ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • কোথায় পাব তারে


    সুপ্রিয় রায় (February 12, 2022)
     

    একজন চলচ্চিত্র পরিচালককে, শুধু তাঁর চলচ্চিত্রে নয়, খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর কাজের প্রক্রিয়াটির মধ্যেও। সিনেমার বহু স্তরে কখন তিনি কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কখন সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন এবং কেন, কীভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁর কলাকুশলীদের, সমস্যার সমাধান করছেন কীভাবে, জানলে তাঁর শিল্পভাবনা ও দর্শন সম্পর্কে আন্দাজ পাওয়া যায়। একটি প্রাথমিক আইডিয়াকে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রের অবয়ব দেওয়ার দীর্ঘ সময়টিতে কীভাবে কখনও নিতান্ত কেজো বা অপরিহার্য কারণে গল্প বা চরিত্র বদলে গেল, আবার কখনও খেয়ালখুশিতেই হয়ে গেল একটা অসামান্য বাঁকবদল? যা সকলের ভাল লাগছিল তা পরিচালক শেষমুহূর্তে বাতিল করলেন কেন, যা কেউ পছন্দ করছিল না তা রাখলেন কেন জেদ করে? এগুলো জানলে সিনেমার পাঠ ঋদ্ধ হয়। বিশেষ করে সত্যজিৎ রায়ের ক্ষেত্রে, ছবি তৈরির এই যে বিস্তারিত প্রক্রিয়া— তার প্রতিটি ধাপেই তাঁকে  খুঁজে পাওয়া যায়, এবং বহুবার ছবিগুলো দেখে ফেলার পরে প্রস্তুতির এইসব মাঝের স্তরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখতে পেলে তাঁকে ঠিকঠাক চেনা যায়, এই প্রক্রিয়ার মাঝমধ্যিখানেই তিনি আসলে বসে আছেন। কিন্তু সে সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট জানতে পারি কি? কোথায় তেমন মালমশলা? বিবরণ? বাতিল করা কাগজপত্রের আঁকিবুঁকি? সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও বদল করার সাক্ষ্য? সামগ্রিক বিচারে যা বুঝতে সাহায্য করবে, অন্তত তাঁর ধরনের সিনেমা, যা ভারতের একটি প্রদেশের সীমিত বাজারের শর্ত মেনে নির্মিত হয়েও বিশ্বস্বীকৃত, তা কেমন  করে বানাতে হয়? 

    সত্যজিৎ নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় পরিচালকদের মধ্যে একমাত্র, যিনি মোটামুটি ডকুমেন্টেড। তাঁর অধিকাংশ ছবির নেগেটিভ সুরক্ষিত, নতুন করে পুনর্গঠিত, তাঁর বেশিরভাগ চিত্রনাট্যের খাতা সংরক্ষিত হয়েছে, তাঁর সম্পর্কে বইপত্র লেখা হয়েছে অজস্র, প্রবন্ধ অগুন্তি, এখনও, যে কোনও বই বা পত্রিকায় তাঁর নাম বা ছবি দেখলেই বাজার নড়েচড়ে বসে। তাহলে কি তাঁর সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার অনেকটা আমাদের সামনে নিত্যব্যবহারের জন্য পরিষ্কার? আপাত ভাবে তা মনে হলেও, প্রযোজক সুরেশ জিন্দল-এর লেখা ‘My Adventures with Satyajit Ray— The Making of Shatranj Ke Khilari’ পড়তে গিয়ে মালুম হয়, কিছুই জানা হয়নি। বেশিরভাগটাই চোখের আড়ালে। 

    সুরেশ জিন্দল-এর লেখা ‘My Adventures with Satyajit Ray— The Making of Shatranj Ke Khilari’ বইয়ের প্রচ্ছদ

    এগুলো সম্পর্কে জানার রাস্তাগুলো কী কী? এক, স্মৃতিকথা ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সাক্ষাৎকার। এখান থেকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মূলত পাওয়া যায় কিছু গল্প, anecdote, দুপুরে কী খেতেন, শুটিং-এর আগের রাতে তাড়াতাড়ি শুতে যেতেন কি না, উত্তেজিত হলে রুমাল কামড়াতেন, না চশমার ডাঁটি, না পাইপ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা রবি ঘোষের মতো কেউ কেউ স্বাভাবিক মননশীলতার কারণেই আরও কিছুদূর গেছেন। তাঁদের লেখা থেকে জানতে পারি, সত্যজিৎ স্ক্রিপ্ট প্রথমবার পড়ার সময়ই অভিনেতা মন দিয়ে শুনলে অনেকটা কাজ এগিয়ে যেত, কারণ সুন্দর অভিনয় করে পড়তেন। 

    এতে কিন্তু  ভাবনাচিন্তার উত্থানপতন ভাল বোঝা যায় না, অজস্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অন্য সিদ্ধান্ত বাতিলের যে চলমান প্রক্রিয়া, তার হদিশ পাওয়া যায় না। তা তবু খানিকটা পাওয়া যায় সত্যজিতের নিজের লেখাপত্রে। চিত্রনাট্যের গঠনপ্রক্রিয়ার যুক্তিগত সমস্যা ও আঁক কষে চলার প্রক্রিয়ার বিবরণ পাওয়া যায় ‘চারুলতা’ ছবি প্রসঙ্গে অশোক রুদ্রর সমালোচনার প্রত্যুত্তরে লেখা তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটিতে, যা ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ সংকলনে সহজলভ্য। এছাড়াও শুটিং সংক্রান্ত নানা মজার ঘটনা নিয়ে নানা সূত্রে তিনি লিখেছেন, কখনও ছোটদের জন্য ‘সন্দেশ’-এ, কখনও নানা পত্রপত্রিকায় লেখা প্রবন্ধগুলিতে, যার অনেকগুলিই ‘Our Films Their Films’ বইতে সংকলিত। এতে তাঁর ভাবনার বেশ কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও, সেগুলো চিহ্নমাত্র, শিল্পীর নিজের কর্তব্যের লিস্টের মধ্যে তাঁর নিজের কর্মপ্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া কখনওই পড়ে না। এর বাইরে আছে তাঁকে নিয়ে লেখা অজস্র প্রবন্ধ, যাতে ছবির বিশ্লেষণ আছে, যা খুব মূল্যবান, কিন্তু যা স্বাভাবিক ভাবেই সিনেমার অন্তিম চূড়ান্ত রূপটুকু নিয়েই কাজ করেছে। আর পাওয়া যায় শুটিং দেখার মিষ্টিমধুর বিবরণ, সেখানে স্রষ্টার মনের নড়াচড়া চোখে পড়ে না। সেখানে তিনি হাসিখুশি, নিঃসংশয় এক দেবপুরুষ। সৃষ্টিশীল মানুষেরা সাধারণত এমনটা হন না।

    প্রথমে ভেবেছিলেন এই ছবির স্পেশাল এফেক্ট এমন, তাতে বাংলার প্রযোজকের সাধ্যাতীত বাজেট হবে, তাই প্রযোজনা করবে রাজ কাপুরের R K Films। সেক্ষেত্রে, পৃথ্বীরাজ কাপুর অভিনয় করবেন শুণ্ডী ও হাল্লার রাজার চরিত্র দুটিতে, কিশোরকুমার হবেন গুপী, আর অবিশ্বাস্যভাবে, শশী কাপুর বাঘা! কিশোরকুমার সময় দিতে অপারগ হওয়ায় (ভাগ্যিস!) ছবির ভাষা হয়ে গেল বাংলা, তখন ভাবনায় ছবি বিশ্বাস তুলসী লাহিড়ী এসে পড়ছেন বলে তৎকালীন সিনেমা-পত্রিকার জল্পনার একটি অসম্পূর্ণ কাটিং সাক্ষ্য দেয়।

    আরেকটা সূত্র হল, সহ-পরিচালক বা ইউনিট-সঙ্গীদের আড্ডায় বলা গল্প, বা কারও কারও ক্ষেত্রে, ইনস্টিটিউটের ক্লাসে বলা গল্প, যা মোটে রেকর্ড-ধৃত নয়, মুখে মুখে ফেরে, যার কোনও প্রামাণ্যতা নেই। এর দুয়েকটাতে শুনেছি তাঁর অজস্র আইডিয়া খুঁজে পাওয়া ও সেই নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে, হঠাৎ আইডিয়াটা পাল্টে ফেলার অভ্যেসের কথা। সুরেশের বইতে ধরা, সত্যজিতের একটি চিঠির একটি লাইনে এর সমর্থন পাওয়া গেল । ‘I think I told you in the beginning of my habit of announcing a project only after finishing the screenplay. I have scrapped dozens of stories after a period of initial enthusiasm, just because they proved unscriptable.’ আজও সেসব কাহিনির দুয়েকটা, যা তিনি নিজেই বলেছেন সাক্ষাৎকারে, (যেমন ‘দ্রবময়ীর কাশীবাস’ নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা) ছাড়া বাকিগুলোর নড়াচড়া আমাদের জানা নেই। ‘ঘরে বাইরে’ ছবি করার কথা তিনি বহুদিন ধরে ভেবেছেন, মূল পুরুষ-চরিত্রগুলোতে অভিনেতা হিসেবে নীতীশ মুখোপাধ্যায়, ধীরাজ ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে উত্তমকুমার, সৌমিত্র হয়ে একেবারে সৌমিত্র ও ভিক্টরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত। এ তাঁর নিজের ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারে পাওয়া। সিনেমার মতো পরিস্থিতি-নির্ভর শিল্পমাধ্যমে এরকম নমুনা নিশ্চয়ই আরও থাকার কথা ছিল।

    এই ধরনের কিছুটা কাজের বিবরণ পাওয়া যায়, ছড়ানো-ছিটোনো ভাবে, ‘গুগাবাবা’ প্রসঙ্গে। প্রথমে ভেবেছিলেন এই ছবির স্পেশাল এফেক্ট এমন, তাতে বাংলার প্রযোজকের সাধ্যাতীত বাজেট হবে, তাই প্রযোজনা করবে রাজ কাপুরের R K Films। সেক্ষেত্রে, পৃথ্বীরাজ কাপুর অভিনয় করবেন শুণ্ডী ও হাল্লার রাজার চরিত্র দুটিতে, কিশোরকুমার হবেন গুপী, আর অবিশ্বাস্যভাবে, শশী কাপুর বাঘা! কিশোরকুমার সময় দিতে অপারগ হওয়ায় (ভাগ্যিস!) ছবির ভাষা হয়ে গেল বাংলা, তখন ভাবনায় ছবি বিশ্বাস ও তুলসী লাহিড়ী এসে পড়ছেন বলে তৎকালীন সিনেমা-পত্রিকার জল্পনার একটি অসম্পূর্ণ কাটিং সাক্ষ্য দেয়। ‘অভিযান’ ছবি শেষ হওয়ার পর, আবার গুগাবাবা নিয়ে ভাবতে বসছেন, এবার গুপী হিসেবে ভাবছেন ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অরুণ মুখোপাধ্যায়ের কথা। নেপথ্য-গায়ক হিসেবে, যেহেতু নানা অঙ্গের গান গুপীকে গাইতে হবে, আসছে মান্না দে-র নাম। এসব তথ্য অরুণেন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘পরশমানিক’ বইতে তপেন চট্টোপাধ্যায় ও অনুপ ঘোষালের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে  জানিয়েছেন। সেই ভাবনাও বদলে  জীবনলাল বন্দ্যোপাধ্যায়  নামে গণনাট্যের এক গায়ক-অভিনেতাকে— যিনি আবার ‘দৈনিক সত্যযুগ’-এর তৎকালীন সম্পাদক— গুপীর চরিত্রে ভাবা হয়।। এরও পরে, মনে হল  মান্নার কণ্ঠ বড্ড পাকা গাইয়ের ছাপ-মারা। সহজ অথচ দক্ষ, কিন্তু খুব একটা পরিচিত নয় এমন কাউকে দরকার। পারিবারিক বৃত্তেই পাওয়া গেল অনুপ ঘোষালকে। ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় একসময় চাকরি করতেন, পরে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ, সেই সূত্রে পাওয়া গেল  তপেন চট্টোপাধ্যায়কে।  কিন্তু লোকেশন হান্টিং ও গান রেকর্ডিং-এর পরেও এই ছবি আটকে গেল। দুটো ছেলে, একজন আনকোরা, অন্যজন কমেডিয়ান, তারা আদাড়ে-বাদাড়ে ঘুরে গান গাইছে এবং ভূত নামছে, তাদের নিয়ে অমন বড় বাজেটের ছবি, নির্ঘাত ফ্লপ হবে— ধরে নিয়ে, প্রযোজক পিছিয়ে গেলেন। ‘পথের পাঁচালী’র ২৫ বছর পরে আবার যখন রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যের কথা ভাবছেন সত্যজিৎ, তখনই এগিয়ে এল পূর্ণিমা পিকচার্স।  ছবি প্রায় দু’বছর টানা চলে কলকাতায়। এই ছবির চিত্রনাট্যের প্রচুর ভাবনা, গানের খসড়া, সংলাপ, সেগুলি মূল ছবিতে রাখা ও বর্জনের কথা জানা যায় তাঁর খেরোর খাতা থেকে, যা সম্প্রতি অসামান্য দক্ষতায় ডিজিটাল রূপ পেয়েছে exploreray.org সাইটে। 

    সৌমিত্রবাবুর সাক্ষাৎকারে পাওয়া যায় তাঁর চেয়েও-না-পাওয়া কয়েকটি চরিত্রের কথা— একটি গুপী, একটি ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অশোক। গুপীর ক্ষেত্রে সৌমিত্রর ঝকঝকে আর্বান চেহারা চরিত্রের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আর ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’য় অন্তরায় হয় গল্পের যুক্তি, যে, মনীষা অশোক আর ব্যানার্জির ত্রিমুখী আকর্ষণের গল্পে, সৌমিত্র অশোকের ভূমিকায় অভিনয় করলেই দর্শক বুঝে যাবেন যে শেষ পর্যন্ত মনীষা অশোককেই বেছে নেবে। শোনা যায়, ‘নায়ক’ ছবির অরিন্দমের চরিত্রটিও সৌমিত্র আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তমকে নিলে সেই চরিত্রের সুপারস্টারডম-টা আর প্রমাণের বা ব্যাখ্যার অপেক্ষাই রাখবে না, স্ক্রিপ্টে ও প্রসঙ্গের কোনও উল্লেখ দরকারই হবে না, এই শৈল্পিক যুক্তিতে নাকি সৌমিত্র পিছিয়ে পড়েন। 

    এই ধরনের বিবরণে আভাস পাওয়া যায়, সিনেমার হয়ে-ওঠা সংশয়ময়, অনির্দিষ্ট। আভাস পাওয়া যায় জায়মান এক বাস্তবতার, যা শেষ পর্যন্ত সিনেমা-মাধ্যমটাকে বুঝে উঠতে সাহায্য করে। ‘শতরঞ্জ  কে খিলাড়ি’ সম্পর্কে প্রকাশিত প্রযোজকের স্মৃতিচারণ ও সত্যজিতের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ পত্রালাপ দেখায়, কীভাবে আসলে সিনেমা গড়ে ওঠে। একেবারে শূন্য থেকে একটা আইডিয়া, তারপরে এমনভাবে মায়া-তুলি টানা, যাতে মনে হয় একটা বাস্তব অবয়বই গড়ে উঠেছে, যাকে প্রায় যেন ছোঁয়া যায়, অনুভব তো করাই যায়, হাসিকান্না সবই সত্যি-সত্যিই পায়— এর যে চলা, তার একটা ছবি ফুটে ওঠে। সুরেশ যখন প্রথম যোগাযোগের সময় নিতান্ত কৌতূহলবশে জিজ্ঞেস করছেন, মানিকদা, আপনি কাস্ট করেন কী দেখে? ‘…his instant reply was, “The eyes, Suresh… and the walk. These are what tells us most about ourselves.”’ শেষমেশ যে  অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আমরা দেখতে পাই পর্দায়, সেখানে আবির্ভূত হওয়ার আগে কত যে সম্ভাবনা, প্রস্তাব, বিবেচনা, খারিজ, পুনর্বিবেচনা পেরোতে হয়, সেটা এই বইতে অনেকটা সামনে আসে। একটি চরিত্রে কখনও শাবানাকে ভাবছেন, কখনও ভাবছেন এত ছোট রোল বোধহয় ওঁকে দেওয়া উচিত হবে না, কখনও বলছেন শাবানা বড্ড কমবয়সি ও well-endowed (ফলে তাঁর আকর্ষণ ছেড়ে   চরিত্রটি দাবাখেলার দিকে চলে যাচ্ছেন তা দর্শকের কাছে বিশ্বাস্য না-ও মনে হতে পারে) কখনও হেমা মালিনীর নাম প্রস্তাবিত হলে উড়িয়ে দিচ্ছেন এই বলে যে ওঁকে এক মাইল দূর থেকেই দক্ষিণ ভারতীয় হিসেবে শনাক্ত করা যায়। কখনও প্রযোজক তাঁর প্রযোজিত প্রথম ও একমাত্র ছবির নায়িকা বিদ্যা সিনহার প্রসঙ্গ তুললে, সত্যজিৎ বলছেন, এই চরিত্র অমন নবাগতার পক্ষে একটু বাড়াবাড়ি হযে যাবে। ওয়াজিদ  আলি শাহ-র চরিত্রে আমজাদ খানের কথা প্রযোজক তাঁর চিঠিতে প্রস্তাব করছেন, কারণ তাঁর বাজেট সাপোর্ট করার জন্য কিছু স্টার দরকার, পরিচালক ভেবে দেখছেন আমজাদ করলে একদিক থেকে ভাল, কারণ চরিত্রের সঙ্গে চেহারায় বেশ মিল আছে, কিন্তু তারপর সন্দেহে ভুগছেন: আমজাদ তাঁর ভিলেনি থেকে বেরোতে পারবেন কি? অভিনয় ভাল হবে? গলাটা ‘শোলে’ ছবিতে বেশ ভাঙা, ওঁর আদত কণ্ঠস্বরই অমন কি? মির্জার স্ত্রীর চরিত্রে তাঁর পছন্দ মধুর জাফ্রি, অভিনেত্রী ও সৈয়দ জাফ্রির প্রাক্তন স্ত্রী, কিন্তু অত ছোট রোল ওঁকে অফার করা উচিত হবে না বলে পিছিয়ে আসছেন। জিনাত আমনও ভাবনায় চলে আসছেন, কখনও রাখী গুলজার। যেহেতু সত্যজিৎ নিজে হিন্দি বা উর্দুতে পারদর্শী নন, স্ক্রিপ্ট লিখেছেন ইংরিজিতে, তাই সংলাপ ও ভাষ্যের নির্ভরযোগ্য অনুবাদক  হিসেবে কখনও ভাবছেন গুলজারের কথা, কখনও বলছেন ও বোধহয় বড্ড বেশি ব্যস্ত, আবার কাইফি আজমি-র নাম বাতিল করছেন, তিনি হয়তো অতটা ইংরেজি জানেন না, এই কথা বলে। জেনারেল আউট্রামের চরিত্র ছোট হলেও তাতে pucca English actor লাগবে, ভাবছেন লিন্ডসে অ্যান্ডারসনের কথা, শেষমেশ সিদ্ধান্ত হচ্ছে রিচার্ড অ্যাটেনবরো ওই চরিত্রটায় অভিনয় করবেন। কাস্টিং-এর বাইরেও বাজেট, স্ক্রিপ্ট করার সমস্যা, দাবার মতো একটা ধীরলয়ের খেলাকে পর্দায় ছবির গতিকে মন্থর না করে কী করে হাজির করবেন সেই নিয়ে ভাবনা, এমনকী প্রেমচাঁদ যেহেতু ছদ্মনাম, ক্রেডিটে মুনশি লেখার দরকার আছে কি নেই— সব মিলিয়ে, ছবি করার আসল যে রোমাঞ্চ, একটা ভাবনাকে পর্দায় অনুবাদ করার প্রত্যেক মুহূর্তের যে অজস্র সম্ভাবনা ও বাঁকবদল— তার একটা বিস্তৃত চেহারা এই চিঠিগুলোতে পাই।

    গত শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগের  দেদীপ্যমান উত্তমকুমারকে, ‘চিড়িয়াখানা’য় সাপ-হাতে একটি দৃশ্যে, শট শেষ হওয়ার পর প্রশংসা করেও সত্যজিৎ: ‘আরেকটা নিয়ে নিই?’ বলে একবার লুক-থ্রু করেই আবার কালো কাপড় সরিয়ে বলেন, ‘ওঠাটা আরেকটু খেলিয়ে ভাই, আরেকটু খেলিয়ে…।’ বোঝাই যায়, আগেরটা তত পছন্দ হয়নি, তবু প্রশংসা করেছেন, যাতে আর্টিস্ট না উদ্বিগ্ন হন। এটা নতুনদের  ক্ষেত্রে করতেন জানা যায়, মহানায়কের ক্ষেত্রেও? এমনকী ‘নায়ক’-এর পরেও?

    এই ছবির আউটডোরের একটা বড় অংশ ছিল লখনৌ শহরে, সত্যজিৎ এবং মূল ইউনিট ও অভিনেতারা উঠেছিলেন ক্লার্কস আওধের মতো উচ্চবর্গের হোটেলে। সেখানে বাসা নিয়েছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও, একটি বিখ্যাত দৈনিকের পক্ষ থেকে শুটিং কভার করার দায়িত্ব নিয়ে। ২৪ জানুয়ারি ১৯৭৭ লখনৌয়ে শুটিং শুরু হওয়ার প্রথমদিন অকালবর্ষণে ধুয়ে গেল। এমনকী পরের দিনটাও প্রায় কাজ করা গেল না। আউটডোরে সঞ্জীবকুমার, আমজাদ খান ও সৈয়দ জাফ্রির মতো তারকা নিয়ে দুদিন শুটিং নষ্ট হওয়ার পরেও, নীরেন্দ্রনাথ লক্ষ করছেন এক হাসিখুশি, নিশ্চিন্ত ইউনিটকে— সত্যজিৎ ঘুরে ঘুরে খুঁজছেন সেকালের-গন্ধওলা গলি, দেখাচ্ছেন আশ্চর্য পান রাখার কৌটোর প্রপ, প্রযোজক সুরেশ জিন্দল হাসিমুখে এসে ঝনাৎ করে ঢেলে দিচ্ছেন নবাবি আমলের রুপোর মোহর। আর সুরেশের বই অনুযায়ী, এই দিনগুলি অত্যন্ত অসন্তোষের। বইয়ে এই দিনগুলি প্রযোজক ও পরিচালকের প্রকাশ্য মনান্তর ও ইউনিটের গোলমেলে আচরণের বর্ণনায় পরিপূর্ণ। ক্লার্কস একমাত্র পাঁচতারা হোটেল, সেখানে প্রযোজক, পরিচালক, তারকা অভিনেতা এবং প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের প্রধানদের থাকবার ব্যবস্থা। বাকিরা অন্য হোটেলে। প্রথম দিনই আধঘণ্টা দেরিতে এল ইউনিট, শোনা গেল, যথেষ্ট গরম জল হোটেলে পাওয়া যায়নি বলে স্নানের দেরি হয়েছে। দ্বিতীয় দিনও একই ঘটনার পর ক্ষিপ্ত হয়ে সত্যজিৎ জানতে চাইলেন কারণ। উত্তর এল, ব্রেকফাস্টে  ডিমভাজা ঠান্ডা হওয়ায় সেগুলো ফেরত দিয়ে নতুন করে আবার অর্ডার দিতে দেরি। উত্তেজিত সত্যজিৎ এবার প্রযোজক সুরেশের দিকে তাকিয়ে হাঁক দিলেন, ‘This is very bad’ . এই ধরণের বিশ্রী অশান্তি বারবার এসেছে এই শুটিং এর নানান ধাপে, কখনও শ’খানেক টাকার সিগারেটের দাম, কখনো প্রোডাকশন কন্ট্রোলার অনিল চৌধুরীর বকেয়া বিল, এসব কারণে।  এসব বর্ণনা পড়ে মিলিয়ে দেখতে গেলে আশ্চর্য লাগে, এই সময়েই একদম রিল্যাক্সড সত্যজিৎ ছবির শুটিং চলাকালীন চিত্রনাট্যের কপি পড়তে দিচ্ছেন নীরেন্দ্রনাথকে এবং আলোচনা করছেন ছবির কেন্দ্রীয় বিষয়— তৎকালীন মানুষের non-engagement’-এর থিম নিয়ে। এই যে নানাদিক থেকে দেখার সুযোগ— এটাই সত্যজিতের অন্য কোনও ছবির ক্ষেত্রে নেই।

    এই বইয়ের অমূল্য সম্পদ হল,  এখানে সত্যজিৎকে অকারণে মহান করে দেখানোর কোনও আলাদা গা-জোয়ারি প্রয়াস নেই। তাঁর মহত্ত্বের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থা রেখেও, তাঁকে মহানুভব করে দেখানোর তাগিদ নেই। বইটিতে দেওয়া বিবরণে তাই অনায়াসে ঠাঁই পায় বংশী চন্দ্রগুপ্ত বাড়াবাড়ি বাজেট বা সময় চাইলে তাঁকে বাতিল করে অশোক বসুকে আর্ট ডিরেক্টর করার পরিকল্পনা, বম্বে ছেড়ে কলকাতায় শুটিং করে খরচ কমানোর চেষ্টা, বাড়িভাড়া নিয়ে হোটেল-খরচ কমানোর বুদ্ধি, এমনকী রিলিজের পর ছবি আশানুরূপ সফল না হওয়ায় হৃষীকেশ মুখার্জি, শ্যাম বেনেগাল ও শশী কাপুরের প্রতি সত্যজিতের অভিযোগের কথা। এই সংশয়দীর্ণ, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও চাপে-থাকা সত্যজিৎকে অন্য কোনও বইতেই বিশেষ পাওয়া যায় না। এতে তাঁর মহিমা কমে না, বরং বিশ্বাসযোগ্য এক স্বাভাবিক মানুষ ও শিল্পী বলে মনে হয়।

    তাহলে এভাবে দেখার সুযোগ তাঁর অন্য ছবিগুলোর  ক্ষেত্রে নেই কেন? প্রযোজকদের মধ্যে একমাত্র সুরেশকেই তিনি চিঠি লিখেছেন, এটা বিশ্বাস করা শক্ত। বস্তুত এই বইতেই আমরা পাচ্ছি সৈয়দ জাফ্রি, ও  রিচার্ড অ্যাটেনবরোকে   লেখা সত্যজিতের বেশ কিছু চিঠির উল্লেখ— যা আজ আর আমাদের হাতে আসার সুযোগ নেই বললেই হয়। অনুমান করা যেতেই পারে, বিশেষত রিচার্ড ও সৈয়দের ক্ষেত্রে, এই চিঠিগুলিতে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন চরিত্র, যুগ, কস্টিউম, কিংবা মুদ্রাদোষের কথা, যাতে শিল্পী খানিকটা প্রস্তুতি নিতে পারেন আগেভাগেই, শুটিং-এর সময় না নষ্ট হয়। এমন চিঠি কি তিনি ওয়াহিদা রহমান বা সিমি গারেওয়ালকে লেখেননি? বা কলকাতায় উপস্থিত শিল্পীদেরও কি চিত্রনাট্য পড়ে শোনানো ছাড়া ছোটখাটো নির্দেশ দেননি, যা তাঁরা লিখে রাখতে ভুলে গিয়ে, চিরতরে চলে গেছেন?

    পরিচালক তাঁর অভিনেতা-অভিনেত্রী ও অন্য কলাকুশলীকে অজস্র নির্দেশ দেবেনই, দিয়েছেনও যে তার প্রমাণ ধরা আছে অতি সামান্য কিছু ফুটেজে, যা ইদানীং পাওয়া যায়। যেমন শ্যাম বেনেগাল-এর করা তথ্যচিত্রে ‘ঘরে-বাইরে’র শুটিং-এর অংশ ও উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর ‘Music of Satyajit Ray’ ছবিতে  ধরা  স্টুডিওতে মিউজিক রেকর্ডিং-এর দৃশ্য। সেখানে অজস্র টিপস, ভাবনা, সিদ্ধান্ত, অসন্তোষ, প্রবল মনঃসংযোগ ও দক্ষতার সঙ্গে কার্যোদ্ধারের একটা ছবি ফুটে ওঠে। এরকম ফুটেজ আছে ‘শাখাপ্রশাখা’ ছবিরও, সামান্য অংশের, আর ফিল্মস ডিভিশনের বিরলদৃষ্ট তথ্যচিত্রটিতে ‘চিড়িয়াখানা’ ও ‘মহানগর’-এর। পরিমাণে অত্যন্ত কম, যাতে বোঝা যায় আরও বেশি করে পেলে কত উপকৃত হত পরবর্তীকাল। উত্তমকুমার ও শৈলেন মুখোপাধ্যায়কে সংলাপ পড়াচ্ছেন, মুখে ধৈর্যহীনতা, সংশয় ও বিরক্তির ছাপ, যে ছাপের কথা ‘আউটডোর’ বইতে লিখেছেন নীরেন্দ্রনাথ, ‘একটি দৃশ্যকে তিনি যেমন ক’রে ধরতে চান, ঠিক তেমন ক’রে ধরতে না পারা পর্যন্ত তাঁর ওষ্ঠ কীভাবে বিরক্তিতে বেঁকে থাকে; আবার আলো-ছায়ার সঠিক অনুপাত থেকে সঞ্জাত সামঞ্জস্যের মধ্যে কোনো দৃশ্যকে বন্দি করতে পারার সঙ্গে-সঙ্গেই তাঁর দৃষ্টিতে কীভাবে তৃপ্তি ছড়িয়ে যায়।’ এই ফুটেজেরই আরেক অংশে দেখি, গত শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগের  দেদীপ্যমান উত্তমকুমারকে, ‘চিড়িয়াখানা’য় সাপ-হাতে একটি দৃশ্যে, শট শেষ হওয়ার পর প্রশংসা করেও সত্যজিৎ: ‘আরেকটা নিয়ে নিই?’ বলে একবার লুক-থ্রু করেই আবার কালো কাপড় সরিয়ে বলেন, ‘ওঠাটা আরেকটু খেলিয়ে ভাই, আরেকটু খেলিয়ে…।’ বোঝাই যায়, আগেরটা তত পছন্দ হয়নি, তবু প্রশংসা করেছেন, যাতে আর্টিস্ট না উদ্বিগ্ন হন। এটা নতুনদের  ক্ষেত্রে করতেন জানা যায়, মহানায়কের ক্ষেত্রেও? এমনকী ‘নায়ক’-এর পরেও?

    আট মিলিমিটারের ক্যামেরায় অনেকসময় শুট করে, এডিট করে Making of… গোত্রের ছোট ছবি করে সন্দীপ রায় বাড়িতে দেখিয়েছেন, এমন কথা তাঁর সাক্ষাৎকারে পড়া যায়। এ তো নিঃসন্দেহেই রত্নখনি, শতবর্ষে এগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে, এ আশা নিশ্চয়ই অসঙ্গত নয়। ‘পিকুর ডায়রি ও অন্যান্য ’ বইটিতে পাশাপাশি ‘পিকুর ডায়রি’ গল্পটি ও তার ভিত্তিতে নির্মিত ‘পিকু’ছবির চিত্রনাট্য পাওয়া যায়, বইয়ের পৃষ্ঠটীকাতেই  এই দুইয়ের  মধ্যে চিত্তাকর্ষক বেমিলের উল্লেখ রয়েছে। এই বইতেই প্রকাশ পায় ‘শাখা প্রশাখা’র প্রথম ও অসমাপ্ত খসড়া। শেষ পর্যন্ত বহুকাল পরে যে ছবিটি হয়ে উঠবে, তার সঙ্গে এই সিকি-খসড়াটিরও অজস্র অমিল। চিত্রনাট্যের এই খসড়া শেষই হচ্ছে আনন্দমোহনের মৃত্যুতে, প্রায় গল্পের চরিত্রগুলোর পরিচয় পেতে না পেতেই। হয়ে-ওঠা ছবিটির প্রথম দৃশ্যের অ-সত্যজিৎসুলভ বিবরণমূলক সংলাপও এই অসমাপ্ত স্ক্রিপ্টে  নেই। সত্যজিতের সেরা  ছবিগুলিতে যেমনটা হয়, এবং সম্পূর্ণ-হওয়া  শাখাপ্রশাখা ছবিতে যা হয়নি, এই খসড়া চিত্রনাট্যটিতে কিন্তু  স্বাভাবিক সংলাপের ফাঁকেফাঁকেই চরিত্রগুলি, তাদের সম্পর্ক, আর্থিক বা সামাজিক অবস্থান, পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে তথ্যজ্ঞাপন করা হয়। অথচ, মূল ছবিতে প্রারম্ভিক দৃশ্যে কয়েকটি  লম্বা সংলাপে আনন্দমোহনকে আমরা গোটা backstory বলতে দেখি। খসড়া চিত্রনাট্যের একেবারে শুরুতেই নোট করে রাখা ব্যাকস্টোরির বহু তথ্যই এই অসমাপ্ত খসড়ায় আসার আগেই এটি  শেষ হয়ে গেছে।  

    শোনা যায়, প্রবন্ধ বা গল্পের অন্তত তিনটি, ছবির ক্ষেত্রে অনেক সময় সাত-আটটি খসড়া করতেন সত্যজিৎ। ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় প্রকাশের সময় সম্পাদকীয় বিবৃতিতে প্রকাশের ক্ষেত্রে এই সব সমস্যার কিছু ইঙ্গিতও দেওয়া ছিল দুয়েকবার, যতদূর মনে পড়ে। এসব নানা খসড়ায় কী পাল্টাল, কেন পাল্টাল, কীভাবে প্রথম আঁচড় থেকে যুক্তি ও মুডের তাগিদে পাল্টাতে থাকে চিত্রনাট্য, কীভাবে একদিনের পিকনিকের গল্প ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ হয়ে উঠে পাড়ি দেয় দার্জিলিং-এ, তার স্তরগুলো, শুধু গবেষণার স্বার্থেই, প্রকাশের জোরালো দাবি কি রাখে না? 

    বিদেশে হলে হয়তো তাঁর পড়া বই, বইয়ে দেওয়া দাগ, মার্জিনের নোট এবং সবাইকে লেখা চিঠিপত্রও ইতিমধ্যে দেখতে পাওয়ার সুযোগ হত। এদেশে তিনি শুধুই ভারতরত্ন, শুধুই শতবর্ষীয়ান, শুধুই অতীত— আজকের চিত্রনাট্যকার ন্যূনতম সুযোগেই তাঁর ছবির জনপ্রিয় দৃশ্য বা সংলাপগুলিকে যত্রতত্র ট্রিবিউট দেবেন, এর বেশি কি তাঁর কাছে বর্তমানকালের কিছুই পাওয়ার নেই? 

    ঋণ: Adventures with Satyajit Ray— The Making of Shatranj Ke Khilari

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook