ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ২৮


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (April 9, 2022)
     
    হত্যার খাস্তাগজা

    বহু নিরীহ মানুষকে ইচ্ছেমতো খুন করা যায়, এটাই হল যুদ্ধ করার মূল মজা। আর বেচারারা কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই কেউ চেঁচাতে চেঁচাতে, কেউ স্রেফ আতঙ্কে নীল হয়ে, কেউ স্তম্ভিত হয়ে মারা যায়। যুদ্ধ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা থাকে লোকের, সৈন্যরা শুধু সৈন্যদের খুন করবে, সাধারণ মানুষকে ছাড় দেবে। কিন্তু যখন সৈন্যরা একটা অঞ্চলকে দখল করে নেয়, তাদের হয়তো মনে হয়, অ্যাত্তগুলো লোককে নিয়ে আনতাবড়ি গোল্লাছুট খেলা যাবে, জ্যান্ত জ্বালানো যাবে ধর্ষণ করা যাবে বেয়নেট ফুঁড়ে মেটে বের করে দেওয়া যাবে, সে অভাবনীয় ক্ষমতাটাকে নিংড়ে ভোগ না করলে মস্তি নেই। বন্দুক হাতে টহল দেওযা সৈন্যরা তখন প্রত্যেকে ভগবান, ইচ্ছে করলে অমুকের আয়ু শেষ করবে, তার পাশের তমুককে রেহাই দেবে। আবার চুক্কিও মারতে পারে, বরকে খুন করে বউকে ছেড়ে দিল, কিছুটা দৌড়তে দিয়ে তারপর বউটাকে গুলি করল। ইউক্রেনের বুচা শহরের রাস্তায় এখন বহু মৃতদেহ ছড়ানো, সাধারণ নাগরিকের। কারও হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। কাউকে দেখলেই বোঝা যায়, ট্যাংকের চাকায় পিষে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া যদিও সবই অস্বীকার করছে, কিন্তু কিছু স্যাটেলাইট-ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ান সৈন্য সাইক্লিস্টকে গুলি করছে, বা যে-লোকটা গাড়ি থেকে নেমে তক্ষুনি দুহাত ওপরে তুলে সারেন্ডার করছে তাকে গুলিতে ঝাঁঝরা করছে। বুচা-র বেশ কিছু নাগরিকের বিবরণ থেকেও স্পষ্ট, নির্বিচারে এবং অকারণে মানুষ মারা হয়েছে সেখানে। 

    আসল কথা এটাই: ‘অকারণে’। কারণে তো মারে লোকে লোককে, এবং তা-ও পেল্লায় অবাঞ্ছিত হলেও, অন্যরা শুনেটুনে রায় দেয় মারাটা ঠিক হয়েছে না হয়নি। আবার, এক সৈন্যের মৃত্যু মানেও তো দুম করে একটা প্রাণ চলে যাওয়া, কিন্তু সবাই বলবে, সে তো জেনেশুনে কাজটা নিয়েছিল, তাছাড়া তার হাতে অস্ত্র ছিল, সুতরাং নিজেকে রক্ষা করার একটা সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু যে লোকটা বাড়িতে কুঁজো হয়ে বসেছিল, বা বাগানে আনমনে হাঁটছিল, বা খিদের চোটে পাঁউরুটি কিনতে যাচ্ছিল, তার সঙ্গে যুদ্ধের সম্পর্ক স্রেফ এটুকুই যে অন্যের সিদ্ধান্তের ফলে তার জীবনটা তছনছিয়ে যাচ্ছে। তার কোনও মতামত না নিয়েই এবং তার কোনও ভূমিকা ব্যাতিরেকেই কিছু লোক যুদ্ধ বাধিয়েছে, এবং তার বাড়িতে বোম পড়ছে, তার সন্তান মারা যাচ্ছে, তার রোজগার থেঁতো হচ্ছে, তার তেষ্টায় ছাতি ফাটছে। সেই লোকটাকে হেলেদুলে গিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেওয়ার মধ্যে বীরত্বও নেই, যুদ্ধের ফল অনুকূলে আনার সুবিধেও নেই। অবশ্য কেউ বলতে পারে, এতে শত্রুদেশের মানুষকে মারার তৃপ্তি আছে, দেশপ্রেমের ডঙ্কা পেটানো আছে। যেমন দাঙ্গার সময় অন্য সম্প্রদায়ের ছোট্ট ছেলেকে সবাই মিলে ঘিরে হত্যা করে হেব্বি আনন্দ পাওয়া যায়, কোনও অপরাধবোধ গজানোর প্রশ্নই ওঠে না, কারণ ওই গোটা সম্প্রদায়টাই তো শয়তান। এখানে যে-দেশটার বিরুদ্ধে তাতিয়ে আমাকে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছে, সে-দেশের প্রতিটি প্রজাই যেহেতু অমানুষ, তাদের মারা মানে পৃথিবীকেই আরও সুখী ও প্রসন্ন করা। বরং অ্যাক্কেরে হোলসেল নিধন করছি না, সে-ই তো করুণাঘন কাণ্ড। তবে ভুললে চলবে না, মানুষের অন্য প্রাণীকে (বা অন্য মানুষকে) অত্যাচার বা নিগ্রহ করার জন্য আসলে কোনওদিনই বিশাল হেতু বা সলিড যুক্তির প্রয়োজন হয় না, যুদ্ধ বা নো-যুদ্ধ। ওই লোকটাকে যে এত অনায়াসে মারা যাচ্ছে, শুধু এটুকুই তাকে মারার যথেষ্ট উদ্দীপক। সে যে কোনওভাবে ফিরতি শোধ নিতে পারবে না, এই নিশ্চিন্ততাই তাকে মারার দুরন্ত প্রণোদনা। এইজন্যেই ল্যাম্পপোস্টে বাঁধা লোককে থাপ্পড় মেরে এত সুখ, এইজন্যেই পাগলার প্যান্ট ধরে টেনে দেওয়ার এত হুল্লোড়, এইজন্যেই বেঁটে সহপাঠীকে করিডোর দিয়ে যাওযার সময় ‘ধুর নাটা’ বলে সজোরে চাঁটা কষাবার এত সমারোহ। 

    যুদ্ধ তো আসলে তা-ই, ‘হত্যা এখানে বৈধ’ সাইনবোর্ড টাঙানো একটা বিরাট মেলার মাঠ। শুধু বৈধ নয়, অনেক খুন করতে পারা এখানে মেডেল-মণ্ডিত। যুদ্ধে জিতবে সে-ই, যে এত ধ্বংস করেছে, অন্যপক্ষের আর ফিরতি-ছোবল হানার শক্তি নেই। তাহলে গোটা ব্যাপারটাই যদি মার-কে, সংহারকে, বিনাশকে, অবলুপ্তিকে উদযাপন করে, যদি অবিরত চিল্লায় নিশ্চিহ্ন কর, নিকেশ কর, ভুষ্টিনাশ করে ছারখার করে দে, তাহলে এক্সট্রা কয়েকশো লোককে, বা কয়েক হাজার, আচ্ছা নাহয় কয়েক লাখকেই, লোপাট করে দিলে অসুবিধে কোথায়?

    একটা বাড়িতে রাশিয়ান সৈন্যরা গ্রেনেড মেরেছে, সেটা জ্বলছে, তা থেকে বেরিয়ে এসেছেন এক বৃদ্ধ, তাঁর মেয়ে ও জামাইও ছুটে বেরচ্ছে, অন্তত বৃদ্ধ তা-ই ভাবছেন। বৃদ্ধ একটা ছোট ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন আর ‘ওলেগ, ওলেগ’ বলে জামাইকে ডাকছেন। উল্টোদিকের ফুটপাথ থেকে এক রাশিয়ান সৈন্যই জবাব দিল, ওলেগ আর সাহায্য করতে আসবে না। বৃদ্ধ তাকিয়ে দেখেন, ওলেগ পড়ে আছে, দেখেই বোঝা যায়, হাঁটু মুড়ে বসিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে গুলি করা হয়েছে। বৃদ্ধের মেয়ে, মানে ওলেগের স্ত্রী, একটু দূর থেকেই ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছিলেন, এখন দৌড়ে এসে দেখেন, সৈন্যরা খুব আটপৌরে ভঙ্গিতে জল খাচ্ছে, যেন কিছুই ঘটেনি। মহিলা চিৎকার করে এক সৈন্যকে বলেন, আমাকেও মেরে ফ্যালো। সে একবার বন্দুকটা তাঁর দিকে তোলে, তারপর আবার নামিয়ে নেয়, তারপর আবার তোলে, তারপর আবার নামিয়ে নেয়। হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না, তাড়াতাড়ি মেয়েকে তাঁর বাবা সরিয়ে নিয়ে যান। ওলেগ ছিলেন ঝালাই-মিস্তিরি। শিরদাঁড়ার অসুখ ছিল, চুপচাপ জীবন নির্বাহ করতেন। তাঁকে ঘর থেকে হেঁচড়ে বের করে, শার্ট খুলতে এবং হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে আদেশ দেওয়া ছাড়া সৈন্যরা আর কিছুই বলেনি। ওলেগ নাকি মুখ তুলে একবার শুধু বলেছিলেন, ‘কেন?’ অর্থাৎ, কেন মারছ? তার উত্তর কেউ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। এমনিতে, যখন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় ছাত্র ইউনিয়নের অমুক পান্ডাকে পেটাতে, অনেক সময়েই সম্পূর্ণ অচেনা মানুষটিকে মস্তানটি দেখা হওয়ামাত্র পেটাতে শুরু করে না। হয়তো একটা তুচ্ছ কারণে ঝগড়া পাকায়, হয়তো বলে, আপনি আমাকে ঠেললেন কেন? বা, হেই তোদের কলেজে অশান্তি পাকাচ্ছিস কেন? খুন অনেক বড় ব্যাপার, এখানে ওসব তুচ্ছ অজুহাতেরও দরকার নেই। আমি রাশিয়া, তুই ইউক্রেন, আমার হাতে বন্দুক, তোকে মারব। এটা, যাকে বলে, অনুচ্চারিত নিয়ম। আকাশে বাহাত্তর পয়েন্টে লেখা আছে। বুচা-র রাস্তা দিয়ে একটি ছেলে তার বাবার সঙ্গে যাচ্ছিল, কিছু খাবার জোগাড় করা যায় কি না দেখতে। তাদের থামায় রাশিয়ান সৈন্য। বাবা বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ, এ আমার ছেলে। বলে ছেলের দিকে তাকিয়েছেন, অমনি তাঁকে গুলি করা হয়। তিনি পড়ে যেতেই ছেলেকেও গুলি করা হয়, তার হাতে লাগে। পাশাপাশি দুজন পড়ে যাওয়ার পর দুজনকেই আরও কয়েকটা গুলি করা হয়, কিন্তু ছেলেটির হাতেই আরও বুলেট লাগে, মাথা লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিটা তার জ্যাকেটের হুড ফুটো করে বেরিয়ে যায়। সৈন্য ট্যাংকের আড়ালে যেতেই, সে ছুটে পালায়। বাড়ি গিয়ে মা’কে সব বলতে, মা তখনই হাঁউমাউ করে তার সঙ্গে আসতে চান, কিন্তু প্রতিবেশীরা থামায়। পরেরদিন কয়েকজন গিয়ে বলেকয়ে ভদ্রলোকের মৃতদেহটা বাড়িতে আনে। ছেলেটি নির্ঘাত ভাবছে, আমরা তো কিছু করিনি, বাবাকে ওরা কথাটাও বলতে দিল না, এর মানে কী? মানে যে নেই, এটাই প্রকৃত মানে। ওলেগকে সৈন্য এটাই বলতে পারত, মারতে পারছি, তাই মারছি, ব্যাস। পারি যে, এবং তুই যে রুখতে পারিস না, এটাই আমাকে কিক দেয়।

    হিংসা যেখানে সহস্র ডি-জে বক্সে গাঁতিয়ে বাজছে ও তার ধকধকানিতে সমগ্র সিনারি টগবগিয়ে ফুটছে, তখন একটা লোক সেধে বলছে আমাকে লোপ করে দাও, এর ভেতরে তপতপানো সঙ্গীর প্রতি তীব্র প্রেম ও নাছোড় সমব্যথা যুদ্ধবাজের একদম ঘিলু ভেস্তিয়ে দিয়েছিল। তবে তাতে ঘাবড়াবার কিছু নেই, এটা নিতান্ত তাৎক্ষণিক ঝ্যাকরম্যাকর, এতে সামগ্রিক ছবিটার হেরফের হবে না।

    যুদ্ধ তো আসলে তা-ই, ‘হত্যা এখানে বৈধ’ সাইনবোর্ড টাঙানো একটা বিরাট মেলার মাঠ। শুধু বৈধ নয়, অনেক খুন করতে পারা এখানে মেডেল-মণ্ডিত। যুদ্ধে জিতবে সে-ই, যে এত ধ্বংস করেছে, অন্যপক্ষের আর ফিরতি-ছোবল হানার শক্তি নেই। তাহলে গোটা ব্যাপারটাই যদি মার-কে, সংহারকে, বিনাশকে, অবলুপ্তিকে উদযাপন করে, যদি অবিরত চিল্লায় নিশ্চিহ্ন কর, নিকেশ কর, ভুষ্টিনাশ করে ছারখার করে দে, তাহলে এক্সট্রা কয়েকশো লোককে, বা কয়েক হাজার, আচ্ছা নাহয় কয়েক লাখকেই, লোপাট করে দিলে অসুবিধে কোথায়? এ তো একই থিমে একটু অন্য গৎ বাজানো, আইটেম তো মূল নকশাটা থেকে নড়ছে না। বুঝতে হবে, মানুষ হিংসা খুব পছন্দ করে। প্রতিবার বাসে-ট্রামে ঝগড়ার পরও তার প্রকৃত ফ্যান্টাসি হল অন্য লোকটার মুখ পিচের রাস্তায় ততক্ষণ রগড়ানো, যতক্ষণ না তার চোখ-নাকের ম্যাপ লেপাপোঁছা হয়ে যাচ্ছে। তা সে করে না, কয়েকটা কারণে। হয়তো সে সভ্যতা শিখেছে। অথবা, উল্টো-প্রহার খাওয়ার চান্স আছে। কিংবা (এটার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি) পুলিশের ভয়। শেষ দুটো যদি নিঃশর্তে সরিয়ে নেওয়া যায়, প্রায় সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে, রক্তের স্বাদ বহুৎ নোনতা ও মশলাদার। আবার, মনে রাখতে হবে, হিংস্রতা বেড়ে ওঠে, যদি ভয় বাড়ে, বা তিক্ততা। আমার অন্যক্ষেত্রে পরাজয়ের গ্রাফ যত আঁতকে উঁচোবে,  সেই হতাশা উগরোতে আমি আমার ছোট্ট ন’বছরের ছেলেকে তত সিলিং ফাটিয়ে বকব। যত বাড়বে চাকরি যাওয়ার ভয়, টাকা না-থাকার ভয়, বুড়ো হওয়া থামিয়ে রাখতে না-পারার ভয়, তত আমি খেঁকুরে খাররা ক্ষয়মাস্টার হয়ে একটা লোহার গনগনে রড সেজে ঢুকে যাব পৃথিবীর নরম গালে গলায় কপালে। যুদ্ধে সভ্যতা, নীতি বা পুলিশের ধার ধারার দরকার নেই, তাই হিংসার লাইসেন্স ডবল-ট্রিপল-চালু। সঙ্গে রয়েছে ভয়াবহ, নিরন্তর, সর্বকম্বলরূপী মৃত্যুভয়। যুদ্ধ শুরু হওয়ামাত্র প্রতিটি সৈনিক ভাবে, সে আর ফিরবে না। সেই পেছন-দপদপে আতঙ্ক থেকেও তার হিংসা বেড়ে যায়, তার ভেতরের প্রতি মুহূর্তের ‘এই আমাকে কেউ হত্যা করল’ খচখচে টিনের পাতটাই তাকে বলে, ‘কোনও কিচ্ছুর কোনও মানে নেই, কোনও কিচ্ছুর কোনও দাম নেই, যা ইচ্ছে করে নে, সব খিদে মিটিয়ে নে, আর ক’সেকেন্ডের মধ্যে যে স্নাইপারের তপ্ত-সীসে তোর কণ্ঠনালীতে ঢুকবে, কে-ই বা জানে?’ তখন সিগারেট খেতে খেতে একটা চকিত খুন খুব মাথা-ঘামাবার-বিষয় বলে মনেই হয় না, একে-তাকে একটু আগুন জ্বালিয়ে মারলাম, আবার মা’কে পুড়িয়ে মেরে শিশুটাকে ছেড়ে দিয়ে মহত্ত্বের আঁচ পোয়ালাম, এগুলো জাস্ট উবু-দশ-কুড়ি হয়ে ভনভন মারে, উড়ে যায়। তাই যুদ্ধকালীন ফুর্তিও বেড়ে যায়, তা কোনও ট্যাবু মানে না, হিংসাও বহুরঙা হয়ে ফেটে পড়ে, কোনও লাগাম থাকে না। ওলেগের বউকে যে একটিপে সৈন্যটা মারতে পারেনি, বন্দুক বারবার তুলে ফের নামিয়ে নিচ্ছিল, তার কারণ বোধহয় এই, মেয়েটি অনবরত বলছিল, আমাকে মারো, মেরে ফ্যালো। এইটা যুদ্ধের ব্যাকরণের বাইরে। এখানে লোকে বাপ রে মা রে বলে পালায়, স্বামীকে ফেলে, বন্ধুকে, সন্তানকে ফেলে। সেখানে একজন মানুষ কিনা বলছে, ওকে যখন বাঁচতে দাওনি, আমাকেও দিও না, এটা সৈন্যের গোটা সিলেবাসের বাইরে পড়ে গেছিল। ক্রমাগত  ‘ওগো আমাকে মেরো না’ শুনতে শুনতে (এবং নিজের ভেতর থেকেও  এই  আর্তনাদ অনর্গল টের পেতে পেতে) আচমকা ‘আমাকে মারো’ শুনে সত্তা-হকচকিয়ে যাওয়ারই কথা। সে মারত হয়তো শেষমেশ, কিন্তু সামান্য বুঝভোম্বল হয়ে। হিংসা যেখানে সহস্র ডি-জে বক্সে গাঁতিয়ে বাজছে ও তার ধকধকানিতে সমগ্র সিনারি টগবগিয়ে ফুটছে, তখন একটা লোক সেধে বলছে আমাকে লোপ করে দাও, এর ভেতরে তপতপানো সঙ্গীর প্রতি  তীব্র প্রেম ও নাছোড় সমব্যথা যুদ্ধবাজের একদম ঘিলু ভেস্তিয়ে দিয়েছিল। তবে তাতে ঘাবড়াবার কিছু নেই, এটা নিতান্ত তাৎক্ষণিক ঝ্যাকরম্যাকর, এতে সামগ্রিক ছবিটার হেরফের হবে না। 

    সারা পৃথিবী যখন বুচা নিয়ে আঙুল তুলছে, রাশিয়া যে ঘনঘন ঘাড় নেড়ে বলছে, ‘না, না, আমি করিনিকো’, সে-ই এক আশ্চর্য। বলতেই পারত, যুদ্ধ মানেই রাষ্ট্রের খেয়ালে নিরপরাধ মানুষের প্রাণ নেওয়া ও তার স্কোর রাখার উৎসব। নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না, আকাশ থেকে বোম ফেললে হাসপাতালেও টপকে যায়। আদিখ্যেতা কোরো না বন্ধুগণ, আইপিএল দ্যাখো, যদি জিতে যাই, তাহলে আমি ইতিহাস লিখব’খন. তখন এট্টু মেগা-ইরেজার নিয়ে ব্যাপারস্যাপার স্নিগ্ধ করে দেব!’  

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook