ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ৪১

    বিমল মিত্র (December 10, 2021)
     

    পর্ব ৪০

    কিন্তু আজ যে আমি গুরু দত্তের কথা লিখছি, তাই-ই বা কজন মানুষের কপালে জুটে যায়? আর আমারই বা অমন করে ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ হত কি করে, যদি না আমি ‘সাহেব বিবি গোলাম’ লিখতাম?

    যা হোক সেদিন সেই পাণ্ডুলিপি পড়তে পড়তে কখন যে রাত হয়ে গেছে, তার খেয়াল ছিল না। তখন স্টুডিও ফাঁকা, সবাই বাড়ি চলে গেছে। হঠাৎ ঘড়ির দিকে নজর পড়তেই চমকে উঠল গুরু, নটা বাজতে আর আধঘন্টা মাত্র বাকি। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল গুরু। রতনও উঠল। নিজের গাড়িতে উঠে স্টিয়ারিং ধরল। বান্দ্রা থেকে চার্চগেট। রাস্তা কম নয়, পাক্কা এক ঘণ্টার পথ। কিন্তু যখন গুরুর হাতে স্টিয়ারিং আর পায়ে অ্যাক্সিলারেটর, তখন এক ঘন্টার পথ আধ ঘন্টাতেই পার হয়ে যাবে।

    তা সত্যিই তাই হল।

    যখন ‘ইরোজ’ সিনেমার সামনে গিয়ে পৌঁছুল গুরু, তখন ঠিক কাঁটায়-কাঁটায় নটা। গাড়িটা পার্ক করে দৌড়তে-দৌড়তে গিয়ে ঢুকলো সিনেমার লবিতে! কই! কোথায় ওয়াহিদা রেহমান! কোথায় সে? সেই ছোট্ট মেয়েটা, যাকে গুরু হায়দ্রাবাদ থেকে খুঁজে বার করে নিয়ে এসেছিল? কোথাও তো নেই সে! তবে কি যা ভেবেছে তা-ই সত্যি? কেউ ব্ল্যাকমেল করতে চায় তাকে? কেউ তাকে বিপদে ফেলবে বলেই ওই চিঠিটা লিখেছিল।

    সেই অতরাত্রেই আবার বেরল গুরু। বেশি দূর নয়, সান্তাক্রুজে। সেখানে গীতা যেতে পারে। তার মা-ভাই-বোন সবাই সেখানে থাকে।

    গুরু গিয়ে ডাকল— গীতা— গীতা—

    সবাই অবাক হয়ে গেছে অত রাত্রে গুরুর গলার শব্দ শুনে।

    — কে?

    গুরুর গলা তখন কাঁপছে। বললে— গীতা এখানে এসেছে?

    গুরুর চেহারা দেখে সবাই তখন ভয়ে শিউরে উঠেছে?

    — গীতা কোথায় গেল? আমার বাড়িতে তো সে নেই।

    — কিন্তু সে তো দুপুরে এখানে ছিল, তারপর তো চলে গেছে আবার!

    — কোথায় গেছে?

    — তা-তো জানি না—

    গুরু আর এক মুহুর্ত দাঁড়াল না। টলতে টলতে আবার গাড়ির স্টিয়ারিংটা গিয়ে ধরল। তারপর গিয়ারের একটা ঘড়-ঘড় শব্দ করে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর পুরো দমে চলতে লাগল ‘চৌধবী-কা-চাঁদ’ ছবি। লখনৌর মুসলিম সমাজের গল্প। সাদিক সাহেব পুরো দমে ছবি চালিয়ে যাচ্ছে, আর গুরু তখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওয়াহিদাকে নিয়ে।

    গীতা আছে সংসারে, কিন্তু কোথাও যেন যোগসূত্র ছিন্ন হয়ে গেছে। গুরু বাড়িতে আসে না কখনও কখনও। যদিও আসে হুইস্কি নিয়ে বসে। কথা বলবার মেজাজও থাকে না, ক্ষমতাও থাকে না। বাড়িতে এসেই বিছানায় গিয়ে গড়িয়ে পড়ে। তারপর ঘুমোবার চেষ্টা করে।

    গীতা একবার পাশ ফিরে দেখে। কোনও সাড়া-শব্দ নেই মানুষটার। ‘

    সকাল বেলা উঠে জিজ্ঞাসা করে— আমার ওপর রাগ করেছ?

    গুরু বলে— না, আমি এবারে আমার চরিত্র খারাপ করছি—

    —তার মানে? 

    যখন ‘ইরোজ’ সিনেমার সামনে গিয়ে পৌঁছুল গুরু, তখন ঠিক কাঁটায়-কাঁটায় নটা। গাড়িটা পার্ক করে দৌড়তে-দৌড়তে গিয়ে ঢুকলো সিনেমার লবিতে! কই! কোথায় ওয়াহিদা রেহমান! কোথায় সে? সেই ছোট্ট মেয়েটা, যাকে গুরু হায়দ্রাবাদ থেকে খুঁজে বার করে নিয়ে এসেছিল? কোথাও তো নেই সে! তবে কি যা ভেবেছে তা-ই সত্যি? কেউ ব্ল্যাকমেল করতে চায় তাকে? কেউ তাকে বিপদে ফেলবে বলেই ওই চিঠিটা লিখেছিল।

    —তার মানে তুমি আমাকে পরীক্ষা করেছিলে তো? ওয়াহিদার নামে জাল চিঠি দিয়ে ভেবেছিলে আমি জানতে পারব না। তুমি জানতে চেয়েছিলে আমার চরিত্র খারাপ কি না? তা চরিত্রটা খারাপ করবারই চেষ্টা করছি। এখন থেকে আরো বেশি মদ খাবো আরো বেশি মিশব ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে—

    —তাকে কি বিয়ে করবে?

    —যদি করি তো তুমি কি করবে?

    —তার আগে তো ডাইভোর্স নিতে হবে আমার সঙ্গে—

    —তুমি ডাইভোর্স দেবে?

    —যদি না দিই?

    গুরু দত্ত একটু চুপ করে রইল! তারপর বলে— যদি ডাইভোর্স না দাও তো আমাকে আরও পাবে না। আমাকে পেয়েও হারাবে। সেই আমাকে পেয়ে কি তুমি সুখী হবে?

    —তা হলে কি তুমি আমার সঙ্গে কথাও বলবে না?

    —মাতাল-দুশ্চরিত্রের সঙ্গে কথা বলতে যদি আনন্দও পাও, তো তাই নিয়েই সুখী হয়ো—

    গীতা এবার আর জবাব দিলে না। গুরু গাড়ি নিয়ে যথারীতি স্টুডিওতে চলে গেল। সেখানে গিয়েই দেখে সূর্য লাডিয়া এসে হাজির।  

    সূর্য লাডিয়া বললে—‘সাহেব বিবি গোলাম’ করবে না তুমি?

    গুরু বললে— এই ‘চৌধবী-কা-চাঁদ’ শেষ করবার পরেই শুরু করব—

    —কিন্তু তার আগে তো পেপার্স তৈরি করতে হবে—

    —তা বিমলবাবুকে কি এখানে আনতে পারবে? তাহলে এখানেই কনট্রাক্টটা সই করিয়ে ফেলব—

    —তাহলে ট্রাঙ্ককল করব?

    —করো—

    সূর্য লাডিয়া টেলিফোন তুলে ধরল। গুরু আবার তলিয়ে গেল নিজের মনে ভেতর। ছিবি আর জীবন। নিজের বাড়ি একদিকে আর একদিকে নিজের স্টুডিও মানেই গুরুর জীবন। সেই জীবনেই যখন তার ঘুণ ধরেছে, তখন ‘সাহেব বিবি গোলাম’ করেই সে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে দেবে। মদ যখন খাবে তখন ভালো করে প্রকাশ্যেই খাবে।

    মদ খাওয়ার মর্মান্তিক পরিণতিই দেখিয়ে সে জীবন শেষ করবে!

    —হ্যালো— সূর্য লাডিয়া তখন কলকাতার কল পেয়ে গেছে।  

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook