ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • লন্ডনে বাঙালির ‘চৌরঙ্গি’


    রেশম মজুমদার (Reshom Majumdar) (October 29, 2021)
     

    পাশ্চাত্য জগতে লন্ডনের মার্বল আর্চের থেকে বিখ্যাত জায়গা কমই আছে। আর সেই মার্বল আর্চের চৌরাস্তাতেই যখন দু’জন বাঙালি কলকাতার খাবারের জয়ধ্বজা ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন তো সে বিষয়ে দু’ চার কথা বলতেই হয়।

    কেবেক স্ট্রীটের “চৌরঙ্গি” হচ্ছে অঞ্জন চ্যাটার্জী এবং তাঁর শিল্পোদ্যগী বন্ধু আদিত্য ঘোষের সৃষ্টি। প্রত্যাশিতভাবেই ওঁরা ওহ! ক্যালকাটা নামটি বেছে নিতে পারতেন, কারণ কলকাতায় অঞ্জনবাবুর বাঙালি/কলকাতার রান্নার রেস্তোরাঁর চেনটি ওই নামেই বিখ্যাত। তবে লন্ডনে ওই নামে রেস্তোরাঁ খোলায় একটু মুশকিল আছে, কারণ ওই শহরে ওই নামের কপিরাইটটি নিয়ে বসে আছেন একই নামের একদা বিখ্যাত একটি আভাঁ গার্দ নাটক।

    লন্ডনের বাঙালিদের কিছু একটা নিয়ে মেতে উঠতে স্রেফ একটা অজুহাত লাগে, বিশেষ করে বছরের এই সময়টায়। তাঁদের শৈশবের খেলাধুলোর ময়দান (অন্তত আমাদের কারোর কারোর ক্ষেত্রে তাই) ছিল যে চৌরঙ্গি, মেতে ওঠার হুজুগ হিসেবে সেই চৌরঙ্গির স্মৃতিবিজড়িত একটি রেস্তোরাঁর মত আর কীই বা হতে পারে? প্রতিটি নৈশভোজের পার্টির আড্ডায়, পুজো কমিটির মিটিং-এ এখন উঠে আসছে চৌরঙ্গির প্রসঙ্গ, ঢুকে পড়ছে ফেসবুকের ভোজনরসিক গ্রুপে আর ইন্সটাগ্রামের পেজে। সবাই জানেন ঠিক কোন খাবারটা ওখানে সেরা, সবাই কাউকে না কাউকে চেনেন যাঁর সুপারিশে একটা ভাল টেবিল বুক করে নেওয়া যাবে। সত্যি বলতে, সবাই হয়ে উঠেছেন এই ব্র্যান্ডের স্বঘোষিত অভিভাবক। এ সমাজের সমবেত গর্ব এবং আনন্দের কারণ হয়ে উঠেছে চৌরঙ্গি।

    বিদেশি হোটেলের দেওয়ালে কলকাতার ঐতিহ্য

    জর্জ মাইকস তাঁর ‘হাউ টু বি এন এলিয়েন’ বইতে লিখেছিলেন,‘মূল মহাদেশীয় ইউরোপে উৎকৃষ্ট পাওয়া যায়, আর ইংল্যান্ডে পাওয়া যায় খাবার টেবিলের উৎকৃষ্ট আদব-কায়দা।’ এখন সময়টা পালটে গেছে। এ দেশে অভিবাসন নিয়ে খুবই তর্ক-বিতর্ক হয়, মানুষের নানারকম মত। তবে একটি বিষয়ে সবাই কিন্তু একমত, অভিবাসনের ফলে লন্ডনের রান্নাবান্নার অত্যন্ত উপকার হয়েছে। ভারতীয় রেস্তোরাঁর কথা ছেড়েই দিলাম, চৌরঙ্গিকে কঠিন প্রতিযোগিতার সামনে ফেলেছে তার বাঁ দিকে এজওয়ের রোডে আরবি খাবারের দোকানগুলো, সেখানে কুর্দিশ, ইরানি, ইরাকি আর আরবি খাবারের এক মায়াবী মেহফিল। আবার ঢিল ছোঁড়ার দূরত্বেই রয়েছে মেরিলেবোর্ন রোডের ফরাসি রেস্তোরাঁগুলো, পা চালিয়ে হাঁটলে মাইলখানেক দূরেই মেফেয়ার আর সোহো, সেখানে প্রাচ্যের চৈনিক-জাপানি খাবারের মেলা।

    বেলসাইজ পার্ক/হ্যাম্পস্টেডের দুর্গা পুজোয় বিজয়ার পরেও ভূরিভোজ চলতেই থাকে। এবারের আসর জমেছিল চৌরঙ্গিতে। মনে ছিল অপার আনন্দ ও বিস্ময় নিয়ে জাতীয় পোশাক পরে আমরা জনা কুড়ি মানুষজন এসে হাজির হয়েছিলাম ‘চৌরঙ্গি’তে। শেষ পর্যন্ত এমন একখানা রেস্তোরাঁ পাওয়া গেল, যেখানে শাড়ি বা ককটেল ড্রেস পরে সমান আভিজাত্যের অহং নিয়ে বিচরণ করা চলে! কলকাতার বিখ্যাত ক্লাবগুলোর মত আবহ, তবে সৌভাগ্যের বিষয়ে এখানে যাঁরা আতিথেয়তার দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা সেই ক্লাবের কর্মীদের মত নন। চতুর্থবারেও হাত তুলে “বয়” বা “কোই হ্যায়” বলে ডাকার অনেক আগেই আমাদের তদারক করতে কেউ না কেউ টেবিলে পৌঁছে যাচ্ছিলেন।

    ‘চৌরঙ্গি’ হোটেলের ভেতরে বসার জায়গা

    এর পরের কয়েক ঘন্টা স্রেফ খাবারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা। পালং শাকের ভাজাটি সবারই প্রিয় হয়ে উঠল। বাঙালিদের কোনও খাবার ভাল লাগলেই তারা শিগগিরি যে যার নিজের রান্নাঘরে তার রহস্যভেদ করে ফেলে। এই বস্তুটি কিন্তু আমাদের রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে দিল। বাদামশাঁস এবং পালং শাকের লম্বা লম্বা সরু পিস, তাকে রান্না করা হয়েছে গোল আকৃতিতে, খেতেও মুচমুচে। সবাই ভাবলাম, এ কি সত্যিই বাঙালির রন্ধনশিল্প?

    লাল মুর্গি কাবাব আর নিজামি মালাই কাবাব খেয়ে বোধহয় মহান খাদ্যরসিক নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ নিজেও তারিফ করতেন। কলেজ স্ট্রিটের স্টাইলে বানানো চিংড়ির কাটলেট আর মোচার চপ বাঙালির উদরের রুচি এবং হৃদয়ের আবেগ, দু’টোতেই বেশ ছাপ রেখে গেল।

    আর এ তো ছিল কেবল গৌরচন্দ্রিকা। কমল কাকরি চাট, অর্থাৎ পদ্মফুলের ডিপ-ফ্রায়েড ডাঁটি, আলু, আর দই-পুদিনা-দুধের চাটনি দিয়ে তৈরি চাটের পদটি সব দিক থেকেই সেরার পুরস্কার জিতে নিল। চাটনির সজীবতায় রসনায় লালিত্যের সাথে নেচে উঠলো সূক্ষ্ম সব স্বাদের বাহার। একবার ভাবলাম, কলকাতার রান্নার মধ্যে কি এগুলোকে সত্যিই ফেলা যায়? তারপরেই মনে হল, কলকাতা শহরটা আর্মেনিয়ান, গ্রিক, ইহুদি সবাইকে যখন আপন করে নিয়েছে, তখন খাবারের দুনিয়ায় যা কিছু অতুলনীয়, তার গোত্রের বিচার না করে তাকেও আপন করে নিতে সক্ষম। ট্যাংরা স্টাইলের আদি এবং অকৃত্রিম চিলি পনির অবশ্য একেবারে ছাপ্পা মারা কলকাত্তাইয়া খাবারই ছিল!

    নরম ডাবের শাঁসে ডাব চিংড়ি পদটির বর্ণনা দেওয়া সহজ নয়- এ জিনিস মোটামুটি ভাল বানাতে পারলেও অসাধারণ হয়, তবে ভাল করে বানালে তা জীবন বদলে দিতে পারে। এর পরে একে একে এল কড়াইশুঁটির ডালনা, কষা মাংস, কাসুন্দি দিয়ে বেগুন আর মেঘের মত হালকা রঙের পনির কাবাব। আর ঠিক যখন মনে হচ্ছে পেটে আর জায়গা নেই, তখনই ভেসে এল কলকাতার চিকেন আর ল্যাম্ব বিরিয়ানির মন-মাতানো সুবাস, যার কবলে পড়তেই হয়, উহা নাছোড়বান্দা। এই পদে খুব বুদ্ধি করে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। চেনা ডিমের বদলে ছোট ছোট কোয়েলের ডিম। এ বিরিয়ানি কি সিরাজ বা আরসালানের মতো? সম্ভবত না। বরং বলা চলে, কলকাতার সাবেকী খাবারের এ এক লন্ডন আঙ্গিক।

    এতদূর এসে এবার মনে হল, শেফ জলি এবং তাঁর সহকর্মীদের তারিফ না করলেই নয়, গোটা টেবিল ফেটে পড়ল অপরিকল্পিত হাততালিতে। এতে উৎসাহিত হয়ে কি না জানি না, জলি গুড শেফ (ইন্সটাগ্রামে ওই রূপেই বিরাজ করেন) আমাদের জন্য পাঠিয়ে দিলেন আম-ভাপা দই, নারকেলের আইসক্রিম আর কাঠির উপর পেস্তা-কুলফির রূপে স্বর্গের খানিকটা অমৃত।

    এত প্রশংসাই যখন করলাম, বাঙালি ভোজের শেষে পরিতৃপ্তির সাথে যে জিনিসটি সর্বদাই থাকে, সেই কার্যকরী উপদেশও না হয় কিছু থাক। গোলাপজল আর ফালুদা ছাড়া কুলফি একদম হয় না। র‍্যালিজ-এ যেটা বানায়, একমাত্র ওটাই প্রকৃত কলকাতার কুলফি, বাকি সব অবাঙালি! কলকাতার মেনুতে মিষ্টি বা ডেসার্টের ফিরনি না থাকলেই নয়। ভাপা ইলিশ অতি চমৎকার জিনিস, তবে পাতুরি কী দোষে বাদ গেল? পরবর্তী প্রজন্ম ভিগান খাবার নিয়ে একটু আধটু ঘাঁটাঘাঁটি যেহেতু করছে, একটু এঁচোড়ের ডালনা হলে কি মন্দ হয়?

    সবার শেষে বলি, যদিও কথাটা দরকারি, মকাইবাড়ি চায়ের ওই চমৎকার সাদা কাপটির নীচে একটি কাগজের ডয়লি কি পাওয়া যাবে? 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook