১.
এই বাগবাজার ঘাট। স্বরান্ত অক্ষরে নাচে তার ঢেউ। আমি ব্যঞ্জনের অধীন, ভুখাপেটে কলম নুয়ে পড়ে। রোদে কষ্ট পাই তার চেয়ে বেশি কষ্ট ওই দেহজ গন্ধ কেন হাওয়ায় উড়িয়ে যাও। ছিঁড়ে খাই, ততটা হিংস্র নই। রবীন্দ্রগান আমাকে মৃদুল ঢ্যামনা করেছে।
ঘাটপাড়ে বসে আছে তুমুল সন্ন্যাসী। তার ঝুলিতে আজ ফেলে দেব তোমার বাড়ির পথখরচা। হোটেলে বাটামাছভাত খাব, সেইটুকু কড়ি শুধু থাক
২.
পাঁইট খুললে দুঃখ চলে যায়। শুধু বেদনারোগ ফিরে ফিরে আসে। বেদনায় তুমুলকাম সম্ভব হয় খুব। নেহা আগ্রার মেয়ে। এসব কি বোঝে? আমার পাঁইট খোলার দৃশ্যে সে অভিভূত হয়। লম্পটকে কবি নামে ডাকে। সে কি কবিতা বোঝে? এই অকালবসন্ত, আমার কর্কশ গলায় ঘষে দিচ্ছ নরম গ্রীবার মাংস, তুমি কালিদাস পড়েছ?
পাঁইট আর সস্তার বিড়ি। ধোঁয়ার গন্ধে তার যোনির কটুগন্ধ মিশে গেলে নেশা লাগে খুব। রবীন্দ্রগানেই এই বেদনার সফল পরিব্যাপ্তি, বহুকাল দেখছি।
৩.
ঝুঁকে পড়েছিল সে মেয়েটির খোঁপার বাগানে। যেন গভীর কুয়োতে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ঈশ্বরের ঘুম ভাঙাবে শয়তান। সে যে মেয়েটির ভাড়াটে প্রেমিক আমি তা থোড়াই জানি?
‘মেয়েদের চুলের ঘ্রাণ কেমন লাগে আপনার?’— এইটুকু আন্তরিক প্রশ্ন করেছিলাম শুধু। মেরে দাঁত ভেঙে দিল।
সফল কান্না আজ ঘিরে ধরছে আমায়।
উতল আঁচল এলোথেলো চুল— এই দৃশ্যটিকে আরাধনা করছি সমস্তদিন।
৪.
আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে দৈববেশ্যাদের সুইসাইডাল ডাক। এই দৈববাণী আমি জানি, আমারই উদ্দেশে। আমি যে নিরহংকার সৎ এই সম্বাদ শোভাবাজার ছাড়িয়ে আজ অলকাতেও পৌঁছে গেল না কি? এসো, ছিন্ন করে এসো অমৃতকৌতুক।
এই হাতিবাগান দ্যাখো, পাঁচ মিনিট হেঁটে চলো নোংরা ফুটপাত, পূতিগন্ধময় পেট্রোলপাম্প। দ্যাখো, চুলে রংধরা হিজড়ে, মাগীর দালাল, অবসর-সম্ভোগী পুলিশ রয়্যাল এনফিল্ড জুড়ে সিগারেট খায়। এইসব জীবনের নাট্য, অভিনয়হীন। অতর্কিত কুকুরছানা সরকারি বাস চাপা পড়ে তাই দেখে পাগলিনী কী উল্লাস, হো উল্লাস।
আমরা দুজনে মিলে এই জ্যান্ত পৃথিবীর পথে পথে হেঁটে বেড়াব বন্ধু। এইখানে অনন্ত যৌবন নেই। লালসাও বৈরাগ্যপরবশ হয়, হতে দেখেছি। শুধু ভুখারি ঘোরে চিরকাল, পাটকাঠি জ্বেলে মুরগির ছাঁট রাঁধে।
আর আছে পূজা-বিশ্বাস। মাসে পাঁচদিন বাড়িতে থাকে, বনগাঁর দেশঘরে তার গোপালের আরাধনা হয়।
৫.
ওই ঢ্যামনা চাঁদ রূপের বিনয়ে আজ বৈষ্ণব হয়ে আছে। ভোটগণনার দিন এমন চাঁদ উঠেছিল। আবার উঠবে হয়তো পঁচিশে বৈশাখ।
পাঠক বুঝেছ নির্বাণের পথে আমি চুলো জ্বেলে দিয়ে নীরব শববাবহক হয়েছি। এসো হাত ধরো, চলো বাগবাজার ঘাট।
ছবি: সোমনাথ হোর
ছবি সৌজন্যে: গ্যালারি ৮৮