ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • একটা রাতের গল্প


    অগ্নিজিৎ সেন (October 8, 2021)
     

    আজ দশমী। আকাশে-বাতাসে মনখারাপের ঢাক বাজছে। দূরে কোথাও ভেসে আসছে ‘বলো দুগ্‌গা মাই কি’ কোরাস। খুব সাবধানে শাড়ির কুঁচিটা ঠিক করে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো-স্টেশন থেকে বেরোলো রিয়া। অনেকদিন পর শাড়ি পরেছে। অনভ্যাসে পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে বারবার। ওর আলমারিতে যে সারি-সারি শাড়ি সাজানো আছে, প্যান্ডেমিক আর লকডাউনের ঠেলায় প্রায় ভুলতেই বসেছিল। কতদিন সেজেগুজে বাড়ি থেকে বেরোনো হয় না, কোথাও খেতে যাওয়া হয় না, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। আর একটা জিনিসও হয় না। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্রেক-আপের পর থেকেই বন্ধ। প্রথম প্রথম এটা নিয়ে ভাবতে চাইত না রিয়া। নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখত। কিছুদিন পরেই বুঝতে পারল, জিনিসটা অত সহজ নয়। ধুর, ভাল না বেসে এভাবে… অনেক মাস টানাপড়েনের পর অবশেষে রিয়া আজ বেরিয়েছে। একটা ছেলের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই কথা চলছে ফেসবুকে। ভাবতে ভাবতেই রিয়া এসে দাঁড়াল ফ্লুরিজ-এর সামনে। পার্ক স্ট্রিট কেমন একটা অদ্ভুত ভাবে সেজে ওঠে উৎসবের দিনগুলোয়। সায়ন কখন আসবে কে জানে! বলেছিল সাড়ে আটটা নাগাদ মিট করবে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই কী মনে হল, রিয়া ব্যাগ থেকে স্যানিটাইজার বের করে দু’হাতে ঘষে নিল। পার্ক স্ট্রিটে মানুষের আনাগোনা লেগেই আছে। আরেকটা ত্রিস্তরীয় মাস্ক বার করে মুখে বাঁধল রিয়া। কোভিড-প্রোটোকলের বিষয়ে বরাবরই খুব সতর্ক ও। ফ্লুরিজ-এর সামনে সিগন্যালটা পাল্টাচ্ছে রং আর চলমান গাড়িগুলো পাল্টাচ্ছে স্পিড। হঠাৎ করেই একটা উবের এসে দাঁড়াল রিয়ার সামনে। গাড়ির কাচ নামিয়ে বেরিয়ে এল একটা মাথা— ‘হাই, রিয়া রাইট? নাইস মিটিং ইউ! সায়ন হিয়ার। উঠে এসো।’

    একটু অস্বস্তি নিয়েই উঠে পড়ল রিয়া। ব্যাগটা সামলে গুছিয়ে বসল। ভার্চুয়াল জগৎ ছেড়ে ফাইনালি মুখোমুখি দেখা সায়নের সাথে। পেশায় নাকি আইটি ইঞ্জিনিয়ার। ভাল ক্রিকেট খেলে। আজ পরে এসেছে একটা হালকা নীল টি-শার্ট আর ব্ল্যাক ডেনিম। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। কানে হেডফোন। কিন্তু এ কী! সর্বনাশ! রিয়ার মনের পাগলাঘণ্টি বেজে উঠেছে। সায়নের মুখের মাস্ক কই? ও তো থাকে সল্টলেকে। এতটা রাস্তা এসেছে উবের করে অথচ মাস্কটা… কী আশ্চর্য! ওকে তো একটুও চিন্তিত মনে হচ্ছে না! বরং দিব্যি সিটে মাথা হেলিয়ে রিয়ার দিকে হালকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে। রিয়া জোর করে কোনওমতে নিজের চিন্তাভাবনাগুলোকে সরিয়ে রাখল। নাঃ, আজ আর এসব ভাববে না। খানিকটা কথাবার্তা এগোনোর জন্যই বলল— ‘কী মনে হয়, পুজোর পর থার্ড ওয়েভ আসবে?’

    সায়ন কখন আসবে কে জানে! বলেছিল সাড়ে আটটা নাগাদ মিট করবে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই কী মনে হল, রিয়া ব্যাগ থেকে স্যানিটাইজার বের করে দু’হাতে ঘষে নিল। পার্ক স্ট্রিটে মানুষের আনাগোনা লেগেই আছে। আরেকটা ত্রিস্তরীয় মাস্ক বার করে মুখে বাঁধল রিয়া। কোভিড-প্রোটোকলের বিষয়ে বরাবরই খুব সতর্ক ও।

    ‘ধুর, এলে আসবে। এমনিও মাস্ক পরে, স্যানিটাইজার ঘষে লাভ নেই। সবাই ইনফেক্টেড হব একদিন। ইন ফ্যাক্ট, আমি তো ভ্যাকসিনও নিইনি।’

    ব্যাস! রিয়ার মনের পাগলাঘণ্টি বেজে উঠল আবার! ভ্যাকসিন নেয়নি? বলছে মাস্ক পরে কী লাভ? পাশে বসে থাকতেই আতঙ্ক হচ্ছে, এরপর তো… 

    ‘সাব, লোকেশন আ গয়া আপকা’— ড্রাইভারের কণ্ঠস্বরে ঘোর কাটল রিয়ার। গাড়িটা এসে দাঁড়িয়েছ একটা ‘ওয়ো’ রুমের সামনে। পুজোর জন্য চড়া দাম। ভাড়া হয়েছে ৭৫০ টাকা। রিয়া দিতে যাচ্ছিল, সায়ন আটকাল। ওয়ালেট বের করে দুটো কড়কড়ে ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিল ড্রাইভারকে। চেঞ্জ ফেরত নিয়ে ওয়ালেট-পকেটে ঢোকাল। এবং আবার, তৃতীয়বারের জন্য রিয়ার মনের পাগলাঘণ্টি বেজে উঠল! এতবার একজন অজানা মানুষের হাত স্পর্শ করল অথচ স্যানিটাইজার বার করা তো দূরে থাক, ‘এস’ পর্যন্ত উচ্চারণ করল না! আর নিতে পারল না রিয়া। নিজের স্যানিটাইজারটা বার করে এগিয়ে দিল সায়নের দিকে।  

    ‘লাগবে না, চলো যাওয়া যাক’ বলে ব্ল্যাক ডেনিম এগিয়ে গেল। রিয়া হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চতুর্থবার বেজে উঠল সেই ঘণ্টি! রিসেপশন থেকে চাবি নিয়ে লিফটে করে তিনতলায় এসে পৌঁছল দুজন। রুম নম্বর ৪০৯। রুমের সামনে এসে চাবি বের করল সায়ন। ঠিক এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল রিয়ার ফোনটা। দু’বার কেঁপে উঠে শান্ত হয়ে গেল। রিয়া ফোনটা বের করে দেখল, ফেসবুক বা হোয়াটস্যাপ নয়— একটা নামী নিউজ-পোর্টালের নোটিফিকেশন— 26,278 new cases reported in India, covid cases shoot up by 14%. 

    হোক না এক রাতের মরীচিকা! রিয়ার আর কিছু মনে রইল না। পরের পাঁচ মিনিটে সায়ন মুচকি হেসে শুধু একটাই কথা বলল— ‘জিন্‌স আর টপ-এর মধ্যে এত স্যানিটাইজার স্প্রে…’ কথা শেষ হয় না, রিয়া সবলে কাছে টেনে নেয় সায়নকে।

    ‘কী হল? এনিথিং রং?’

    ভুরু দুটোকে যতটা সম্ভব সোজা করে এনে ঘরে ঢুকল রিয়া। বেশ ছিমছাম ঘর। আরামদায়ক ঠান্ডা। ব্যালকনি থেকে আলোয় সাজানো তিলোত্তমা বিরাজমান। চুলটা খুলে রিয়া সেখানে গিয়ে দাঁড়াল। একটু পরেই দুটো হাত অনেকটা কাছে টেনে নিল ওকে। ঘাড়ের কাছে দুটো ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করল রিয়া। সাহারা মরুভূমিতে জল! হোক না এক রাতের মরীচিকা! রিয়ার আর কিছু মনে রইল না। পরের পাঁচ মিনিটে সায়ন মুচকি হেসে শুধু একটাই কথা বলল— ‘জিন্‌স আর টপ-এর মধ্যে এত স্যানিটাইজার স্প্রে…’ কথা শেষ হয় না, রিয়া সবলে কাছে টেনে নেয় সায়নকে।

    তারপর আর কী! ধীরে ধীরে রিয়ার চোখ বুজে আসে আরামে।

    হ্যাঁচ্চো! (দু’সেকেন্ড নীরবতা) হ্যাঁচ্চো!

    ‘কোভিড! কোভিড! নির্ঘাত কোভিড! জানতাম আমি! শিট! মাস্ক পরে না, হাত ধোয় না, ভ্যাকসিন নেয়নি! ওঃ গড! ওয়াই ডিড আই ইভেন এগ্রি? ইট্‌স অল মাই ফল্ট। আই শুড হ্যাভ নেভার এগ্রিড টু দিস…’     

    হতবাক সায়নের মুখ থেকে শুধু বেরোল— ‘আরে, নাকে চুল ঢুকে গেছিল!’

    রিয়া আর সায়নের এক রাতের গল্পের এখানেই ইতি। তবে লেজুড় হিসেবে একটা খবর দিয়ে রাখি। সায়নের তিনদিন পর গন্ধ চলে যায়। টেস্ট করিয়ে পজিটিভ আসে। রিয়ার সেই রাতেই জ্বর আসে। পরের দিন টেস্ট করিয়ে পজিটিভ আসে। কার থেকে কে পেয়েছে জানা নেই। তবে দুজনে চুমু খেয়েছিল, এটুকু জানি। দুজনেই ভাল আছে। আইসোলেশনে আছে। আর একে অপরকে ব্লক করে রেখেছে।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook