ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মুখঋত: পর্ব ১৫

    ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় (December 18, 2021)
     

    আড়াল থেকে ট্রোল

    নাম-করা হিন্দি ছবি। নাম-করা বাংলা ছবি। হলিউডের নাম-করা নায়ক-নায়িকা। সাউথের ‘মশলাদার’ ছবি। নায়ক এসে ভিলেনকে খুব মারল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষকে প্রেরণা দিল। সাধারণ মানুষও, নায়কের সংলাপ ও চোখ-ধাঁধানো অভিব্যক্তি দেখে দুষ্টু লোকেদের রাস্তায় ধরে বেধড়ক মারল। আবার পৃথিবীতে ‘ভাল’র রাজ্য স্থাপিত হল। স্বর্গ থেকে পুষ্পবৃষ্টি। দেবতাদের আশীর্বাদ। 

    সেসব এখন অতীত। 

    রাস্তায় রাস্তায় নায়কের আর প্ৰয়োজন নেই। কারণ নায়ক এখন ঘরে ঘরে। মশলাদার সিনেমার নয়, ভিন্ন স্বাদের। এই নায়কদের কোনো কাজ নেই, শুধু একটাই মহৎ উদ্দেশ্য— ট্রোল করা। অর্থাৎ চাই শুধু একটি মোবাইল ফোন এবং তাতে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার অবারিত দ্বার। ব্যাস, নায়কেরা লেগে পড়বেন কুৎসিত মন্তব্য, সারা পৃথিবীর সমস্ত (অসংগৃহীত) জ্ঞান, খারাপ ভাষায় কথা, বুদ্ধিহীন প্রলাপ ও বাজে তর্ক নিয়ে। নতুন যুগের নতুন আলোয়, এই শতাব্দীর নবজাগরণের মুহূর্তে, এই ধরনের ঠাট্টা, অপমান, শ্লাঘা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, যৌন ঈর্ষা, হীনম্মন্যতা ইত্যাদিকে হাতিয়ার করে তারা নেমে পড়েছে, শত্রু চিনে, মোকাবিলা করতে। সমাজে আসবে বিপুল পরিবর্তন! ঠিক যেন বিজ্ঞাপনের পুরুষ কণ্ঠস্বর আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে: ‘এসে গেছে, এসে গেছে, এসে গেছে! আপনার ঘরে বসেই মানুষের সমস্ত ভাল, যা কিছু সুন্দর, আপনার অজানা— সব কিছু নিয়েই আপনার কুৎসিত মন্তব্যের জন্য এসে গেল এযুগের দূত— ‘ট্রোল’।

    হাতে ফোন ও দিনে এক-জিবি ইন্টারনেট পেয়ে আমরা এই ট্রোলদের পৃথিবীর নাগরিক। এই ট্রোলিং বিষয়টি নতুন, তবে এর প্রাণশক্তির উৎস আমাদেরই সভ্যতার গভীর থেকেই। গণধোলাই বা ‘মব লিঞ্চিং’-এর জন্য এমনিতেই ভারতবর্ষের বিশ্বজোড়া খ্যাতি। কোনো মানুষকে রাস্তায় পেটানো বা মারধর করা থেকে কারও বুকের ওপর লাফিয়ে তাকে হত্যা করা— আমাদের দেশের নাগরিকদের বহুমুখী প্রতিভা। বলা হয়, সমাজকল্যাণের কথা মাথায় রেখে আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে, ওই মশলাদার সিনেমার নায়কদের মতো, অপরাধীকে শাস্তি দিতেই এই মারধর। শুরু হয়েছিলো সেভাবেই, তবে গণপিটুনি সেখানে থেমে না থেকে ভারতবর্ষের সব তর্কের শেষ সমাধান হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমার ধারণা, খুব বড় নিউজ চ্যানেলের নাম করা সাংবাদিকের অনুষ্ঠানে, সাংবাদিক এবং তাঁর অতিথিরা সুযোগ পেলে এইভাবেই আলোচনা শেষ করতেন। তখন জানা যেত, ‘দ্য নেশন’ আসলে কী জানতে চায়। 

    এ যুগের গণধোলাই নতুন রূপে এল— ট্রোলিং। তবে এবার কাজটা আরও সহজ; কোনো কায়িক পরিশ্রম নেই, হাঁপানির চিন্তা নেই, পাল্টা মার খাওয়ার ভয় নেই। আড়াল থেকে ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদের মতো, মানুষকে আঘাত করার এ এক অনন্য পদ্ধতি। যারা সরাসরি আঘাত করতে সঙ্কোচ বোধ করে, তাদের ক্ষেত্রে, নিজেদের হিংসাকে চালিত করার এক অনবদ্য মাধ্যম এই নতুন রূপের গণপিটুনি। ট্রোলিং-এর সঙ্গে এক আসনে বসানো যেতে পারে গণহত্যা বা গণধর্ষণকেও। আপনি যে-কোনো দিন কোনো মহিলার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবির নীচে মানুষের মন্তব্য পড়লেই বুঝতে পারবেন, আসলে ভারতের অনেক সন্তানই সেই মহিলার সাথে যৌনতা করতে চায়, ধর্ষণ করতেও তাদের অসুবিধে নেই। কোনো ব্যক্তির শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ করে পোস্টের নিচে কমেন্ট দেখলেই বুঝতে পারবেন, ভিন্নমত পোষণ করলেই আমাদের ভারতের ভীমের ও অর্জুনের বংশধরেরা মেরে শিক্ষা দেবে। তবে সবটাই আড়াল থেকে! বিকৃতির একজিবিশন।

    সোশ্যাল মিডিয়ার নায়করা শুধুই একটি নাম, একটি ছোট ছবি ও একটি প্রোফাইল। তাই যা খুশি লিখতে পারে সেই ট্রোল-রা। মন্তব্য করতে পারে শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, মহাকাশ, নারীদের পোশাকের আদর্শ ধরন, শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য, সিনেমা বানানোর পদ্ধতির মতো বিবিধ বিষয়ে। আর মন্তব্যের সঙ্গে যখন চেপে থাকা রাগ, হিংসা, যৌন ঈর্ষা, ঘেন্না মিশে যায়, তখন পাশবিক এক আনন্দের উৎপত্তি হয়। শীঘ্রই হয়তো স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রমে দেখা যাবে এই বিষয়। ‘সহিষ্ণু’ ভারতের নতুন শিক্ষা!

    আড়াল থেকে এই বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া নায়কদের আদতে সত্যিকারের পৃথিবীতে সাহস কত, আমি জানি না। তবে ভারতের সমাজ ও রাজনীতির অন্যতম এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, সাংঘাতিক কিছু করার আগে এই নায়কদের হাত কাঁপবে কি? কিছু লেখার সময় তো হাত কাঁপে না।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook