ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ৯/১১: প্রবাসী বাঙালিদের চোখে

    ডাকবাংলা.কম (September 11, 2021)
     

    রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, নিউ জার্সি

    আমার তখন ২২ বছর বয়স এবং আমি আমার প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়েছি। সেই সময় আমার অফিস ছিল মিডটাউন ম্যানহাটান-এ। আর ৯/১১-র দিন প্রথম প্লেনটা যখন টুইন টাওয়ারে সেঁধিয়ে যায়, সেই সময় অফিসের কাজে মিডটাউনেই ছিলাম। আতঙ্কিত হয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবিশ্বাস্য লেগেছিল ব্যাপারটা আমার কাছে যখন টিভিতে খবরটা শুনলাম। অফিস থেকে ছুট্টে বেরিয়ে গিয়ে জ্বলন্ত টাওয়ারটা চোখের সামনে দেখলাম। আমি কোনও দিন এই দৃশ্যটা ভুলব না।

    সেই সময় আমি নিয়মিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আমাদের সংস্থারই একটি অফিসে যাতায়াত করতাম। এমনকী আমার কাকা-কাকিমাকে ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ট্রেড সেন্টারের একটা রেস্তোরাঁয় খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম।

    আমি এখনও নিউ ইয়র্ককে ভালবাসি আর কাজও করি সেখানে।

    সৌগত চট্টোপাধ্যায়, ফিলাডেলফিয়া

    অফিসে বসে কাজ করছিলাম তখন। খবরটা এক সহকর্মী এসে দিল। সঙ্গে সঙ্গে টেবিলের ওপর রাখা রেডিওটা খুললাম। তখনও অফিসে টেলিভিশন ছিল না আমাদের। আরও একজন কলিগ তার রেডিও নিয়ে এল। আমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ব্যাপারটা। প্রথমটা বুঝতেই পারিনি। টুইন টাওয়ারে প্লেন কী করে ঢুকবে? যখন বুঝলাম যে আমেরিকা অ্যাটাক্‌ড হয়েছে, তখন একটা আশ্চর্য ভয় আর রাগ দুটোই হল। রেডিওর খবরে সব বুঝতে পারছিলাম না বলে আমাদের এক সহকর্মী বাড়ি থেকে একটা টেলিভিশন সেট নিয়ে এসে অফিসে চালিয়ে দিল। ঘটনার ভয়াবহতা দেখে তখন আমরা স্তব্ধ। 

    এর পর শুনলাম পেন্টাগনে আক্রমণ হয়েছে। তার পরের খবর ইউনাইটেড ৯৩-এ একটা প্লেন ভেঙে পড়েছে। এটা পেনসিলভেনিয়ায়, আমার বাড়ির কাছে। সেই প্লেনটা সম্ভবত ওয়াশিংটন ডিসি-র দিকে যাচ্ছিল। হোয়াইট হাউস বা ক্যাপিটল বিল্ডিং লক্ষ্য ছিল। ক্যাপিটল বিল্ডিং হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। কিন্তু সেই প্লেনের যাত্রী বুঝতে পেরে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে এক রকম যুদ্ধ করে প্লেনের অভিমুখ ঘোরাতে বাধ্য করে। ওই প্লেনের যাত্রীরা অনেকে ফোনে বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে শেষ বিদায় জানায়। ভাবছিলাম কী অবস্থা হয়েছিল বাড়ির লোজকনদের। 

    এর পর থেকে আমেরিকার চরিত্রটাই বদলে গেল। একটা হালকা মেজাজের জীবনযাত্রা বদলে গেল একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে। অবিশ্বাস আর ভয়, এই শব্দদুটো আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়াল। যাতায়াতের বিধিনিষেধ আর কড়াকড়ি পৌঁছল এমন জায়গায় যে, এয়ারপোর্ট পৌঁছে প্লেনে ওঠা অবধি কম করে ঘণ্টা চারেক সময় লাগত। এয়ারপোর্টের বাইরে বিশাল লাইন এঁকেবেঁকে চলে যেত। ঘটনার এক সপ্তাহ বাদে অফিসের কাজে আমি কানাডা গিয়েছিলাম। যে-প্লেনে একশোর বেশি যাত্রী থাকে, সেখানে আমরা দুজন যাত্রী ছিলাম। সেই দুজনকে নিয়েই প্লেন উড়ল।

    সত্যি কথা বলতে কী, এখনও আমেরিকার লোকজন কতটা স্বস্তিতে প্লেন-যাত্রা করে সন্দেহ আছে। সেই ভয়ঙ্কর ক্ষত আমাদের স্থায়ী ক্ষতি করে দিয়ে গেছে।

    অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, নিউ জার্সি

    ৯/১১-র অভিজ্ঞতা কারও না হওয়াই কাম্য। আমার স্বামী পার্থ কাজ করত মেরিলিঞ্চ-এ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পাশের বিল্ডিং-এ ওর অফিস ছিল। রোজকার মতো সেদিনও পার্থ অফিসে বেরিয়েছে, বেরোতে একটু দেরি হয়েছিল বলে ড্রাইভ করে যাচ্ছিল, কারণ ট্রেনে যেতে একটু বেশি সময় লাগে। মাঝরাস্তায় ওর এক সহকর্মীর কাছ থেকে ফোন আসে। আজ আর এসো না, একটা ছোট অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, একটা প্লেন অ্যাক্সিডেন্টালি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের একটা টাওয়ারে ধাক্কা মেরেছে। একটু কেঅস চারদিকে। আমায় পার্থ ফোন করে বলল, বাড়ি ফিরে আসছে। বাড়ি থেকে কাজ করবে। আর বলল, একটু টিভিটা চালিয়ে নিউজটা ফলো করতে। আমি টিভি চালিয়ে দেখলাম, একটা টাওয়ারের ওপরদিকে আগুন জ্বলছে, ভাবলাম ঠিক নিভিয়ে ফেলবে, নট আ বিগ ডিল। কিন্তু ঠিক তখনই, চোখের সামনে দ্বিতীয় প্লেন এসে ধাক্কা দিল। অবিশ্বাস্য লাগছিল, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কী হচ্ছে। আর কতক্ষণই বা এই ভয়াবহ ঘটনা চলছে, আন্দাজও পাইনি। তারপরের ঘটনা তো সবার জানা। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ছে আর হাঁ করে টিভির দিকে তাকিয়ে আছি। খেয়ালই নেই, আমার দু’বছরের ছেলে টুকাইও টিভি দেখছে। টুকাইয়ের কাছে ব্যাপারটা খানিকটা খেলনাবাড়ির মতো লাগছিল। যে বাড়ির পাতিও-তে গিয়ে আমি আর ও প্রায়ই গিয়ে বসতাম, টুকাই খেলত, সেইটা ওর চোখের সামনে ভেঙে গেল। ওর ফেভারিট বিল্ডিং, ওর প্রিয় খেলার জায়গা নিমেষে শেষ হয়ে গেল। এরপর আমরা বহুদিন ঘুমোতে পারিনি। সারা পৃথিবী বদলে গেল সেদিন। আর যে আমেরিকায় সবার অবারিত দ্বার ছিল, সেই দেশ মনের দরজা বন্ধ করে দিল। তবে, ৯/১১-র পর আরও একবার যে অজানা আতঙ্কে ভুগতে হবে ভাবিনি, করোনা এসে সেই ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিল। 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook