লেখার শুরুতেই একটা ডিসক্লেমার প্রয়োজন। এ লেখা বামপন্থা অথবা মার্ক্সীয় দর্শনের বিরোধিতা নয়। এমনকী, যে -দলটির কথা এই লেখায় বারবার এসেছে, সেই দলের অন্য রাজ্যের কার্যকলাপ সম্পর্কেও সমালোচনা নয়। আমি বিশ্বাস করি, এই দল দরিদ্র মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে বহু কাজ করেছে একসময়, এমনকী আমাদের রাজ্যেও। এই লেখায় শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে, নির্দিষ্টভাবে কলকাতায়, এই দলের এখনকার সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এটি একটি মেয়ের গল্প। এবং তার বন্ধুদেরও গল্প। ধরা যাক, মেয়েটির নাম ডি। মেয়েটার বয়স যখন আঠারো, আশির দশকের মাঝামাঝি, কলেজে ঢুকল সে। সেই কলেজে তখন বেশ একটা বাম আন্দোলনের গন্ধ। ডি ততদিনে গোটা দশবার ‘মা’ পড়েছে, ‘পৃ্থিবীর পথে’, ‘পৃথিবীর পাঠশালা’, ‘ইস্পাত’, ‘দুনিয়া কাঁপানো দশদিন’ ইত্যাদি সে গুলে খেয়েছে। অমিত-লাবণ্যর থেকে এলা-অন্তুর প্রেম তার প্রিয় প্রেমের ন্যারেটিভ। ফলে কলেজের ওই লাল কালির পোস্টার তার খুব মনে ধরল।
ডি-র প্রথম মিছিল ছিল সেপ্টেম্বরের শান্তি মিছিল। কলেজসুদ্ধ ঝেঁটিয়ে গেল, বাড়িতে গুল মেরে ডি-ও গেল। ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, ধ্বংস নয়, সৃষ্টি চাই’… সে কী উন্মাদনা! ডি ধীরে ধীরে ছাত্র-আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ল। ডি সুবক্তা, মিশুকে, একটু বোকা টাইপ, দাদা-দিদিদের কথা ভক্তিভরে বিশ্বাস করে, সব দাদাকেই লেনিন ভাবে, অতএব ছাত্র-রাজনীতির সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে উঠতে ডি-র বেশি সময় লাগল না। মূল দলটিতেও ডি-র বিশেষ কদর। দলের বড় বড় নেতারা ডি-র পিঠ চাপড়ান। ডি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা পার হল। ততদিনে সে দাপুটে ছাত্রনেত্রী। সাধারণ নির্বাচনে পাড়ায় পাড়ায় কাজ করে। নির্বাচনী সভায় বক্তা হিসেবে ডাক আসে। ডি-র বেশ পাখা গজিয়েছে।
এমনভাবেই চলে যেতে পারত। কিন্তু ডি যেহেতু বোকা টাইপ, সেহেতু integrity নিয়ে তার একটা বাড়াবাড়ি আছে। ডি-র মনে দলের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করল। প্রশ্নগুলো উত্তর না পেয়ে অসন্তোষে রূপান্তরিত হল। ডি ধীরে ধীরে পার্টি থেকে সরে আসতে শুরু করল। ইতিমধ্যে ডি বিয়ে করেছে। পার্টি নেতারা ভাবলেন, বোধহয় বিয়ে-বাচ্চার কারণে ডি সরে যাচ্ছে। তখন নেতাদের হাতে সংখ্যা ছিল। তাই একজন কমরেডের মনের দিকে নজর দেওয়ার, সরে যাওয়ার সত্য কারণ অনুসন্ধানের সময় তাঁদের ছিল না।
ইতিমধ্যে ডি নারীবাদী আন্দোলনের পটভূমিতে প্রবেশ করেছে। পুরনো মতাদর্শ ডি বাতিল করেনি। কিন্তু পুরনো মতাদর্শের সীমাবদ্ধতা তার চোখে পড়ছে। শ্রেণির লড়াই খুব দরকারি, কিন্তু ক্ষমতার সোপানতন্ত্রে শ্রেণিই একমাত্র নির্ণায়ক নয়। ডি-র মনে হল, নারী-পুরুষের মধ্যে যে ক্ষমতার ব্যবধান, এ কথাটি বাম-আন্দোলনে, অন্তত মূলধারার বাম-আন্দোলনে, সেভাবে উচ্চারিত নয়। পুরনো বন্ধুদের কাছে বলতে গেলেই তারা এঙ্গেলসের কথা পাড়ে। ডি ঢোক গিলে বলে, সে তো এঙ্গেলস লিখেছিলেন, কিন্তু পার্টি কি সেটা মেনে চলে? সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুরা, পার্টির অমুক চিঠির তমুক নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে। এবার ডি চুপ করে যায়। কারণ এবার যে-কথাটা বলা যায়, মানে ‘তমুক অনুচ্ছেদের প্রতিফলন তোমাদের চিন্তায় এবং কাজে দেখি না কেন?’, সে-কথা বলতে ডি-র খারাপ লাগে। হাজার হোক, কলেজবেলার বন্ধু।
ডি একবিংশ শতকের গোড়ার দিকে পার্টি সদস্যপদ ত্যাগ করে। ততদিনে ডি-র মোহভঙ্গ হয়েছে। থিওরি এবং প্র্যাকটিসের ফারাক তো বটেই, তাছাড়াও থিওরিকে দলীয় সুবিধামতো ব্যবহার করা এবং অন্ধের মতো থিওরির সীমাবদ্ধতাকে অস্বীকার করা, ডি-র বিরক্ত লাগত। উৎপাদনের সম্পর্কের প্রভাব স্বীকার করেও যে পুনরুৎপাদনের সম্পর্ককে মান্যতা দেওয়া যায়, এবং অনেক নামী-দামি মার্ক্সীয় অর্থনীতিবিদও যা মানছেন, তা এই দল কিছুতেই মানে না কেন? এঁদের কি চোখ নেই? এঁরা কি দেখতে পান না, উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক ছাড়াও মেয়েদের বিনামূল্যের ঘরের কাজ, সমাজের কাজে কত শ্রম এবং সময় যায়? তাহলে সেগুলি ধর্তব্যের মধ্যে নেই কেন? জিজ্ঞেস করলে আবার চিঠি দেখায় বন্ধুরা। অধৈর্য ডি বলে ফেলে, পার্টির চিঠিতে কী লিখেছে, তাতে কী এসে গেল? এখনও কেন মহিলা কমরেডরাই মিটিং-এ চা তৈরি করেন? কেন সরকারি প্রোগ্রামে (তখন পার্টি এবং সরকার প্রায় সমার্থক) ছাত্রী কমরেডদের ‘থালি গার্ল’-এর ভূমিকা দেওয়া হয়? কেন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পার্টিকর্মী হলে মিটিং-শেষে স্ত্রী দৌড়ে বাড়ি গিয়ে রান্না বসান আর স্বামী পার্টি অফিসে রাজা-উজির মারেন?
মেয়েদের যৌন অধিকার প্রসঙ্গেও পার্টির ভূমিকা নিয়ে মনে মনে রাগ হত ডি-র। যৌন সম্পর্ককে heteronormativity-র নিরিখেই শুধুমাত্র ভাবা হত। সেইসঙ্গে ছিল এক গভীর হোমোফোবিয়া। ‘ছক্কা’ ইত্যাদি সহজেই উচ্চারণ করতেন ডি-র বন্ধুরা। যখন থেকে জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন হতে শুরু করল, তখন থেকে সমকামী এবং নারী-পুরুষ binary-র বাইরের বিভিন্ন জেন্ডার-পরিচিতির মানুষের প্রতি কমরেডদের এই মনোভাবে ডি-র খারাপ লাগত। দু’একবার বলার চেষ্টা করে ডি-কে হাসিঠাট্টার খোরাক হতে হয়েছে। এই ঘটনার প্রায় তিরিশ বছর পর যখন দেখা যায় যে সেই নির্দিষ্ট বাম দলটি ভোটের আগে রূপান্তরকামী মানুষদের নিয়ে সভা করে প্রচারমাধ্যমে জাঁক করছে, তখনও ডি-র মনে হয়, এরা সত্যি সত্যি বিভিন্ন জেন্ডার পরিচিতিতে বিশ্বাস করে তো? না কি ভোটের আগে… যে ক’জন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে এখনও ডি-র যোগাযোগ আছে, তাদের কারও ব্যবহারে অথবা ব্যক্তিগত জীবনে তো সমকামী এবং রূপান্তরকামীদের সঙ্গে সশ্রদ্ধ সম্পর্কের কোনও নিদর্শন দেখা যায় না।
Heterosexual যৌন সম্পর্কের মধ্যেও প্রাতিষ্ঠানিকতার দাপট ডি-র খারাপ লাগত। কমরেডে-কমরেডে প্রেম আর তারপর বিয়ে, বাচ্চা। ব্যাস, গল্প শেষ। আচ্ছা লিভ-ইন করা কি অন্যায়? নেতারা বলতেন, না ঠিক অন্যায় নয়, তবে কিনা ‘সমাজের মধ্যে থেকে সমাজ পরিবর্তন’ করতে গেলে, ওসব করলে মানুষের থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। ওই যে সেই জলের সঙ্গে মাছের যেমন সম্পর্ক ইত্যাদি। কিন্তু যৌনক্রিয়া কি ছিল না পার্টিতে? হো-চি-মিন দাড়ি-দাদাদের মধ্যে কেউ কেউ কি কখনও ডি এবং ডি-র মতো উঠতি নেত্রীদের গায়ে অস্বস্তিকর ছোঁয়া দেননি? দিয়েছেন বইকি! ‘ভাল মেয়ে’ ডি তার প্রেমিকের কাছে কেঁদেছে, কিন্তু দাদাদের মুখের ওপর কিছু বলতে পারেনি সেই বিশের গোড়ায়। আরও বছর পাঁচেক বাদে ডি জানবে, একে বলে যৌন হেনস্থা, মেয়েদের ভয় দেখানোর এক অস্ত্র।
এখনকার ডি যখন সে-আমলের ডি-কে ফিরে দেখে, ভাবে, ডি-টা কী ক্যাবলাই না ছিল। ক্যাবলা ডি-র মাথায় তখন অনেক প্রশ্নচিহ্ন, আস্তে আস্তে অনেক প্রশ্নের উত্তরও মিলছে মানবাধিকার আন্দোলনের পরিসর থেকে, কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাবে, বন্ধুত্বের আবেগে, সেগুলি সোচ্চারে ডি বলতে পারে না। অগত্যা সে কলমের আশ্রয় নিল। লিখতে শুরু করল। প্রান্তিক মেয়েদের সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতা। এসব লেখায় মাঝে মাঝেই বাম আন্দোলন সম্পর্কে ডি-র সমালোচনাও থাকত, কিন্তু কেন জানি না, তার বন্ধুরা বাংলা বিখ্যাত পত্রপত্রিকায় তাদের দলের একদা কর্মী লিখছে, তা-ই নিয়েই গর্বিত ছিল। সমালোচনা তাদের তেমন নজরে পড়েনি।
তারপর একদিন এই দলটি রাজ্যের ক্ষমতা হারাল। ভোটে হারার পরই ডি-র একসময়ের কমরেড, প্রাণের বান্ধবী বললেন, ‘মুসলমানরা চিরকালের মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতক। আমাদের ভোট দিল না!’ ডি চমকে উঠল। দুঃখে, গ্লানিতে মরে যেতে ইচ্ছে করছিল ডি-র সেই মুহূর্তে। সত্যি কথা বলতে, ডি তখন আর নিজেকে পার্টির কেউ মনে করে না। কিন্তু অতীত-গ্রন্থিচ্ছেদ অত সহজও নয়। তাই তখনও পর্যন্ত কোথাও একটা ক্ষীণ বিশ্বাস ছিল যে, ধর্ম এবং জাতপাতের প্রশ্নে এই দলটি যথার্থ অসাম্প্রদায়িক। সে-বিশ্বাসে চিড় ধরল, যখন সাচার কমিটির রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে ডি-র বন্ধুরা প্রশ্ন তুলল। ধীরে ধীরে ডি-র নজরে পড়ল, আপাত সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির আড়ালে পার্টির নেতা-কর্মীদের ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ উচ্চবর্ণের পরিচয়গুলি। পার্টি এবং সরকারের কাছে শুধুমাত্র দাঙ্গা আটকানোই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিচয়। দাঙ্গা না হতে দেওয়া নিঃসন্দেহে প্রশাসন এবং সংগঠনের বিশাল সাফল্য। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মানে কি শুধুমাত্র দাঙ্গা প্রতিরোধ? সরকারে বাম থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়নের মানদণ্ড এত নিম্নগামী কেন? হিন্দু উচ্চবর্ণের কমরেডরা খিদিরপুর মোমিনপুরকে সমাজবিরোধীদের পাড়া ভাবেন কেন? কেন ভাবেন ‘ওরা পিছিয়ে পড়া’ আর আমরা ‘ওদের উন্নয়ন করব’? যখন নিজেরা ধর্মীয় আচার মেনে বিয়ে করেন, সিঁদুর পরেন, মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন, তখন মুসলমান মেয়েদের বোরখা কিংবা হজ করতে যাওয়া ‘পিছিয়ে থাকা’-র লক্ষণ ভাবার মতো দ্বিচারিতা তারা করেন কীভাবে? সাম্প্রতিক এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে পর্যন্ত ডি-র পুরনো বন্ধুদের উপস্থিতি দেখা যায়নি কলকাতায়। উল্টে আনাচে-কানাচে তাদের দলীয় কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, পার্ক সার্কাস ময়দানে এত দ্রুত বাথরুম তৈরি হল কীভাবে?
একই চিন্তাপ্রক্রিয়া আদিবাসী, তফশিলি জাতি-উপজাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ‘পশ্চিমবঙ্গে জাতপাতের সমস্যা নেই’, এই লব্জ দিয়ে উচ্চবর্ণের আধিপত্যকে কায়েম রাখা দলের সর্বস্তরে বিরাজমান। ততদিনে ডি সমাজকর্মী হিসেবে গ্রামেগঞ্জে কাজ করছে। দেখছে, যথেষ্ট জাতপাতের বিভেদ, ধর্মীয় রেষারেষি আছে। শুধু গ্রামেগঞ্জেই নয়, শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজেও স্ববর্ণে বিয়ে ইত্যাদি বিদ্যমান এবং সেগুলি কমানোর কোনও চর্চা পার্টির অন্দরে ও বাহিরে তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়। এসব নিয়ে কথা উঠলেই উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের তুলনা আসে। অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক বাতাবরণ জাতপাতের প্রশ্নে গো-বলয়ের থেকে উন্নত, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমাদের রাজ্যে সামাজিক বিভাজন নেই। ততদিনে ডি মরিচঝাঁপির আসল কাহিনি জেনেছে। ডি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়তে থাকে।
হতাশা চরমে পৌঁছয়, যখন বন্ধুদের বিরোধিতা করলেই তারা এক ভাঙা রেকর্ড বাজাতে থাকে। নতুন কথা, নতুন ইস্যু শুনতে তারা আগ্রহী নয়। ভোটের অঙ্কই তাদের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। দুনিয়া যখন intersectionality-র তত্ত্বকে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের অন্যতম ভিত্তি বলে মানছে, সেই সময়ও শুধুমাত্র শ্রেণির দ্বন্দ্বই প্রধানতম দ্বন্দ্ব মেনে চলা বন্ধুদের কূপমণ্ডূক মনে হতে থাকে ডি-র। পুরনো বন্ধুদের এই সীমিত রাজনৈতিক বোধ ডি-কে পীড়া দেয়। ডি দেখতে থাকে— মুসলমান, দলিত, ক্যুইয়ার এবং বিভিন্ন সামাজিক পরিচিতির মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতাকে নস্যাৎ করে, নিজেদের দলীয় অবস্থান চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এই দলটিকে মানুষের থেকে বিচ্যুত করছে।
কোনও কোনও প্রশ্নে পার্টির স্বার্থ যখন প্রান্তিক মানুষের স্বার্থের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়ায়, তখন এই দলটির ইস্যুর প্রতি সততা নিয়েও সন্দেহ হয় ডি-র। সাম্প্রতিক নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা এবং হঠাৎ করে আব্বাস সিদ্দিকীকে ধরে ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা বামপন্থী নীতিজ্ঞানের যে সম্পূর্ণ পরিপন্থী, এ বিষয়ে বন্ধুদের চোখে ঠুলি দেখে অবাক লাগে তার। সর্বোপরি বিজেমূল তত্ত্ব যে কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না, সে-কথা ডি নির্বাচনের আগেই বুঝেছিল। বিজেপি-র মতো চরম ফ্যাসিবাদী শক্তির তুলনায় আঞ্চলিক দলটির দুর্নীতি যে লঘু অপরাধ, এই লেসার ইভিল-এর বিশ্লেষণকে ডি-র পুরনো বন্ধুরা বিদ্রুপ করেছিল। ডি-র মনে এসেছিল, তোমাদের সঙ্গে কংগ্রেসের হাত মেলানোও কি লেসার ইভিল-এর সঙ্গে জোট নয়? যে কংগ্রেস সত্তরের দশকে তোমাদের হাজার হাজার কর্মীকে খুন করেছে বলে প্রচার করতে একসময়, সেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধাও কি ‘লেসার ইভিল’ তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠিত করে না?
এত বিরক্তি, মতানৈক্য সত্ত্বেও ডি-র মনের কোণে কোথাও পুরনো বন্ধুদের প্রতি মমত্ব ছিল। কিন্তু ২০২১-এর নির্বাচনে শূন্য হওয়ার পর সামান্য সমালোচনায় ডি-র বন্ধুরা একেবারে খেপে উঠেছে। সেই আশির দশকের ডি আজ মধ্য-পঞ্চাশে। আজ ডি মনে করে, রাজনৈতিক মতাদর্শ কোনও স্থাবর বিষয় নয়। রাজনৈতিক অবস্থানের বিবর্তন হওয়াই স্বাভাবিক। পুরনো আদর্শ থেকে যা কিছু শিক্ষণীয়, তা গ্রহণ করে প্রান্তিক মানুষের অধিকারের সপক্ষে নতুন আন্দোলনের ধারার সঙ্গে যুক্ত হওয়াই ডি-র কাছে রাজনীতি। ডি-র এই বিবর্তনকে পুরনো বন্ধুরা তাদের শত্রুপক্ষের প্রতি সমর্থন ভাবে। ডি বোঝে, যতদিন না ওরা নিজেদের অন্তরে তাকাবে, যতদিন না দলের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের রাজনীতি ওদের চেতনায় নাড়া দেবে, ততদিন ওরা ডি-কে শত্রু বলে অপমান করবে। বোঝে, তবু ডি-র গলার কাছে কী একটা দলা পাকায়।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র