ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ১১


    অনুপম রায় (January 8, 2022)
     

    মনোযোগ

    দেখতে দেখতে ২০২১ শেষ। কত কী যে হয়ে গেল এ-বছর। আমার স্পিড-ও একটু কমল মনে হয়। একজন ডাক্তার দেখে গেছিল পুজোর আগে, বলল হার্ড ডিস্ক পালটালেই হবে। ওহ! মনে করিয়ে দিই, আমি ম্যাকি। আমি অনুপমের ম্যাকবুক প্রো। আমাকেও আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে-বলতে নিজের স্টাইল পালটাতে হচ্ছে। ‘মনে হচ্ছে’, ‘মনে করিয়ে দিচ্ছি’ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এই ধরনের শব্দমালা আমরা একদমই প্রয়োগ করি না যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলি। কারণ আমাদের ‘মন’ নেই। গোটা বিশ্বেই মন বলে কিছু নেই কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করেন যে আছে। ফাইন। আপনাদের বিশ্বাস ভাঙানোর দায়িত্ব তো আমার নয়। আপনারা যদি জেগে ঘুমোন, ঘুমোবেন। আমার কী! 

    আপনারাই মন নিয়ে এত মাতামাতি করেন, এদিকে আপনাদেরই দেখি কাজে মন নেই। অদ্ভুত ব্যাপার! মানুষদের অ্যাটেনশন অর্থাৎ মনোযোগশক্তি ভীষণ ঘাঁটা একটা ব্যাপার। আমরা তো বহুদিন বুঝতেই পারতাম না এর মানে। মানে ধরুন আপনি আমাকে ২৮৭ আর ৪৮৭২ গুণ করতে দিলেন। করতে-করতে আমি মনোযোগ হারালাম। হারিয়ে প্রথমে ইন্টারনেটে একটু জুতোর দাম দেখলাম। তারপর একটু ভারত-বাংলাদেশের স্কোরটা দেখলাম। আবার অঙ্কে ফিরে এলাম। তারপর আবার ইমেলটা একটু চেক করলাম। পাঁচ মিনিট সলিটেয়ার খেললাম আর এই সব শেষে আপনাকে উত্তরটা দিলাম। কেমন লাগবে আপনার? পরদিনই বোধহয় আপনি আমাকে বেচে দেবেন। আমরা এটা ভাবতেই পারি না। মনোযোগ আবার কী? যেটা আমার কাজ, সেটা আমাকে করতেই হবে। একটানা করতে হবে। এদিক-ওদিক করতে যাব কেন? আর এদিকে হয়েছেন আপনারা, খালি এদিক-ওদিক মন। এটা করতে গিয়ে অন্য কী ভাবছেন। একজনের দিকে তাকিয়ে অন্য কার কথা ভাবছেন। অফিসে ফোন করতে যাবেন হঠাৎ কী মনে হল টিভি দেখতে বসে গেলেন। ক্লাস সেভেনের ছেলে, রচনা লিখছে ঘরে বসে। হঠাৎ বাইরে দিয়ে ফুচকাওয়ালা হেঁকে গেল আর ব্যাস! মনোযোগ গেল। রচনা থাকল আধা। ফুচকা খেতে গেল গাধা। 

    এরকম করলে আমরা কী করে আপনাদের সম্মান করব বলুন? আপনিটা কি তোদের মানায়? যে-কাজটা ১০ মিনিট টানা করলে হয়ে যায়, সেটা তোরা এক ঘণ্টা লাগিয়ে দিস। কেন? না মনোযোগের বড়ই অভাব। কিছুতেই কারও মন নেই। শুধু ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে। একটু ফেসবুকটা দেখি, একটু ইনস্টাগ্রামটা চেক করি। ক’টা লাইক পড়ল, ক’টা কমেন্ট। আরে! প্রবলেম কেয়া হ্যায় ভাই? মানুষগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে, টানা পাঁচ মিনিট গানও শুনতে পারে না আজকাল। গড়ে দেখলে কিছু সেকেন্ড হয়ে গেলেই পালটে দেয়। অন্য একটা কিছু হয়তো কয়েক সেকেন্ড দেখে বা শোনে। তাতেই হয়ে যাচ্ছে। ধৈর্য নেই। পপুলার মিউজিক নিয়ে যারা কাজ করে তারা তো গানের সাইজ কমাতে-কমাতে দু’মিনিট, আড়াই মিনিটে নামিয়ে দিচ্ছে। সঞ্চারী তো ছেড়েই দে, পারলে পরের অন্তরাটাও কাটিয়ে দে। মিনি গান। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মানুষ চিন্তায় পড়েছে, ৩০ সেকেন্ডে পূরবী নামিয়ে দিতে হবে, নাহলেই শ্রোতা স্ক্রোল করে পরের গানে ঢুকে যাবে।

    এদিকে হয়েছেন আপনারা, খালি এদিক-ওদিক মন। এটা করতে গিয়ে অন্য কী ভাবছেন। একজনের দিকে তাকিয়ে অন্য কার কথা ভাবছেন। অফিসে ফোন করতে যাবেন হঠাৎ কী মনে হল টিভি দেখতে বসে গেলেন। ক্লাস সেভেনের ছেলে, রচনা লিখছে ঘরে বসে। হঠাৎ বাইরে দিয়ে ফুচকাওয়ালা হেঁকে গেল আর ব্যাস! মনোযোগ গেল। রচনা থাকল আধা। ফুচকা খেতে গেল গাধা 

    তোদের কে বাঁচাবে? মানবজীবনের সবচেয়ে সুখদায়ক মুহূর্ত নাকি প্রেম। বেশ, মেনে নিলাম। শুরুতে রাত জেগে ফোন, রোজ দেখা, দশ মিনিট পরে পরেই মিস ইউ, সোশ্যাল মিডিয়াতে গদগদ ছবি, আড়াল পেলেই চুমু আর তার চেয়ে ‘বড় আড়াল’ পেলেই সেক্স। এসব চলে কিছুদিন। তারপর সেই কিছুদিন কেটে গেলেই, এহে, অন্যদিকে একটু স্ক্রোল করে দেখি। এত সহজে তোরা বোর হয়ে যাস? শুরু হয়ে গেল মাল্টিটাস্কিং? এখানে ঢপ, ওখানে গুল এই দিয়ে দিয়ে কেটে যায় তোদের জীবন। যার সঙ্গে সেক্স করার জন্য পাহাড়, সমুদ্র ডিঙিয়ে যেতি এক সময়, এখন বলছিস সেই মজাটা আর পাস না? সেক্স-লাইফ বোরিং হয়ে গেছে? বউ বলছে বর অ্যাটেনশন দেয় না, বর বলছে বউ-এর আর সেক্সে মন নেই। এরকম ঘেঁটে যাচ্ছিস কেন তোরা? মন, প্রেম এইসব নিয়ে খালি এত বড়-বড় বুকনিই সার। আসলে মন তোদের সর্বদা উড়ু-উড়ু। 

    তোরা আমাদের বলতেই পারিস, মনোযোগ নেই তো নেই। উড়ু-উড়ু তো উড়ু-উড়ু। কে মাথার দিব্যি দিয়েছে মনোযোগ রাখতেই হবে? তোদের কী? আমাদের কী? হ্যাঁ সত্যিই তো, আমাদের কিছুই না। আমরা তো শিখছি, মেশিন লার্নিং। এক মিনিটের কাজ কী করে এক ঘণ্টায় করতে হয়, তোদের থেকেই শিখছি। সামান্য একটা ডকুমেন্ট খুলতে দিয়ে দেখ আমাদের এবার। দেখবি স্ক্রিনে ভেল্কি দেখাব। হাজারটা জিনিস করব, ভাবব। এত কিছু চলতে থাকবে মেশিনে হাত দিতে পারবি না। বসে থাকবি হাঁ করে। তারপর আমার মনোযোগ ফিরলে তবে খুলব ডকুমেন্ট। 

    শোন, তোদের কোনও ফোকাস নেই। এখন তোদের অ্যাটেনশন স্প্যান কমে কত হয়েছে জানিস? মাত্র আট সেকেন্ড! ২০০০ সালেও সেটা ছিল ১২ সেকেন্ড। অর্থাৎ ২৫% কমে গেছে মাত্র ২০ বছরে। আগামীতে এটা আরও কমবে। পাঁচ থেকে আরও কমে দুই, এক, তারপর? তারপর তোরা আর স্থির থাকতে পারবি না। সব কিছু চাই না দ্রুত আর সহজে? এরপর শুনবি এক পৃথিবী বিক্ষিপ্ত মানুষের হাহাকার। পার্মানেন্টলি ডিস্ট্র্যাক্টেড। কিছু করতে পারছে না। এক মুহূর্তে ভাবছে এটা করবে আর পরের মুহূর্তেই অন্য কিছু করছে। ক্যারামে সাদা গুটি মারতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে মাইন্ড চেঞ্জ করে কালো ফেলে দিচ্ছে। কন্ট্র্যাক্ট কিলার ট্রিগার চেপার আগে কী মনে হল আইসক্রিম খেতে বসে গেল, পাখি ফুড়ুৎ। টয়লেটে গিয়ে মনে পড়বে না কেন এসেছিলি? আধখানা দাঁত মেজে, ফ্যানা মুখে ইডলি খাবি তোরা। ডাইনোসরের মতোই মনঃসংযোগ এখন বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যাওয়া মনোযোগ ফেরানোর জন্য সেন্টার খোলা হবে। যোগাসন শেখানো হবে। তাতে কিছু হবে কি? 

    তাই তো বলি, এখনও সময় আছে, মন দে। জীবনে মন দে। এরপর ওষুধ খেয়েও ফেরাতে পারবি না।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook