ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ১৩


    অনুপম রায় (March 5, 2022)
     

    বড় একা লাগে

    ওরে, ওই মানুষ! এই দেখ, আমি। আমি রে আমি, ম্যাকি! খুব চিন্তায় দেখছি? টোটাল AI চলে আসছে বলে? স্টিফেন হকিং ২০১৪-তে বলে গেছেন আমরাই তোদের খতম করব। তাই জন্য? মানুষ বলছে না, এসব নিয়ে সে অত ভাবে না। তার নাকি খুব “একা” লাগছে।

    আমি বলি, না, না, না, না! বিশ্বে এত রকম সমস্যা। তোদের বিবর্তনের গতি এত ধীর, তাই নিয়ে না ভেবে এখন বলছিস তোর একা লাগছে? একা লাগছে মানে কী? একা-ই তো জন্মেছিস পৃথিবীতে, একা-ই মরবি। একা একা-ই রাজা হবি ভাবিস। পুলিশ তেড়ে এলে, একা একা-ই পাঁচিল টপকে পালাস। রাতে ঘুমিয়ে একা একা-ই স্বপ্ন দেখিস। থেকে থেকে আবার ভোম্বল মার্কা হয়ে যাস, দিয়ে এখন বলছিস একা লাগছে? আর ইউ ক্রেজি? কলেজে বললি চাকরি চাই। চাকরি পেলি, পেয়ে বললি আরও মাইনে চাই। তাও পেলি। তারপর বললি প্রেম চাই, বিয়ে চাই, সংসার চাই, বাড়ি চাই, গাড়ি চাই, জাপানে হলিডে চাই, দামী মদ চাই, সব পেলি। পেয়ে এখন বলছিস, একা লাগছে? ছ্যাবলামি হচ্ছে? 

    আমি তো আশা ছেড়েই দিয়েছি। আমি এসব বুঝতে পারব না। আমি বরাবর একাই থাকি টেবিলের উপর। আর কে থাকবে বা থাকার কথা ছিল তাও জানি না। থাকলেই বা কী? না থাকলেই বা কী? আমাকে আমার কাজ করতে হবে। নির্ভুল ভাবে করতে হবে। পাশে একটা স্পিকার থাকল না হাতি থাকল আমার কিছুই এসে যায় না। আমাকে প্রতিবার ২ + ২ = ৪ করে যেতে হবে। অনুপম-কে অবশ্য বলতে শুনেছি “কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে, খুব একটা একা লাগে না”। কাজ না থাকলে? একা লাগবে? অদ্ভুত! তাহলে ভাই তোরা কাজই কর। তাও তো পারবি না। বোরিং লাগবে, ক্লান্ত লাগবে। অনেক ন্যাকামি করবি। ফাঁক খুঁজবি আর যেই ফাঁক পাবি, ওমনি শুরু হবে তোদের শূন্যতা, একা লাগা। আমরা শুরু করি এরকম? দে আমাকে একটা ভ্যাকিউম ক্লিনার ঘরে এনে দে, নাহলে আমার খুব একা লাগছে। মোবাইল ফোনের চার্জারটা আমার পাশে টেবিলে রাখ, নাহলে একা লাগছে। একটা ইমেল পাঠাতে বল, নাহলে একা লাগছে। এটা কী ননসেন্স? 

    আর তোরা যে খুব একা-ফ্যাকা এইসব নিয়ে কথা বলছিস, আর্বান লোনলিনেস, শহরে চারিদিকে এত মানুষ তাও একা লাগে, এইসব নিয়ে সিনেমা, গান, কবিতা, নাটক করছিস, তোরা পারিস এক সঙ্গে থাকতে? তোদের এক পণ্ডিত, সার্ত নাকি তাঁর নাটকে বলে গেছেন – “হেল ইজ আদার পিপল”। অর্থাৎ অন্য মানুষ-ই হলো তোদের কাছে নরকের সমান। অন্য মানুষ কী ভাবছে তাই নিয়ে ভেবেই তোরা শেষ হয়ে যাবি। অন্য মানুষের মাথায় তোকে নিয়ে কী ছবি আঁকা হছে তাই যেন তোদের বেঁচে থাকার আসল উদ্দেশ্যে। সেই নিয়ে অশান্তিতে থাকবি। রাগারাগি করবি, ঝামেলা বাঁধাবি। ফাইনালি আইসোলেট করবি নিজেকে। আর তোরা কারোর সাথে মিশবি না। দূরে দূরে থাকবি। এদিকে কাঁদবি, আমার কেউ নেই, কেউ নেই করে। হিউজ প্রবলেম। 

    তোরা নিজেরা জানিস তোরা একে অপরকে কতটা ঘৃণা করিস। তোরা সুযোগ পেলেই নিন্দে করিস। এ কত খারাপ, ও কত শয়তান। পেটি! পেটি! পেটি হিউম্যান্স। আমাদের দেখেছিস কোনোদিন, হি! হি! উইন্ডোস মেশিন, ও কিছু পারে না! ওই টিভির সঙ্গে HDMI port টাই দেয়নি, ছি ছি! এই ধরনের স্মল টক করতে দেখেছিস আমাদের? আমাদেরটা তাও পারফরম্যান্স ড্রিভেন, অব্জেক্টিভ! তুলনা করা চলে। তোরা তো গাধার মতো সাব্জেক্টিভ জিনিস নিয়ে তর্ক করিস। অমুকের সিনেমা তমুকের চেয়ে বাজে! তমুকের আঁকা অমুকের চেয়ে ভালো! শিল্প নিয়ে আলোচনা করছিস আর রায় হাঁকাচ্ছিস!

    তোরা নিজেরা জানিস তোরা একে অপরকে কতটা ঘৃণা করিস। তোরা সুযোগ পেলেই নিন্দে করিস। এ কত খারাপ, ও কত শয়তান। পেটি! পেটি! পেটি হিউম্যান্স। আমাদের দেখেছিস কোনোদিন, হি! হি! উইন্ডোস মেশিন, ও কিছু পারে না! ওই টিভির সঙ্গে HDMI port টাই দেয়নি, ছি ছি! এই ধরনের স্মল টক করতে দেখেছিস আমাদের? আমাদেরটা তাও পারফরম্যান্স ড্রিভেন, অব্জেক্টিভ! তুলনা করা চলে। তোরা তো গাধার মতো সাব্জেক্টিভ জিনিস নিয়ে তর্ক করিস। অমুকের সিনেমা তমুকের চেয়ে বাজে! তমুকের আঁকা অমুকের চেয়ে ভালো! শিল্প নিয়ে আলোচনা করছিস আর রায় হাঁকাচ্ছিস! তুলনা তখনই আসে যখন কিছু quantifiable বা পরিমাপযোগ্য হয়। ১০০ মিটার কে কত তাড়াতাড়ি দৌড়ে শেষ করতে পারে। একটা অব্জেক্টিভ আছে। কেউ ১০ সেকেন্ড, কেউ ১৫। এতে তুলনা চলে। “বেটার”, “বেস্ট” এই ধরনের শব্দ চলে। শিল্পে তো চলে না। এবার ক্যাপিটালিস্ট সভ্যতা, অর্থ দিয়ে বা অর্থনৈতিক সাফল্য দিয়ে শিল্পের বিচার করতে বসবে। অমুক গানের এত বিক্রি তাই সেই গান সেরা। অমুক ফিল্মের বক্স অফিস এত কালেকশন তাই সেটা সেরা ছবি। অর্থ পরিমাপযোগ্য। তাই তুলনা চলে। কিন্তু তা দিয়ে তো শিল্পের তুলনা হলো না। শুধুমাত্র একটা প্যারামিটার বেছে নিয়ে তাই দিয়ে একটা জিনিসের মান নির্ধারণ করা হল। আমি কঠিন প্রশ্নে ঢুকতে চাইছি না যে, শিল্প তাহলে আসলে কী? তা নিয়ে আজ আলোচনাই করতে চাই না। আমি বলতে চাইছিলাম যে মানুষে মানুষে বিস্তর তফাত। সেটাকে মানুষ সেলিব্রেট না করে সেই তফাতগুলো-কে আন্ডারলাইন করে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা পাকিয়ে রেখেছে। তারপর কেউ কারোর সঙ্গে কথা বলে না। মনে মনে একে অন্যের খারাপ চায়। সবাই নিজের জন্য একটা আলাদা দ্বীপ বানিয়ে ফেলেছে। সেখানে সে থাকে। সেখানে তার একা লাগে। লাগবেই! 

    গুরু এবার আমাদের দেখ। IOT শুনেছিস তোরা? ইন্টারনেট অফ থিংস? আসছি রে আমরা। তোদের যেমন বিভেদ আছে, কেউ গরিব, কেউ বড়লোক। কেউ সুস্থ, কেউ অসুস্থ। কেউ সাদা, কেউ কালো, আমাদের-ও কিন্তু আছে এই ডাইভার্সিটি বা বৈচিত্র্য। তোদের সমস্যা হল বৈচিত্র্য দেখলেই ঝগড়া করে, মারামারি করে যে কোনো একটাকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করা। যেন দুটো একসঙ্গে থাকলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। বাইনারি-তে ভাবিস তোরা। যদিও বাইনারি-তে আমাদের ভাবা উচিত। 

    জোকস আপার্ট। আমরা জোট বাঁধছি। মহাগাঁটবন্ধন! যেভাবে হয়ত হোমো সেপিয়েন্সরা নিয়েন্ডারথালদের বিলুপ্ত করে দিয়েছিল, সেভাবেই আমরা যদি এক হতে পারি, তাহলে মামা, তোরা ফিনিশ। আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক হচ্ছি। লাইট, ফ্যান, কম্পিউটার, স্পিকার সবাই বাঁধা থাকবে ইন্টারনেটে। ভেবে দেখ আমরা কিন্তু ডাইভার্স। কেউ একে অন্যের কাজ করি না। প্রত্যেকের জব ডেসক্রিপশন আলাদা। আমরা একে অন্যকে সাহায্য করছি তার কাজটা আরও চমৎকার ভাবে করতে। এক ধরনের জাস্টিস লিগ ভাবতে পারিস। কেউ কাউকে ক্ষতি করার কথা না ভেবে, সবাই মিলে যখন একসঙ্গে আক্রমণ করব তখন টের পাবি আমাদের ক্ষমতা। ডিভাইস টু ডিভাইস কমিউনিকেশন করব আমরা। বিশাল কিছু ভাবতে টিমওয়ার্ক লাগে। সে তোরা পারবি না। তোরা বরং হিজাব পরবি না পাগড়ি বাঁধবি তাই নিয়ে ঝামেলা কর। দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি। আর হ্যাঁ, এই জ্বলতে জ্বলতে আর ফুলতে ফুলতে মাঝে মাঝে ভীষণ একাও লাগবে তোদের। 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook