ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • গোললাইন: পর্ব ১


    ডেভিড জেমস (David James) (February 14, 2021)
     
    লিভারপুলের লজ্জা

    যে-স্তরে লিভারপুল ছিল, সে-ই স্তরেই খেলছে— এই ধারণা যদি বা কারও থাকে, তা চুরমার হয়ে গেছে, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র সঙ্গে তাদের খেলার ফলাফল দেখার পরেই।

    আমি বলতে চাইছি তার আগে ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে ওদের দ্বিতীয়ার্ধের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স যদি মাথায়ও রাখেন, তারপরেও লিভারপুল এখন সব মিলিয়ে স্রেফ হতাশাজনক একটা নাম। তারপর ব্রাইটন ম্যাচে, ওরা সাদাম্পটনের বিপক্ষে যতটা বিশ্রী খেলেছিল, ততটাই খারাপ খেলেছে। আর আমার বিচারে এ মরশুমে ওটাই ওদের জঘন্যতম পারফরম্যান্স।

    এর পর এল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ম্যাচ। আমার মতে, ম্যাচের প্রথমার্ধে লিভারপুলের সামনে সুযোগ এসেছিল। ওরা গোলের সুযোগ তৈরি করছিল। কয়েকটা মুহূর্ত ওদের সেই ‘পুরনো লিভারপুল’-এর মতোই দেখাচ্ছিল। মরশুমে শুরুর দিকের মতো দুর্দমনীয়। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি সবকিছু পাল্টে দেয়। ওরা নিজেদের ফর্মেশন বদলে ফেলে। তারপরেও লিভারপুল গোল শোধ করে ম্যাচে সমতায় ফেরায়, আমাদের সবার মনে হয়েছে, ওদের একটা সুযোগ ছিল।

    কিন্তু উল্টে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি প্রথমার্ধে ওদের গুন্দোগানের পেনাল্টি নষ্টের ধাক্কা সামলে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। অ্যালিসনের সে দিন গোলপোস্টের নীচে খুব খারাপ একটা দিন ছিল। যেটা লিভারপুলের বিশ্রী হারের একটা বড় কারণ। অ্যালিসন যে বলটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে ফিল ফোডেন-এর কাছে খুইয়ে বসে, সেই ছেলেটা এই মুহূর্তে সেরা ইংরেজ ফুটবলার। সেই ফোডেন এত সুন্দর পজিশন থেকে গুন্দোগানকে ক্রস বাড়ায় যে ওর গোল না করে উপায় ছিল না। অন্য কেউ হলেও গোল করত। অন্য কোনও বিপক্ষ হলে হয়তো তার পরেও লিভারপুলকে এত বড় গুনাগারও দিতে হত না। কিন্তু কেউ যদি ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মতো টিমের বিরুদ্ধে এ রকম ভুল করে, তাহলে তো তার খেসারত দিতে হবেই। সেদিন দ্বিতীয় গোলটা খাওয়ার সময় লিভারপুলের ঠিক কী যে হয়েছিল একজনও সত্যিকারের বোঝেনি। অ্যালিসনের ওপর এমনিতে একশো শতাংশ ভরসা রাখা যায়। কিন্তু ওই মুহূর্তে ও স্রেফ ডাহা ব্যর্থ একজন মানুষ।

    অ্যালিসন নিয়ে আমি এতটা সহমর্মী, কারণ আমিও ওর পজিশনেই খেলতাম। আমিও অ্যানফিল্ডে একটা দলের বিরুদ্ধে ভুল করেছিলাম, কয়েক বছর আগে যারা হয়তো ইংলিশ লিগ জিততে পারত। লিভারপুল এবার ভুলটা করেছে ষোলোটা ম্যাচ হাতে থাকতে। এখনও ওদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু আমি যেবার ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে বড় একটা ভুল করে লিভারপুলকে বিপদে ফেলেছিলাম, তখন ওদের হাতে মেরেকেটে আর চার-পাঁচটা ম্যাচ ছিল। সেদিন আমরা যদি জিততে পারতাম, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে ছোঁয়ার সুযোগ থাকত। সুতরাং অ্যালিসনের প্রতি আমার সহমর্মিতা তো থাকবেই।

    তারপরও অবশ্য অ্যালিসন নিয়ে আমার আসল যেটা বলার, সেটা হচ্ছে ওর সম্পর্কে ম্যাচের পর য়ুরগেন ক্লপের মূল্যায়ন। সেদিন সাংবাদিক সম্মেলনে লিভারপুল ম্যানেজার বলে দেন, অ্যালিসন নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। আমি বরাবর বলে এসেছি, ক্লপ আর গুয়ার্দিওলা দু’জনেই হারুন-জিতুন কিংবা ড্র করুন, ওঁরা ম্যাচে ওঁদের দলের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে কী দারুণই না সৎ। কিন্তু ক্লপের এই কথাটা শুনে আমার ওঁকে যেন সম্পূর্ণ অন্য একজন ক্লপ মনে হচ্ছে। তুমি হারের অজুহাত দিতে পারো। মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতেও পারো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেটা হল— ভুলটাকে আরও বড় করে দেখানো হল। টিম ম্যানেজার হিসেবে তোমার প্রতিটা কথার প্রভাব দল বা প্লেয়ারের ওপর পড়ে। পড়বেই। ক্লপ যদি বলতেন, অ্যলিসন আমাদের অতীতে প্রচুর বার বাঁচিয়েছে, কিন্তু সেদিনের ঘটনাটা দুর্ভাগ্যজনক— তাহলে ব্যাপারটা সেভাবেই মনে থেকে যেত। লোকে চট করে ভুলেও যেত। কিন্তু নার্ভাস বলায়, এখন সবাই অ্যালিসনকে কিছুটা অনুপযুক্ত হিসেবে দেখবে। আর সেটা বেচারা অ্যালিসনের কাছে দ্বিগুণ হাহাকারের বিষয় হবে।

    মন-বিশ্লেষকের চোখে দেখলে ক্লপকে আমার হাসিখুশি প্রাণবন্ত লাগে। এ ব্যাপারে পেপ গুয়ার্দিওলার সঙ্গে ওঁর মিল আছে। মাস দুয়েক আগেই পেপের অভিযোগ ছিল, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি নাকি বেশি গোল করতে পারছে না। প্রচুর ম্যাচ ড্র করছে। সিটির যে কোনও ম্যাচের আগে-পরের সাংবাদিক সম্মেলনে গুয়ার্দিওলাকে তখন নেতিবাচক দেখাত। তারপর যেই ওঁর চুক্তির মেয়াদ বাড়ল, অমনি পেপ আবার খুশি মানুষ। একটা টিমের পারফরম্যান্সের ওপর কোচ কতটা প্রভাব ফেলেন, এটা তার একটা বড় উদাহরণ। ওঁরাই তো দলটাকে কোচিং দেন। দলকে সামলান। তাই ওঁদের একটা নেতিবাচক কথাও টিমের আত্মবিশ্বাসের ওপর প্রভাব ফেলে।

    আমি যদি ক্লপকে পরামর্শ দিতাম, তাহলে বলতাম, একটু হাসতে শুরু করো, একটু প্রসন্ন হও।  

    সেদিন অসাধারণ ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কাছে লিভারপুল যদি ১-২’এও হারত তাহলে অন্য কথা ছিল। কিন্তু খেলাটা মোটেই ততটা হাড্ডাহাড্ডি হয়নি। মানে যে রকম ম্যাচে দুটো দলই দারুণ ভাল ফুটবল খেলে থাকে। ক্লপের কথানুযায়ী, লিভারপুল সেদিন একটা দল হিসেবে খেলতে পারেনি। মাঠে ওদের এগারো জন প্লেয়ারকে এগারোটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ দেখিয়েছে। যার পর আমার মনে হয়েছে, তাহলে ওদের ট্রেনিং সেশনে ঠিক কী হয়? পরের লেস্টার ম্যাচ জেতার প্রস্তুতিতে লিভারপুলের অবশ্যই বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন। নয়তো ওদের এবারের মরশুমটা আরও বিপর্যয়ের দিকে চলে যাবে। 

    স্টেডিয়ামে সমর্থকদের আসতে না পারাটাও একটা তাৎপর্যের বিষয়। কিছু দল আছে, অনেক প্লেয়ার আছে, যাদের আরও বেশি ভাল খেলার জন্য দর্শক সমর্থনের দরকার পড়ে। লিডস ইউনাইটেড-এর ডিফেন্ডার লুক এলিং-এর সঙ্গে ক’দিন আগে কথা হচ্ছিল। ও বলছিল, ওরা এ মরশুমটা যেভাবে হোক প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকতে চায়। যাতে ভবিষ্যতে ওদের খেলা লোকে দেখতে পারে। অ্যাস্টন ভিলার মতো লিডসও এ বারের লিগে কালো ঘোড়া। যাদের ট্রেনিং পদ্ধতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে হয়েছে। কারণ মাঠে ওদের খেলা তেল দেওয়া মেশিনের মতো মসৃণ আর সাবলীল দেখাচ্ছে।

    প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের সামনে এর পর লেস্টার। যারা ওই ম্যাচ জিতলে লিভারপুলের চেয়ে পরিষ্কার ছ’পয়েন্টে এগিয়ে যাবে। তবুও ম্যাচটা লিভারপুলকে লিগ টেবিলে চতুর্থ স্থানে রেখে দিতে পারে। কিন্তু তারপর চেলসির ম্যাচ আছে নিউক্যাসলের সঙ্গে। এবং চেলসি আবার জিততে শুরু করেছে। সুতরাং ওদের লিভারপুলকে টপকে যাওয়ার ক্ষমতা আছে। ওয়েস্ট হ্যামের কথাও ভুললে চলবে না। ওরা একটা অদ্ভুত অবস্থায় আছে। লিগের তলার দিকের টিম শেফিল্ডের বিরুদ্ধে ওদের পরের ম্যাচ। ধরেই নেওয়া যায়, শেফিল্ড হারবে। তাহলে ওয়েস্ট হ্যামও টপকে যাবে লিভারপুলকে। দাঁড়ান, আরও আছে। এভার্টনের পর পর দুটো ম্যাচ রয়েছে। যার মধ্যে ফুলহ্যামের বিরুদ্ধে ধরে নেওয়া যায় এভার্টন জিতবে।

    কী দাঁড়াল? গতবারের লিগ সেরা লিভারপুল নেমে যেতে পারে আট নম্বরে।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook