ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • আঞ্চলিক ভাষার বিজয়


    অরুণাভ সিংহ (June 4, 2022)
     

    গীতাঞ্জলী শ্রী-র ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ পাওয়ার কথাটা যখন প্রথম পেলাম, তখন মনের ভেতর অনেকগুলো দৃশ্য পর পর ভেসে উঠল। প্রথম যেটা ঝলকানি দিল, তা হল, ২০১৬ সালে প্রথম বার গীতাঞ্জলীর নভেল পড়ার পর কি কোনও দিন ভেবেছিলাম যে বন্ধুস্থানীয় এক জন এক দিন এ রকম একটা পুরস্কার পাবে! 

    ভাবিনি বোধহয়। তবে গীতাঞ্জলী যে খুব অন্যরকম লেখে, সে কথা আমার মনে হয়েছিল। ২০১৬ সালে সিগাল প্রকাশন তখন একটা ইন্ডিয়া লিস্ট প্রকাশ করত। সেই লিস্টে থাকত এমন কিছু বই, যা ভারতে ততদিনে ইংরেজি অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত হয়ে গেছে, সিগাল সেই বইগুলিকে বিদেশে প্রকাশ করত।  সিগাল-এর সেই ইন্ডিয়া লিস্টটা আমি কিউরেট করেছিলাম এবং তার মধ্যে গীতাঞ্জলী শ্রী-র একটা উপন্য়াস ছিল, ‘দ্য রুফ বিনিথ দেয়ার ফিট’ বলে। এই লিস্টের বইগুলো পড়ে টিল্টেড অ্যাক্সিস প্রকাশনার (যারা মূলত দক্ষিণ-এশীয় ভাষার অনুদিত বই প্রকাশের ওপর জোর দেয়) ডেবোরা স্মিথ-এর খুব ভাল লেগেছিল। বিশেষ করে গীতাঞ্জলীর লেখা পড়ে খুব এক্সাইটেড ছিলেন তিনি। এবং বলেন যে ‘আমরা গীতাঞ্জলী শ্রীর বই করতে চাই।’ প্রথমে চেয়েছিলেন ওই উপন্যাসটাই পেপার ব্যাক হিসেবে প্রকাশ করতে, কিন্তু কোনও কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ডেবোরা স্মিথ-এর গীতাঞ্জলীর সঙ্গে কাজ করার একটা তীব্র ইচ্ছে রয়ে গেছিল। এর পর ২০১৭ সালে মার্চে আবার ডেবোরার সঙ্গে আমার কথা হয়,  তখন আমি গীতঞ্জলীর ই-মেল আইডি দিয়ে দিই। 

    ২০১৮ সালের মার্চে আমি গীতাঞ্জলীকে ওর এই ‘রেত সমাধি’ উপন্যাসটা নিয়ে পড়ে একটা মেল করি।  (যদিও কষ্ট করে বেশ কিছুটা হিন্দিতে পড়ে ওকে বলেছিলাম, ‘তুমি বাংলায় কেন লেখ না?’ আসল কারণ, আমি হিন্দিতে অত গড়গড় করে পড়ে রস আহরণ করতে পারি না, তাই। ওঁর নভেলটা পড়তে খুব ভাল লাগছিল, কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারছিলাম না।) বলি, ‘ ডেবোরা স্মিথ তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিল, তুমি কি কারও সঙ্গে ইংরেজি অনুবাদের জন্য চুক্তি করেছ? যদি কেউ না থাকে, তা হলে এটা কাউকে দিয়ে অনুবাদ করিয়ে ডেবোরাকে দেখানো যায়।’ গীতাঞ্জলী উত্তর দিল যে, ‘ডেবোরার সঙ্গে কাজ করতে পারলে তো ভালই হয়, তোমার মাথায় কেউ আছে কি?’ আমি বলি, ‘তুমিই  নিজেই কেন অনুবাদ করছ না?’ ও আমাকে বলল যে, ‘আমি কোহিমায় আছি এখন। আমি ফিরে তোমার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করছি।’ সময়টা ওই ২০১৮ সালের মার্চই হবে।  ইতিমধ্য়ে আমি আমি ডেইজি রকওয়েল অর্থাৎ ইংরেজিতে যিনি অনুবাদ করেছেন বইটা, তাঁর সঙ্গে গীতাঞ্জলীর আলাপ করিয়ে দিয়েছি অনুবাদের জন্য। 

    তার কিছুদিন পরে গীতাঞ্জলী হঠাৎ জানায় যে, ওর ভাই বা দাদা, কেউ এক জন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। গীতাঞ্জলী জানায়, কিছু দিন পরে ও যোগাযোগ করবে। এর মধ্যে ডেইজি, ডেবোরাকে জিজ্ঞেস করে যে, ডেবোরা গীতাঞ্জলীর বইটার ব্যাপারে উৎসাহী কি না?  ডেবোরা জানায় যে তারা এই বইটার ব্যাপারে উৎসাহী, কিন্তু ডেইজিকে কিছু দিনের মধ্য়েই নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারবে।  তার কিছু দিন পরই ডেবোরার উৎসাহে  ইংরেজিতে অনুদিত উপন্য়াস ‘টুম্ব অফ স্যান্ড’-এর যাত্রা শুরু। এবং তার পর তো বুকার প্রাইজ কমিটি যেমন ঠিক করেছে, তেমন ভাবেই গীতাঞ্জলীর বইটা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এই হল গীতাঞ্জলী শ্রী-র হিন্দি উপন্যাস থেকে ইংরেজিতে অনুদিত উপন্যাসের গল্প। 

    কিন্তু এই একটা পুরস্কার আর আমাদের অনুবাদ সাহিত্য পড়ার উৎসাহকে কত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, সে বিষয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। যদিও আমি এ ব্যাপারে সত্যি খুব আশাবাদী। কারণ এখন বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুদিত বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। আর সবথেকে বড় ব্যাপার হল, যারা ইংরেজিতেই লেখেন আর যাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় লেখেন, তাঁদের মূল কনটেন্ট-এ অনেক পার্থক্য থাকে। মূল ইরেজিতে যাঁরা লেখেন, তাঁরা মূলত শহরের বাসিন্দা। খুব কম হাতেগোণা হয়তো কয়েক জন আছেন,যাঁরা মফস্বলে থাকেন কিন্তু ইংরেজিতে লেখেন। যদি তাঁদের বড় হয়ে ওঠার দিকে নজর দেওয়া য়ায়, তা হলে দেখা যাবে, তাঁরা অন্য ভাবে শিক্ষিত হয়েছেন। গ্রাম বা মফস্বলের ছেলেমেয়েরা সাধারণ যে শিক্ষা-কাঠামোয় বড় হয়, তার চেয়ে আলাদা। 

    ফলে যাঁরা মূল ইংরেজিতে লেখেন তাঁদের লেখার ধরন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির থেকে যাঁরা আঞ্চলিক ভাষায় লেখেন, তাঁদের লেখার ধরন, কনটেন্ট এবং দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা। তাঁরা অনেক বেশি স্থানীয় জীবনযাপন, রাজনৈতিক অবস্থা, অর্থনৈতিক সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারেন, যাকে পোশাকি ভাষায় বলা যায়— রিয়েল ইন্ডিয়া। আমরা যারা শহরে থাকি, অধিকাংশের ক্ষেত্রে রাজনীতি আমাদের সে ভাবে স্পর্শ করে না, রাজনীতিকে আমরা সাধারণত একটা বিশ্লেষণাত্বক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখি বা মন্তব্য করি, কিন্তু যাঁরা শহরতলী বা গ্রামাঞ্চলে থাকেন, রাজনীতি তাঁদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, শহরের সুবিধে নেই, ফলে তাঁদের লেখায় উঠে আসে সত্যিকারের জীবনচিত্র, যা খুব বিশাল এবং ব্যাপ্ত। 

    তবে, সমস্যার কথা একটাই। আমাদের বই পড়ার অভ্যেস এখন এত কমে গেছে যে বইয়ের দোকানের সংখ্যাও কমে গেছে। আর তাই নানা রকম বই ঘাঁটার সুযোগ কমে গেছে। আর তাই কেউ যদি চায়ও যে অন্য রকম বই পড়বে বা খুঁজবে, সে সুযোগ খুব খুব কম। অনলাইন-এ পছন্দমতো বই হয়তো অর্ডার দেওয়া য়ায়, কিন্তু বইয়ের দোকান না থাকলে বই আবিষ্কার করা যায় না, অনলাইনে কোনও লেখক বা বই কি আবিষ্কার করা যায়? ফলে ইচ্ছে থাকলেও হয়তো অনেক ভাল বই লাইমলাইটে আসে না বা অনুদিত হয় না। 

    আরও একটা ব্যাপার, এখন ওটিটি প্ল্য়াটফর্মগুলো এসে গিয়ে, মনের খোরাক জোগাবে, ভাবনার সলতে উসকে দেবে, এমন সব কনটেন্ট সেখানে দেখতে পাওয়া যায়। ফলে বই পড়ার চেয়ে সেটা দেখে নেওয়া মানুষের কাছে এখন অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। সব কনটেন্ট যে খুব ভাল তা না-ও হতে পারে। কিন্তু যার য়া পছন্দ, সে সেটুকু ওটিটিতে গিয়ে খোঁজ করছে। না পেলে আর বিশেষ খাটছে না, আঁতিপাতি করে বই খুঁজছে না। ফলে বইকে এখন ওটিটি-র সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে। 

    কিন্তু সমগ্র বইয়ের বাজার দেখতে গেলে কিন্তু খুব ক্ষতি হচ্ছে, এমনটা বলা যাবে না। কারণ ইদানীং কালে জীবন-উপযোগী বইয়ের খুব চাহিদা বেড়েছে। তাদের বিক্রিবাটা বেড়েছে। এমনকী অনুবাদের হার ইংরেজি থেকে আঞ্চলিক ভাষায় বা আঞ্চলিক ভাষা থেকে ইংরেজিতে, কিছু খারাপ নয়। কী করে সহজে বড়লোক হওয়া যায়, কোন দশটি উপায়ে ভগবান পাওয়া যায়, কী করে বাড়িতে ভাল আবহাওয়া তৈরি করবেন, কু-দৃষ্টি তাড়াবেন— এ সব বইয়ের রমরমা বাজার। কিন্তু একটা বই যে একজনকে এমন একটা ভাবনার বা চিন্তার সূত্র গেঁথে দেবে মনে, যে সে, সেইটা নিয়ে হয়তো মশগুল তাকবে একটা বেলা, একটা দিন, কয়েকটা সপ্তাহ বা একটা জীবন— সে সম্ভাবনা দিনে দিনে কমেই আসছে। তার কারণ দিন বদলেছে, সময় বদলেছে। এই বদলটাকে তো অস্বীকার করা বোকামির কাজ। তবুও, যতদিন আঞ্চলিক ভাষার বই অনুদিত হয়েই বিশ্বদরবারে জায়গা করে নেবে, ততদিন লেখালিখি, বইপ্রকাশ, বইয়ের দোকান, রাস্তার বইয়ের স্টল— এ সবের ওপর ভরসা থেকেই যাবে।  

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook