ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ‘এনট্রপি’ এবং সময়-ঘড়ির হযবরল


    সৈকত ভট্টাচার্য (December 4, 2021)
     

    সময় নেই!’ এটা বোধহয় বঙ্গজীবনের বাঁধা বুলি। সম্পাদক আমাকে লেখার জন্য তাগাদা দিলে বলি, সময় নেই। সম্পাদক উল্টে আমায় শাসান, জলদি লেখা জমা করো— সময় নেই। এমন তো হরদম হচ্ছে! প্রশ্ন হল, সময় যে নেই, সে-সময় যায় কোথায়? মাপছেই বা কে সময়ের যাওয়া-আসা? আপনি বলতেই পারেন যে, সময় তো আর ফিরে আসে না, শুধুই যায়। আমরাও ভেসে চলি অসীম কালসাগরে। আর তাকে মাপার জন্য আছে— ঘড়ি! দেওয়াল থেকে মোবাইল, স্মার্ট ওয়াচ থেকে মহামূল্য অ্যানালগ ওয়াচ— ঘড়ি সর্বত্র। কিন্তু ঘড়ি তো নিজের মনে যন্ত্রের কারসাজিতে কাঁটা ঘুরিয়ে চলেছে। এই কাঁটা ঘোরানোর সাথে সময়ের পরিমাপটা ঠিক কীভাবে হচ্ছে? এই প্রশ্নটা পল ইরকার (Paul Erker) নামে পদার্থবিদ্যার একজন পোস্ট-গ্রাজুয়েট ছাত্রের মাথায় ২০১৩ সালের এক মনোরম সন্ধ্যায় হঠাৎ ঘাই মারল। বইপত্র ঘেঁটেঘুঁটে তার মনে হল, সব লিখেছে এই কেতাবে, দুনিয়ার সব খবরই— কিন্তু ঘড়ি কীভাবে সময়ের পরিমাপ করে, তা নিয়ে সেভাবে কেউ কিছু ভাবেনি! সুতরাং, ঘড়িকে পদার্থবিদ্যার ভাষায় সঠিক ভাবে সংজ্ঞায়িত করা দরকার। 

    অবিশ্যি ‘সময়’ নিয়ে ভাবনাচিন্তা যে একেবারে হয়নি, তা নয়। প্রোফেসর আইনস্টাইন ‘সময়’কে একটি মাত্রা হিসাবে প্রথম ভাবেন। মানে, মনে করুন আপনি আপনার বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবেন। সে আপনাকে বলল, অমুক মলের পাঁচ তলায় দেখা করব। এবার যখন সে ‘অমুক মল’ বলছে, শহরে সে-মলটির একটি নির্দিষ্ট অবস্থান আছে। আপনার মোবাইলের গুগল ম্যাপে নাম দিয়ে খুঁজলে মলের অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ অনুযায়ী সে বলে দেবে যে, আপনার বাড়ি থেকে মল কত দূরে। অর্থাৎ, বন্ধুর সাথে দেখা করার জায়গাটির x এবং y কো-অর্ডিনেটস আপনার জানা হয়ে গেল। বাকি রইল z বা উচ্চতা। ‘পঞ্চম তল’ বলে সেটাও সে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। অতএব দেখা করায় বাধা রইল না। কিন্তু দাঁড়ান, বন্ধু কিন্তু আপনাকে বলে দেয়নি একটা জিনিস— সময়। কখন দেখা হবে? সেটা যদি সে বলে দেয়, অমুক তারিখে বেলা এগারোটায় চলে আসিস— তাহলে আর চিন্তা থাকবে না। এই ‘অমুক তারিখে বেলা এগারোটা’ই হল টাইম কো-অর্ডিনেট। আর এই মাত্রাটিই আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ সূত্রের শিরদাঁড়া। কিন্তু বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ সূত্র যতই আলোর গতিবেগ, সময় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে থাকুক, সময়ের পরিমাপককে নিয়ে তার কোনও বক্তব্য নেই। শুধু আলোর গতিবেগের কাছাকাছি গতিবেগে দৌড়ালে যে আপনার কাছে সময় সঙ্কুচিত (Time dialation) হবে, সেটা বলেই খালাস হয়ে গেছে। সময়টি মাপবেন কীভাবে, সে-ব্যাপারে স্পিকটি নট!

    পল ইরকারের মাথায় এই সময় পরিমাপক নিয়েই চিন্তা ঘুরঘুর করছিল। সেটা ২০১৩ সাল। কয়েক বছর পর বার্সেলোনাতে পিএইচডি করতে তিনি এই ভাবনাকেই গবেষণার বিষয় বেছে নিলেন। সাথে যুক্ত হলেন মার্কাস হুবার (Marcus Huber) আর তাঁর দলবল। বছর পাঁচেক গবেষণার পর মার্কাস হুবার অ্যান্ড কোম্পানি একটা পুরনো তত্ত্বকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। আর তা হল, সময়ের সাথে তাপগতিবিদ্যার সম্পর্ক। বলা ভাল, সময়ের সাথে তাপগতিবিদ্যার একটি বিশেষ রাশির সম্পর্ক— যার নাম, এনট্রপি (Entropy)। 

    ক্রিস্টোফার নোলানের দৌলতে ‘এনট্রপি’ নতুন কোনও শব্দ নয়। এনট্রপির সংজ্ঞা আমরা পাই, তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র থেকে। এই সূত্র বলছে যে, এ-জগতের সমস্ত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াই (natural process) অপরিবর্ত (irreversible)। জুড়িয়ে যাওয়া চা, বাতাসে ছড়িয়ে পড়া ফুলের পরাগরেণু বা জীবন থেকে মৃত্যুর কোলে মাথা রাখা প্রাণী— স্বাভাবিক ভাবে তাদের আগের দশায় ফেরত যেতে পারে না। যদি পদার্থবিদ্যার গাণিতিক সূত্রের কথা ভুলে শুধু এর দার্শনিক নির্যাসটুকুর কথাই ধরি— তাহলেও বোঝা যায় যে, এ-জগতে সমস্ত কিছুই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সামনের দিকে বয়ে চলেছে। গল্পকথায় যেমন বলে, মরণাপন্ন পুত্র আকবরকে জীবনের পারে ফিরিয়ে আনার জন্য সম্রাট হুমায়ুন নিজের জীবনের অর্ধেক জীবনীশক্তি ব্যয় করেছিলেন, ঠিক তেমনই অন্য কোনও ক্ষতিসাধন ব্যতীত আগের অবস্থায় প্রাকৃতিক নিয়মে ফেরত যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর এই ক্ষতির নামই ‘এনট্রপি’। কিন্তু ‘প্রায়’ লিখলাম কেন? রহু ধৈর্যং।

    জগতের মোট এনট্রপির পরিমাণ বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর এই এনট্রপির সাথে এগিয়ে চলেছে সময়ও। বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখলেন, সময়ের অভিমুখ আর এনট্রপির মধ্যে একটা সম্বন্ধ থাকতে বাধ্য। সময় যে এগোচ্ছে, তার প্রমাণ হল বাড়তে থাকা এনট্রপি। অথবা এনট্রপি বাড়ছে বলেই মনে করা যেতে পারে যে, সময় সামনের দিকে এগোচ্ছে। হঠাৎ একদিন সকালবেলা উঠে যদি দেখা যায় যে, সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠে এগিয়ে চলেছে পুব আকাশের দিকে— বুঝতে হবে বিস্তর গন্ডগোল। সময় যদি পিছনের দিকে চলা শুরু করে, তাহলে আমরা আজ থেকে গতকালের দিকে হাঁটব। শুধু তাই নয়, মজার ব্যাপার হবে যে, আমরা আগে (!) থেকেই জেনে যাব যে, একটু পরে (!) কী ঘটতে চলেছে— কারণ যা ঘটবে, তা আসলে ঘটে গেছে। অর্থাৎ, আমরা অনিশ্চয়তার থেকে নিশ্চয়তার পথে হাঁটব। কী অদ্ভুত, তাই না?

    এ-জগতে সমস্ত কিছুই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সামনের দিকে বয়ে চলেছে। গল্পকথায় যেমন বলে, মরণাপন্ন পুত্র আকবরকে জীবনের পারে ফিরিয়ে আনার জন্য সম্রাট হুমায়ুন নিজের জীবনের অর্ধেক জীবনীশক্তি ব্যয় করেছিলেন, ঠিক তেমনই অন্য কোনও ক্ষতিসাধন ব্যতীত আগের অবস্থায় প্রাকৃতিক নিয়মে ফেরত যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর এই ক্ষতির নামই ‘এনট্রপি’।

    এনট্রপির সাথে যে এই অনিশ্চয়তার একটা সম্পর্ক আছে, সেটা প্রথম ধারণা করেন আইবিএমের দুই গবেষক— রোলফ ল্যান্ডৌর (Rolf Landauer) এবং চার্লস বেনেথ (Charles Benneth)। তাঁরা বলেন যে, এনট্রপির সাথে ইনফর্মেশন বা তথ্যের একটা সম্বন্ধ আছে। এনট্রপি বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হল, ইনফর্মেশন হারানো বা অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে চলা। যদি আমরা সময়ের কথা ভাবি— কাল কী হবে বা একঘণ্টা পর ঠিক কী হতে পারে, তা কি আমরা নিশ্চিত ভাবে কখনওই জানতে পারি?

    সময়ের অভিমুখের সাথে এনট্রপি তথা তাপগতিবিদ্যার এই সম্পর্কের কথা তত্ত্বগত ভাবে জানা ছিল অনেকদিন ধরেই। কিন্তু তা ব্যবহার করে সময়কে কীভাবে পরিমাপ করা যেতে পারে, সে-কথা ভেবে দেখেননি কেউ। হুবারের দলবল সেটাই ভাবলেন। একটা কল্প-পরীক্ষার (Thought experiment) কথা বললেন।

    তাঁরা প্রথমে ঘড়িকে সঠিক ভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করলেন। টেবিলের উপর রাখা কাপের চা-এর ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার কথা বলেছি। সেটা একটি অপরিবর্ত প্রক্রিয়া। আমরা বলতে পারি যে, একটা নির্দিষ্ট মুহূর্ত থেকে তার পরের কোনও মুহূর্তে অন্য কোনও পরিবর্তন ছাড়াই স্বাভাবিক ভাবে বাতাসের কণার সাথে গরম চায়ের অণু-পরমাণুর তাপ আদান-প্রদানের মাধ্যমে যে চায়ের তাপমাত্রা কমে গেছে— সেটা এটাই প্রমাণ করে যে, এই দুই মুহূর্তের মধ্যে সময় সামনের দিকে এগিয়ে গেছে খানিকটা। কিন্তু এই ব্যাপারটা দিয়ে কি মাপা যায় যে সময় কতটা এগিয়েছে? না, যায় না। কারণ পরিমাপ করার জন্য আমার একটা স্কেল চাই— আর মিটার-স্কেলের মতোই সমস্ত স্কেলের একটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হল, তার একক (unit)। মিটার স্কেলে যেমন মিলিমিটারের দাগ টানা থাকে, তেমনি সময় মাপার স্কেলেও চাই অমন দাগ— যাকে আমরা বলি ‘tick’। কাপের চা ঠান্ডা হওয়ার ঘটনায় অভাব এই ‘tick’-এর।

    আমরা রোজ হাতে যে-সমস্ত ঘড়ি পরি, তাতে যে ‘tick’ বিষয়টি প্রবলভাবে বর্তমান, তা সেকেন্ডের কাঁটার দিকে নজর রাখলেই মালুম হয়। এ দিয়ে সময় কীভাবে মাপা হয়? বোঝা যাক সেটা। পদার্থবিদ্যার নজরে সমস্ত ঘড়ির দুটি ভাগ— একটিকে বলে পয়েন্টার (Pointer) আর অন্যটি হল রেজিস্টার (Register)। ঘড়ির ভিতরে সময়ের সাথে যেসব খটোমটো কলকব্জা ঘুরে চলেছে— তারাই হল পয়েন্টার। এই পয়েন্টারের কাজ হল, ব্যাটারি বা স্প্রিং থেকে শক্তি সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে রেজিস্টারকে জানান দিয়ে যাওয়া যে, সময় থেমে নেই। আর রেজিস্টার, অর্থাৎ কিনা ঘড়ির যে-ডায়াল, সে সেই সিগনাল পেলেই কাঁটাকে এক ঘর ঘুরিয়ে বলে ওঠে ‘Tick’! মানে, এই একটি সেকেন্ড যে চলে গেল, কালের খাতায় তা লিখে রাখা হল। আপনারা প্রশ্ন করতেই পারেন যে, এই সামান্য একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে এনট্রপিটা কোথায় হে?

    হক প্রশ্ন। কিন্তু ভেবে দেখুন, এই যে সেকেন্ডের কাঁটাটি নড়ে যে ‘Tick’ করল, সেটা কীভাবে করল? পয়েন্টার থেকে একমুখী একটা তথ্য রেজিস্টারে আসার জন্যই এটা সম্ভব হল। আর এই তথ্য বা ইনফর্মেশনের প্রবাহটি অপরিবর্ত। তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র বলছে, একটি অপরিবর্ত প্রক্রিয়ার মানেই হল জগতের এনট্রপি বেড়ে যাওয়া— আর এই এনট্রপির বৃদ্ধিটুকুকে আমাদের ঘড়ি একটি ‘tick’ দিয়ে জানান দিয়ে গেল। অর্থাৎ, বিগত কাল আর ফিরবে না।

    ঘড়ির ভিতরে সময়ের সাথে যেসব খটোমটো কলকব্জা ঘুরে চলেছে— তারাই হল পয়েন্টার। এই পয়েন্টারের কাজ হল, ব্যাটারি বা স্প্রিং থেকে শক্তি সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে রেজিস্টারকে জানান দিয়ে যাওয়া যে, সময় থেমে নেই। আর রেজিস্টার, অর্থাৎ কিনা ঘড়ির যে-ডায়াল, সে সেই সিগনাল পেলেই কাঁটাকে এক ঘর ঘুরিয়ে বলে ওঠে ‘Tick’!

    কিন্তু আমাদের রোজকার জীবনের ঘড়ির মধ্যে হাজারও কলকব্জা তাদের নিজেদের মর্জি-মেজাজে চলে। তাদের ভাল-খারাপ থাকার সাথে ঘড়ির টিকটিকানির সম্পর্ক একটা থেকেই যায়। তাই জন্যই ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেলে তাকে নিয়ে ছুটতে হয় সারাইখানায়। কিন্তু যদি একটা এমন সূক্ষ্ম ঘড়ির কথা ভাবা হয়, যেখানে এই সমস্ত যন্ত্রপাতির কলাকৌশল থাকবে না, বরং থাকবে শুধু নিখাদ পারমাণবিক প্রক্রিয়া— তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী সেখানে পরিবর্তন হবে এনট্রপির— আর সেই পরিবর্তনের সাথে-সাথে এই কোয়ান্টাম ব্যবস্থাটি বলে উঠবে ‘tick’!  

    মার্কাস হুবাররা এমন একটা তাপগতিবিদ্যার প্রক্রিয়া ভাবলেন। তিনটে পরমাণুকে একত্রে নিয়ে একটা কোয়ান্টাম ব্যবস্থার কথা চিন্তা করলেন তাঁরা। একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এই ত্রি-পারমাণবিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে তাপপ্রবাহ ঘটিয়ে এ থেকে নির্দিষ্ট হারে ফোটন বা আলোককণার স্রোত পাওয়া যাবে। এটা হবে এই পারমাণবিক ঘড়ির ‘পয়েন্টার’। পয়েন্টার থেকে বের হওয়া আলোককণাকে যদি একটা রেজিস্টারে ধরা যায় এবং প্রতিটা আলোককণা পাওয়ার সাথে-সাথে রেজিস্টার যদি একটা ‘tick’ ঘোষণা করে, তবে মাপা যাবে সময়ের প্রবাহ।

    তৈরি হল পৃথিবীর সবচেয়ে কর্মদক্ষ ঘড়ি। আমাদের রোজকার ঘড়ির থেকে শুরু করে এতাবধি যে-সমস্ত পারমাণবিক ঘড়ির কথা জানা হয়, সবেতেই এই ‘tick’ মাপার চক্করে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি এনার্জি বা শক্তির অপচয় হয়। কারণ ঘড়ির কলকব্জাকে চালু রাখা, ঘোরানো, এসবের জন্য দরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তির— আর এই শক্তি শুধুমাত্র সময়ের পরিবর্তনকে নথিবদ্ধ করার জন্য যে সামান্য এনট্রপির প্রয়োজন, তার তুলনায় অনেক গুণ বেশি এনট্রপির জন্ম দিয়ে চলে। তুলনায় এই নতুন ঘড়ি তাপগতিবিদ্যার স্বাভাবিক নিয়মে নির্দিষ্ট হারে জন্ম দিয়ে যাবে আলোককণার। ঠিক যতটুকু এনট্রপি না হলে পয়েন্টার থেকে রেজিস্টারে তথ্যের প্রবাহ ঘটানো যাবে না, ততটুকুই বৃদ্ধি পাবে এই প্রক্রিয়ায়।

    এই বছরই পল এরকার, মার্কাস হুবার এবং তাঁদের দলবল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সহায়তায় এই পারমাণবিক ঘড়িটি সাফল্যের সাথে পরীক্ষা করেছেন। মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে সে-কথা ফলাও করে প্রকাশও হয়েছে। 

    সময়ের পরিমাপ নিয়ে নাহয় অনেক কথাই হল। জন্ম হল একটা সম্পূর্ণ নতুন ধরণের পারমাণবিক ঘড়ির। তার সাথে পদার্থবিদ্যার অনেক নতুন প্রশ্নের জন্মও হল। সেসবও নিশ্চয়ই খুঁজে পাবে উত্তরের পথ। দাঁড়ি টানার আগে মাঝে এক জায়গায় ‘প্রায় অসম্ভব’ বলে রহস্য করেছিলাম, সে-উত্তরটা এই বেলা দিয়ে রাখি। তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রর মজা হল যে, এটা একটা সম্ভাবনার সূত্র। অর্থাৎ এই জগতের এনট্রপি যে সেই বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে এখন অবধি প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, সে-কথা বলে— কিন্তু বুক ঠুকে একশো শতাংশ নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারে না যে, ভবিষ্যতেও প্রতি পলে তা বাড়তে থাকবে— আমরা ক্রমশ নিশ্চয়তা থেকে অনিশ্চয়তার পথে হাঁটব— হারাতে থাকব ইনফর্মেশন। বরং ছেড়ে রেখেছে একটা অতি ক্ষুদ্র— কয়েক লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগের সম্ভাবনা যে, এনট্রপি কমেও যেতে পারে। অর্থাৎ আমরা হয়তো ক্ষণেকের জন্য একটু নিশ্চয়তার সন্ধান পেতে পারি— সময় থমকে গিয়ে ‘পিছে মুড়’ বলতে পারে। এমনটা হলে অবিশ্যি উধো-বুধোর মতো আমরাও চল্লিশের পর থেকে বয়সটা ঘুরিয়ে দিতেই পারি। তাহলে আর সত্তর-আশি বছরের বুড়ো হয়ে মরতে হয় না! তাই না?

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook