্পভাণ্ডারের মণিমানিক্যে। কিন্তু শুধুমাত্র প্রচলিত আকারে নয়, মন্ডপে দেখা যাবে বহু ধরনের শিল্পকর্মের অনন্য প্রসারণ। বেঙ্গল উডকাট— বাংলার কাঠখোদাই ছাপচিত্রে— সেজে উঠবে মণ্ডপের দেওয়াল, দুর্গার দুই হাতে ডানার মতো মেলে দেওয়া হবে পটচিত্র, চালচিত্রে থাকবে নকশিকাঁথা, থাকবে কাঠ এবং মাটির তৈরি নানা ধরনের পুতুল, দিনাজপুরের কুশমান্ডি গ্রামের গম্ভীরা মুখোশ কারিগরদের তৈরি বানাম, বা লোকগীতির বেহালা, যা ‘আদতে একটা উড কার্ভিং স্কাল্পচার’। হুগলির বলাগড়ের বিশাকালার কাঠের নৌকা থেকে তৈরি হবে লক্ষ্মীর প্যাঁচা, আমসত্ত্বের ছাঁচে উড়ে থাকবে হাঁস, বীরভূমের মহিষঢাল গ্রামের ফাটানো বাঁশের ‘ফিশ ট্র্যাপ’, বা মাছ ধরার ফাঁদের আকারে তৈরি হবে গণেশবাহন, এবং ডোকরার ছাঁচে তৈরি হলেও আয়তনে বহুগুণ বেড়ে উঠবে ধাতব ময়ূরের সমসাময়িক ভাস্কর্য। 

    বীরভূম জেলার ফাটানো বাঁশের ‘ফিশ ট্র্যাপ’ আকারে তৈরি হচ্ছে গণেশের ইঁদুর
    মণ্ডপের একাংশ
    নকশিকাঁথা হয়ে উঠবে দেবীর চালচিত্র

    পার্থ মনে করেন, লোকশিল্প সম্পর্কে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সচেতনতা তৈরি হওয়া প্রয়োজন। “দুর্গাপুজো আদতে একটা বিস্তৃত লোকশিল্প উৎসব— মণ্ডপে বাঁশের কারিগর, কাঠের কারিগর, খড় বাঁধার কারিগর, প্রতিমাশিল্পী, চিত্রপট আঁকবেন যে
    শিল্পীরা— সবাই মিলে তৈরি হয় পুজো, যা একটা মিলিত প্রচেষ্টার উৎসব,” তিনি বলেন। 

    একই সঙ্গে, ব্যবহারিক জীবনে যে শিল্পযাপন, তাকে তুলে ধরার একটা ধারণা ঘিরে লোকশিল্পের বিষয়বস্তুটি গড়ে উঠেছে। “বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর বস্তুগুলি থাকে আমাদের পুজোর ঘরে। আসন, ঘট, পটচিত্র, ঘন্টা— এ-সবই এক-একটি শিল্পবস্তু, অবজেক্ট অফ আর্ট, যা আমাদের ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে জড়িত, এবং এ-সবই আমাদের লোকশিল্প সম্ভারের সম্পদ,” শিল্পী বলেন, “খুব সাধারণ অবস্থাসম্পন্ন ঘরেও লোকশিল্পের উদাহরণস্বরূপ ব্যবহারিক বিলাসিতার বস্তু পাওয়া যায়, যেমন কাঠের বা মাটির পুতুল, হাতপাখা, বা সুজনি কাঁথা— বহু আদরের সামগ্রী। মন্ডপে থাকছে এমন বহুবিধ শিল্পকীর্তি, যা বাংলার ঘরে-ঘরে দেখা যায়।” 

    ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক পুজোর একটা স্থানিক গুরুত্ব রয়েছে— অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে গুরুসদয় সংগ্রহশালা, যা বেশ কিছু মাস ধরে বন্ধ। এই লোকশিল্প সংগ্রহশালার বহু সম্পদের প্রতিরূপ দেখা যাবে ঠাকুরপুকর মণ্ডপে; “কোনো বিবৃতি হিসাবে নয়, কিন্তু লোকশিল্প যে আমাদের উত্তরাধিকার, সেই সচেতনতার সাক্ষী হয়ে।”  

    সহযোগী শিল্পীদের সঙ্গে পার্থ দাশগুপ্ত

    পার্থর ছয় সহযোগী এ-বার ঠাকুরপুকুরে; শিল্পের ছাত্র-ছাত্রী এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন বনবিবি, বাস্তুদেবতা, মাটির সরা, উড কাট, অবিভক্ত বাংলাদেশের ফরিদপুর অঞ্চলের মাটির পুতুল গড়তে। তাঁদের নিজস্ব প্র্যাকটিসের অঙ্গ ছাড়াও, লোকশিল্প নিয়ে এই যে ‘প্যারালাল জার্নি’, এতে তাঁরা সমৃদ্ধ হচ্ছেন, বলা বাহুল্য। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে, উদ্বুদ্ধ তারুণ্যের প্রতি পার্থর মনোযোগ যেন দুর্গার আরাধনাকে রিফর্মেশনের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে মনে করিয়ে দেয়; একজন প্রকৃত শিক্ষক এবং মেন্টরের ভূমিকা যে একজন নবীন শিল্পীর জীবন এবং শিল্পবোধে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা উপলব্ধি করি। 

    পার্থর নিজস্ব শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে যে বাংলার নন্দনবোধ প্রতীয়মান, ২০২২-এ ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাংক পার্কের ‘লোকশিল্প প্রবাহ’ যেন সেই বোধের অসাধারণ সুন্দর পরিণতি। অপেক্ষায় রইলাম।  

    বেলগাছিয়া সাধারণ দুর্গোৎসব (টালা পার্ক)     
    বিষয়— ‘দম্ভচূর্ণ’
    শিল্পী—রবীন রায় 

    রবীন রায় তাঁর টেরাকোটার কাজে বিখ্যাত; টালা পার্কের এক প্রান্তে তাঁর শিল্পভাবনায় তৈরি যে দীর্ঘ গম্বুজ বেলগাছিয়া সাধারণ দুর্গোৎসবের মণ্ডপকে যশোর রোড থেকেই চিনিয়ে দিচ্ছে এই বছর, তার মূল উপাদান পাতকুয়োর বেড়— আবার, বাংলার দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বৃত্তাকার এই আকৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে রবীনের মণ্ডপসজ্জা, যেখানে পোড়ামাটি এবং কাঠের কাজই প্রাধান্য পেয়ে থাকবে। 

    মানুষের অহংকারকে আকাশচুম্বী এক স্তম্ভের রূপে কল্পনা করেছেন শিল্পী রবীন রায়। সেই গঠনকে গড়েছেন পাতকুয়োর বেড় দিয়ে– যা নিতান্তই বাংলার সাধারণ জীবনের একটি দৈনন্দিন ব্যবহারিক বস্তু
    শিল্পী রবীন রায়

    পৃথিবীজুড়ে টালমাটাল বর্তমান অবস্থার কারণ মানুষের অহংকার, এই ভিত্তিতে বেলগাছিয়া সাধারণ দুর্গোৎসবের এই বছরের বিষয় ‘দম্ভচূর্ণ’। বিমূর্ত এই আবেগেকে একটা আকাশচুম্বী স্তম্ভের রূপেই কল্পনা করেছেন রবীন, এবং সেই গঠনকে গড়েছেন সাধারণ জীবনের সাধারণ একটি ‘ফাউন্ড অবজেক্ট’-এর মাধ্যমে। “মানুষের অহংকার একটা অট্টালিকার মতো, এবং কোনো না কোনো সময়ে সেই গঠনটা ভেঙে পড়তে বাধ্য। একটা মনুমেন্টের মতো এই গম্বুজের রূপায়ন আমার কাছে স্পষ্ট ছিল; কিন্তু প্রশ্ন ছিল কীভাবে, এবং অবশ্যই খরচের কথা মাথায় রেখে, এই রকম একটা স্ট্রাকচার তৈরি করা যেতে পারে,” রবীন বলেন, “ইমারতের স্ট্রাকচার যে ভেঙে পড়তে পারে, এবং দর্শকের মনে যেন সেই অনুভূতি জাগে, সে-কথাটাও মাথায় রেখে একের পর এক সার্কুলার ডিজাইনে এই বৃত্তাকার গঠনে পৌঁছই। অবশ্যই, পুরো ব্যাপারটা যাতে ব্যায়বহুল না হয়, তার দিকে চোখ রাখতে হত।”

    রবীনের প্রতিমা এবং আনুষঙ্গিক সজ্জায় বাংলার শিল্পের, বিশেষত পোড়ামাটির কাজের উল্লেখ চোখে পড়বে

    রবীনের প্রতিমা এবং আনুষঙ্গিক সজ্জায় বাংলার শিল্পের উল্লেখ চোখে পড়বে, বিশেষত বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির ইটের কাজ। টেরাকোটা-পারদর্শী শিল্পীর মণ্ডপ জুড়ে লাল মাটির রং যেন তাঁর নিজস্ব শিল্পচর্চার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

    বিশেষত এই কাজের ক্ষেত্রে, দুর্গা মন্ডপের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে একটি সাইট-স্পেসিফিক ভাস্কর্য বা ইন্সটলেশন—একটি নিখাদ শিল্পকর্ম, যা অনায়াসে যে কোনো গ্যালারি স্পেসেও প্রদর্শিত হতে পারত। ঠিক এখানেই ‘থিম’-এর সঙ্গে মননশীল বিষয়বস্তুর ফারাক, এবং কলকাতার দর্শক ভাগ্যবান যে তাঁরা শহর জুড়ে প্রতি বছর এই ধরনের কাজ দেখতে এবং অনুভব করতে পারছেন। 

    ছবি সৌজন্য: লেখক

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook