ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • জন্মস্থান কলকাতা: সিদ্ধার্থ বসু


    জয় ভট্টাচার্য (Joy Bhattacharjya) (April 17, 2021)
     

    সেটা আশির দশকের মাঝামাঝি, দূরদর্শনের প্রথম দিকের কথা। আইটিভি থেকে ‘সেফক্র্যাকার’ নামে একটা কুইজ শো-র পাইলট এপিসোড তৈরির তোড়জোড় চলছিল। শো-টির সঞ্চালনার দায়িত্ব ছিল পার্থ বসুর ওপর, যিনি তখন ছিলেন বিখ্যাত মোটলি ক্রু টিম-এর সদস্য। শো-র প্রযোজকরা এমন একজন লোক চাইছিলেন, যিনি কুইজ মাস্টারকে দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন, শো-র শুরুটাকে একটু প্রাণবন্ত করে, দর্শকদের বেশ উত্তেজিত করে তুলবেন। কাজটি করে দেওয়ার জন্য তাঁরা এক বন্ধুকে অনুরোধ করলেন। বন্ধুটি তাজ হোটেলের এক ম্যানেজার। উনি কোট-টাই পরেই অফিস করছিলেন, দশ মিনিটের নোটিসে তাজ বেঙ্গল থেকে তাঁর মোপেডটি চড়ে পৌঁছে গেলেন কামানি স্টুডিওয়। দারুণ উপস্থাপনা করে, এক ঘন্টার মধ্যে নিজের কাজের জায়গায় ফেরত চলে গেলেন।

    সেই পাইলট এপিসোডে বেশ কিছু চেনামুখ ছিলেন। অ্যাকাডেমিক কান্তি বাজপেয়ী, সাংবাদিক অনিতা কউল বসু আর পরান বালাকৃষ্ণণ— এঁরা ছিলেন অংশগ্রহণকারী। সাগরিকা ঘোষ ছিলেন স্কোর-কিপার এবং পার্থ বসু ছিলেন কুইজ মাস্টার। কিন্তু পাইলট এপিসোডটি দেখার পর আইটিভি-র কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, শো-টিকে সত্যিকারের সফল করে তুলতে পারেন শুধু সেই মানুষটি, যিনি শো-র গোড়ায় কয়েকটি কথায় শো-টাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা আইটিভিতে সেই উপস্থাপককে বেশ মোটা মাইনের চাকরি দিলেন। এপিসোড পিছু বরাদ্দ হল ১০০০ টাকা। এবং সেই সঙ্গেই জন্ম নিল ‘কুইজ টাইম’।

    সত্যি কথা বলতে কী, ততদিন অবধি সিদ্ধার্থ বসু নিজেকে তৈরি করছিলেন ভবিষ্যতের অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে। বদলির চাকরিওয়ালা বাবার দৌলতে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় স্কুলের পড়া শেষ করে, তিনি দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে গ্র্যাজুয়েশনে ভর্তি হন। কলেজে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই থিয়েটারের নেশায় মেতে ওঠেন। ব্যারি জন-এর থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সিদ্ধার্থ। সেনেকার বয়ান অবলম্বনে কবি টেড হিউজ-এর লেখা নাটক ‘ইডিপাস’-এ মূল চরিত্রটি অভিনয় করে মঞ্চ মাতিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। দিল্লি থিয়েটারে তখন একটা উন্মাদনার যুগ। থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপে তখন মনোহর সিং, রোশন শেঠ, পঙ্কজ কপূর, লিলেট দুবে, মীরা নায়ার-এর মতো মানুষেরা কাজ করছেন, এবং ‘বাবু’— বন্ধুরা সিদ্ধার্থকে যে নামে ডাকত এবং চিনত— ছিলেন এই গ্রুপের উজ্জ্বল নক্ষত্র।

    ইডিপাস নাটকে রাজা ইডিপাসের ভূমিকায় সিদ্ধার্থ বসু

    ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করার পর বাবু কিছু বছর টিভিএনএফ-এর সঙ্গে ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বাবু ও তাঁর কলেজ-প্রেমিকা অনিতা কউল স্থির করেন, সংসার পাততে হলে তাজ গ্রুপের মতো একটা বড় সংস্থায় বাবুর একটা স্থায়ী চাকরি দরকার। 

    ওঁদের বড় ছেলে আদিত্য জন্ম নেয় কুইজ টাইম-এর প্রথম শিডিউলের ঠিক পরে, ১৯৮৫ সালে। আর আদিত্য হাঁটতে শেখার আগেই কুইজ টাইম হয়ে উঠল একটি দুর্দান্ত সফল শো। কুইজ-কে এতদিন স্রেফ স্কুল-কলেজের একটা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি হিসেবে দেখা হত, শুধু কলকাতায় ডালহাউসি ইনস্টিটিউট-এ একটা ওপেন কুইজ সার্কিট ছিল। কিন্তু বাবুর ঝকঝকে চেহারা আর তুখড় কথা বলার দৌলতে, প্রতি রবিবার রাত ন’টায়, এদেশের ঘরে ঘরে কুইজ ঢুকে পড়ল।

    কুইজ টাইমের প্রথম সিজনে এখনকার অনেক সেলেব্রিটি ছিলেন। যেমন রাজদীপ সরদেশাই আর রঘুরাম রাজন এসেছিলেন বম্বে সেন্ট জেভিয়ার্স-এর প্রতিনিধি হয়ে, আর জয়ন্ত সিনহা এসেছিলেন আইআইটি দিল্লি থেকে। কিন্তু বাবুই ছিলেন আসল তারকা। 

    শো-টা সফল হল কী করে? সত্যিটা হল এই যে, টেলিভিশন হোক বা লাইভ ইভেন্ট— সব কুইজ শো-তেই, এতদিন কুইজ মাস্টার দর্শকদের দিকে পেছন ফিরে, শুধু কুইজ টিমগুলোর দিকে তাকিয়ে, হাতে একটা চিরকুট নিয়ে, তা থেকে দেখে দেখে প্রশ্ন পড়তেন। আর কুইজের বিষয়গুলিও সাধারণ মানুষকে খুব টানত না। এবং বহু বছর ধরে কলেজ এবং ওপেন কুইজের ধারাটা ঠিক এইরকমই ছিল। 

    বাবু কুইজের দুনিয়ায় তুলনামূলক ভাবে নতুন, তাই তিনি প্রত্যেটি কুইজকে এক-একটি স্টেজ-উপস্থাপনার মতো করেই দেখতেন। এমন একটা শো তৈরি করতেন, যেখানে স্টেজে বসা বইপোকাদের তুলনায় দর্শকদের গুরুত্ব বেশি। পাঁচ বছর ধরে কুইজ টাইম চলার সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘লাইভ কুইজ’ করতেন বাবু। প্রতি শো-এ দারুণ সব মিউজিক বাজত, ঝলমলে আলো পড়ত, আর নাটকীয় ভাবে কুইজ মাস্টার স্টেজে প্রবেশ করতেন। এবং এই ধারাটাই কুইজ-শো’র নতুন দর্শক তৈরি করল। আমার মনে আছে শিলচর গিয়ে এক্কেবারে হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম যখন দেখলাম, কুইজ টাইমের জনপ্রিয়তার দরুন, বিভিন্ন কুইজ শো লোকে টিকিট কেটে দেখতে আসছে! এবং কুইজ টাইমের কবিতা আগরওয়াল এবং রাধা শেঠ-কে দেখে, মেয়েরা কুইজ শো-র স্কোর-কিপার হওয়ার জন্যও হুড়োহুড়ি করছে! এই কুইজ শো-গুলি দেশে প্রথম কম্পিউটার ব্যবহার করে স্কোর রাখত। এবং এরকমই একটি ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ড কুইজ’-এ, কম্পিউটার ব্যবহার করে স্কোর রেখেছিল চেতন ভগত নামের একটি ছেলে।   

    যখন কুইজ টাইম নিয়মিত একটি শো হয়ে উঠল, তখন বাবু এবং অনিতা কউল বসু, ওঁদের নিজেদের সংস্থা খুললেন— ‘সিনার্জি’। এবং সেই সংস্থার ব্যানারে তৈরি করতে লাগলেন কুইজ শো’গুলো। সত্যি সত্যিই মাত্র তিনজন তখন কাজ করতেন— বাবু, অনিতা, আর করুণ প্রভাকর। করুণ আর অনিতা দেখতেন প্রোডাকশন, অ্যাকাউন্টস, অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সব কাজকর্ম, আর বাবুকে পুরোপুরি এসব থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি দুর্দান্ত শো ভাবতে ও তৈরি করতে পারেন। বাবু যে কী খুঁতখুঁতে ছিলেন, ভাবা যায় না!

    বাবু যেহেতু আদতে থিয়েটারের লোক, প্রতিটি খুঁটিনাটি যেন একদম ঠিকঠাক থাকে, সে বিষয়ে তাঁর কড়া নজর ছিল। এবং আশ্চর্য হল, তিনি ঠিক সেই রকম জায়গা এবং তেমন-তেমন লোক খুঁজে বার করতেন, যারা শো-টিকে ওঁর পছন্দসই এবং নিখুঁত করে তুলত। এই নিখুঁত করে তোলা মানে এও হতে পারে— প্রায় ১০০ জন টেলিভিশন-কর্মীর দল নিয়ে মাস্টরমাইন্ড কুইজের ফাইনাল এপিসোড শুট করা, নিমরানা ফোর্ট বা জয়পুরের সিটি প্যালেসে। কিংবা ‘স্কুল অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড আর্কিটেকচার’ থেকে এমন একজন গ্র্যাজুয়েটকে খুঁজে বের করা, যাঁর সঙ্গীত সম্বন্ধে অগাধ জ্ঞান, যিনি শো-টাকে দুরন্ত করে তুলবেন। শাওন দত্ত এখন খুব বিখ্যাত তাঁর ‘বেঙ্গলি আন্টি মেট্রোনোম’ ভিডিওগুলির জন্য, যেখানে তিনি বোরোলীন অথবা বাঙালির কষামাংস-প্রীতি নিয়ে গান তৈরি করেন। কিন্তু তাঁর প্রথম কাজ ছিল সিনার্জির শো-গুলোর জন্য সঙ্গীত তৈরি করা। 

    স্কুলে পড়ার সময় যাঁকে দেখে প্রায় প্রেমে পড়ে গেছিলেন, সেই সিদ্ধার্থের সঙ্গে ‘জুম স্টুডিও’তে যখন দেখা হল, বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলেন শাওন। তখন তিনি তাঁর ডেমো টেপ নিয়ে স্টুডিওতে স্টুডিওতে ঘুরছেন। সিদ্ধার্থ তাঁকে কাজ দিলেন, আর তারপরেই শাওনের হোম স্টুডিওতে পৌঁছে গেলেন, কারণ শাওন যখন সঙ্গীত তৈরি করবেন, তক্ষুনিই উনি সেগুলো শুনবেন। দশ মিনিট পরেই শাওন বলেন, এভাবে তিনি কাজ করতে পারবেন না। বাবু তখন চলে যান, কিন্তু বলেন, তিনি বিকেলে ফেরত আসবেন। স্টুডিওতে তালা মেরে শাওন অন্য কোথাও চলে যান কাজ করতে। ফিরে এসে দেখেন, বাবু তাঁর জন্য সিঙাড়া, মিষ্টি এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে একটা সুন্দর চিরকুট রেখে গেছেন। বরফ গলে যায়। শাওন এবং বাবু, দুজনেই আদ্যন্ত পার্ফেকশনিস্ট, এর পর বহু অনুষ্ঠানে একসঙ্গে কাজ করেছেন।

    সিনার্জি ‘ঘরানা’র আরও কিছু ফসলের মধ্যে নাম করতে হয় করুণের কলেজের উঠতি ফুটবলার ভগত সিং-এর, যিনি কল্পনায় ছবি দেখতে পেতেন, মানে অনেক কিছু দুরন্ত ভিশুয়ালাইজ করতে পারতেন। সিনার্জির প্রযোজনা ‘স্টাইল টুডে’-তে সুজিত সরকার একজন এডিটর ছিলেন, এবং প্রসিদ্ধ চিত্রপরিচালক হয়ে ওঠার আগে তিনি সিনার্জির বহু কাজ পরিচালনা করেছেন। বাণিজ্য সাংবাদিক হিসাবে খ্যাতিলাভের আগে শিরীন ভান ‘আ কোয়েশ্চেন অফ আন্সারস’-এ একজন গবেষক ছিলেন। অভিনেতা জয় সেনগুপ্তকেও বাবু সঞ্চালনার কাজে ব্যবহার করেছেন।   

    আমার সঙ্গে সিদ্ধার্থ বসুর প্রথম দেখা হয় ‘কুইজ টাইম’ শুরু হওয়ার তিন বছর পর। ততদিনে সিনার্জি সংস্থাই অনুষ্ঠানটা প্রযোজনা করছে। হাউজ খাসে একটা স্টুডিও-তে শুটিং হত। প্রথম দেখায় আমার বলা প্রথম বাক্যটা আমার মনে নেই, কিন্তু দ্বিতীয় বাক্যটা স্পষ্ট মনে আছে: ‘আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’ শুনে বাবু তাঁর হাই-ভোল্টেজ হাসিটা হেসেছিলেন, এবং অত্যাশ্চর্য ভাবে, এক দশক পর, আমি বাবুর সঙ্গে কাজ করতে শুরু করি।

    কাজটা সহজ ছিল না। প্রতিটি খুঁটিনাটির দিকে বাবুর দৃষ্টি ছিল এবং অন্যের কাছ থেকেও সেই পরিমাণ মনোযোগ দাবি করতেন— এ জিনিস আমার মতো গা-এলানো কলকাতার কুইজারকে পাগল করে দিতে বাকি রেখেছিল। একটা প্রশ্ন দেখে হয়তো তিনি বলবেন, খুব ভাল প্রশ্ন, কিন্তু আরও দুটো উৎস খুঁজে পাওয়া উচিত নয় কি? এছাড়া, অনুষ্ঠানে স্পন্সরদের গুরুত্ব সম্বন্ধে আমার কোনও ধারণাই ছিল না। একবার, স্যাটারডে ক্লাবে, নোকিয়ার জন্য, আমি একটা কুইজ বানিয়েছিলাম। উপস্থাপনা করবেন বাবু। এই কুইজে যে-রাউন্ডটা আমার একটু একঘেয়ে মনে হয়েছিল সেটা ছিল নোকিয়া কমিউনিকেশনস রাউন্ড, এবং আমি দিব্যি সেটা বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার কুইজ তৈরির ক্ষমতার উপর বাবু যথেষ্ট আস্থাশীল ছিলেন, তাই তিনি কুইজ শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে ক্লাবে এসে পৌঁছন, এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, নোকিয়া কমিউনিকেশনস রাউন্ড-টা কত নম্বরে রেখেছি। যখন আমি তাঁকে মহানন্দে বলি যে গোটা রাউন্ডটাই বাদ দিয়ে দিয়েছি, বাবু আঁতকে ওঠেন। এর পরের ঘটনা, বাবু মঞ্চে উঠে সঞ্চালনা শুরু করেন, আর আমি ব্যাকস্টেজে পাগলের মতো আর একটা রাউন্ড তৈরি করতে থাকি। সেবার উতরে যাই, এবং বাবু এমন ভালমানুষ যে, এই ঘটনাটা নিয়ে আর কোনওদিন কথা বলেননি।  

    কুইজিং-এর ক্ষেত্রে বাবুর সবথেকে বড় অবদান ছিল, তিনি এটাকে বইপোকা-ছেলেপুলে বা গ্রাম্ভারি প্রাপ্তবয়স্কদের কাজ হিসেবে না দেখে, খেলাটাকে একেবারে অন্যরকম দর্শকদের কাছেও পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন, অনেক অনেক মানুষকে কুইজের প্রতি উৎসাহী করে তুলতে পেরেছিলেন। বাবুর ভাবনায়, কুইজ ছিল কিছু পৌঁছে দেওয়ার একটা মাধ্যম। এবং তাই তাঁর কিছু প্রকল্প ছিল— নব্য-সাক্ষরদের জন্য তৈরি ‘অক্ষর মেলা’, যা দূরদর্শনে দেখানো হত; তিহার জেলের বিচারাধীন বন্দিদের জন্য তৈরি বার্ষিক কুইজ, যার সঞ্চালক ছিলেন অভিনেতা গজরাজ রাও এবং রাধা শেঠ; এবং ‘ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার’-এর বৈজ্ঞানিকদের জন্য তৈরি কুইজ, যা ওই ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হত।  

    জি-এর জন্য ‘কিসসা কুর্সি কা’ নামে লোকসভা সাংসদদের জন্য কুইজ শো তৈরি করেছে সিনার্জি, যেখানে সাংসদেরা স্টেজে ওঠার আগেই বারবার ঠিক উত্তরগুলো জেনে নিতে চাইতেন। সিনেমার উপর তৈরি করেছে একটা কুইজ শো, যার সঞ্চালক ছিলেন বোমান ইরানি, যিনি (নিজের ভাষায়) ‘ফিল্ম ট্রিভিয়া’-র পোকা। ‘নিউজউইজ’ নামের সাম্প্রতিক ঘটনার শো সঞ্চালনা করেছেন রাজদীপ সরদেশাই।  

    এছাড়া, ভারতীয় টেলিভিশনের তারকা কুইজ সঞ্চালকদের কানে কানে যিনি শো-চলাকালীন সবচেয়ে জরুরি পরামর্শগুলো দেন, তিনি বাবু। শাহরুখ খান, সলমান খান, অমিতাভ বচ্চন— সবার ক্ষেত্রে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই দশক এবং আটশো-র কাছাকাছি এপিসোড পেরিয়ে যাওয়ার পরেও, অমিতাভ আজও বাবুর কথা অক্ষরে-অক্ষরে পালন করেন, এবং আজও অমিতাভকে আগে থেকে বলে দেওয়া হয় না, উত্তরগুলো ঠিক না ভুল। অমিতাভের উচ্চারণের এবং সঞ্চালনার সমস্ত দিকগুলো বিশদ আলোচনা করে নেন বাবু, তাই শেষ অবধি তা এমন অসামান্য রূপ পায়। তাঁর শো-র গবেষক এবং প্রযোজকেরা কিছুটা হয়তো দুঃখের সঙ্গেই জানাবেন, বাবুর ডিটেলের প্রতি মনোযোগ কী নাছোড়, তা সেই ডিটেল যতই অকিঞ্চিৎকর মনে হোক না কেন।  

    কৌন বনেগা ক্রোড়পতিমঞ্চে (বাঁদিক থেকে) সিদ্ধার্থ বসু, জয় ভট্টাচার্য এবং অমিতাভ বচ্চন

    এই বছরের জানুয়ারি মাসে আমি বাবু আর অনিতার নতুন প্রকল্প ‘ট্রি অফ নলেজ’ নামের কুইজ শো-র প্রাথমিক রাউন্ডগুলো সঞ্চালনা করছিলাম। উত্তেজিত ছিলাম, আবার ব্যাপারটা জমবে কি না তা নিয়ে একটু সন্দিহানও ছিলাম, কেননা এটা আমার জুম-এ করা প্রথম লাইভ সঞ্চালনা, যা বাবু রিমোট-পরিচালনা করছিলেন। পরিশ্রম হয়েছিল, কিন্তু এপিসোডগুলো বেশ ভাল দেখতে লাগছে, জেনে আমি খুশি হয়েছিলাম। সব শেষ হওয়ার দু’সপ্তাহ পরে, বাবু আমাকে বলেন, শো-টা লঞ্চ করতে হবে একটা ফেসবুক লাইভ ইভেন্টে। তারপরেই বাবু আলোচনা করতে লাগলেন, নির্দিষ্ট রাউন্ডগুলো কেমন হয়েছিল, এবং কোন স্কুল কীরকম উত্তর দিয়েছিল। আমি তো একেবারে ধাঁ, কারণ আমার কিছুই মনে পড়ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই বাবু বুঝতে পারলেন, আমার সঞ্চালনা করা শো-এর ব্যাপারে তিনি আমার চেয়ে ঢের বেশি জানেন। উনি খুবই শান্তভাবে বললেন, ইউটিউবে এপিসোডগুলো একটু ভাল করে দেখে নিতে।

    আমি তাই কররলাম। বাবু বলে কথা। তাঁর কথা তো কক্ষনও ফেলতে পারি না! 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook