ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে স্মরণীয় মরশুম শেষ হল। কিন্তু উত্তেজনার শেষ হয়নি। গত বছরের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া থেকে এবারের মার্চে পুণে অবধি যেন এক আবেগময় রোলারকোস্টার চলল। এই খেলাগুলোয় ভারতের সাফল্য আরও বেশি উল্লেখযোগ্য, কারণ অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে খেলাগুলো জিততে হয়েছে। যদিও আমি নিজেও বায়ো-নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ছিলাম, তবু ক্রিকেটাররা গত আট মাস ধরে কী অবস্থার মধ্যে কাটিয়েছে, তা কল্পনা করলেও স্তম্ভিত হতে হয়। সেই গত মরশুমের আইপিএল থেকে শুরু করে ওরা একটার পর একটা ‘বায়ো-বাব্ল’, প্রায় নিশ্ছিদ্র বেষ্টনীর মধ্যে গিয়ে পড়েছে।
এই মহাস্মরণীয় মরশুমের সেরা ঘটনা অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজ জয়। আমার মতে এটাই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ টেস্ট সিরিজ জেতা। পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে যেভাবে ভারত এই টেস্ট সিরিজে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে অ্যাডিলেডে ওরকম নাস্তানাবুদ হওয়ার পর এবং শেষ তিনটে টেস্টে নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে, তাকে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। এই ফলাফল আবার এসেছে একঝাঁক তরুণ ও নবাগত খেলোয়াড়দের দৌলতে, যেটা ভারতীয় ক্রিকেটের আরওই সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সব ফর্ম্যাট মিলিয়ে ভারতের ঝলমলে প্রদর্শনের অবিসংবাদী নায়ক ঋষভ পন্থ। যতবারই ও ব্যাট হাতে নেমেছে, ওর খেলার মধ্যে দেখা গেছে ক্রমবর্ধমান পরিণতিবোধ আর ম্যাচটার পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা। আর একটা দুরন্ত ব্যাপার— উইকেটকিপার হিসেবে পন্থের বিরাট উন্নতি। যা আমাকে অবাক করেছে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে কঠিন সব পিচে, যেখানে যথেষ্ট টার্ন আর অপ্রত্যাশিত বাউন্স ছিল।
সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটেই ইংল্যান্ডকে হারানো নিয়েও ভারত গর্ব করতে পারে। পাটা উইকেটে আটবারের মধ্যে সাতবার টসে হারার পরেও বিশ্ব ক্রমপর্যায়ের এক নম্বর দলকে বশ করতে পারার মধ্যে, ভারতীয় টিমের কঠিন চরিত্র ও হার-না-মানা মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। এই মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হেড-কোচ রবি শাস্ত্রীরও বিরাট অবদান, ওঁর ইতিবাচক মনোভাবের ছোঁয়াচ গোটা দলটায় লেগেছে। আর একটা চমৎকার ব্যাপার হল, ব্যাটিং অর্ডার এখন নমনীয়, মানে, পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলাচ্ছে, আর বিরাট কোহলিও সেজন্য নিজের স্বস্তিদায়ক জায়গা ছাড়তে রাজি।
অবশ্য এখনও কয়েকটা চিন্তার জায়গা রয়েছে। যদি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আগামী আড়াই বছরের মধ্যে তিনটে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রাখি, তাহলে সবসময় টিমে একজন ষষ্ঠ বোলার থাকা দরকার। এর থেকেও বেশি দুশ্চিন্তার ব্যাপার হল, ৫০ ওভারের ফর্ম্যাটে আমাদের স্পিন বোলিংয়ের মান ক্রমশ নিম্নগামী। যুজবেন্দ্র চাহালের ওপর টিম ম্যানেজমেন্ট যেন আস্থা হারিয়েছে। আর কুলদীপ যাদবও ঠিক ফর্মে নেই।
তবে, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ যেহেতু দু’বছরেরও বেশি দূরে, সময় আছে আরেকটু খোঁজখবর করে, মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট তুলতে পারবে এমন বোলার বেছে নিয়ে, তাদের ভাল করে তৈরি করার, যাতে আসল সময়ে তারা নিজেদের ভূমিকায় দিব্যি নিপুণ হয়ে ওঠে।
নীতিন মেননের প্রশংসা প্রাপ্য। আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে উনি কেরিয়ার শুরু করলেন, কিন্তু ওঁর মাথা খুব ঠান্ডা আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা অনবদ্য। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঁর দীর্ঘ ও সফল কেরিয়ার হবেই, আমি নিশ্চিত।