অসুর নিয়ে কথা বললে প্রথমেই একটা চমৎকার কথা মনে পড়ে— ২০১২ সালে চেতলা অগ্রণী-র দুর্গাপুজোয় আমি নিজেই অসুর হয়েছিলাম। আমার মুখের আদলে ছাঁচ গড়ে নিয়েছিল এক সহকারী এবং সেই ছাঁচেই অসুরের মুখটা তৈরি হয়। সেই থেকে আমি বড় চুল রাখা শুরু করি। যেহেতু অসুরের লম্বা ঝাঁকড়া চুল হয়, তারপর বেশ কিছু বছর আর চুল কাটা হয়নি, ওইরকম বড় চুল থেকে গেছিল।
আমার আসলে নিজেকে অসুর ভাবতে খুব ভাল লাগে। দুর্গা বরং আমার কাছে একটা উৎস, কিন্তু অসুর হচ্ছে আসল। আমার মধ্যে অসুরের বোধ আছে, এবং সেটা আছে বলেই হয়তো আমি ক্রমাগত সেখান থেকে দেবত্বের দিকে চলার একটা প্রক্রিয়ায় থেকে যেতে পারি; একই জীবনে বারংবার নিজের ভুল শুধরে, অসুরত্ব থেকে দেবত্বের যে পথ চলা, সেটায় ফিরে-ফিরে যেতে পারি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেবী তো আমি কখনও হতে পারি না! কিন্তু তাঁর কাছে আমার অঞ্জলি বা প্রার্থনায় আমি যে বার বার আমার অসুরদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার আর্জি করি, সেই প্রক্রিয়াটাই আমার বেঁচে থাকা। আমার জীবন তো আমার শিল্পচর্চা থেকে আলাদা নয়; আমি যে বেঁচে আছি, আমি যে জীবন্ত, এই যাত্রাটাই তার তাৎপর্য। আমি রোজ মরতে চাই, রোজ জন্মাব বলে। এবং এটা তো শুধু আমাদের ধর্মের রীতি নয়, পৃথিবীতে সব ধর্মেই প্রেয়ারের মূল কথা হচ্ছে আমাদের রক্ত-মাংসের অস্তিত্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার জন্য দেবতার কাছে আবেদন, আমাদের বন্ধ্যাত্বকে অতিক্রম করে যাওয়ার একটা আর্জি। সত্যি বলতে, পুজো মানে তো আমাদের নিজেদের কাছেই নিজেদের প্রার্থনা। এই প্রবাহমানতাই আমাদের জীবন।
রইল শুভ আর অশুভের কথা, আমার কাছে ব্যাপারটাই ভীষণ আপেক্ষিক। বিরিয়ানি বেলা তিনটের সময়ে খেতে দিলে অমৃত, আর রাত বারোটায় বিষ। এর বিচার করবে কে?
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র