ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • শয়তান ও নরক

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (April 9, 2021)
     

    ইডেনের উদ্যানে ইভ-কে একটি সাপ প্রলোভন দেখিয়ে পাপে পতিত করে, এ উপাখ্যান ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে বটে, কিন্তু সেই জীবটি অতিলৌকিক কেউ, না কি স্বয়ং শয়তান, সে ব্যাপারে ঠিক জানা যায় না। ইহুদিদের তানাখ অনুযায়ী শয়তান ঈশ্বরেরই একজন উকিল-বিশেষ, দিব্য আদেশেই তার আগমন। ইসলামি প্রথায় শয়তান আসলে একজন দেবদূত, মানুষের সামনে মাথা নোয়াতে অস্বীকার করায় তার উপরে নেমে আসে ঈশ্বরের ক্রোধ। পরবর্তী কিছু ধর্মমতে শয়তান হল পতিত দেবদূতদের নেতা, ঈশ্বরকে নানা প্রলোভন দেখানোই তার কাজ। ঈশ্বরের বিপরীত শক্তি হিসেবে শয়তানের যে-রূপ, তার উৎপত্তি অনেক পরে, সম্ভবত পারস্যে জোরোয়াস্ত্রিয়ান রূপকথার সংস্পর্শে ইহুদিদের প্রথমবার আসার সময়ে, কারণ ওই রূপকথায় আহুরা মাজদার বিপরীত শক্তি হিসেবে অঙ্গরা মান্যুর উপাখ্যান আছে। প্রাচীন যুগে শয়তানকে নিয়ে যেসব কাহিনি জনপ্রিয় ছিল, তাতে আজকালকার মতো শয়তানের খুর এবং শিংওয়ালা লাল রঙের এই রূপ কল্পিত ছিল না, যে-রূপে শয়তান অগ্নিময় নরকে মৃতদের আত্মাদের শাস্তি দেয়। শয়তানের এই রূপটি তুলনামূলকভাবে বেশ আধুনিক, খুব বেশি হলে পাঁচশো বছরের পুরনো।

    ম্যাথু-র গসপেল বলে, শেষ বিচারের দিন যিশু ভেড়াদের (যারা ঈশ্বরের বাধ্য ছিল) আর ছাগলদের (যারা স্বাধীনচেতা, অতএব অবাধ্য) আলাদা করবেন। তাঁর ডানদিকে স্বর্গে যাওয়ার পথে থাকবে ভেড়ারা, আর বাঁদিকে থাকবে ছাগলেরা, যাদের ঠাঁই হবে নরকে। ইতালিতে ‘র‍্যাভেনায় শেষ বিচার’ নামে সন্ত আপোলিনারে ন্যুয়োভো বাসিলিকায় একটি ষষ্ঠ শতাব্দীর মোজাইকে এই দৃশ্যের ছবি পাওয়া যায়। এ ছবিতে যিশুর ডানদিকে একজন রক্তবর্ণ দেবদূত বসে তাঁকে ভেড়াদের তত্ত্বাবধান করতে সাহায্য করেন, আর বাঁদিকে এক নীলবর্ণ দেবদূত থাকেন ছাগলদের দায়িত্বে। এই ছবির পাঁচশো বছর পরে ভেনিসের তর্চেল্লো গির্জার শেষ বিচারের ম্যুরালে প্রথমবার অগ্নিময় নরকের ছবি পাওয়া যায়, সেখানে নীল ডানাওয়ালা সব রাক্ষসেরা লোকেদের যন্ত্রণা দিচ্ছে। এরপরে ষোড়শ শতাব্দী থেকে শয়তান ছাগলের রূপে কল্পিত হতে শুরু করে। যারা ঈশ্বরবিরোধী, শুরু হয় তাদের শয়তানের উপাসক বলে চিহ্নিত করা। শয়তানের এই মূর্তির মূলে আছে গ্রিক রূপকথার অর্ধ-ছাগল দেবতা প্যান এবং নরকের দেবতা হেডিস।

    ইতালির সন্ত আপোলিনারে ন্যুয়োভো বাসিলিকায় ষষ্ঠ শতাব্দীর মোজাইক ‘র‍্যাভেনায় শেষ বিচার

    হিন্দু ধর্মেও নরকের কল্পনা যুগে যুগে পাল্টেছে। বেদে বলা আছে, নরক একটি অন্ধকার স্থান; যারা জীবনে কুকর্ম করে, আচার-বিচার মানে না, তাদের এখানে ঠাঁই হয়। কিন্তু শাস্তি বা যন্ত্রণার কোনও উল্লেখ এখানে নেই, সে জিনিসের কথা প্রথম পাওয়া যায় ২,৮০০ বছর আগেকার শতপথ ব্রহ্মণে। নরকের একাধিক বিভাগের খবর প্রথম আসে মনুস্মৃতিতে, যার বয়স দু’হাজার বছরেরও কম। নরকের বিভিন্ন বিভাগে আলাদা আলাদা অন্যায়ের বিভিন্ন রকম শাস্তির রং-চড়ানো বর্ণনা প্রথম পাই দেড় হাজার বছরের কম প্রাচীন পৌরাণিক সাহিত্যে। এই সব শাস্তির তদারকি করেন যমরাজ, সাথে থাকেন তাঁর সহকারী চিত্রগুপ্ত। দশম শতাব্দীর ক্যাম্বোডিয়ায় আংকোর ভাটের মতো হিন্দু মন্দিরে স্বর্গ-নরকের ভাস্কর্য দেখা যায়।

    এই হিন্দু কল্পনা কি বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত, যেসব ধর্মে মাটির নীচে একাধিক স্তরের নরক (যেখানে অনেক দুঃখ), আর মাটির উপরে একাধিক স্বর্গ (যেখানে কম দুঃখ) উল্লিখিত? না কি স্বর্গে কম আর নরকে বেশি দুঃখ? এই ধারণাগুলো কি প্রাচীন মিশর বা মেসোপটেমিয়া থেকে আমদানি করা, যে দেশে নরক বস্তুটি প্রথম কল্পিত হয়, না কি স্বাধীন ভাবে ভারতেই তার উৎপত্তি? এ বিষয়ে গবেষণা করা আশু প্রয়োজন।

    কভার ছবি: গুস্তাভ দ্যোর

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook