ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শুভারম্ভ: পর্ব ১


    শুভা মুদ্গল (Shubha Mudgal) (February 15, 2021)
     
    গানের দায়

    মার্চ ২০, ২০২০তে ভারত সরকার লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকে, আমরা সবাই ন’মাস ভার্চুয়াল নির্বাসনে, স্বেছায় গৃহবন্দি হয়ে জীবন কাটিয়েছি। এই কঠিন, দীর্ঘ মাসগুলো, দেশের সঙ্গীত শিল্পীদের নতুন সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত সময় উপহার দিয়েছে, এবং বহু শিল্পী কোভিড ১৯এর এই নজিরহীন অবস্থার উপর প্রচুর গান লিখেছেন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গেয়ে শুনিয়েছেন। সব গানই যে শিল্পের তাগিদে বা অবস্থার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তৈরি হয়েছে তা নয়, বেশ কিছু ফরমায়েশি গানও তৈরি হয়েছে। সেগুলোর বেশির ভাগই আসুন ইতিবাচক হইগোছের গান, যার আপাত-উদ্দেশ্য হল: অসুখ, মৃত্যু আর বেকার সমস্যার প্রেক্ষাপটে সংহতি ও আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া। মনে রাখতে হবে, এ গান তৈরি হচ্ছে এমন এক সময়, যখন শিল্পীদের জীবিকাও প্রায় ধ্বংসের মুখে। 

    এই করোনা-গানের একটি উদাহরণ আই সি সি আর-এর ‘লাইফ এগেন— সং ফর সলিডারিটি’꞉

    বহু বিশিষ্ট ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক  শিল্পীদের এটি একটি মিলিত প্রচেষ্টা। এই গানের শুরু সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণে, উচ্চারণকারী নাদ যোগীশ্রী গণপতি সচ্চিদানন্দ স্বামী, যিনি নাকি তাঁর সঙ্গীতজ্ঞান ব্যবহার করে শরীর ও মনের অসুখ সারিয়ে তোলেন।

    আর একটা গান শুনলাম, সেটা আবার সাইমন ও গারফাংকলএর বিখ্যাত সাউন্ড অফ সাইলেন্সগানটার প্যারডি! সেখানে আর এক আধ্যাত্মিক গুরু এবং তাঁর অনুগামীরা হ্যালো ভাইরাস ফ্রম উহানলাইনটা গাইবার সময় হইহই করে হাসতে থাকেন। আর তারপর করোনা সম্বন্ধে জনগণকে সতর্ক করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং বলেন মাস্ক পরতে ও হাত ধুতে, যে কোভিড-প্রোটোকল আমরা সবাই জানি। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, ওঁরাই জানেন না, কারণ গুরু ও তাঁর ভক্তরা কেউই মিউজিক ভিডিওটিতে মাস্ক পরে নেই। আশা করা যাক ভিডিওটা প্রাক্‌-কোভিড সময়ের। 

    এ ছাড়া রয়েছে এশিয়ান পেন্টসের মত বড় কর্পোরেট কোম্পানির সহায়তা-ধন্য এবং ইন্ডিয়ান সিংগারস রাইট্‌স অ্যাসোসিয়েশনের দু’শোরও বেশি সদস্যদের গাওয়া ‘জয়তু জয়তু ভারতম— ওয়ান নেশন ওয়ান ভয়েস’ নামক অ্যান্থেমটি । এই গানটি পুলকিত হয়ে ঘোষণা করে: বিশ্বশান্তির রাজসজ্জা পরে, ভ্রাতৃত্বের বাণী বহন করা ভারতের জয় অবশ্যম্ভাবী।  

    বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা প্রকাশিত বহু অ্যান্থেমের মধ্যে এগুলো মাত্র কয়েকটি।  

    দেশ জুড়ে র‍্যাপ-শিল্পী, লোকসঙ্গীত শিল্পী, অভিনেতা, গীতিকারেরা তাঁদের নিজস্ব আঙ্গিকে বিভিন্ন করোনা-গান তৈরি করেছেন এবং আন্তরিক ভাবে প্রকাশ করেছেন। তারকা-বিশেষে, এবং অবশ্যই জনসংযোগের সাহায্যে, এর মধ্যে কিছু গান লাখ-লাখ ভিউ পেয়েছে, বাকিরা তেমন কাটতি পায়নি।

    কিন্তু তাহলে, আমাদের সুরকার, গায়ক, গীতিকারেরা এই মারণব্যাধির বাস্তব রূপ এবং সমাজের উপর এর ভয়ঙ্কর প্রভাব— ক্ষয়-ক্ষতি, স্থানচ্যুতি, চরম নৈরাশ্য, একাকিত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভয়, যা আমরা প্রত্যেকেই উপলব্ধি করেছি– এই নিয়ে করোনা-গান কেন বানাচ্ছেন না?  

    আঞ্চলিক ভাষাতেও বেশ কিছু করোনা-গান আমরা পেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে বাবু দাস বাউল সাবধানতা অবলম্বন করা প্রচার করতে গেয়েছেন ‘এসেছে করোনা ভাইরাস’,

    প্রায় সমস্ত টলিউডের বিখ্যাত তারকাকেই ‘এই বাংলা আমার হাসবে আবার’ গানের মিউজিক ভিডিও-তে দেখা গেছে।

    ‘পলিটিকাল ইনকারেক্টনেস’-এ অরুচি নেই যাঁদের, তাঁরা হাস্যমুখ বিজয় কৃষ্ণ দাসের ‘এল করোনা, মেড ইন চায়না!’ দেখতে পারেন।

    পঞ্জাবে যে করোনা-গান বেরিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বিরেন্দর ধীলঁ এবং সামশের লেহরির প্রার্থনাসম ‘আরদাস’, যার কথা এই রকম: ‘মেহর কর বাবা, আ কে ঠন্ড বরসা দে, তেরে বচডে ঘারাচ বাইঠে দারি জান্ডে আইন’ (বিধাতা, সদয় হও, ভাইরাসে সৃষ্ট আগুন নিভিয়ে দিন, আপনার সন্তানেরা ভয়ে গৃহবন্দি)। রোপার জেলার একটি জাগরণ অনুষ্ঠানে পঞ্জাবি তারকা মাস্টার সেলিম আর তাঁর ব্যান্ডকে দেখা যায় উৎফুল্ল ভাবে ‘কিথথো আয়া করোনা মাইয়াজি’ (মা, করোনা কোথা থেকে এল) গাইতে।  

    প্রায় অতিমারীর মতোই ছড়িয়ে পড়া এই গানগুলোর অধিকাংশের মধ্যেই (বিশেষ করে তারকা-খচিত গানগুলোর মধ্যে) যে বৈশিষ্ট্যটা সবচেয়ে লক্ষণীয়, তা হল, গানগুলোর বিষয় ভাইরাসের ভয়াবহ কাণ্ড নয়, বা লকডাউনের ভয়ানক প্রভাবও নয়। সে সব থেকে অনেকটা দূরে এদের অবস্থান। অথচ শিল্প সব সময়ই দাঁড়িয়ে থেকেছে নিজস্ব সময়ের প্রেক্ষিতে। যে-সময়ে শিল্পটা তৈরি হচ্ছে, সেই সময়টা শিল্পে প্রতিফলিত হয়েছে। সঙ্গীতকলা এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু তাহলে, আমাদের সুরকার, গায়ক, গীতিকারেরা এই মারণব্যাধির বাস্তব রূপ এবং সমাজের উপর এর ভয়ঙ্কর প্রভাব— ক্ষয়-ক্ষতি, স্থানচ্যুতি, চরম নৈরাশ্য, একাকিত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভয়, যা আমরা প্রত্যেকেই উপলব্ধি করেছি— এই নিয়ে করোনা-গান কেন বানাচ্ছেন না?  

    যদি এমন গান লেখা হয়েই থাকে, তবে হয় আমি সেগুলো খুঁজে পাইনি, বা সেগুলো সহজলভ্য নয়। অবশ্যই, ক্ষমতাবান জনপ্রিয় শিল্পীদের একটা কর্তব্য হল জনগণের মধ্যে ইতিবাচক আশার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং অনুপ্রেরণা জাগানো, কিন্তু তা নিশ্চয়ই আমাদের কঠিন, ট্র্যাজিক বাস্তবকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে নয়। অগণিত শিল্পী অনুষ্ঠানের ও উপার্জনের একটিও সুযোগ ছাড়াই আজকে প্রায় এক বছর বসে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। অসংখ্য শিল্পী বড় শহর থেকে ফেরত গেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁদের বাড়িতে, বড় শহরের দৈনিক খরচটুকুও জোগাতে না পেরে। এমন কোনও করোনা-গান বোধহয় লেখা হয়নি, যা শিল্পীদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে, যখন বহু শিল্পীর কিনা কোভিডে মৃত্যু হয়ে চলেছে, এবং অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ভাইরাসকে রুখতে যে রুদ্ধ প্রোটোকল আমরা আজ জীবনের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়েছি, সেই বন্ধ্যাত্ব কি আমাদের শিল্পীসত্তাকেও খুব প্রভাবিত করেছে? আর তাই আমরা বাস্তবমুখী সঙ্গীত সৃষ্টি করার বদলে, এই বিপদের দিনে হাসিমুখে নেচে-গেয়ে চলেছি? ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’, মানলাম, কিন্তু তা কেমন শো? 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook