হতে পারে ক্লিশে
ভোপালের এক ৫৫ বছরের লোক তার মেয়েকে খুন করল বেজাতের ছেলে বিয়ে করার অপরাধে, সে নতুন কিছু নয়, মহান ভারত অনন্ত অনার কিলিং-এর দেশ। জঙ্গলে যুবতীর বডির পাশেই পাওয়া গেল তার খুদে বাচ্চারও মৃতদেহ, সে-ও আশ্চর্য ঘনঘটা নয়, কারণ শিশুটি তো ভিনজাতের দুই মানুষের ‘অপবিত্র’ মিলনের ফল, তাছাড়া ক্রোধের একটা গতিময়তা আছে তো রে বাবা। কিন্তু মূল চমকপ্রদ ব্যাপারটা হল, বাবা খুন করার আগে মেয়েকে ধর্ষণও করেছিল। গোটা ঘটনার সময় মেয়েটির দাদা পাহারা দিচ্ছিল, কিন্তু বাবার সিদ্ধান্তের প্রতি ছেলের সমর্থন (হয়তো বাড়ির অন্য লোকেরও অনুমোদন) পেরিয়ে, আঁতকা-বিষয় এই বাড়তি হিংস্রতা। বাবা যদি রক্ষণশীল ধারণাসমষ্টির দাস হয়, তবে তো মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তার কাছে চূড়ান্ত পাপ। যে মনে করে অন্য জাতের লোককে বিয়ে মানে বাঁচারই অধিকার হারানো, সে ইনসেস্টের মতো টনকো ট্যাবু পেরিয়ে অশ্লীল শরীরকে নিজের কন্যার শরীরে সেঁধিয়ে দিল? না কি সে চিরকালই মেয়ের প্রতি লোভ পুষে চলছিল এবং আক্রোশের হড়পা বানের তলায় সুযোগ বুঝে অজাচারও চালান করে দেওয়া তার দুরন্ত স্ট্র্যাটেজি? অথবা শাস্তিটাকে সে করে তুলতে চাইল অভিনব, ভারতীয় খাপ-পঞ্চা-মানদণ্ডের নিরিখেও স্পেশাল শোধপরায়ণ? যেন মেয়েটির পক্ষে তা হয় সর্বাধিক অসহনীয়, যেন সে মরে যাওয়ার আগে নিজ জীবনের দিকে তাকিয়ে ওয়াক তোলে? তার যখন বিস্ময়ে অবিশ্বাসে চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে কারণ নিজের বাবা তার উপর লিঙ্গ-চড়াও হচ্ছে এবং নিজের দাদা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে, তখন তার মনে মূল আবেগ কি ছিল, উচ্চণ্ড ভয় না হাকুশ হৃদি-ঘিনঘিন? নিজের শরীরটাকে কি তার মনে হয়েছিল শতনোংরা থুকদানি, নিজের ভাগ্যটাকে ঢ্যাবলা পাঁকগাদা, আর পৃথিবীটাকে বাবার শিশ্নের মতো: দুর্গন্ধী, গনগনে, অন্ধ-জল্লাদ ও নাগাড়ে প্রহারধর্মী? হয়তো বাবা আগে থেকে ব্লুপ্রিন্ট ঠিক করে যায়নি, কিন্তু খুন করার আগে তার মাথায় হঠাৎ ঝিলিক দিয়ে যায় এই প্রজাতির নারী-সদস্যের প্রতি পুরুষ-সদস্য কর্তৃক এক অনবদ্য অবমাননার পদ্ধতি, এবং একজন পুং-প্রতিনিধি হিসেবেই সে অস্ত্রটি প্রয়োগ করে। নিজ সন্তানের বিরুদ্ধে নয়, অবাধ্য সদস্যের প্রতি ইহা সমাজ-রক্ষকের ছোবল।
এদিকে চিন-এ, এক সময়ের মহিলা-টেনিসের ডাবলসে এক নম্বর খেলোয়াড় পেং শুয়াই নিখোঁজ। তিনি কিছুদিন আগে চিনা সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবো-তে এক পোস্টে অভিযোগ জানান খুব প্রভাবশালী এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। লোকটি এখন অবসর নিয়েছেন, কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০১৮ অবধি ছিলেন চিনের ভাইস-প্রিমিয়ার, এবং তিনি চিনের সর্বময় কর্তা শি চিনফিং-এর খুব ঘনিষ্ঠও বটে। এঁর নাম ঝাং গাওলি। পেং বলেন, ঝাং তাঁকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন। পেং-এর সেই পোস্ট তো মুছে দেওয়া হয়েছেই, সামাজিক মাধ্যম থেকে পেং-এ সমস্ত উল্লেখও উবে গেছে, এবং তাঁকে আর খুঁজে পাওয়াও যাচ্ছে না। এখন জকোভিচ থেকে নেওমি ওসাকা অবধি বহু বিখ্যাত টেনিস প্লেয়ার জিজ্ঞেস করছেন, পেং কোথায়? গতকাল উইমেন’স টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে একটা ই-মেল এসেছে, তাতে পেং লিখেছেন তিনি নিরাপদে আছেন, আর তাঁর অভিযোগগুলো সব মিথ্যে। এতে প্রায় সবাই নিশ্চিত হয়েছেন, পেং আদৌ নিরাপদে নেই। প্রশ্ন বাড়ছে। তাতে চিনের অবশ্য কিছু এসে-যাওয়ার কথা নয়। গোটা পাশ্চাত্য বলছে এই দ্যাখো দ্যাখো চিন উইঘুর মুসলিমদের অত্যাচার-ক্যাম্পে বন্দি করে রাখছে (এবং সেখানে নারীদের ধর্ষণ নিয়মিত), আর চিন তা পুরোপুরি অস্বীকার করে সমানে জানাচ্ছে, ধুর, সমস্ত ভুয়ো রটনা, অমন ক্যাম্পের অস্তিত্বই নেই। এও মনে রাখতে হবে, গত বুধবারেই ঘোষণা করা হয়েছে, চিনই এখন বিশ্বের ধনীতম দেশ, আমেরিকাকে পেরিয়ে। আর সোমবারে প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টার অনলাইন বৈঠকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বাইডেন চিনের রাষ্ট্রপতি শি চিনফিং-কে জানিয়েছেন, ‘আপনারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান নেতৃস্থানীয় দেশ এবং আমরাও তা-ই’— সকলেই লক্ষ করেছেন বাক্যটা ‘আমরা বিশ্বের অন্যতম প্রধান নেতৃস্থানীয় দেশ এবং আপনারাও তা-ই’ নয়। আমেরিকা যারে দেখে ঢোক গেলে, সে তবে ক’মাইল লম্বা ড্রাগন! সেই প্রকাণ্ড মদগর্বী ও ঘ্যামা-চর্বি চিনের এক প্রবল ক্ষমতাধর পুরুষকে যৌন অপরাধে অভিযুক্ত করা, পেং-এর সেই পোস্টের ভাষাতেই, ‘আগুনের বিরুদ্ধে মথ-এর সংগ্রাম, যা তার আত্মধ্বংসই ডেকে আনবে’। চিনে মিটু আন্দোলন খুব একটা রাষ্ট্র-পাত্তা পায়নি, সে-দেশের আদালত এসব মামলা নিতে চায় না, আর নিলেও বলে, আচ্ছা, উনি যে আপনার বুকে হাত দিয়েছিলেন, তার ভিডিও রেকর্ডিং কই? যাক্কলা, ভিডিও রেকর্ডিং হচ্ছে জানলে লোকটা বুকে হাত দেবে কেন? এর আগে একটা মিটু-মামলা চলেছে প্রায় তিন বছর ধরে, তা অনুযায়ী, ২০১৪ সালে এক বিখ্যাত টিভি সঞ্চালক তাঁর ইন্টার্নকে যৌন নিগ্রহ করেন প্রায় ৫০ মিনিট ধরে। পরেরদিন ইন্টার্ন পুলিশে অভিযোগ জানালে তারা বলে, করছেন কী! এই সঞ্চালক ‘পজিটিভ এনার্জির জাতীয় উদাহরণ’, এমন হাই-প্রোফাইল লোকের নামে কালি ছেটানো যাবে না। ২০১৮-য় মহিলা সাহস করে অনলাইন একটা দীর্ঘ পোস্ট করেন, তারপর খুব হইচই হয়। কিন্তু এই সেপ্টেম্বরে আদালত মামলাটা খারিজ করেছে, বলেছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। উল্টে ওই সঞ্চালক মানহানির মোকদ্দমা করেছেন, সেই খাঁড়া মহিলার মাথার উপর ঝুলছে। হারলে এক লক্ষ ডলার দিতে হবে, পাবেন কোথায়? চিনে এইজন্যই অধিকাংশ মহিলা এসব ব্যাপারে এগিয়ে আসেন না, সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট হাটিয়ে একা বিচ্ছিন্ন নির্বাসিত তো করে দেওয়া হবেই, ধনেপ্রাণে সর্বনাশ ঘটবে। বিখ্যাত ব্যাবসায়িক সংস্থা আলিবাবার এক কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে তদন্ত-শেষে বলা হয়, লোকটি নির্দোষ, তবে তার ১৫ দিনের শাস্তি হবে। হযবরল চিনা ভাষায় অনুবাদের প্রয়োজন নেই, দেখা যাচ্ছে। চিনের স্ব-বুলি খুব সহজ: এইসব প্রচার পশ্চিমের চক্রান্ত। নিন্দে ও অভিযোগমাত্রেই আসলে ষড়যন্ত্র বা দ্রোহ: বাতলে নিলে আত্মপক্ষ সমর্থন বা আত্মসংশোধনের সকল দায় থেকে এক সেকেন্ডে ছাড় পাওয়া যায় (যেমনটা বীর দাসের ছ’মিনিটের মোনোলগ বিষয়ে কঙ্গনা রানাওয়াতরা পাচ্ছেন, কারণ তাঁরা তো জানেনই, যে-লোক ভারতীয় হয়ে ভারতের সমালোচনা করে সে-ই ‘সফট টেররিস্ট’), আর তাতে তৈরি হয় একপিস একবগ্গা একছাঁদী স্বেচ্ছা-কানা রাষ্ট্র, যা মানবাধিকার বোঝে না, ভদ্রতা-সভ্যতা বোঝে না, বোঝে শুধু পেশিফাঁপু আস্ফালন।
এর মধ্যে বিখ্যাত ব্রিটিশ সাহিত্যিক জেডি স্মিথ লিখে ফেললেন একটা নাটক, চসারের ক্যান্টারবারি টেলস-এর অংশ থেকে (যেখানে ‘ওয়াইফ অফ বাথ’ গোড়াতেই জানাচ্ছেন তিনি পাঁচ-পাঁচটা বিয়ে করেছেন এবং শোনাচ্ছেন কীভাবে যৌন ক্ষমতা হাঁকড়ে তিনি স্বামীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন, বিছানায় তাদের ব্ল্যাকমেল করতেন: পূর্ণ সন্তুষ্টি দেব না যদি টাকা না দাও, মিথ্যে বলেও তাদের কাছ থেকে বহু উপঢৌকন আদায় করেছেন, এবং এইসবই বলছেন রসিয়ে ও দর্পভরে, অর্থাৎ যা সমাজে দিব্যি ঘৃণিত তা নিয়েই তিনি ‘বেশ করেছি’ মর্মে স্ফীত)। নাটকের নাম ‘ওয়াইফ অফ উইলসডেন’, সেটা জামাইকায় জন্মানো এক ব্রিটিশ মহিলাকে কেন্দ্র করে লেখা, যিনি এখন মধ্য-পঞ্চাশে, অনেকবার বিয়ে করেছেন। নাট্যে বোনা অনেক কিছু, এ সমাজের নারীবিদ্বেষ, নারীদের যৌন স্বাধীনতার প্রতি পুরুষশাসিত সমাজের দুয়ো দেওয়ার অভ্যাস, গার্হস্থ্য হিংসা। চসারের লেখার মতোই, নাটকের কথাগুলো খুব নরম নয়, বিনীতও নয়, খটাস খটাস বাজবে। জেডি বলেছেন, অনুবাদ করতে গিয়ে ভাবছিলাম, এই রে, এভাবে কি বলা যাবে? তারপর মনে হল, ৬০০ বছর আগে যখন বলা গেছে, তখন যদি লোকে নিতে পারে, এখন পারবে না? (কীসের ভিত্তিতে তাঁর মনে হল ৬০০ বছর আগের মানুষের তুলনায় এখনকার মানুষ অধিক বুঝদার ও সহিষ্ণু, কে জানে! সম্ভবত তখন মানুষের শিল্পের প্রতি খরদাঁত এবং পলিটিকাল কারেক্টনেসের দায় সবটাই অনেক কম ছিল, উল্লাস ছিল অধিক সৎ ও আকাঁড়া, প্রত্যাখ্যানও ছিল স্ট্রেট ও ভনিতাহীন)। জেডির মতে, নাটকটা খুবই বেপরোয়া, যৌনতা নিয়ে গুচ্ছের কুণ্ঠাহীন মোটা দাগের সংলাপে ভরভরন্ত। কৃষ্ণাঙ্গী নায়িকা, হয়তো বর্ণবিদ্বেষ-শ্রেণিবিদ্বেষ নিয়েও বহু খোঁচা ও অন্তর্দৃষ্টি থাকবে। বোঝাই যাচ্ছে, এ হবে আধুনিক বিশ্বে নারীর আদত ও শ্রেয় অবস্থান, নারীর ও পুরুষের ক্ষমতা, কামনা ও স্বেচ্ছা-হাতকড়া দাঁড়িপাল্লায় দোল-দোলানো কড়কছাপ কমেডি।
আর নিউ ইয়র্কে সদেবি’জ-এ নিলামে ফ্রিডা কাহলো-র আঁকা ছবি ‘দিয়েগো অ্যান্ড আই’ বিক্রি হল রেকর্ড দামে, অদ্যাবধি কোনও লাতিন-আমেরিকান শিল্পীর ছবি এত দাম পায়নি, অ্যাদ্দিন রেকর্ড ছিল ফ্রিডার স্বামী দিয়েগো রিভেরা’রই একটা ছবির, কিন্তু এ যেন মহাকাল এসে স্ত্রীকে জিতিয়ে দিয়ে গেলেন (মানে, এখনও অবধি, আবার ১০ বছর বাদে দিয়েগো ফ্রিডাকে টেক্কা দেবেন না, তা কে জানে?) নারীর জয়, নির্ঘাৎ, তবে ছবিটিতে আঁকা রয়েছে ফ্রিডার নিজের প্রতিকৃতি, আর জোড়া-ভুরুর উপরে, ললাটে, দিয়েগোর মুখ, যেন সর্বক্ষণ ফ্রিডার মনশ্চক্ষে তাঁরই ফ্রিজ শট, ফ্রিডার চর্মচক্ষু দিয়ে অশ্রু ঝরছে, হয়তো তিনি বিচ্ছেদের ভয়ে পীড়িত। দিয়েগোরও একটি তৃতীয় নেত্র আছে, কে জানে তাতে কী উদ্ভাসিত, বা কে। তাঁদের বিয়ে খুব অন্যরকম ছিল, দুজনেরই বহু সম্পর্ক ঘটেছে বিয়ের পর, একবার ডিভোর্সও হয়েছিল, পরের বছরই ফের তাঁরা বিয়ে করে নেন। বয়সের পার্থক্য ২১ বছরের, কিন্তু ফ্রিডাও ছিলেন দিয়েগোর জায়া জননী ও কন্যা, দিয়েগো ছিলেন ফ্রিডার প্রেমিক পিতা ও সন্তান। দুজন দুজনের প্রতিভাকে লালন করেছেন অক্লান্ত। দিয়েগোর বহু ম্যুরালে ফ্রিডার মুখ, ফ্রিডার বহু ক্যানভাসে দিয়েগো। চসারের সেই লিঙ্গ-আধিপত্যের কেরামতির নামতা এখানে কিঞ্চিৎ থতমত। দিয়েগো বলেছিলেন ফ্রিডার আগে ক্যানভাসে কেউ এভাবে বেদনার কাব্য লেখেননি। ঠিকই, ফ্রিডার অনবরত ও মৌলিক আত্ম-উন্মোচন, প্রায় ডাইরি-বিবৃতি, বিশ্বের চিত্র-ইতিহাসে উজ্জ্বল ও থরথরে অধ্যায়।
কিন্তু ক্লিশে-কটাস প্রশ্ন হল, তাতে কী? লন্ডনে এক ৪৬ বছরের নারী নাটক লিখছেন নারীর যৌন স্পর্ধা নিয়ে, নিউ ইয়র্কে এক নারীর ১৯৪৯-এ আঁকা দুর্দান্ত স্বতন্ত্র ছবি উন্মত্তের মতো টাকা আদায় করছে, ‘জয় নারী’ মার্কা বহু টক-শো লেখালিখি মনতুষ্টি ঘটবে, কিন্তু তাতে কি এক-কণা স্বচ্ছন্দ হবে ফুটপাথের সেই কিশোরীর জীবন, যাকে আজও ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্তনে নিতে হবে মস্তান-দাদার নেকড়ে-নিংড়ানি? সংস্কৃতির জগতে অসামান্য সব সৃষ্টির গতায়াত অনেকের জীবনে বেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা, অনেকের চিন্তাতরঙ্গকে তা উদ্দীপিত বা পরিবর্তিতও রাখে কখনও দু’মিনিট কখনও সাড়ে তিন মিনিট, ক্ষেত্রবিশেষে বহুৎ বছর, হ্যাঁ এইসব স্বাদ ক্বচিৎ দেয় অমৃত-তৃপ্তি, কিন্তু চিনের যে-মেয়েটির ব্যক্তিগত জীবন ও কেরিয়ার তছনছ হল জাঁহাবাজ ও বিবেকের-চামড়াহীন পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে, এই ছবি বা এই নাটক তাকে ঘিরে কোন বর্ম রচনা করবে? কোন মিছিলটা গজিয়ে তুলবে তার ভৌগোলিক গলিতে? শিল্প আনবে চেতনা, চেতনা আনবে বিপ্লব? কবে বাবু, বেস্পতিবার? এই আসছে, এট্টু বাথরুম গেছে? ফ্রিডা বা জেডি, সবাই প্রণম্য স্মরণীয় ও ঝুঁকে পড়ে অনুধাবনীয়, কিন্তু ভারতের একটা জঙ্গলে রাতদুপুরে সন্তানের কঙ্কালের পাশে এলিয়ে পড়ে থাকা, পচা-গলা নারীর করোটি এঁদের (ও অন্য আরও বহু চিরজ্যোতির্ময়ের) শিল্পগুলোর দিকে এক নির্ভেজাল খ্যাঁকখ্যাঁক ছুড়ে দেয়, ক্রমাগত। নাটক চলুক, ছবি হোক, নিলাম ও পুরস্কার অকাতরে ঘটুক, কিন্তু অফিসার হাততালির হাতেই কপাৎ পাকড়ে নেবে অনিচ্ছুক কর্মচারীর কোমল কুঁচকি, আর বাথরুমের জমাদারের লোভ ও কর্মসূচি তো শর্তহীন নির্লজ্জ। এই গ্রহের পুরুষের এক মুষ্টিতে থাকে আর্তনাদকারী নারীর চুল, অন্য হাতের সিগারেট ফেলে সে পায়ে দলে দেয়, সম্মুখস্থ জঙ্গলে টেনে নিয়ে অমনই পিষে নারীটিকে নিভিয়ে দেবে বলে। সে-নারীর উদ্ধার হবে হয়তো কখনও, জানি না কে করবে, রাজনীতি, না সদিচ্ছাময় প্রশাসন, না অত্যাশ্চর্য গণজাগরণ। কিন্তু শিল্প তাতে সুতোর মতো একটি শিখা-সংযোজনও করতে পারবে বলে বিশ্বাস হয় না।