ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • পারিবারিক (বন্ধু) চিকিৎসক


    ডঃ রামাদিত্য রায় (July 1, 2022)
     

    কোভিড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে মানুষ কত স্বার্থপর হতে পারে। এবং শুধু তাই নয় কোভিড এমন একটা রোগ যেটা মানুষে-মানুষে দূরত্ব বাড়িয়েছে। এবং সেই সময় যদি ডাক্তাররা না এগিয়ে এসে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তা হলে কিন্তু এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত। কেবল ডাক্তাররা নন সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতাল-প্রশাসন যাঁরা চালান, তাঁরা অভূতপূর্ব সাহায্য করেছেন। এবং এর সঙ্গেই পুলিশ-প্রশাসনও খুব সাহায্য করেছে। এই জন্যই কোভিড পেরিয়ে এখনও আমরা সাধারণ জীবনযাপন করতে পারছি।
    ভারতের মতো বড় দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা খুব বেশি নয়। কিন্তু যে বাড়িতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কারও পরিজন চলে গেছেন, সেই বাড়িতে কিন্তু সবটাই শূন্য। সংখ্যার বিচারে ১০০ শতাংশ। আমার পরিবারে আমি আর আমার মা থাকতাম। আমার মায়ের ৮৪ বছর বয়স হয়েছিল। তিনি কোভিডে চলে গেলেন। আমার কাছে কিন্তু জগতটাই শূন্য হয়ে গেল। এবং এইখানে দাঁড়িয়ে যাঁরা পারিবারিক চিকিৎসক এবং যে সংখ্যাটা ভয়ঙ্কর ভাবে কমে যাচ্ছে, তাঁদের দায়িত্ব কিন্তু আরও বেড়ে যায়। আমি খুব খুশি যে এ বছর পারিবারিক চিকিৎসকদের বিশেষ করে সম্মান জানানো হচ্ছে। স্পেশালিস্ট ডাক্তারের যুগ চলছে এখন এবং খুব বেশি মাত্রায়। কিন্তু কোভিড এসে দেখিয়ে দিল পারিবারিক চিকিৎসকের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। আসলে এক জন পারিবারিক চিকিৎসক কিন্তু একটি পরিবারের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হন। বহু বছর ধরে একটা পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার দরুণ, তিনি সেই পরিবারের আত্মাটিকে চেনেন। একটা পরিবারের ভাল-মন্দ, আনন্দ-নিরানন্দ জানা থাকলে একজন ডাক্তারের পক্ষে অসুখ চিনে ফেলা এবং তা সারানো অনেক সহজ হয়ে যায়। কারণ পারিবারিক চিকিৎসকের প্রতি ভরসা আর বিশ্বাস, রোগীর রোগ অনেক তাড়াতাড়ি সারিয়ে দেয়।

    কোভিডের সময় পরিজন যখন কোভিড আক্রান্ত, তাঁর অক্সিজেন প্রয়োজন, ওষুধ প্রয়োজন, তখন আমরা কী করেছি? পাশের ঘরে রোগীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে অসহায়তাকে গ্রহণ করেছি। এবং এইখানেই কিন্তু পারিবারিক চিকিৎসকের ভূমিকা। চিকিৎসককে সেই আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাঁদের ভরসা জোগাতে হবে। যদি তিনি সশরীরের উপস্থিত হতে না-ও পারেন, তাঁকে ফোনে যাতে যোগাযোগ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সামান্যতম অসুবিধে হলেও যাতে ফোনে যোগাযোগ করে রোগী বা তাঁর পরিবার সাহায্য পেতে পারেন, সে জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা ডাক্তার হয়ে যদি একটা রোগের সঙ্গে লড়াই করতে এত হিমশিম খাই, তা হলে সাধারণ মানুষ, যাঁরা মেডিকেল সায়েন্সের ব্যাপারে তত কিছু বোঝেন না, তাঁদের অবস্থা কী হবে, এ কথা তো এক জন ডাক্তারকেই বুঝতে হবে। আর কঠিন সময়ে, পূর্ব পরিচিত ডাক্তারকেই যে পারিবারিক চিকিৎসক হতে হবে, তার তো মানে নেই। যে ডাক্তার আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন, মনোবল বাড়াবেন, তিনিই তো হয়ে উঠবেন সত্যিকারের পারিবারিক চিকিৎসক। পারিবারিক চিকিৎসককে সেই পরিবারকে ভরসা দিতে হবে, চিকিৎসায় সাহায্য করতে হবে, তা না হলে “পারিবারিক” কথাটি তাঁর অভিধান থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত।

    কোভিডের সময় যখন কেউ একা ছিলেন বা বাড়িতে কেউ অন্যান্য অসুখেও আক্রান্ত ছিল, তখন সেই পরিবারের মনের বল জোগানো হচ্ছে পারিবারিক চিকিৎসকের অন্যতম কর্তব্য। এত দিন যে ভাবে চিকিৎসা করে এসেছেন, প্রয়োজনে আরও বেশি সাহায্য করতে হবে। তবেই সেই পরিবারকে মানসিক চাপ থেকে একটু রেহাই দিতে পারবেন।

    সরকারি ডাক্তারদের কথা ভাবুন তো। কী অভাবনীয় পরিষেবা দিয়েছেন তাঁরা! কোভিড দেখছেন বলে, ছুটি বাতিল হয়েছে বলে এক টাকাও বেশি পাননি, বিরাট মাইনে বাড়েনি, কিন্তু কী ভাবে লড়াই করে গেছেন তাঁরা। তাঁরা কেবল হাসপাতালে কাজ করেছেন বলে কেবল হাসপাতালের ডাক্তার হয়ে থেকে যাননি। তাঁরাই কিন্তু কঠিন সময়ে সত্যিকারের পারিবারিক চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন। যে পরিবারের মানুষজনদের তাঁরা প্রাণ রক্ষা করেছেন, তাঁদের চোখে দেখা না হলেও, সেই পরিবারের কাছে সেই ডাক্তারই কিন্তু সত্যিকারের পারিবারিক চিকিৎসক।

    অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে ডাক্তারদের পাওয়া যায়নি। এ কথা কিন্তু সর্বৈব সত্য নয়। আমার মতো অনেকেই কিন্তু বেহালা থেকে ব্যারাকপুর ছুটে বেরিয়েছি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি সত্যিকারের পারিবারিক চিকিৎসক হয়ে ওঠার, যাঁর ভরসা, যাঁর স্নেহ, রোগী ও তাঁর পরিবারকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করতে পারবে। আর যদি সত্যিই এ সময়ে কোনও ডাক্তার কোভিড অসুখ ছাড়াও অন্য কোনও অসুখে আক্রান্ত রোগীকে দেখতে যেতে অস্বীকার করেন, তা হলে বলব, আপনারা সঠিক ডাক্তার খুঁজে পাননি। এটা ডাক্তার এবং সাধারণ মানুষ, দুক্ষেত্রেই খুব দুর্ভাগ্যজনক।

    এ কথা যেমন সত্যি, প্রচুর প্রচুর ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী দিন-রাত এক করে মানুষের সেবা করেছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে রোগীকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু কোভিড কিছুটা অস্তমিত হতেই, তাঁদের কপালে জুটেছে নিগ্রহ। এটাও কি সাধারণ মানুষ ঠিক করেছেন? কোভিডের সময় কেবল ডাক্তারদের অমানবিকতাই মানুষের চোখে পড়েছে, কিন্তু কোভিড-পরিষেবা দিচ্ছেন বলে কত ডাক্তার-নার্স বাড়ি ফিরতে পারেননি, পাড়া-ছাড়া হতে হয়েছে তাঁদের, এই কি সাধারণ মানুষের মানবিকতা? এই কি ন্যায়?

    সরকারি ডাক্তারদের কথা ভাবুন তো। কী অভাবনীয় পরিষেবা দিয়েছেন তাঁরা! কোভিড দেখছেন বলে, ছুটি বাতিল হয়েছে বলে এক টাকাও বেশি পাননি, মাইনে বাড়েনি, কিন্তু কী ভাবে লড়াই করে গেছেন তাঁরা। তাঁরা কেবল হাসপাতালে কাজ করেছেন বলে কেবল হাসপাতালের ডাক্তার হয়ে থেকে যাননি। তাঁরাই কিন্তু কঠিন সময়ে সত্যিকারের পারিবারিক চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন। যে পরিবারের মানুষজনদের তাঁরা প্রাণ রক্ষা করেছেন, তাঁদের চোখে দেখা না হলেও, সেই পরিবারের কাছে সেই ডাক্তারই কিন্তু সত্যিকারের পারিবারিক চিকিৎসক।

    আমি আশা করব আমরা ডাক্তাররা যাতে সাধারণ মানুষের পরিবারের সঙ্গে যাতে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে যেতে পারি, তাঁদের চিন্তামুক্ত করতে পারি।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook