একটা বিশ্বব্যাপী অতিমারী যে প্রায় শেষের দিকে, সেটা বোঝা যায় যখন জনসাধারণের জমায়েতের জায়গাগুলোয় লোকজন আস্তে আস্তে ভিড় জমায়। প্রায় দু-বছর, সিনেমা হল, খেলার মাঠ থেকে গ্যালারি, আর্ট এক্সজিবিশন— সব বন্ধ থাকার পর এই সব জায়গা আবার ধীরে ধীরে খুলছে। সারা বিশ্বের মিউজিয়াম, গ্যালারি, লাইব্রেরি, খেলার মাঠগুলো এখন ভিড়ের স্বাদ ফের চেখে দেখার জন্য উদগ্রীব। একটা আর্ট গ্যালারিতে ফের ঢুকতে পারার, ঘুরে ঘুরে শিল্পীদের কাজ দেখার, শিল্পের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার আনন্দটাই আলাদা।
এই জুন মাস থেকে, আমরা শিল্প সম্পর্কিত নানা খবর নিয়ে মাসে এক বার হাজিরা দেব ডাকবাংলার পাতায়। যদিও কলকাতা ঘিরেই মূল খবরগুলো থাকবে, তবে কলকাতা ছাড়াও অন্যান্য জায়গার শিল্প-সমাচারও জায়গা করে নেবে এই পাতায়।
ওয়েজ অফ বিয়িং
খোকন গিরি ও কীর্তি পূজা-র অনলাইন প্রদর্শনী
ইমামি আর্ট, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি; চলছে
ছোটবেলার অনেকটা সময় খোকন গিরি দিঘার সমুদ্র-তীরবর্তী ক্ষুদ্র জনবসতির জেলে সম্প্রদায়ের নুলিয়াদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। তাঁর শিল্পকলায় মাছ ধরার জাল, কাঠের নৌকো, আর গহন সমুদ্রে কর্মরত মানুষদের খুঁটিনাটি বর্ণনা ধরা পড়ে।
এর ঠিক বিপরীতে কীর্তি পূজা-র কাজে দেখা যায় শহুরে অসঙ্গতি, যা গভীরভাবে সমষ্টিগত আখ্যান অনুসন্ধান করে। তাঁর সূক্ষ্ম কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি কমনীয় অঙ্গ-ভঙ্গি, আকার-আকৃতি, যন্ত্রপাতি, জিনিসপত্র ইত্যাদি খুঁজতে থাকেন, সেইসব মামুলি বিষয়কে কাব্যিক চেতনার মাধ্যমে ধরার চেষ্টা করেন।
গ্যাব্রিয়েল ব্যাসিলিকো-র ফটোগ্রাফস অফ ইতালি (ফোতোগ্রাফি দেল’ইতালিয়া)
বিড়লা অ্যাকাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার; ১৯শে জুন পর্যন্ত চলবে
গ্যাব্রিয়েল ব্যাসিলিকো ১৯৪৪ সালে মিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এবং পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফি বেছে নেওয়ার আগে আসলে স্থপতি হওয়ার জন্য পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর প্রথমদিকের কাজকর্মে গতানুগতিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের ফটোগ্রাফি দেখা গিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি স্থাপত্যের ফটোগ্রাফিতে মন দিয়েছিলেন। মিলানের কলকারখানা অঞ্চল সম্বন্ধে তাঁর ফটোগ্রাফিক রিপোর্ট ‘রিত্রাত্তি দাই ফ্যাব্রিকে, সুগারকো’-র মাধ্যমে ১৯৮২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সম্ভবত তাঁর সবথেকে বিখ্যাত কাজ হল লেবাননের রাজধানীর উপর যুদ্ধের প্রভাব তুলে ধরা, যার নাম ‘বেইরুট ১৯৯১’।
ব্যাসিলিকো অধিকাংশ ছবি তোলেন প্রচলিত ভিউফাইন্ডার ক্যামেরা আর সাদা-কালো ফিল্ম ব্যবহার করে। এই প্রদর্শনীতে ব্যাসিলিকো-র কাজ সম্বন্ধে নোলা মিনোলফির সেমিনার / গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে, যার তারিখ-সময় জুন ৪, ৭, ১০, ও ১২; বিকেল ৪টে। রেজিস্ট্রেশন করার জন্য [email protected]এ ইমেল করুন।
মীরা মুখার্জি: শতবর্ষ উদযাপন
গ্যালারি ৮৮; ১৭ই জুন–৩০শে জুলাই
প্রখ্যাত ভাস্কর মীরা মুখার্জি-র জন্ম শতবর্ষ উদযাপন করার জন্য অরুণ গাঙ্গুলি-র অসামান্য ফটোগ্রাফি সংগ্রহ ‘মীরা মুখার্জি: ফটোগ্রাফস’ গ্যালারি ৮৮-তে দেখানো হবে। এগুলো নির্বাচন ও উপস্থাপন করবেন অদীপ দত্ত এবং তপতী গুহ-ঠাকুরতা। ফটোগ্রাফগুলোতে সাই পারদু (লস্ট ওয়াক্স; cire perdue) মেটাল-কাস্টিং কৌশলে ভাস্কর্য নির্মাণ করার ক্ষেত্রে মীরা মুখার্জি-র কাজ করার বিষয় ও শ্রম — এবং এই দুইয়ের জটিলতা ও বিশালতা দেখা যায়। বস্তারের জনগোষ্ঠীর মধ্যে থাকাকালীন মীরা মুখার্জি তাঁর কাজের পদ্ধতি শিখেছিলেন এবং কলকাতার সন্নিহিত এলাচিতে কাজ করেছিলেন।
ভবানীপুরের পদ্মপুকুরে মীরা মুখার্জি-র বাড়িতে ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে অরুণ গাঙ্গুলি প্রথমবার তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। নিজের আর্কাইভের জন্য সাদা-কালো ফটোগ্রাফির কাজ করার পাশাপাশি ১৯৭৮ সাল থেকে অরুণ গাঙ্গুলি দীর্ঘ সময় যাবত মীরা মুখার্জি-র ভাস্কর্য তৈরি করার ফটোগ্রাফ তুলতে শুরু করেছিলেন, যা নয়ের দশকে মীরার মৃত্যু অবধি নথিভুক্ত থাকে।
দ্য আর্কিটেক্টোনিকস অফ ফর্ম: স্ক্রোলস বাই গণেশ হালুই
আকার প্রকার; ১৬ই জুলাই পর্যন্ত চলবে
গণেশ হালুই-এর স্ক্রোলস হল অনুভূতির অনেকগুলো পরতের কার্টোগ্রাফ করা ম্যাপিং, যা তাঁকে কয়েক দশক ধরে অভিভূত করে রেখেছে। অজন্তার গুহাচিত্রের অনড় মূর্ছনা থেকে শুরু করে বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্যের গুঞ্জন, আলপনার ছন্দ, মানুষের তৈরি করা অট্টালিকা ও সৌধের কাঠামো, আর মহাশূন্যের কাব্যময়তার মধ্যে দিয়ে গণেশ হালুই-এর এইসব সাম্প্রতিক কাজ অনুরণন জাগিয়ে তোলে। এই প্রদর্শনীতে প্রথমবার দেখানো স্ক্রোলস মহাশূন্যের বিভিন্ন আঙ্গিককে শব্দ রূপে অন্বেষণ করেছে।
কালারস অফ ফ্রিডম: আর্ট ফ্রম ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্ডিয়া
CIMA, ৩০শে জুলাই পর্যন্ত চলবে
‘স্বাধীন ভারতের সর্বাঙ্গীণ ভিজুয়াল ভাষা’ তুলে ধরার প্রচেষ্টায় এই সুবিশাল প্রদর্শনীতে CIMA সুপ্রতিষ্ঠিতদের ও নবাগতদের কাজ হাজির করেছে। সত্যজিৎ রায়-এর ‘পথের পাঁচালী’-র প্রখ্যাত ছবিগুলো দিয়ে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। হুসেন থেকে শুরু করে বিকাশ ভট্টাচার্য-এর ঐতিহ্য, রাজা ও রামকুমার-এর মিনিমালিজম, সুজা, এন.এস. বেন্দ্রে ও সোমনাথ হোড়-এর ফিগারেশন এবং পরবর্তীকালে পরমজিৎ সিং, সনৎ কর, ও মনজিৎ বাওয়া’র মডার্নিজম — এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন পথিকৃৎ সৃষ্টিশীল শিল্পীদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আসা হয়েছে।
ভারতের সমসাময়িক শিল্পকলার ঐতিহাসিক রূপরেখা হিসেবে দেখানো এর উদ্দেশ্য নয়; বরং, সর্বাগ্রে মৌলিক শৈল্পিক ভাবনার ও কল্পনাশক্তির প্রচার করাই এর উদ্দেশ্য।
কভারের ছবি: গ্যাব্রিয়েল ব্যাসিলিকো, রোম, ১৯৮৯