ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মুখঋত: পর্ব ৯

    ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় (July 3, 2021)
     

    মাছ

    আমি যেখানে বড় হয়েছি, সেই ঝিলটা ভীষণ সুন্দর। মানুষের উৎপাত নেই। চারদিকে গাছ। ছোট ছোট পাথরের নীচে রংবেরঙের গাছ গজায়। তার ভেতরে রংগুলো যে কে করেছে জানি না। জলটা পরিষ্কার। একেবারে নীল। দিনের বেলা রোদ উঠলে জলের ওপর সোনালি রঙের আলো এসে পড়ে। ওই আলোর দিকে এগিয়ে যাই। জলের ওপর তাকাতে পারি না। তাই আমার পৃথিবী এই জলাশয়টুকুই। 

    এখানেই আমার বড় হওয়া। আমার মতো আরো কত মাছ এই জলে। আমার বন্ধুদের বাড়িও এই ঝিল। আমরা সারাদিন ঝিলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত সাঁতরে বেড়াই। শুনেছি ঝিলটা খুব বড় নয়, তাই আমাদের ক্লান্তি নেই। সারাদিনের ভ্রমণের পরেও মনে হয় আর একবার ঘুরে আসতে পারি। রাতে যখন পাথরের নীচে, গাছের আড়ালে ঘুমোতে যাই, তখন দেখি ওপরে অনেকগুলো সূর্যের আলো, ছোট ছোট আলোয় ঢেকে রয়েছে আমাদের ঝিল। ওটাই আমাদের চাদর। সেই চাদরের উষ্ণতায় আমাদের শীত লাগে না। 

    এই ঝিলের মমতায় আমি বেড়ে উঠেছি, বন্ধুদের সাথে, পরিবারের সাথে। তাই ইচ্ছে ছিল এই ঝিলেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব। জলের ওপরের পাউরুটির টুকরো আর নীচের কেঁচো ধরে, বৃষ্টির ফোঁটা খেলতে দেখে, এখানেই সব পাব। কারণ এখানেই নিরাপদ লাগে। আমার চেনা লাগে। 

    কিন্তু কবে একটা ঝড় এল একদিন। ঝিলের সব জল উথলে ছড়িয়ে গেল চারিদিকে। কোথায় রোদের আলো? কোথায় ঠান্ডা জল? 

    আমাদের ঝিলের জলে বাইরের জল এসে মিশতে শুরু করল। অনেকটা জল উপচে পড়তে লাগল। ব্যাস, তারপর আর আমার মনে নেই। প্রচণ্ড হাওয়া আর মেঘের গর্জন শুনতে শুনতে সব উথালপাথাল হতে দেখলাম। 

    যখন আবার তাকালাম, দেখলাম একটা বিরাট জলাশয়ের মধ্যে রয়েছি। এ আমার চেনা ঝিল নয়। একটি অন্য মাছকেও চিনি না। আমার পরিবার, আমার বন্ধুরা নেই! একটি গাছের রঙের সাথেও কোনও স্মৃতি জড়িয়ে নেই। ভয় পেতে শুরু করলাম। এ যে বিশাল, বৃহৎ! কোথাও কোনও শেষ নেই এই জলের স্রোতের। বয়েই চলেছে! সাঁতরে এপার থেকে ওপার করতে পারব না।

    যখন আবার তাকালাম, দেখলাম একটা বিরাট জলাশয়ের মধ্যে রয়েছি। এ আমার চেনা ঝিল নয়। একটি অন্য মাছকেও চিনি না। আমার পরিবার, আমার বন্ধুরা নেই! একটি গাছের রঙের সাথেও কোনও স্মৃতি জড়িয়ে নেই। ভয় পেতে শুরু করলাম। এ যে বিশাল, বৃহৎ! কোথাও কোনও শেষ নেই এই জলের স্রোতের। বয়েই চলেছে! সাঁতরে এপার থেকে ওপার করতে পারব না

    আর কে আছে যাকে জিজ্ঞেস করব? 

    অনিশ্চিত লাগল, জীবনে এই প্রথম। এই জলের মধ্যে আবার নতুন করে একটা পরিবার তৈরি করতে হবে? সাঁতরে বেড়াতে হবে এই ঢেউয়ের মধ্যে? আমার ঝিলের মতো নিরাপদ আশ্রয় তো নয় এই বিশাল সমুদ্র। 

    হ্যাঁ, এখানেই নতুন করে একটা ঘর বানাতে হবে। একেবারে একা খুঁজতে হবে নতুন পাথর, নতুন গাছ, রোদের আলোর উষ্ণতা। নতুন অভিজ্ঞতার শুরুতে মনে পড়ে ঝিলের কথা। 

    আর বারবার ভয় করে। জলের ওপরে জাল এসে পড়ে মাঝেমাঝে, তার মধ্যে ঢুকে অনেকে চলে যায় অন্য কোনও জগতে। ভাবতে থাকি, কবে আমার ওপর অমন একটা জাল এসে পড়বে, তাহলেই কি আবার ঝিলে ফেরা? না কি আবার কোনও নতুন সমুদ্র? 

    …. স্কুল ছেড়ে বেরিয়ে এমন মনে হয়েছিল। স্কুল মানে ছিল রুটিন মানা, টিচারদের মুখগুলো চেনা, বাবা মায়ের আগলে রাখা হাতের পরিধির মধ্যে থাকা। ভুল হলে বকা খাব, এটা জানতাম।

    তারপর এক অনিশ্চিত জীবনে ঝাঁপ দিয়েছি। সোজা ঝিল থেকে এক সমুদ্রে, নিশ্চিন্ত দুর্গের থেকে ঢেউয়ের মধ্যে। একটা চেনা জীবন বদলে গেল। এরপর চারিদিকে অচেনা মুখ, ভুল করলে নিজেকেই শোধরাতে হবে। আগলে রেখেছিল যে উষ্ণতাগুলো, তারা না চাইতেও সেসব আলিঙ্গন ছেড়ে অজানা গলি, রাস্তার মোড় আর পাড়ায় পৌঁছলাম! 

    আজ আমার অনেক বন্ধুর এমন মনে হবে। বাইরের পৃথিবীটা এখন আরও অচেনা। কতদিন আমরা মানুষ দেখি না, সত্যিকারের স্পর্শ অনুভব করি না। সেখানে দাঁড়িয়ে আগামীর দিনে শুধুই কি সমুদ্রের ঢেউ? 

    আমার এই বন্ধুরা, কেউ স্কুল থেকে কলেজে, কেউ কলেজ থেকে চাকরিতে, কেউ নতুন কিছুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে। আমিও পড়ছি বেরিয়ে। বারবার প্রশ্ন করছি, কীভাবে হবে, কীভাবে পারব? 

    যাদের সামনে দেখতাম, তাদের এখন ‘অনলাইনে’ দেখি। জীবন আমাদের মাস্কে ঢেকে, ‘ফুইমিগেট’ হয়েছে। তবে হৃদয়ের আতঙ্কের কীটাণু বেঁচে আছে। 

    আমার বন্ধুরা, যারা জীবনের এমন সন্ধিক্ষণে রয়েছে, তাদেরকে বলি, না চাইলেও ঝিলে ঝড় এসে এক জল থেকে  অন্য জলে ফেলবে। তখন আমরা বুঝব, আমরা আসলে নিজেদের শ্লাঘার বাইরে গিয়ে, অনেকটা ছোট। মাছের মতো। তাই, সাঁতরে যেতেই হবে।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook