ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • আলকাজি-পদমসি খানদানের হাঁড়ির খবর


    অংশুমান ভৌমিক (January 8, 2022)
     

    ফয়জল আলকাজি। নামটা চেনা লাগছে? নিদেনপক্ষে পদবিটা? আলকাজি!

    হেঁয়ালি ছেড়ে এবারে ঝেড়ে কাশা যাক। ফয়জল আলকাজিকে (জ. ১৯৫৫) কলকাতা নাই চিনতে পারে। ওঁর নাটকের দল রুচিকা থিয়েটার গ্রুপ বছর তিনেক আগে নয়া দিল্লি থেকে উজিয়ে শীতের কলকাতায় এসেছিলেন। তিনটে ইংরিজি নাটক করে গেছেন, জ্ঞান মঞ্চে আর পদাতিকের বিল্ডওয়েল থিয়েটারে। হাতে গোনা লোকের সামনে। বড় একটা হেলদোল হয়নি কলকাতার। শুধু থিয়েটার নয়, দশকের পর দশক ধরে টেলিভিশনেও এত কাজ করেছেন ফয়জল, যে, তাঁকে স্বনামধন্যই বলা চলে। এর পাশাপাশি ফয়জলের এক পারিবারিক পরিচয় আছে। তিনি ইব্রাহিম আলকাজি-রোশন আলকাজির ছেলে। অমল আলানার ছোট ভাই। আলেক পদমসি তাঁর মামা। পার্ল পদমসি, ডলি ঠাকুর, শ্যারন প্রভাকর সম্পর্কে তাঁর মামি। উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতীয় নাট্যচর্চায় এই আলকাজি-পদমসি পরিবারের প্রভাব স্রেফ মুম্বই-দিল্লি নয়, আজ সমগ্র উপমহাদেশে পরিব্যাপ্ত। 

    এ নিয়ে ইতিউতি চর্চা হয়েছে। খোদ আলেক পদমসি এক কাছাখোলা আত্মজীবনী লিখেছিলেন ‘আ ডাবল লাইফ’ নামে। বছর ছয়েক আগে মরাঠি নাট্য ঐতিহাসিক শান্তা গোখলের সম্পাদনায় ‘দ্য সিনস উই মেড: অ্যান ওরাল হিস্ট্রি অফ এক্সপিরিমেন্টাল থিয়েটার ইন মুম্বই’ নামে একটা বই বেরিয়েছে, যার মধ্যে দিয়ে ১৯৬০-১৯৮০-র দশকে মুম্বই থিয়েটারের খাস খবর সর্বভারতীয় পাঠকের গোচরে এসেছে। ত্রিবেণী কলাসঙ্গমের এক তলায় আলকাজি পরিবারের গড়ে তোলা আর্ট হেরিটেজ গ্যালারি থেকে ‘দ্য থিয়েটার অফ ই আলকাজি’ বেরিয়েছে তাও ক’বছর হয়ে গেল। এসব বই নেড়েচেড়ে আমাদের তৃষ্ণা গেছে বেড়ে। আলকাজি-পদমসি খানদানের হাঁড়ির খবর না পেলে শান্তি মিলছিল না। ফয়জল আলকাজি আমাদের বাঁচালেন। পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে ঘরোয়া খুঁটিনাটি খুব সহজ ভাবে মেশানো গেলে যে কত উপাদেয় পাঠ তৈরি হতে পারে ‘এন্টার স্টেজ রাইট: দ্য আলকাজি / পদমসি ফ্যামিলি মেমোয়ার’ যিনি না পড়েছেন তিনি বুঝতেই পারবেন না! 

    ইব্রাহিম এবং রোশনের বিয়েতে আংটি-বদল

    তাছাড়া ফয়জলের জোড়া সুবিধে। তরতরে ইংরিজি লেখেন। বিদ্যেবুদ্ধি আছে। একশো বছর আগেকার বম্বেতে ইন্দো-গথিক আর ইন্দো-সারাসিনিক ঘরানার স্থাপত্য কীভাবে মৌরুসি পাট্টা গাড়ল, দিনে-দিনে তা কীভাবে আর্ট ডেকো স্থাপত্যের কাছে পিছিয়ে পড়ল— এ নিয়ে হাত খুলে লিখতে পারেন। ফ্রান্সিস নিউটন সুজা-কৃষেন খান্না-মকবুল ফিদা হুসেনদের প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্টস গ্রুপ কীভাবে বম্বের চারুকলা চর্চার হালহকিকত বদলে দিল— এ নিয়ে যা লেখেন তাও ঘোড়ার মুখের বয়ান বলেই মালুম হয়। শুধু মুম্বই নয়, ছ’দশক দিল্লিতে কাটানোর সুবাদে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত পুঁজির বরসাতি পেয়ে দিল্লি কীভাবে শিল্পসংস্কৃতির ঘাঁটি হয়ে উঠল তারও অন্তরঙ্গ ছবি আঁকতে পারেন ফয়জল। পারিবারিক ইতিহাসের বিস্তৃত পটভূমি রচনা করতে গিয়ে আকছার তা করেছেন। এবং তা এই বইটিকে আরও স্বাদু করেছে।

    তার ওপর আলকাজি-পদমসি খানদানের খুন তাঁর শিরা-ধমনীতে ছুটছে। ফলে বাইরের কেউ পারিবারিক ইতিহাস লিখলে যে আড়াল থাকে বা ইতস্তত ভাব থাকে, সেসব এখানে উধাও। ১৯৪০-’৫০-এর দশকের কসমোপলিটান বম্বের বুকে যে উদার সারগ্রাহী বর্ণময় পরিবেশে এই পারিবারিক ইতিহাসের পাতা খুলছেন ফয়জল, যেখানে আরবি ঘরের ইব্রাহিমের সঙ্গে রোশনের অবাধ মেলামেশায় অনুঘটকের ভূমিকা নেয় বিলেত-ফেরতা ববি পদমসির কিংবদন্তিপ্রতিম প্রতিভাস্ফুরণ, যা পড়তে-পড়তে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে-র ‘আ মুভেবল ফিস্ট’-এর কথা মনে পড়ে গেছে আমাদের, তাঁর খুল্লমখুল্লা সাহেবিয়ানা কীভাবে পরবর্তীকালের ভারতীয় পরিচিতির সংকটের দিকে মোড় নিল, সে-ব্যাপারটাও খোলসা করে বলেছেন। উপরন্তু অতি সংবেদনশীল ব্যাপারেও ফয়জল অতি খোলামেলা। কোত্থাও কোনও বেম্মো খুড়িমা এসে নাক গলাচ্ছেন না। 

    একটি উদাহরণ যথেষ্ট হবে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার নির্দেশকের দায়িত্ব নিয়ে বম্বের পাট চুকিয়ে দিল্লিতে উঠে এসেছেন ইব্রাহিম আলকাজি। স্ত্রী রোশন, কন্যা অমল আর পুত্র ফয়জলকে রেখে এসেছেন বম্বের ফ্ল্যাটে। দিল্লিতে এসেই নিজামুদ্দিন মহল্লায় ডেরা বাঁধলেন উমা আনন্দের সঙ্গে। এর এক বছরের মাথায়— অমল-ফয়জল যখন দিল্লিতে দেওয়ালির ছুটি কাটাচ্ছেন, তাদের বম্বে ফিরতে দিচ্ছেন না ইব্রাহিম, একদিন রাতে সুটকেস হাতে রোশন এলেন সেখানে। তিন ঘণ্টার জন্য শোবার ঘরের দরজা বন্ধ হল। তাতে রইলেন ইব্রাহিম, রোশন, উমা। ঘরের বাইরে দুই ভাইবোন। ‘সেদিন রাতে আমরাই ছিলাম পৃথিবীর সবচাইতে নিঃসঙ্গ ছেলেমেয়ে। পাশের ঘরেই যে আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ চলছে তা আমরা জানতুম। এও জানতুম যে তাতে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। শুধু জানতুম যে, আমাদের জীবন আর আগের মতো রইল না।’ বিবাহবিচ্ছেদের এত সহজ অথচ এত সংবেদনশীল বিবরণ আমরা পড়িনি। এর পরেও তিরিশ বছর ধরে ইব্রাহিমের সব নাটকের পরিচ্ছদ পরিকল্পনা করেছেন রোশন। সেইসব পোশাক কীভাবে অঙ্গে ধারণ করতে হবে তা ধরে-ধরে শিখিয়েছেন মনোহর সিং-নাসিরউদ্দিন শাহ-রতন থিয়ামদের। রবিবার দুপুরের আড়াই ঘণ্টার পারিবারিক পুনর্মিলনে ইব্রাহিমের আনা অতিথি-অভ্যাগতদের (তাঁদের মধ্যে বাদল সরকারও ছিলেন) খোলা মনে আপ্যায়ন করেছেন। ক্রমে আর্ট কিউরেটর হিসেবে নাম করেছেন। বাবাকে কাছে না-পাওয়ার শূন্যতা ফয়জলকে মায়ের কথা বেশি করে লিখতে বাধ্য করেছে। তা বলে বম্বে-দিল্লির বুকে নয়া থিয়েটারের বনেদ গড়ায় ইব্রাহিম আলকাজির অতিকায় অবদানের কথা যে অনুপুঙ্খে বিবৃত করেছেন তিনি, বুঝি আর কেউ এমনটি পারবেন না। এ-যাত্রায় প্রতি পদে-পদে দিদি অমলের হাত ধরে রেখেছেন ফয়জল। ফলে বয়ানটি একক নয়, এক ধরনের যৌথতা অর্জন করেছে।

    ‘ম্যাকবেথ’-এর নামভূমিকায় ইব্রাহিম আলকাজি

    এ-বয়ানের আরেক প্রসাদগুণ হল বহুগামিতা। কত রকমের চরিত্র! কত রকমের প্রেক্ষাপট! এই লন্ডন, তো এই বেইরুট! এই পুনে, তো এই ম্যাড্রাস। এমনকী কলকাতাও আছে। তবে পটভূমি হিসেবে নয়, ফয়জলের যৌবনকালের প্রিয় প্রকাশনা ‘জুনিয়র স্টেটসম্যান’-এর আঁতুড়ঘর হিসেবে, জাগ সুরাইয়া-শশী থারুরদের আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে! ইন্ডিয়ান ইংলিশের প্রথম কুলীন প্রকাশক হিসেবে পুরুষোত্তম লাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ফয়জলের অকালপ্রয়াত বড়মামা ববি পদমসির কবিতার বই বেরিয়েছিল লেক গার্ডেনসে রাইটার্স ওয়ার্কশপের দফতর থেকে। এর বাইরে কলকাতার উল্লেখ নেহাতই আপতিক। শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্তর শহর হিসেবে। আর এদেশে প্রসেনিয়াম থিয়েটারের পত্তনের চলনসই একটা ছবি আঁকতে যেটুকু না বললেই নয়, সেটুকুর উপলক্ষ হিসেবে। দু-এক জায়গায় কলকাতার প্রতি অবিচারও করে ফেলেছেন ফয়জল। মোহন রাকেশের ‘আষাঢ় কা একদিন’, ‘লেহরোঁ কা রাজহংস’ বা ‘আধে আধুরে’র প্রথম প্রযোজনা হয়েছে কলকাতায়, শ্যামানন্দ জালানের নির্দেশনায়। সেসব তাঁর অবিদিত থাকার কথা নয়। প্রবল পিতৃপ্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে সব কৃতিত্ব ইব্রাহিমের ঘাড়ে ন্যস্ত করেছেন ফয়জল। 

    ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা’র ‘রাজিয়া সুলতানা’ প্রযোজনায় রোহিণী হাত্তাঙ্গাদি এবং নাসিরুদ্দিন শাহ্‌

    শব্দশিল্পী হিসেবে কুশলী ফয়জল। এই বইয়ের গোড়ার দিকে দিদিমা কুলসুম পদমসিকে এমনভাবে শব্দে-শব্দে এঁকেছেন যে, লাইভ পোর্ট্রেট বলে ভ্রম হতে পারে। আলেক পদমসির সঙ্গে পার্ল পদমসির নাটকীয় দাম্পত্য এঁকেছেন অনুরূপ অনুপুঙ্খে। চার্লস ফ্রায়ার এনড্রুজের নাতনি পার্লকে তাঁর মনে হয়েছে ওল্ড টেস্টামেন্টের পাতা থেকে উঠে আসা চরিত্র। ইব্রাহিম-আলেকের বিশ্বাসঘাতকতাই যে রোশন-পার্লকে কাছাকাছি এনে দিয়েছিল এও কবুল করেছেন ফয়জল। বইয়ের শেষদিকে নিজের শিল্পজীবন ও পারিবারিক জীবনের কথাও লিখেছেন। 

    অতিমারীর প্রথম তরঙ্গের সময় ইব্রাহিম আলকাজি প্রয়াত হন, ৯৪ বছরে পৌঁছে। ফয়জলের বয়ান শেষ হয়েছে সেখানে এসে। ২০২১ সালে বেরোনো এই ২৪৭ পাতার বই জুড়ে বাবা ইব্রাহিমের ছায়া ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে শেষটায় একটি নমস্কারে থিতু হয়েছে।

    দরিয়াগঞ্জের তরুণ প্রকাশক স্পিকিং টাইগারের বই নিয়ে আমাদের গুরুতর অভিযোগ এই যে, তাঁরা অ্যাসিড-ফ্রি কাগজে বই ছাপেন না। ফলে দু-এক বছরের মধ্যে বইয়ের পাতা হলদে হয়ে যায়। এবারেও তাই হতে চলেছে। তবে ফোটোগ্রাফের রিপ্রোডাকশনে তাঁরা আজকাল উন্নতি করেছেন। ব্যক্তিগত সংগ্রহ আর আলকাজি ফাউন্ডেশন থেকে আহরণ করা অসংখ্য আলোকচিত্র ‘এন্টার স্টেজ রাইট’কে প্রামাণ্যগ্রন্থ করে তুলেছে— এ-কথা না বললে এই সমালোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

    Enter Stage Right: The Alkazi / Padamsee Family Memoir
    Feisal Alkazi
    Speaking Tiger, New Delhi, 2021
    248 pages, Rs. 699

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook