ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • অসুর কই?


    কমলেশ্বর মুখার্জি (September 24, 2022)
     

    কাশফুল ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের সংস্কৃতি-মাফিয়াদের কয়েক ছটাক সাবেকি ন্যাকামো আছে। নিছক অবজ্ঞায় অগোচরে ভূমিষ্ঠ হয়ে হঠাৎ শারদ উৎসবের মরশুমে এই ভুঁইফোড় কাশফুলের গ্ল্যামার বেড়ে যায় কবি-সাহিত্যিক, আঁকিয়ে, আলোকচিত্রী বা বিজ্ঞাপকদের বদান্য মাদকতায়। ঠিক যেমন রেলকলোনির নিখাগি ময়নারা দিন পাঁচেকের জন্যে কামুক-পেটুক-উজবুক পুরুষকুলের চোখে হঠাৎ আলিয়া ভাটের স্টেটাস পেয়ে যায়, অবলীলায়— তেমন কাশফুলের মতোই মিতজীবী আমাদের এই দুর্গাবন্দনার আনন্দ উৎসব। তবু যেই পড়শি জুয়াচোরের ‘বাপের রাস্তা দখল করা’ মণ্ডপ থেকে ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’র চোখ-ছলাৎছল গান ধেয়ে আসে আমার এ.সি.-আবদ্ধ অ্যাপার্টমেন্টে, আমি বীর্যমথিত হৃদয়ে মা দুর্গার দরিদ্র পরিবারের ‘বাপের বাড়ি আসা’ দেখতে ছুটে যাই প্যান্ডেলে। আর খুঁজে দেখি সিলভেস্টার স্ট্যালোনসুলভ অসুর এবার আরও কত পরাক্রমশালী হয়ে উঠল?

    ও মা! এবার গিয়ে দেখি অসুর নেই এবারের পুজোয়। তবে কি সব ক’টাই জেলে চলে গেল? না কি এবারের পুজোর থিম ‘অদৃশ্য অসুর’? বলা যায় না! দুগ্গাপুজোর গায়ে যখন আমাদের মতো সাহেবের গু-মাড়ানো কুলীন শিল্পী-সম্প্রদায় ‘ইনস্টলেশন আর্ট’-এর লেবেল মেরেই দিয়েছে তখন মৃৎশিল্পীর স্বাধীনতায় গল্পের গরু পাচার হয়ে যেতেই পারে।

    তবে ভোগ দারুণ হয়েছে এবার— সেটা বুঝলাম সপ্তমীর দিন। ভোগের খিচুড়ি দেখলেই আমার মধুমেহ-বিধ্বস্ত শরীরে বিলুপ্ত বিবর নতুন করে হাঁসফাঁস করা শুরু করে। কেমন মনে হয় গোটা হাঁড়িটাই আমার— আমি খাব। সঙ্গে চেটেপুটে খাব লাবড়া আর চাটনি। চাঁদা তো কম কিছু খেঁচেনি শালারা! বাকিদের থেকে বেশিই দিয়েছি আমি— সঙ্গে দু’দুটো কর্পোরেট স্পনসর এনেছি হাতে-পায়ে ধরে! তাই অধিকার-সমৃদ্ধ আমার বাড়িতে একথালা নয়, দু’থালা ভোগ যেতেই পারে। স্প্যাগেটি স্ট্র্যাপ ব্লাউজে পাঁচদিনের জন্যে ঝলসে ওঠা আমার অনাদরের পাতাবাহারি বউ অকারণে ঝোড়োবস্তির দু’একটা মেয়ের হাত থেকে ভোগের থালা কেড়ে নিতেই পারে। ততক্ষণ নাহয় বিদ্বানরা পুজোটা ‘সর্বজনীন’ না ‘সার্বজনীন’— এ-নিয়ে বিতর্ক চালিয়ে যাক। আসলে ঠাকুর দেখে এসে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে দুটো থালাই আমি খাব। একা।

    ও মা! এবার গিয়ে দেখি অসুর নেই এবারের পুজোয়। তবে কি সব ক’টাই জেলে চলে গেল? না কি এবারের পুজোর থিম ‘অদৃশ্য অসুর’? বলা যায় না! দুগ্গাপুজোর গায়ে যখন আমাদের মতো সাহেবের গু-মাড়ানো কুলীন শিল্পী-সম্প্রদায় ‘ইনস্টলেশন আর্ট’-এর লেবেল মেরেই দিয়েছে তখন মৃৎশিল্পীর স্বাধীনতায় গল্পের গরু পাচার হয়ে যেতেই পারে। 

    বলতে-বলতেই অষ্টমী এসে গেল। অতএব গরদ-লালপাড় শাড়ি— উপচে-পড়া বালিয়াড়ির কুহেলি বক্রতা— পলিমাটি সমৃদ্ধ বিদগ্ধ পিঠ— নবধারা জলের মতো সুরভিত ঘাম— দুধসাদা পাজামার ফালি-ফালি ভাঁজ— দু’একটা ইতিউতি ঝুলে থাকা পাজামার দড়ি— লোমশ কবজিতে মিসফিট গোল্ডেন ঘড়ি— কোটরে ঢোকা শিকারি চোখের নাব্যতা ঢাকতে অতিবৈতনিক সোনালি চশমা— জংলা পাঞ্জাবির জটিল বলিরেখা— ধূমায়িত কিংসাইজ সিগারেট আর মাছি-ডাকা আফটার সেভ-এর ঘূর্ণাবর্তে আমি। কেমন যেন হল— আমি কেন সাধারণ? অনন্যসাধারণ কারা? যাদের ছবি ওঠে টিভি কিংবা কাগজে— আমার ওঠে না কেন? সুতরাং, আমিও কখন নিজের অজান্তেই দিস্তা কাগজের থেকে বেরিয়ে মলাট হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা করলাম। সবাইকে একটা করে ক্যাম্বিস বল মাপের কমলাভোগ খাইয়ে ফেললাম। কেউ হাসল, কেউ বিষম খেল রসে, কেউ কামড় দিতে গিয়ে রস ছড়াল টোল খাওয়া ভদকা-ভুঁড়িতে, কেউ মুখে পুরল কাগজসমেত, আর কেউ-কেউ আড়চোখে আমাকে মেপে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করল যে তারাও নবমীতে সবাইকে একটা করে তেলচিটে ফিশফ্রাই খাইয়ে এবারের মতো সর্বশান্ত হবে। পটাপট মোবাইলে ছবি তুলে ফেলল পাড়ার অকিঞ্চিৎকর কচিকাঁচা জনতা। বুঝলাম, কিছু একটা করা গেল। শুকনো পাড়ার ইতিহাসের নাবাল জমিতে স্বাক্ষর রাখা গেল মহামায়ার পদতলে। কিন্তু আজও পাওয়া গেল না অসুরকে!

    অতঃপর এল নবমীর বাহুল্য। সন্ধিপুজো হতেই পাড়ার আবালবৃদ্ধবনিতা ফ্যাশন শো-এ নেমে পড়ে। এবারেও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু কাল রাতে সন্ধিটা ঠিক কার-কার মধ্যে হল, কেউ কি জানে? না জেনেও দেখলাম, আমাদের মণ্ডপের কিমাকৃতি ভাঙাচোরা ছেলেপুলেরা এই সন্ধির আশায় চ্যাটাং-চ্যাটাং কতশত কথা বলে চলেছে অক্লেশে আর ঢোলাকৃতি পার্লার-ফর্সা গবেট মেয়েগুলো যেন লিপস্টিক চিবিয়ে খেয়ে ঠোঁট ফাঁক করে অকারণে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। আমার সহ্য হয়, এই অবিচার? আমার কথা শুনতে রাজি নয় অপ্সরা-গান্ধর্বীরা? দিব্যি তো কলেজ থেকে ফেরার পথে জড়িয়ে ধরে থাকিস র‍্যাপিডোর ঘর্মাক্ত ছেলেগুলোকে! জানিস আমি এবারেই দুবাই ডিউটি ফ্রি থেকে জাপানি সাবান কিনে এনে মাখি? তবুও ঈষৎ লোলচর্মের ভারে হঠাৎই অপাংক্তেও আমি?  এরই মধ্যে জনৈকা ভাইঝি আমাকে প্রৌঢ় কোনও অশত্থ গাছ প্রমাণ করার জন্য হঠাৎ প্রণাম করতে ঝুঁকে পড়ল পায়ে। তৎক্ষণাৎ আমি পরাজিত— যদিও আমার মুখের চিকন জ্যোৎস্নাস্নাত হাসি দেখে তা বুঝবে না কেউ। আমি আপাত নিরাপরাধ হলেও, আমার চোখ ততক্ষণে ঝুঁকে পড়া কুমারীর কুচযুগলের মধ্যিখানে গভীর নদীপথ পরিক্রমায় ব্যস্ত। মনে হল, এমন শরীর চেখে দেখার মধ্যে নভোচারী হওয়ার রোমাঞ্চ রয়েছে। তাই আশীর্বাদ করার সময় আমি অযাচিতভাবেই কিঞ্চিৎ হাত বুলিয়ে নিলাম তার উন্মুক্ত মখমল পিঠে। এ যেন আমার হাত নয়, হাতখানি দৈবের। নজর করেনি কেউ, কিন্তু হঠাৎই নজর করলাম আমি। পুজো শেষ হতে চলল, অসুর যে আজও এল না! 

    আজ দেবী-নিরঞ্জন। তাই ধুতি-পাঞ্জাবি গলিয়ে স্কচে ঈষৎ চুমুক মেরে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তৎক্ষণাৎ চোখে পড়ল অসুর। অসুর তো আছে, ওই আয়নার ওপাশে। আসলে আমিই আমার অসুর, যাকে যুদ্ধে হারানোর ক্ষমতা মা দুর্গার নেই।  ভয় একটাই, মালটা যেন আয়না ফুঁড়ে বেরোতে না পারে!

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook