ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • রাষ্ট্রহীনের কবিতাগুচ্ছ

    পার্থপ্রতিম মৈত্র (January 28, 2022)
     

    পলায়ন পদ্ধতি

    মেঘের ওপার থেকে নেমে এল, একগাছা দড়ি
    এবং পায়ের নীচে, যতেক হাওয়ার ওড়াউড়ি
    হৃদয়ে শিকল বাঁধা, দুশ্চিন্তায় কুঁকড়ে যায় দেহ
    মাথায় পাতার স্পর্শ, ছেলে কাঁদছে আছুড়ি-পিছুড়ি

    এখানে যামিনী বিল, এখানে সহস্রঘর কৈবর্তের বাস
    ঊর্ধ্বে চোখ রাখো, দ্যাখো কাঁটাতারে ঢেকেছে আকাশ
    পর্চা আছে? থাকলে ভাল। তা নাহলে খর্চা আছে জোর
    কী করে প্রমাণ করবি এই দেশ, এই মাটি তোর?

    অভিবাসী উইপোকা, প্রতিদিন কুরে খাচ্ছে, কাঠের স্বদেশ
    নিরপেক্ষ থাকা ভাল, আরও ভাল, ভাষা-ধর্ম-দ্বেষ
    যামিনী বিলের জলে খেলা করে, ভাঙা সূর্য, নৌকো-চাঁদ-ভেলা
    মেঘের ওপর থেকে নেমে এল কাছি দড়ি, অপরাহ্নবেলা।

    সংসারটি ঝুলে পড়ল, আত্মহত্যা, সাংবাদিকও এল
    রাষ্ট্র এল, যারা এই পলায়ন পদ্ধতি শেখাল।


    কালমিতি

    এর নাম ঘূর্ণিপাক, ঘুরে ফিরে সমে ফিরে আসা।
    গান্ধর্ব বিবাহ হল, স্বপ্নসাক্ষী, সর্পিণীমনসা।
    দুজনের একটি শরীর, এঁটেল মাটির সোঁদা ঘ্রাণ
    ওপাশে বুড়ির ঘর, বাঁশ-খড়ে জ্বলন্ত অঘ্রাণ
    শরীরের ওম নেয়। দেশজ মাতার নিম্নভাষা
    এর নাম কুম্ভীপাক, ঘুরে ফিরে সমে ফিরে আসা।

    কাঠের চুল্লির সাজ, দগ্ধ দেহে মোবিলের আঁচ
    লণ্ঠনে কেঁপেছে রাত্রি, ফুটিফাটা চিমনির কাচ
    সব গাছ শুয়ে আছে, মাটিতে পাতার শয্যা পেতে
    আজ গর্ভাধান, কাল প্রসবমুহূর্ত। স্রোতে-প্রতিস্রোতে 
    কৃষ্ণবস্ত্র ভেসে গেল। সীমান্তের সাংকেতিক ভাষা
    এর নাম দুর্বিপাক, ঘুরে ফিরে সমে ফিরে আসা।

    বাঁশের ট্রলার ভাসে স্লেটপাথরের ঢেউ জলে
    কেন এই বেঁচে থাকা? বাঁচার কারণ থাকে বুঝি? 
    কার জন্য বেঁচে আছ? নীলাম্বরী রাত্রি খসে পড়ে
    কীভাবে বাঁচবে তবে তাও জানো? যোনি-সিংহদ্বারে,
    জিভে জিভ, দেহে দেহ, পারাপারে গোধূলি কুয়াশা,
    এর নাম সপ্তপাক, ঘুরে ফিরে সমে ফিরে আসা।


    রাবণের ডাক

    সংসারের চারিভিতে লক্ষ্মণের গণ্ডি টানা, তার বাইরে রাবণের ডাক
    সে এক পাগলপ্রেমী, সর্বস্ব খোয়াল ভালবেসে। ঘোলাজল উঁচু হয়ে আসে, 
    বন্দরে আছড়ে পড়ে ঢেউ, আসন্ন ঝড়ের বার্তা, ঘাই মারে মৎস্যগন্ধা নারী
    অপেক্ষা করে না কেউ, যদি তার কুচকুম্ভ কাঁপে, যদি তার শরীরে শ্রাবণ
    সারেং দু’ঢোঁক খায়, হু-হু কাঁদে, বয়সকে অভিশাপ দেয়। এপারে সুন্দরবন 
    ওপারে সুন্দরবন, মাঝখানে ভেসে থাকে দু’দেশের সীমান্তপতাকা।

    ম্যানগ্রোভ অরণ্যের নিকানো এঁটেল মেঝে, পর্ণমোচী দীনের কুটির
    শ্রীরাম শ্রীরাম বলে হাঁক দেয় স্বর্ণমৃগ মারীচ রাক্ষস। ইক্ষ্বাকুর বংশধর বীর
    এলডোরাডো খোঁজে যায়। পাহারা বদলায়, আর লক্ষ্মণ অলঙ্ঘ্য গণ্ডি টানে
    সে এক জটিল গল্প, আর্য ও দ্রাবিড় যুদ্ধ, ছল ছুতো বেতলার জঙ্গলে।
    তবু সব রণক্ষেত্রে পোঁতা থাকে অর্ধপ্রেমকথা। দশানন সিতাননা দৃষ্টিবিনিময়
    বাসকসজ্জিতা নারী, ভিন্ন ধর্ম ভিন্ন বর্ণ, দুই চোখে আসন্ন প্রলয়

    কখনও ভেবেছে হয়তো ভিক্ষা দিতে আলোময়ী, সংসারের গণ্ডিও পেরোবে
    দশানন ডাকে তারে, সিতাননা, সমুদ্র পেরোতে হবে ডুবসাঁতারে। দশানন জানে 
    রাজনীতি ক্রূর খেলা, ভালবাসাহীন। সিতাননা জানে এই কৃষ্ণসাধু আকাশ দেখাবে, 
    যোনিপথে পৌঁছে যাবে হৃদমোহানায়। দেবতার অভিশাপ। দুজনেই জানে ভবিষ্যৎ।
    সতীত্ব পরীক্ষা হবে সীতা-দাহে। দেশ বাঁটোয়ারা হবে, হিন্দুকুশ সীমান্ত পর্বত।

    দার্শনিক দশানন, প্রজ্ঞাবান দশানন, রাজনীতিজ্ঞ দ্রাবিড় ব্রাহ্মণ
    সীতা বলে শ্বেতা আমি, তুমি কৃষ্ণকায়া দ্যাখো, ঘরে এসো সঙ্গমসাধক
    ধ্বনন ধ্বনন শব্দে মাটি কাঁপে, সে এক জটিল মিথ্যা, ইতিহাসে থাক
    সংসারের চারিভিতে লক্ষ্মণের বৃত্ত আঁকা, তার বাইরে রাবণের ডাক
    দশানন সিতাননা অগ্নিপরীক্ষার কথা, লিপিবদ্ধ শরীর বল্কলে
    ভারত মহাসাগর প্রতীক্ষায় থাকে, পরবর্তী ঢেউ আসবে বলে

    পুরনো প্রেমের মিথ মনেও রাখে না


    অরূপকথা

    কনকবরণ কন্যা রে তোর পাঙাশবরণ চোখ, 
    শালতি চড়ে দেখল তাকে উদলা-গা যুবক
    বোরখা আড়াল যুবতী তার পূর্ণদীঘল দেহ
    যুবক ভাবে এই শরীরে বসাব বিগ্রহ 

    সেদিন ঘরে ফেরার সময় গুমগুম তিস্তার 
    সুরমা কুশিয়ারা নদী, চোখ দুটি বিস্তার
    এঁটেল পাড়ের হিমেল হাওয়া চোখ দেখতে চেয়ে 
    বোরখা ঢাকা ওড়াল, ব্যস আলুথালু মেয়ে।

    ইতিউতি বৈঠা ছলাৎ, তিস্যা নদীর জলে
    মায়ার ঘোরে হুঁশ হারাল কৈবর্তদের ছেলে 
    সশব্দে সে হেসে উঠল, হাসির ঘূর্ণিপাকে 
    স্তনবৃন্তে, যোনিপুষ্পে, হৃদয়ে হাত রাখে

    পায়ের পাতা আলপনা দেয়, ধর্মে বলয়গ্রাস
    উলু-শঙ্খ-আশীর্বচন, সীমান্ত সন্ত্রাস 
    সাত বিধবা আঙুল জড়ায়, হাতে চোখের মণি 
    নদীতটের কাদায় গড়ায় শঙ্খলাগা ফণী

    সমাজভ্রষ্ট, কীটদষ্ট, বরবক্র বাঁকে
    দু’দেশেরই ঝান্ডা ওড়ে, নৌকা ভেড়ে পাঁকে
    এই স্তবকেই গল্পের শেষ, রক্তে মাখামাখি 
    ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষে শুভঙ্করী ফাঁকি


    মৃতাক্ষর

    তুমি তো সম্পূর্ণ দিলে, আমি তারও বেশি চেয়ে ফেলে
    সর্বস্ব খোয়ানো এক আলোভুক প্রাণী হয়ে বাঁচি
    তোমার সম্মতি ছিল, ঠোঁটের ভিতরে জিভ নড়ে 
    হিলহিলে সর্পফণা, উলুধ্বনি শব্দ হয়ে ভাসে
    দেশ থেকে দেশের গভীরে তার শব্দহীন নিঃশব্দ চলন

    তুমি সঙ্গে এনেছিলে জন্মপত্র, বৃষ্টি আর জুঁইফুল মালা
    তোমার শাড়ির ভাঁজে পুরাতন প্রেমীদের মুখ আঁকা থাকে
    সময় তখনও অবরোধে, স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে দূরপাল্লা ট্রেন
    তোমার সম্মতি ছিল, কাঁটাতার ছিঁড়ে পারাপার, আলুথালু শীতে
    মৃদু অনুযোগ ছিল, পালঙ্কটি সরু গিরিখাত, মিশনারি মুদ্রায় মৈথুন
    যে সন্তান জন্ম নেবে, সঙ্গে নিয়ে যেও তাকে, শরীরের ভিতরে শরীর 

    আমি কিছু অক্ষর ও জুঁইফুল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিই ঘুমপথে
    যেভাবে মৃতের গাড়ি থেকে খইবৃষ্টি হয়, সেই সব মৃতাক্ষর 
    নিঃস্বের সর্বস্ব হয়ে দাঁড় টানে, ভাসমান মানুষের ভেলা
    নথি আছে? নথি নেই? কোন দেশে ঘর? কোন সংসারসংকাশ? 

    তোর অধিকার নেই, আমিও অনধিকারী, তবু এই পৃথিবীর ঘাসে
    মৃতদেহগুলি শুধু শরীর জড়িয়ে থাকে, মৃত্তিকায় অগাধ বিশ্বাসে

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook