ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • সৌরভকেই খেলানো উচিত

    অরুণ লাল (July 8, 2022)
     

    আমি যখন থেকে সৌরভকে চিনি, তখন ওর ষোলো বছর বয়স। আমার অনুরোধে সিসিএফসি-র মাঠে একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে এসেছিল। আর সেই ম্যাচে আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম যে, প্রতিটি শট হিসেব করে ও এমন মারছে যা দেখার মতো। আর ছয় যেগুলো মেরেছিল, সেগুলো সব ট্রামলাইনের ওপর। তখন থেকেই ওর শার্পনেসটা আমার নজরে আসে। আমার ক্যাপ্টেনসিতে ও রঞ্জি খেলেনি ঠিকই, কিন্তু খেললে ভারি ভাল হত। কিন্তু সৌরভ থাকাককালীনই বাংলা একমাত্র বোধহয় রঞ্জি ট্রফি জিতেছে। 

    একটা মানুষ আস্তে আস্তে যেমন বড় হয়, সৌরভও তেমনই জীবনের নানা সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। পরিণত হয়েছে, বুদ্ধির পরিপক্কতা এসেছে। কিন্তু ওর সাহস আর শার্পনেসটা সেই ছোটবেলা থেকেই ওর মধ্যে ছিল। খানিকটা দুঃসাহসও বলা যেতে পারে।  

    আমি বরাবারই সৌরভের খেলার ভক্ত। যখন সিলেক্টর হিসেবে ছিলাম, তখনও চাইতাম সৌরভ, ইন্ডিয়ার হয়ে খেলুক। কারণ ওর মধ্যে সেই ক্ষমতা আছে। ১৯৯২ সালে ওকে দলে নেওয়া হল বটে, কিন্তু খেলার সুযোগ পেল না। খুব ভেঙে পড়েছিলাম। তার ওপর মাঠে জল নিয়ে যেতে প্রত্যাখ্য়ান করেছিল বলে কত যে কন্ট্রোভার্সি হল, সে কথা তো সবাই জানে। কিন্তু সৌরভের মনের জোর তাতে একটুও টলেনি। মানুষ হিসেবে গুটিয়ে যায়নি। ওর খেলায় কোনও রকম প্রভাব পড়তে দেয়নি। তবে, এখন মনে হয়, তখন সৌরভকে না খেলানোয় ওর শাপে বর হয়েছে। আমার মনে হয় ও তখনও তৈরি ছিল না। কমপ্লিট ক্রিকেটার হতে ওর আর একটু সময় দরকার ছিল। আর সেই সময়টা ঠিক চার বছর পরে এসেছিল। 

    এর পর তো ১৯৯৬-এর লর্ডসের কথা সবাই জানে। হর্ষ ভোগলে আর আমি ছিলাম কমেন্ট্রি বক্সে। হর্ষ আমায় জিজ্ঞেস করে যে, ‘আপনার এই টেস্ট নিয়ে কী মনে হচ্ছে?’ আমি বলেছিলাম, আমার মনে হয় আর কিছু হোক বা না হোক, সৌরভ গাঙ্গুলিকে এই টেস্ট-এ খেলানো উচিত। হর্ষ হাসিতে ফেটে পড়েছিল। বলেছিল, ‘আপনার তো একটাই অ্যাজেন্ডা। বাংলা থেকে কাউকে না কাউকে টিমে চান্স দিতেই হবে। আর সৌরভ তো এ বার বাংলার কোটা।’ আমি বলেছিলাম, বাংলার কেউ আর সৌরভ গাঙ্গুলি আলাদা।আর সৌরভ কোটায় খেলবে না। সৌরভ নিদের দমে খেলবে। সৌরভের ওপর কী পরিমাণ চাপ ছিল, সেটা ও-ই একমাত্র জানে। ওর সমালোচকদের কী ভাবে চুপ করাতে হয়, সেটা মাঠে গিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। এবং ও যে ওয়ান ম্যাচ ওয়ান্ডার নয়, সে কথা প্রমাণ করতে আরও একটা সেঞ্চুরি করে লোকের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। 

    সৌরভ খুব পরিমিত ছেলে। ওর কথা বলা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, খেলা— সব কিছুর মধ্য়ে পরিমিতি আছে। ও প্রতিটি কাজ খুব ভেবে করে। কিন্তু আশ্চর্য কাউকে অফেন্ড করে না। অথচ ওর যা চাই, ও সেটা ঠিক কেন চাই, সেটা ঠিকঠাক প্রতিষ্ঠা করে নিজের কাজটা করে যায়। অথচ, মানসিক দৃঢ়তাকে আমরা অনেক সময় ঔদ্ধত্য বলে ভুল করি। ও যখন খেলত, তখনও ঠিক ভেবে নিত ওকে কী করতে হবে, যখন ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন হল, তখনও ও জানত ওর কাজটা কী, আর এখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়েও ও জানে ওকে কেমন উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করে যেতে হবে। 

    সৌরভকে আমি আমার সবচেয়ে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখি। আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কটাই তাই। আর বোধহয় সেই কারণেই কোনও আলাদা করে মনে রাখার মুহূর্ত বা তেমন কিছু বিশেষ স্মৃতি তৈরি হয় না। দুই ভাই যখন থাকে, তখন কী আর ভেবেচিন্তে, স্মৃতি তৈরি করবে বলে জীবনযাপন করে। আমাদেরও তা-ই। 

    ভাবতেই অবাক লাগছে যে ছোট্ট ভাইটা আজ পঞ্চাশ বছরে পা দিল। আমি মনে করি সৌরভের আরও কিছু করার আছে এ জীবনে। আরও পাওয়ার আছে। লোকজন মনে করতে পারে, যে একজনের এত ভাল ক্রিকেট কেরিয়ার, ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন, ভারতীয় ক্রিকেট বোডের প্রেসিডেন্ট— মানুষের আর কী পাওয়ার থাকতে পারে। আমার মনে হয় পারে। কারণ ওর এখনও অনেক কিছু করার পোটেনশিয়াল আছে, অনেক কিছু পাওয়ার আছে জীবন থেকে। আমার শুভকামনা সব সময় থাকবে। আর কোন দাদা, না চায়, তার ছোট ভাইটা আরও বড় হোক,তার জন্য আমার গর্বে বুক ভরে উঠুক। ও অন্য সবার কাছে ‘দাদা’ কিন্তু আমার কাছে আমার ইয়াংগেস্ট ব্রাদার।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook