ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিন্দাসিনী: পর্ব ৪


    অনুষা বিশ্বনাথন (Anusha Vishwanathan) (April 9, 2021)
     
    কাজের ক্ষেত্রে যৌন পক্ষপাত

    কর্মক্ষেত্রে যৌন পক্ষপাত খুবই চর্চিত একটি বিষয়, তবু স্পষ্ট করে বলা মুশকিল, কত ধরনের যৌন পক্ষপাত আছে বা হয়। এত লোকের এত রকমের অভিজ্ঞতা হয়, এগুলোকে একটা সংজ্ঞায় কখনওই এনে ফেলা যাবে না। প্রত্যেকটা ঘটনা আলাদা রকম, এবং প্রত্যেকটার নিজস্ব খুঁটিনাটি আছে। তাই যৌন পক্ষপাত সম্পর্কে একটা বড় রকমের সচেতনতা নিশ্চয়ই তৈরি হয়েছে, কিন্তু অনেকগুলো সূক্ষ্ম বা চাপা উদাহরণ অনেকেরই নজর এড়িয়ে যায়, বিশেষ করে সে নিজে যদি সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকে।

    কিন্তু যারাই যৌন পক্ষপাতের শিকার, সবার মধ্যে একটা অসহায়তার বোধ কাজ করে চলে, সে পক্ষপাতের নির্দিষ্ট চরিত্র যেমনই হোক না কেন। আমি জানি, এই পক্ষপাত ও তার ফলে হেনস্থা সব লিঙ্গের মানুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে, কিন্তু এখানে আমি শুধু নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলব— পুরুষপ্রধান ইন্ডাস্ট্রিতে একজন কমবয়সি মেয়ের অভিজ্ঞতা।   

    যে ঘটনাগুলোর কথা লিখব, সেগুলোয় আমাকে হয় একটা ‘বাচ্চা মেয়ে’ হিসেবে ধরা হয়েছে, যার আমার বয়সি অন্যান্য নারীর মতো বুদ্ধি বা ব্যক্তিত্ব নেই, অথবা নিতান্ত ভোগ্যবস্তু হিসেবেই দেখা হয়েছে। যা-ই ভাবা হোক, আমার নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে আক্রমণ করা হয়েছে। 

    অনেকেই আমাকে বলেছে, যে-মহিলার খুব স্পষ্ট নিজস্ব মতামত আছে, সে বেশির ভাগ সময়ই ‘কাম্য’ নয়। যার মানে হয়তো দাঁড়ায়, তাকে তেমন সহজে হাতের পুতুল করে নেওয়া যায় না।

    একটা ব্যাপার আমি বহুদিন নিজের কাছেই স্বীকার করিনি। তার কারণ হয়তো এই, আমি যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন আমার বয়স নেহাতই কম ছিল। তখন আমায় কেউ নিতান্ত বাচ্চা মেয়ে ভাবলে, কিছুই মনে করতাম না। কারণ, আমি তো এখানে শিখতেই এসেছি। আমি এখনও শিখছি, কিন্তু এখন আর সারাক্ষণ কী করে নিখুঁত নারী হয়ে ওঠা যায় আর আদর্শ নায়িকা হওয়া যায়, এইটা শিখে চলতে রাজি নই। ঠিক কী করে এমন নারী হওয়া যায়, যার আবেদন জনসাধারণের কাছে একদম ঠিকঠাক? বা এমন নারী হওয়া যায়, যে একটা নির্দিষ্ট ধরনে মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে? বা এমন নারী হওয়া যায়, যে সর্বক্ষণ খুব কথাটথা বলে নিজের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে না? বা মতামত জাহির করে না? বা অন্য লোকের মুড অনুযায়ী চলতে জানে? এইগুলো নিয়ে ভাবা মানে আসলে সময় নষ্ট করা। কারণ যে আদর্শটার কোনও অস্তিত্বই নেই, নিজেকে তার ছাঁচে ঢালব কীভাবে? এসব অবস্থায় পড়লেই অবধারিত ভাবে মনে হবে, আরে, আমি কী ভুলটা করছি?

    আমার নিজের দুটো অভিজ্ঞতা বলব, একটা সাধারণ প্রবণতার কথা আর একটা নির্দিষ্ট ঘটনার কথা, যাতে বোঝা যাবে, আমি কত ধরনের যৌন পক্ষপাতের মুখোমুখি হয়েছি।

    একটা ফিল্ম সেট-এ, অনেক রকমের এনার্জির স্রোত চলে, আর অনেক রকমের সমীকরণ থাকে, এর-ওর মধ্যে। এই সবকটাকে সামলে চলা এবং এগুলোর মোকাবিলা করা, কখনও-সখনও ক্লান্তিকর হলেও, এমনিতে  বেশ আকর্ষণীয়। এই পরিবেশে কোনও মেয়েকেই— তার পদমর্যাদা যেমনই হোক, স্টাইলিস্ট বা মেক-আপ শিল্পী, বা সহকারী পরিচালক, বা অভিনেত্রী— সিরিয়াস ভাবে নেওয়া হয় না। যাতে লোকে তোমাকে গুরুত্ব দেয়, তার জন্যে তোমার অনেকটা প্রাণশক্তি ব্যয় করতে হবে। এ এক উদ্ভট ধাঁধা— যদি তুমি বেশি ভাল ব্যবহার করো, লোকে তোমার দিকে তাকিয়ে হাসবে বটে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তোমার পরামর্শ কেউ শুনবে না। তার চেয়েও জরুরি ব্যাপার, তারা তোমার পদটাকে শ্রদ্ধাই করবে না। আর যদি তুমি যদি তোমার ব্যবহারে বেশ কড়া হও, বা তোমার ঠিক কী চাই সেটা একেবারে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দাও, মানে লোকে যদি বোঝে তোমাকে সহজে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না বা ঝামেলা হলে তুমি বসে বসে নীরবে অস্বস্তি ভোগ করার লোক নও— তখন তোমাকে বলা হবে অভদ্র, বা ইংরেজি গালাগালি দিয়ে ‘বিচ!’ বিশেষ করে অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে, এই ধরনের ব্যবহারকে বলা হয় ‘ঝামেলা পাকানো’।  

    কর্মক্ষেত্রে যৌন পক্ষপাত শুধু একটা অফিস বা সেট বা স্টুডিওতেই হবে তার কোনও মানে নেই, সেটা একটা প্রাইভেট জায়গাতেও হতে পারে, যেখানে তোমার সহকর্মীরা রয়েছে। একটা উদাহরণ দিই, যদিও এ বিষয়ে লেখাটা আমার পক্ষে সহজ নয়। কিছুদিন আগেই আমি এক বন্ধুর (যে আমার সহকর্মীও) বাড়িতে পার্টিতে গেছিলাম, যেখানে আরও অনেক বন্ধু (তারাও সহকর্মী) ছিল, আর ছিল কয়েকজন আধা-চেনা ও কিছু অচেনা লোক। আমি সেদিন বেশ আনন্দে ছিলাম, স্বচ্ছন্দ ছিলাম, ভাবিইনি এখানে কোনও বিপদ ঘটতে পারে। কিন্তু দেখলাম, কেউ যদি শিকার ধরতে উদ্যত হয়, কোনও পরিস্থিতিতেই তার অসুবিধে হয় না। এরকমই একজন, আগে যার সঙ্গে আমার বিশেষ পরিচয় ছিল না, আমার কাছে এসে ভাল ভাবেই গল্প করতে শুরু করল, আমিও গল্প করলাম। এ এমন একজন লোক, আমার ইন্ডাস্ট্রিতে যার অনেকটা ক্ষমতা আছে। তার স্ত্রীর সঙ্গেও আমি কাজ করেছি, তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আর তার মেয়েদের মধ্যে একজনের আমি বন্ধু। এরাও সবাই সেদিন সেই জমায়েতে হাজির। এমন নয় যে তারা হাজির না থাকলে ব্যাপারটা কিছু কম অন্যায় হত, তবু এটা বলে রাখা ভাল। যাই হোক, সে আমাকে গল্প করতে করতে হাঁটতে হাঁটতে বেশ ফাঁকা একটা ঘরে নিয়ে গেল।   

    আমার প্রথমটায় কিছুই মনে হয়নি, কারণ দরজাও খোলা ছিল, চারিদিকে লোকও ছিল। তারপরই সে আমাকে নিজের দিকে টানল, আর আমি সেই মুহূর্তে এত স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, ভয় পেয়ে গেলাম, আমার এত অসহায় লাগছিল যে, আমি কোনওমতে খুব ভদ্রভাবে বলে উঠতে পারলাম, এটা করা আমাদের উচিত হচ্ছে না। আমি সরে যেতে চাইলাম, কিন্তু সে আমাকে আরও কাছে টেনে চুমু খেতে গেল। মনে রাখবেন, এই সবই ঘটছে তার সঙ্গে জীবনে আমার প্রথম কথাবার্তা শুরু হওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। আমি এতটা আড়ষ্ট হয়ে পড়েছিলাম, কোনওমতে মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম। তার ঠোঁটজোড়া আমার গালের ওপর এসে পড়ল। তারপর আমি চট করে একটু সরে এলাম, আর এমন অবশ লাগছিল, ঘর থেকে বেরিয়ে আসার আগে আমি বললাম, একটা ড্রিংক নিতে যাচ্ছি।

    এই পুরো ব্যাপারটায় আমার যেটা সবচেয়ে খারাপ লেগেছিল, তা হচ্ছে, আমি এতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম যে তার সঙ্গে আগাগোড়া ভদ্র ব্যবহার করেছিলাম। সেটা কি আমি কোনও সিন ক্রিয়েট করতে চাইনি বলে? বা, ভয় পাচ্ছিলাম যে কেউ আমাকে ভুল বুঝবে? বা, ভাবছিলাম আমাকে কেউ সিরিয়াসলি নেবে না? না কি তার পরিবারের প্রতি আমার একটা শ্রদ্ধা আছে বলে আমি চেঁচামেচি করলাম না? আমি জানি না। আমি তক্ষুনি আমার বন্ধুদের সংক্ষেপে ঘটনাটা বললাম, আর পার্টির বাকি সময়টা তাদের সঙ্গেই কাটালাম।

    অনেকেই এরকম যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে, নিশ্চয়ই এর চেয়েও খারাপ অনেক হেনস্থার শিকার হয়েছে। আমি এটার মধ্যে দিয়ে দিয়ে বুঝতে পারলাম, কতটা অসহায় লাগে এই জিনিসের মুখোমুখি হলে। শুধু ঘটনাটার সময়টায় নয়, তারপরে, যখন ভাবতে হয়, এবার কী করব, কী করা উচিত।

    যদি তুমি এটা নিয়ে হইচই শুরু করো, লোকে হয় তোমাকে বিশ্বাস করবে না, বা তোমাকে তোমার কাজের ক্ষেত্রে ব্ল্যাকলিস্ট করে দেওয়া হবে। বা, লোকে তোমাকে বিশ্বাস করবে বটে, কিন্তু কিছুদিন পরেই সবটা ভুলে যাবে এবং ওই লোকটার সঙ্গে দিব্যি হেসে হেসে গল্প করবে।

    এমনকী যদি এ ধরনের শিকারি পুরুষ নিজের ভুল বুঝতেও পারে, তাকে ক্ষমা করে দিতে হলে, আগে তার কাছ থেকে একটা ক্ষমাপ্রার্থনা প্রয়োজন। কিন্তু ক্ষমাপ্রার্থনা এরা করে না, যদি না অনেক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বড়সড় অভিযোগ করা যায়, আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে তো শিকার হওয়া মেয়েটির নিজের বয়ানটা ছাড়া বিশেষ প্রমাণ থাকেও না। আর মেয়েটির সেই কথাগুলো, অনেক ক্ষেত্রেই, দেখা যায় যথেষ্ট বলে বিবেচিত হচ্ছে না।

    জানি না এই লেখাটার কোনও ফল হবে কি না, কিন্তু যদি একটা ছোট্ট তরঙ্গও ওঠে, আমার ভাল লাগবে।

    যে কাজের জগতে তোমাকে এমন অবস্থান দেওয়া হয়েছে যে তোমার বদলে তোমার জায়গায় অনায়াসে অন্য কাউকে এনে বসানো যাবে, সেখানে নিজের অধিকার নিয়ে লড়াই করাটা খুব সহজ ব্যাপার নয়। এই জগতে, তুমি নিজেকে অসম্ভব রকম ভাবে বেঁকিয়ে-চুরিয়ে বদলে ফেলতে চাইবে, কারণ তুমি এখানে টিকে থাকতে চাও এবং কাজটা ভালবাসো। মেয়েদের এখানে খুব যে উপায় আছে তা নয়, যতটা সম্ভব নিজেদের শক্তির জোরে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া। এই পরিস্থিতি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook