গল্প / কবিতা

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫১

‘একদিন কে যেন বলেছিলেন— বলছ কি হে? বখে যাওয়া কি অত সহজ? সংসারে বুদ্ধদেবের মতো রাজ্য ছেড়ে অরণ্যে যাওয়াও যেমন শক্ত, লজ্জা-সঙ্কোচ ট্যাগ করে বখে যাওয়াও ঠিক তেমনি শক্ত। কিন্তু সংসারে বাস করে পুরোপুরি নিরাসক্ত হওয়াও সহজ নয়, তাই মাঝে মাঝে ইনকামট্যাক্স নিয়ে, উকিল-অ্যাটর্নি নিয়ে বিব্রতও হত খুব।’ সংসার সীমান্তে গুরু দত্ত।

আবুল বাশার

ব্যান্ডিকুট কিংবা ধেড়ে ইঁদুরের গল্প

‘দরদর করে নিঃশব্দে অশ্রু নামছে চোখ থেকে গাল বেয়ে। সে আনন্দে লাফাচ্ছে এবং জাতি-অপমানে কাঁদছে; চাঁদের রোশনি ঈশ্বর-কৃপায় টলটল করছে চারিদিকে; চারটি রাতচরা বক আকাশের সারা তল্লাটে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার অক-অক ডাক; কাঁসি বাজছে আহ্লাদে। নাচছে বাবুলাল।’ নতুন গল্প।

তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়

এলেভূত

‘ম্যাপ যে কী দেখাচ্ছে! অঙ্কুরের নিজের ফোনেও দেখেছে, পুরো ভুলভাল। কানেক্টিভিটি তো পুরো, সব ক’টা বার আছে, কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অ্যাপের ওপর ভরসা আছে? খেয়াল না করলেই আরেক জায়গায় এনে ফেলবে। এ তো হল এলেভূত, ভেবে আবার হেসে ফেলল সে।’ নতুন গল্প।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫০

‘কে একজন সেই ফাঁকে বারান্দার একমাত্র আলোটা নিভিয়ে দিলে। আর সঙ্গে সঙ্গে নিবিড় নীলিমায় অলংকৃত হয়ে উঠল বাইরের আর মনের আকাশ। মনে হল আমরা যে আর মহাবলীপুরম্-এ নেই। আমরা সুদূর কোন্ দ্বীপের ভেতরে চলে গিয়েছি। সেখানে শুধু হাসি, শুধু গল্প আর শুধু আনন্দ। তখন সামনে পেছনে পাশে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। শুধু কথা শুনছি। শুধু সিগারেটের আগুনে বিন্দুগুলো দেখতে পাচ্ছি। আর পুরুষ-নারী সব একাকার হয়ে গেছে।’ মহাবলীপুরম্‌-এ গুরুর পার্টি।

দীপশেখর দালাল

কয়েকটি কবিতা

‘বন্যাত্রাণে আমি পাঠিয়েছি বেশ কিছু কলার মান্দাস/ আর কিছু চাতকপাখির দল/ তারা মেঘকে গালাগালি দিয়ে পাঁজরে ফিরবে আমার/ তোমার তাতেও রাগ?/ কেন? আমি কি সমস্ত ডুবন্ত মানুষকে আগুন শেখাব?/ সেইটেই হবে আমার শাস্তি?’

আদিদেব মুখোপাধ্যায়

নবম সিম্ফনি, চতুর্থ মুভমেন্ট

‘সে, ক্ষুরটা, সরাসরি নিজের পেটে ঢুকিয়ে দেয়। ধুপ করে শব্দ হয়। একটু গুঙিয়ে পেটার পড়ে যায়। আমি আবার সেই মিষ্টি সুরটা শুনতে পাই। খুব আস্তে, চরাচর জুড়ে বেজে উঠছে। কে বাজাচ্ছে, এখন, এই চায়ের কেবিনে? সবাই স্থির ও চুপ। সবাই মেঝেয় লুটিয়ে পড়ে থাকা পেটারকে দেখছে।’ নতুন গল্প।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৪৯

‘আসলে ওই রান্নাটা ছিল উপলক্ষ। গুরু সব সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখে সমস্ত কিছু ভুলে থাকতে চাইত। ভুলতে চাইত সংসারকে, ভুলতে চাইত গীতাকে, ভুলতে চাইত ছেলে-মেয়ে সকলকে। সকলকে ভুলেই সে ভোলানাথ হবার আশায় কখনও রান্না করত, কখনও বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে আড্ডা দিত, কখনও বা হুইস্কির বোতলে আকন্ঠ ডুব দিত!’ একাকী শিল্পী।

নীলোৎপল মজুমদার

অন্ধকার যেমন কালো হয়

‘পাড়ার লোকের জন্য ব্যাকুল মাসির এক অনবদ্য উপহার এই কুলগাছ। পুরো আকাশটাকেই যেন ঢেকে রেখেছে অগুন্তি শাখা-প্রশাখার নিখিল সংসার। বিস্তৃত ডালপালার বুননে এক সবুজ মৌচাক। চারিদিকে নেমে এসেছে শ্যামলীদির মতো খোলা বেণির আলুথালু চুলের জঞ্জাল। আরেকটু হলেই জানু ছোঁবে মাটি।’ নতুন গল্প।

পার্থপ্রতিম মৈত্র

রাষ্ট্রহীনের কবিতাগুচ্ছ

‘এখানে যামিনী বিল, এখানে সহস্রঘর কৈবর্তের বাস/ ঊর্ধ্বে চোখ রাখো, দ্যাখো কাঁটাতারে ঢেকেছে আকাশ/
পর্চা আছে? থাকলে ভাল। তা নাহলে খর্চা আছে জোর/ কী করে প্রমাণ করবি এই দেশ, এই মাটি তোর?’ নতুন কবিতা।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৪৮

‘মাদ্রাজে গুরুর সামনে বসে গল্প করতে করতে এই সব কথাগুলোই কেবল মনে পড়ত। ভাবতাম এ-মানুষটা যে হাসে, অভিনয় করে, গল্প করে এটাই তো একটা বিস্ময়! আর এ মানুষটা যে ঘুমোতে পারে না, এটাই তো স্বাভাবিক! যদি ঘুমোতে পারত তাহলেই আমি হয়তো বেশি অবাক হতাম।’ কেন গুরু বিনিদ্র।

সুভাষ কর্মকার

মজুত

‘বড়লোক, ছোটলোক সবাই একই জিনিসের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়েছে। মদের দেবতার চোখে সবাই সমান। দোকান থেকে বেরোলেই শুরু হয় ছোট-বড়-মাঝারি! যদিও আজকে সবাই মজুতদার। যার পেটে যতটা সয়। আজকে কারখানার মালিককে কড়কে দিতে হবে। শালা, পাঁচশো টাকায় তিনটে পেট কী করে চলে!’ নতুন গল্প।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৪৭

‘বুঝলাম, গুরু ঠিক এভাবে এই নিরিবিলিতে আর থাকতে পারছে না। সে অসহ্য হয়ে উঠেছে এই কদিনেরই মধ্যে। আমার এখানে যত ভালো লাগছে, তার তত খারাপ লাগছে। গল্প লেখা এগোচ্ছে, ওদিকে তার শুটিংও চলছে। তাস খেলতে পাচ্ছে না। আমি তাকে সমস্ত আপদ থেকে দূরে রেখেছি।’ মহাবলীপুরম্‌-এর একাকীত্ব।