ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • দেহাংশ উপাসনা

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (November 12, 2021)
     

    কোনও সাত্ত্বিক বা পবিত্র ব্যক্তির দেহের অংশের সাথে সংশ্লিষ্ট হলে এক একটি স্থান পবিত্র হয়ে ওঠে, এ বিশ্বাস হিন্দু এবং বৌদ্ধ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যেই পাওয়া যায়। আগে বৌদ্ধদের কাহিনীটি দেখে নেওয়া যাক।

    বলা হয়, বুদ্ধের মৃত্যের পরে তাঁর দেহটিকে দাহ করা হয়, এবং দাহ করার পর তাঁর ভস্ম পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো শাক্য জাতির কাছে, যে জাতির কুলে তাঁর জন্ম। কিন্তু এই সময়ে গাঙ্গেয় উপত্যকার সাত রাজা কুশিনগর আক্রমণ করে বসেন, যে শহরে তাঁকে দাহ করা হয়েছিল। এই রাজাদের দাবি, ওই পবিত্র ভস্মের ভাগ তাঁদের দিতে হবে। শহরটিকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেন তাঁরা, দিতে থাকেন এক মহাযুদ্ধের হুমকি। অবশেষে দ্রৌণ নামে এক ঋষি বুদ্ধের ভস্মকে আটটি সিন্দুকে ভাগ করে সেই সিন্দুকগুলি এই রাজাদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দেন। রাজারা সেই সিন্দুকগুলো নিয়ে স্ব স্ব রাজ্যে ফিরে গিয়ে পবিত্র সৌধে সেগুলোকে সমাধিস্থ করেন। এই সৌধের থেকেই স্তুপ জিনিসটির উৎপত্তি। স্তুপের ভিতর মূলত রাখা থাকে ভগবান বুদ্ধের দেহাংশ; কোথাও হাড়ের টুকরো, কোথাও দাঁত, কোথাও চুল বা কোথাও ভস্ম।

    আমরা শুনতে পাই, বুদ্ধের জীবনের প্রায় দু’শো বছর পরে অশোকের যুগে তিনি এইসব দেহাংশ পুনরাবিষ্কার করেন, এবং সেগুলিকে ৮৪,০০০ ভাগে ভাগ করে গোটা উপমহাদেশে, এমনকী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও, বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান। এ কারণেই আজকের দিনেও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আমরা বুদ্ধের দেহাংশের সন্ধান পাই। একটি মঠ বা বিহারে যতগুলো দেহাংশ আছে, সেই জায়গাটির আধ্যাত্মিক শক্তি তত বেশি, এই বিশ্বাসের কথা আমরা পাই বুদ্ধঘোষের যুগে, যিনি বুদ্ধের প্রায় হাজার বছর পরের মানুষ। মায়ানমার, কাম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, চিন, জাপান, আফগানিস্তান এবং ইদানীং আমেরিকাতেও বুদ্ধের নানা দেহাংশের কাহিনী শোনা যায়। এমনকী এই কিংবদন্তীরও জন্ম হয়েছে, যে বহু বছর পরে সুদূর ভবিষ্যতে এই সমস্ত দেহাংশ আবার বোধগয়াতে একসাথে মিলে যাবে, সূচনা করবে পরবর্তী বুদ্ধ মৈত্রেয়র অবতারণের।

    হিন্দুধর্মে একই ধরনের একটি কাহিনী পাওয়া যায়, যদিও এই কাহিনী তৈরf হয়েছে অনেক পরে, বলা যায় বুদ্ধের কাহিনীর প্রায় এক হাজার বছর পরে। শোনা যায়, শিবের স্ত্রী সতী তাঁর বাবা দক্ষের মুখে স্বামীর তিরষ্কার শুনে চিতার আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সনাতনী পিতার সাথে অসনাতনী, সাধক সন্ন্যাসীর জীবন কাটানো স্বামীর সংঘর্ষ তিনি সহ্য করতে পারেননি, এই দুই বিপরীতধর্মী চিন্তাধারার কোনও মিলনের সম্ভাবনা তিনি দেখতে পা নি। এর ফলে উদ্রেক হয় শিবের ক্রোধের। তিনি দক্ষ প্রজাপতির মাথা কেটে ফেলেন, এবং পরে রাগ কমলে দক্ষ প্রজাপতিকে আবার বাঁচিয়ে তোলেন, এবং প্রিয়তমা স্ত্রীর দগ্ধাবশেষ কাঁধে তুলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সারা পৃথিবীতে ঘুরতে থাকেন।

    আমরা শুনতে পাই, বুদ্ধের জীবনের প্রায় দু’শো বছর পরে অশোকের যুগে তিনি এইসব দেহাংশ পুনরাবিষ্কার করেন, এবং সেগুলিকে ৮৪,০০০ ভাগে ভাগ করে গোটা উপমহাদেশে, এমনকী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও, বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান। এ কারণেই আজকের দিনেও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আমরা বুদ্ধের দেহাংশের সন্ধান পাই। একটি মঠ বা বিহারে যতগুলো দেহাংশ আছে, সেই জায়গাটির আধ্যাত্মিক শক্তি তত বেশি, এই বিশ্বাসের কথা আমরা পাই বুদ্ধঘোষের যুগে, যিনি বুদ্ধের প্রায় হাজার বছর পরের মানুষ

    ঋষিরা বুঝতে পারেন, শিবের শোকে পৃথিবী ধ্বংস হবার মুখে। অতঃপর বিশ্ব-সংসারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁরা বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করেন, তিনি যেন সতীর দেহ ছোট ছোট খণ্ডে খণ্ডিত করে ফেলেন। তাঁদের আশা ছিল, সতীর মৃতদেহ উধাও হয়ে গেলে শিবও প্রকৃতিস্থ হবেন। অতএব সতীর দেহ ছোট ছোট খণ্ডে ছিন্ন করা হয়, এবং এক একটি খণ্ড ভারতবর্ষের এক এক অংশে পতিত হয় সেখানে জন্ম দেয় এক একটি শক্তিপীঠের। এক শাস্ত্র থেকে অন্য শাস্ত্রে শক্তিপীঠের সংখ্যাটা একটু পালটে যায়, মোটামুটি ৫১ থেকে ৬৮ পীঠ রয়েছে বলে হিসেব পাওয়া যায়। যেমন শোনা যায়, পাঞ্জাবের জ্বালামুখীতে পড়েছিলো সতীর জিভ, অসমের কামাখ্যায় পড়েছিলো তাঁর যোনি, এভাবেই ভারতের অন্যান্য জায়গায় পতিত হয় তাঁর পায়ের আঙুল, হাতের আঙুল, নাভি, স্তন ইত্যাদি।

    এ সবই যে বিশ্বাসের ব্যাপার, তা বলাই বাহুল্য। তবে বুদ্ধের দেহাংশ আর সতীর দেহের খণ্ডের ছোঁয়ায় বিভিন্ন স্থানের পবিত্র হয়ে ওঠার যে কাহিনী, তার মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ্য না করে পারা যায় না। এ কাহিনীগুলো কি একে অপরের দ্বারা অনুপ্রাণিত? সবই তর্কের বিষয়!

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook