ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মাতৃগর্ভ এড়িয়ে

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (September 3, 2021)
     

    বৌদ্ধ এবং হিন্দু রূপকথায় নারী-শরীর থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া মানে জন্ম-মৃত্যুর, অর্থাৎ ‘সংসার’-এর ফেরে বাঁধা পড়া। অতএব গর্ভ থেকে যাঁর জন্ম, অর্থাৎ যিনি যোনিজ, জন্মের সাথে সাথে তাঁর মৃত্যুরও অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। কৌশল্যার গর্ভে রামের জন্ম, দেবকীর গর্ভে কৃষ্ণের, এই দুজনেই পরে মৃত্যুবরণ করেন। 

    পৌরাণিক সাহিত্যে আমরা অপর একটি ভাবনার সাক্ষাৎ পাই। অযোনিজ, যিনি গর্ভ থেকে জন্মাননি, অতএব জন্ম-মৃত্যুর আবর্তমান চক্র থেকে তিনি রক্ষা পেতে অথবা তাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম। গণেশের কাহিনি এর এক উদাহরণ। মাতৃগর্ভে গণেশের জন্ম নয়, তাঁর মা তাঁকে নিজের শরীরজাত নানা ঔষধি দিয়ে গঠন করেন, তাঁর নিজের মাথার জায়গায় তাঁর পিতা শিব স্থাপন করেন একটি হাতির মাথা। একই ভাবে, শিবের অপর পুত্র কার্তিকেয়র জন্মও মায়ের শরীর থেকে নয়। শিবের বীর্য প্রথমে পতিত হয় আগুনে, তারপরে বাতাসে, এবং শেষমেশ গঙ্গা নদীতে। এর ফলে নদীর কূলবর্তী খাগড়ায় আগুন লেগে যায়। সেই ছাই থেকে ষড়মুণ্ড মহাযোদ্ধার রূপে উঠে আসেন কার্তিকেয়। এভাবেই তাঁর জন্ম গর্ভের বাইরে, অতএব তিনি অযোনিজ। শিবের আর এক অযোনিজ পুত্রের নাম আয়াপ্পা। শিব বিষ্ণুর সাথে লীন হয়ে হরিহর মূর্তি সৃষ্টি করেন, তার থেকে আয়াপ্পার উৎপত্তি। দুজন পুরুষ দেবতার মিলনে এই শিশুর সৃষ্টি।

    রূপকথায় এমন আরও নানা চরিত্রের উপাখ্যান পাওয়া যায়, যাঁদের জন্ম গর্ভের বাইরে। যেমন, মান্ধাতাকে নিয়ে এক বিখ্যাত গল্প আছে। যুবনাশ্ব নামে এক রাজা ভুলবশত একটি মায়া-ঔষধ খেয়ে নেন, যে ঔষধ তাঁর স্ত্রীর গর্ভবতী হবার উদ্দেশ্যে খাবার কথা ছিল। ফলে রাজা নিজেই গর্ভধারণ করেন। যুবনাশ্বের গর্ভ অথবা গর্ভদ্বার না থাকায় তাঁর শিশুপুত্র মান্ধাতার জন্ম হয় রাজার শরীরের পাশের অংশ ভেদ করে। অতএব মান্ধাতা একজন বিশিষ্ট রাজা হিসেবে ভূমিষ্ঠ হন, কারণ তাঁর জন্মই হয়েছিল বিশেষ উপায়ে।

    রূপকথায় এমন আরো নানা চরিত্রের উপাখ্যান পাওয়া যায়, যাঁদের জন্ম গর্ভের বাইরে। যেমন, মান্ধাতাকে নিয়ে এক বিখ্যাত গল্প আছে। যুবনাশ্ব নামে এক রাজা ভুলবশত একটি মায়া-ঔষধ খেয়ে নেন, যে ঔষধ তাঁর স্ত্রীর গর্ভবতী হবার উদ্দেশ্যে খাবার কথা ছিলো। ফলে রাজা নিজেই গর্ভধারণ করেন। যুবনাশ্বের গর্ভ অথবা গর্ভদ্বার না থাকায় তাঁর শিশুপুত্র মান্ধাতার জন্ম হয় রাজার শরীরের পাশের অংশ ভেদ করে। অতএব মান্ধাতা একজন বিশিষ্ট রাজা হিসেবে ভূমিষ্ঠ হ’ন, কারণ তাঁর জন্মটিই হয়েছিলো বিশেষ উপায়ে।

    বুদ্ধের জন্ম স্বাভাবিক পদ্ধতিতে হয়নি, এই বিশ্বাসের আভাস পাওয়া যায় পরবর্তী যুগের একাধিক বৌদ্ধ উপাখ্যানে। বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল তাঁর মায়ের দেহের পাশ থেকে, যোনিদ্বারের মাধ্যমে নয়। এই বিশ্বাস সুদূর ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, খ্রিস্টধর্মের প্রথম যুগের গির্জাপতিদের মুখে শোনা যায় যীশুর জন্মও বিনা যৌনসঙ্গমে, অপাপবিদ্ধ উপায়ে হয়েছিল, সম্ভবত তাঁর ক্ষেত্রেও গর্ভকে এড়িয়েই তাঁর ভূমিষ্ঠ হওয়া। এইভাবেই নারী-শরীর হয়ে উঠল মৃত্যু এবং জীবনচক্রের প্রতীক। মহাভারতে মৃত্যুকে কল্পনা করা হয় নারীমূর্তি হিসেবে, যদিও মৃত্যুর দেবতা পুরুষরূপী যম, পুনর্জন্মের চক্র যাঁর নিয়ন্ত্রণে।  

    রূপকথায় বা পুরাণে অযোনিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাবকল্প। আর একটি জনপ্রিয় ভাবকল্পের পাই স্বয়ম্ভূর কথা; যিনি স্ব-সৃষ্ট। সমস্ত জীবন্ত প্রাণীই নারীর শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছে, তারা মরণশীল। কিন্তু স্বয়ম্ভূ হচ্ছেন দৈবী জীব, নারী-শরীর থেকে তাঁর জন্ম নয়, অতএব তাঁর কোনও উৎস নেই, তিনি স্ব-সৃষ্ট।

    ভেবে দেখতেই হয়, নারীর যোনি, এবং মৃত্যুর সাথে তাকে সংশ্লিষ্ট করা, এই নিয়ে যে ভীতি বা সঙ্কোচ, তার কারণেই কি ঋতুরক্তকে সবসময়ে অপবিত্র, ঘৃণ্য এবং প্রকৃতির নেতিবাচক দিকের প্রতীক হিসেবে কল্পনা করা হয়? এ কারণে ঋতুমতী মেয়েদের পরিবারের বাকিদের থেকে আলাদা করে, মাঝে মাঝে বিশেষ কক্ষে বন্ধ করে রাখা হয়। এবং এই রীতি শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা পৃথিবীর নানা জনজাতির মধ্যেই দেখা যায়। প্রকৃতি যে সমস্ত জীবন্ত প্রাণীদেরই একটি নির্ধারিত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, এ জিনিস তারই স্মারক বলেই যে এই ভীতি, তা বোঝা যায়।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook